শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৩

এরশাদ কেন গ্রেফতার হলেন?

এরশাদ কেন গ্রেফতার হলেন?

এ প্রশ্নের উত্তর দিতে হলে, পাল্টা প্রশ্ন করতে হবে- আসলেই কি এরশাদ গ্রেফতার হয়েছেন?
সাদামাঠা ভাবে এ প্রশ্নের উত্তর হতে পারে- হ্যাঁ, তিনি আসলেই গ্রেফতার হয়েছেন।
রসিকতার সাথে এ প্রশ্নের উত্তর হতে পারে- না, তিনি গ্রেফতার হননি! জনগনের বন্ধু পুলিশের সহায়তায়, পরম বন্ধু র‌্যাব তাদের অতিরিক্ত মানবিক দায়িক্তে তাকে হাসপাতালে পৌছে দিয়েছেন!!!

তবে রাজনীতি যেহেতু কোন সাদামাঠা কিংবা রসিকতার বিষয় নয়! তাই এ প্রশ্নের যথার্থ উত্তর দিতে হলে কয়েকটি মূল্যায়নে আপনাকে যেতেই হবে....

প্রথমত- এরশাদকে অঘোষিত আটকের পর স্বাভাবিক প্রবনতায় তাকে ডিবি কার্যলয়ে নেয়া হয়নি! বরং 'ইদুরের দুঃখে বিড়াল কাতর' হয়ে সেনা নিয়ন্ত্রিত সিএমএইচে নেয়া হয়েছে।

দ্বিতীয়ত- এরশাদ গ্রেফতার এড়াতে আত্বহত্যার হুমকিতে ৪ টি রিভালভার লোড করে রেখেছিলেন। এরশাদের মত কাপুরুষের আত্বহত্যার সাহস নেই সত্যি! কিন্তু তাই বলে কি নুন্যতম প্রতিরোধও হবেনা?

তৃতীয়ত- রাজনৈতিক এ ঘোলাটে সময়ে সব শেষ হবার আগে ভারতের পরামর্শপুষ্ট ও দীর্ঘ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ আওয়ামীলীগ নিশ্চই নিজেকে মিত্রহীন করার ঝুকি নেবে না।

তাই এরশাদ আটকের এ 'টম এন্ড জেরী' খেলায় এরশাদ গ্রেফতার হয়েছেন এ ধারনাটা সাদামাঠা একই সাথে রসিকতাও বটে...

এখন প্রশ্ন আসতে পারে- এ রাজনীতির কি দরকার ছিলো?

উত্তরঃ
এক.
কাদের মোল্লার ফাঁসি বিষয়ে বৈষয়িক চাপ ও দৃষ্টি গনতন্ত্রের আঘাতের দিকে ঘুরিয়ে দেয়া।

দুই.
ম্যানেজ এরশাদকে চিকিৎসার জন্য বিদেশ পাঠিয়ে ও এ সম্পর্কে সাধু বিবৃতি দিইয়ে বিশ্ববাসীর ধারনা ভুল প্রমান করা এবং নিজেদের গনতান্ত্রিক শক্তিরুপে এটেনশান প্রতিষ্ঠিত করা।

তিন.
এরশাদ কত কদিয়ে যেভাবে কথা বলেছে, তার পক্ষে আর আওয়ামীলীগের একক নির্বাচনে যাওয়া সম্ভব না, তাই একটু ঘুড়িয়ে এরশাদকে সেভ সাইডে রেখেই তাকে নির্বাচনে নিয়ে আসা।

এ মূল্যায়নকে আরো ভালোভাবে বুঝতে হলে, আপনাকে পড়তে হবে বিডিনিউজ২৪.কম এর একটি নিউজ- 'জাপার জন্য ৬০টি রেখে আ. লীগের আসন ভাগ' শিরোনামে আওয়ামীলীগের নীতি-নির্ধারকদের একজন বরাতে নিউজটিতে এসেছে- 'নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে রাখা জাতীয় পার্টির জন্য ৬০টি আসন রেখেই দশম সংসদ নির্বাচনের আসন বণ্টন চূড়ান্ত করেছে আওয়ামী লীগ।'

তাই এরশাদের আটককে গ্রেফতার হিসাবে দেখার সুযোগ নেই, বরং কূট রাজনীতির নির্বাচন যাত্রা হিসাবেই দেখতে হবে.....

আওয়ামীলীগ কি আবার ক্ষমতা আসতে যাচ্ছে?

আওয়ামীলীগ কি আবার ক্ষমতা আসতে যাচ্ছে?

বিশেষত, তাদের ইশতেহারের মেগা ইস্যু যুদ্ধাপরাধীর বিচার সম্পন্ন হওয়া, এ বিচারকে কেন্দ্র করেই মৃতপ্রায় গনজাগরন মঞ্চকে পূনজাগরন করা, চাপে ফেলে এরশাদকে নির্বাচনে নিয়ে এসে একতরফা নির্বাচনকে বৈধ করা, একই সাথে তাদের একগুয়েমী মনোভাব এবং আবার ক্ষমতা পেতে মরিয়া চেষ্টা, এ প্রশ্নটিকে সামনে নিয়ে আসছে এবং গুরুত্বপূর্ন করে তুলছে...

ইতিমধ্যেই, সংলাপ-সমঝোতা-সর্বদলীয় নির্বাচন নিয়ে সকল প্রচেষ্টাই ফেল করেছে! এমনকি ব্যর্থ হয়েছে জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকোর মিশন!
তবে কি সমঝোতা বিহীন একদলীয় একগুয়েমিতেই নির্ধারন হবে বাংলাদেশের ভবিষৎ?

উত্তরঃ না। আওয়ামীলীগের পক্ষে সেটা সম্ভব হবে না! কারন তাদের পরিকল্পনায় হয়তো সবকিছুই রেডি আছে, শুধু পূবের বাতাসটা ছাড়া!!

চীনে ২২০- ২৮৩ সাল ছিলো তিন রাজার যুগ। তখন বিখ্যাত রণকুশলী কাও কাও-এর নেতৃত্বে উই রাজ্যের সেনাবাহিনীকে মোকাবেলা করেছিলো সম্মিলিতভাবে অপর দুই রাজ্য উ এবং শু রাজ্যের সেনাবাহিনী। উ রাজ্যের ঝো উ পরিকল্পনা করেছিলেন কাও কাও-য়ের নৌবহর পুড়িয়ে দেবার জন্য কয়েকটি জাহাজে আগুন ধরিয়ে সেদিকে ঠেলে দেবেন। তখন ছিলো শীতকাল এবং ঝো উ-র নৌবহর ছিলো পূর্বদিকে। কাও কাও-য়ের নৌবহর ছিলো পশ্চিম দিকে। কাও কাও-য়ের নৌবহরের দিকে প্রজ্জলিত জাহাজ পাঠানোর জন্য সবকিছুই প্রস্তুত ছিলো, শুধু ছিলো না পূবালী বাতাস। পূবদিকের বাতাস প্রয়োজনীয় ছিলো প্রজ্জলিত জাহাজকে লক্ষ্যস্থানে পাঠানোর জন্য।
এ উপকথা থেকে আমরা বুঝতে পারি- গুরুত্বপূর্ন বিষয় বাদ দিয়ে আর সব কিছু রেডি থাকাও মূল্যহীন....

এখন অনেকে প্রশ্ন করতে পারেন- বাংলাদেশের বাস্তবতায় পূবের বাতাসটা কি?

উত্তরঃ জনসমর্থন।

আওয়ামীলীগ জনসমর্থন হারিয়েছে কিন্তু বাকি সব রেডি করেছে।
কিন্তু হায়! বাকি সব কোন কাজে দেবে না, পূবালী বাতাস ছাড়া। কাজে দেবেনা জনসমর্থন ছাড়া।
আর এ জন্যই, বাকি সব রেডি থাকলেও আবার ক্ষমতায় আসতে পারবে না আওয়ামীলীগ....

শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর, ২০১৩

বাসে আগুন কারা দিচ্ছে? কেন দিচ্ছে? এবং আমাদের করনীয়

রাজনীতির আগুনে পুড়ছে যারা পথে, ঘাটে, বাসে....
সে কারো ভাই, কারো স্বজন, কারো পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম।
তাই বাসে দেয়া আগুনে শুধু একটি বাস আর কয়েকজন মানুষই পোড়ে না! অগ্নিদগ্ধ মাথাপিছু এক একটি পরিবার পোড়ে...

সাধারনত একটি মিনিবাসে সিট থাকে ৪৫ টি। বসে এবং দাঁড়িয়ে যাত্রী থাকে ৬০ জনের মতো, এরমধ্যে একই পরিবারের একাধিক সদস্য মিলিয়ে প্রায় ৫০ টি ভিন্ন ভিন্ন পরিবারের সদস্য থাকে। যারা সরবে এবং সজ্ঞানে একটি বাসে আগুন দিচ্ছে, এ আগুন শুধু বাসে নয় বরং অনেকটাই নিরবে ৫০ টি পরিবার জ্বালাচ্ছে। অর্থ্যাৎ একটি বাসে আগুন দেয়া মানেই ৫০ টি পরিবারে আগুন দেয়া।

এছাড়াও বাসে আগুন দেয়ার আরেকটি বড় ক্ষতি হলো জনগনের মধ্যে পরিবহন ব্যবস্থার অনিরাপত্তা বোধ তৈরী করা! পারিবারিক, সাংসারিক, ব্যবসায়ীক, প্রাতিষ্ঠানিক প্রয়োজনে সকলকে বাড়ীর বাহিরে যেতেই হয়। বাসে আগুন দেয়া, প্রত্যেক পরিবারের মধ্যেই সবসময় অজানা আশংকার এক দুষ্চিন্তা ঢুকিয়ে দিয়েছে- আমি ঠিকমত বাসায় ফিরতে পারবো তো? আমার স্বজন নিরাপদে বাসায় ফিরবে তো? অর্থ্যাৎ একটি বাসে আগুন দেয়ার মানে অনিশ্চয়তা আর অনিরাপত্তার ভয় ঢুকিয়ে পুরা দেশের মনোজগতে আগুন ধরিয়ে দেয়া।

এখন প্রশ্ন আসতে পারে- এ আগুন কারা দিচ্ছে? কেন দিচ্ছে?

যেহেতু এমন নাশকতা হচ্ছে বিরোধীদলের কর্মসূচির সময়ে তাই এর প্রথম সন্দেহভাজন তারাই। আবার সরকারের দায়িক্ত জনগনের জানমালের নিরাপত্তা বিধান করা, এক্ষেত্রে তারা ব্যর্থ হলেও আমাদের মনে রাখতে হবে আমাদের দেশটা দরিদ্র তাই বিপুল সংখ্যক জনগনের বিপরীতে সামান্য সংখ্যক পুলিশ দিয়ে নিশ্চই মোড়ে মোড়ে পাহাড়া দেয়াও সম্ভব নয়। তাই সরকারকে ব্যর্থতার পুরা দায় না দিয়েও সন্দেহভাজন হিসাবে দ্বিতীয়তে রাখা যেতে পারে কূট রাজনীতিতে বিরোধীদলের জনসমর্থনের নৈতিকতায় হানা দেবার প্রচেষ্টার কথা মাথায় রেখে।

লক্ষ্যনীয়, বিরোধীদলের কর্মসূচি সারাদেশে ব্যপকভাবে পালন হলেও বিরোধীদলের কেন্দ্রীয় নেতাদের নিষ্ক্রীয়তা এবং সরকারের কড়াকড়িতে ঢাকা ছিলো তুলনামুলক স্বাভাবিক! ঢাকাতে বিরোধীদল মাঠেও ছিলো না আবার এমন চোরাগোপ্তা হামলাও চালায় নি! তাহলে তো এ কর্মসূচির পালনে তারা পুরাই নিষ্ক্রিয়? এটা কি হতে পারে?
সম্ভবত, মাঠে নামতে না পারা এবং মাঠে না নেমেও কর্মসূচি সফল করার জন্য জনমনে ভীতি সৃষ্টি করার জন্য এ নৃশংস হামলাই ছিলো তাদের একমাত্র অস্ত্র!

এ সরকারের শুরু থেকেই বিরোধী দলের ওপর নজিরবিহীন হামলা, মামলা, ঝামেলায় জড়িয়েছে। সাম্প্রতিক সময়েও হাস্যকর কারনে কেন্দ্রীয় নেতাদের গ্রেফতার, জামিন না দেয়া, কেন্দ্রীয় কার্যলয় অবরুদ্ধ করে রাখা, মিছিলে গুলি চালানো সহ রাজপথ নিয়ন্ত্রনে রাখার মরিয়া চেষ্টাই বিরোধীদলকে রাজপথে না থেকে চোরাগোপ্তার দিকে ঠেলে দিয়েছে। স্বাভাবিক আন্দোলন বন্ধ করলে অস্বাভাবিক আন্দোলনের রাস্তা খুলে যাবে এটাই স্বাভাবিক।

এখন প্রশ্ন আসতে পারে- সরকার বিরোধীদলকে রাস্তায় নামতে না দিয়ে চোরাগোপ্তার দিকে ঠেলে দিচ্ছে বলেই কি, বাসে অগ্নিসংযোগ সমর্থনযোগ্য?

উত্তরঃ না। কখনোই, কোন পরিস্থিতিতেই এটা সমর্থনযোগ্য নয়।

আপনি এখন বলতে পারেন- তাহলে আমাদের করনীয় কি? গত ৫ বছরের ব্যাপক অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি আর অপশাসনের মহাজোট সরকারকে পূনরায় নির্বাচিত করার জন্য ভোট দেয়া সম্ভব নয়। আবার যে পরিস্থিতিতেই হোক বিরোধীদলের নৃশংসতাও সমর্থন করা সম্ভব নয়। তাহলে আমরা কি করবো? কোনদিকে যাবো? এ অনিশ্চিত সময়ে আমরা কি কেবল শুধুই দগ্ধ হবো?

উত্তরঃ এ মুমুর্ষ সময়ে আমাদের অবশ্যই ন্যায়ের পথে থাকতে হবে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাড়াতে হবে। সময়ের ডাকে, সময়ের প্রয়োজনে জোড়ালো ভূমিকা রাখতে হবে। যে ভূমিকা আমাদের পূর্বপুরুষেরা রেখেছিলো ভাষার যুদ্ধে, মুক্তিযুদ্ধে রেখেছিলো, রেখেছিলো গনতন্ত্রের যুদ্ধে। এখন সময় এসেছে আমাদের ভূমিকা রাখার এবং আমাদের পরবর্তি প্রজন্মের জন্য গর্বের জায়গা ও ভবিষৎ নিশ্চিত করার।

রাজপথে আগুন জ্বলছে, ককটেল ফুটছে, বাসে আছড়ে পড়ছে পেট্রোলবোমা, পুরছে মানুষ!! কিসের জন্য?

সুষ্ঠ নির্বাচন ব্যবস্থা এবং একটি গ্রহনযোগ্য নির্বাচনের জন্য।

এই জাগয়াটাকে নড়বড়ে করলো কারা? কারা নিজেদের স্বার্থে তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার বাতিল করে আসন্ন নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করলো? যে দেশে নির্বাচন একটা উৎসবের মতো সে দেশে কারা নির্বাচনের সময়কে উৎসবের নয় বরং আতংকের দিকে ঠেলে দিলো?

আমাদের এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হবে। জোড়ালো ভাবে মতামত প্রকাশ করতে হবে। বিএনপিকে জানিয়ে দিতে হবে- বাসে আগুন দিয়ে তারা অপরাধ করছে, বিএনপির নেত্রীবৃন্দ আসামী- হুকুমের আসামী।
আওয়ামীলীগকে জানিয়ে দিতে হবে- তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে তারা অপরাধ করেছে। বাসে আগুন দেয়ার তারা আরো বড় আসামী, তারা এ পরিস্থিতিতে ঠেলে দেয়া আসামী।

সর্বপরি, আমাদের রাস্তায় নেমে আসতে হবে। নির্দলীয় সরকারের জন্য আন্দোলন করতে হবে। মনে রাখতে হবে, ভোট দেয়া মানেই ভোটের অধিকার রক্ষা নয় বরং আমার ভোট যেন কারো সাজানো পদ্ধতির অনুমোদন না হয়ে প্রকৃতই মতামত নিশ্চিত করে এটাই ভোটের অধিকার। আর এ ভোটাধিকারের জন্যই আমাদের লড়তে হবে।

বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০১৩

গেমার যেভাবে লুজারে পরিনত হবে!

রাজনীতি যদি একটা গেম হয়, তবে আওয়ামীলীগ নিঃসন্দেহে রাজনীতির বড় মাপের গেমার।

ভিডিও গেমস খেলে খেলে যারা অভ্যস্থ, তারা নিশ্চই জানেন- অভিজ্ঞতা এখানে বড় ফ্যাক্টর। খেলতে খেলতে আপনার মুখস্থ হয়ে যাবে যে, গেমের কোন জায়গায় দ্রুত ছুটতে হয়, কোথায় বিপদের আশংকায় গতি কমিয়ে কিছুটা থামতে হয়, প্রতিপক্ষ বসের শক্তি সম্পর্কেও একটা ধারনা তৈরী হয়। ফলে কিছুদিনের অভিজ্ঞতাতে ভিডিও গেম আর গেম থাকে না, সময় অতিক্রম করার পাশাপাশি নিজেকে ভালো খেলোয়ার দেখানোর হাতিয়ার হয়ে যায়!!!

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, অভিজ্ঞ রাজনৈতিক দল। সময়ের হিসাবেই ধরি আর সংগ্রামের ইতিহাস কিংবা মাঠের রাজনীতিই ধরি অথবা সময়ের বাঁকে উৎরে যাওয়া। ১৯৪৯ সালে 'পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ' নামে জন্ম নেয়া দলটি এ দীর্ঘ সময়ে রাজনীতি সম্পর্কে অভ্যস্থ এবং মুখস্থ হয়ে পড়েছে। অন্যভাবে বললে, নিজেকে ভালো খেলোয়ার দেখানো গেমারে পরিনত হয়েছে...
আর তাইতো, তত্বাবধায় সরকারের দাবীতে নিজেদের করা ১৯৯৬ এর আন্দোলনের তাজা স্মৃতি এবং তৎকালীন সরকারের একতরফা নির্বাচন ও স্বল্পকালীন সরকারের ইতিহাসের চেনা বাঁক জানা স্বত্বেও নিজেদের সেইসময়ের পরাজিতদের পদাংকে পা রেখে নিজেদের বড় গেমার ভাবছে। এ আত্বতৃপ্তিতেই নিশ্চিত পরাজয়ের মুখেও একতরফা নির্বাচনে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ সরকার, কৈ'এর তেলে কৈ ভাজার মতো একতরফা মহাজোটের তেলে মহাজোট ভাজার জন্য এরশাদের পদত্যাগ নাটকের মাধ্যমে প্রথমে কৈ থেকে তেল আলাদা করেছে এরপর এরশাদকে ৭টি মন্ত্রনালয় দিয়ে নির্বাচনে টানার মাধ্যমে মহাজোটের তেলে সর্বদলীয় নির্বাচনের ব্যবস্থা করেছে.....হোয়াট আ গেম....

এখন প্রশ্ন হলো- এ গেমের লাস্ট স্টেজ কি আওয়ামীলীগ উৎড়াতে পারবে?

উত্তরঃ না। আওয়ামীলীগ যত বড় গেমারই হোক, এ গেমে তাদের পরাজয় নিশ্চিত। এবং সে পরাজয়টা হবে শোচনীয়।

অনেকেই প্রশ্ন করতে পারেন- সেটা কিভাবে? যখন ক্ষমতা আওয়ামীলীগের হাতে, সামরিক-বেসামরিক বাহিনী তাদের নিয়ন্ত্রনে, বিএনপির দূর্বল সাংগঠনিক অবস্থা তাদের পক্ষে, সর্বপরি কূট-রাজনৈতিক গেমে তারা অগ্রবর্তি?

উত্তরঃ সময়ও একটা গেম। তবে ভিডিও গেমের সাথে সময়ের গেমের বিস্তর ফারাক। ভিডিও গেমে জানা সম্ভব কোন বাঁকে কি অপেক্ষা করছে কিন্তু সময়ের কোন বাঁকে কি অপেক্ষা করছে এটা জানা সম্ভব নয়। ভিডিও গেম খেলতে খেলতে থামিয়ে দিয়ে বিশ্রাম করে আবার খেলা যায় কিন্তু সময়ের গেম অনবরত খেলে যেতে হয়। সবচেয়ে বড় কথা, ভিডিও গেমে লাইফ খোয়া গেলে আবার নতুন করে শুরু করা যায় কিন্তু সময়ের গেমে তা সম্ভব নয়।

আওয়ামীলীগ সময়ের গেমের সেই রিস্কি খেলাই খেলছে, যেখানে ভিডিও গেমের বস পরিচয় কোন কাজে আসবে না। রেসের ময়দানে গাড়ি চালাবেন, তেলতো অবশ্যই লাগবে। নাকি মাইকেল শুমাখার নামেই গাড়ী চলবে?
বাস্তবতা এটাই যে, আওয়ামীলীগের জনপ্রিয়তার তেল ট্রাংকির তলানীতে পৌছেছে। এ গাড়ি আর কতদুর যাবে?

অনেকে হয়তো বলতে পারেন- আওয়ামীলীগ তো জনপ্রিয়তা দিয়ে নয় বরং ক্ষমতা দিয়ে ক্ষমতায় যাবে! অর্থ্যাৎ তেল দিয়ে নয় বরং সিএনজি দিয়ে গাড়ী চালাবে!

উত্তর-হ্যাঁ, সেটা সম্ভব। সিএনজি দিয়েও গাড়ী চালানো যায়, তেলের দরকার পরে না! তবে মনে রাখতে হবে, ইন্জিনটা কিন্তু পেট্রোল ইন্জিন! এখানে সিএনজি কাজ করবে না। দেশটাও গনতন্ত্রের, এখানে জনপ্রিয়তা বাদ দিয়ে ক্ষমতাতন্ত্র চলবে না। ১৯৭৫ও কিন্তু গনতন্ত্রের পেট্রোল ইন্জিলে, বাকশাল সিএনজি কাজ করে নি।

এবার আসি, আওয়ামীলীগের আসন্ন পরাজয়ের সবচেয়ে বড় টুইস্টে...
রেসের ময়দানে গাড়ি যদি একটাই হয় তাহলে তেলও হয়তো কোন সমস্যা না! ঠেলে ঠুলে গাড়িকে বর্ডার লাইন পার করালেই তো চাম্পিয়ন! কিন্তু বর্ডার লাইন পাওয়ার আগেই যদি গাড়ীর চাকা খুলে যায়, তবে? ঠেলে ঠুলেও কি গাড়ি আগানো যাবে?
জনসমর্থনের তেল ছাড়া দিশেহারা সরকার একতরফা নির্বাচন বৈধ করার জন্য মরিয়া হয়ে এরশাদকে সাত সাতটি মন্ত্রনালন দিয়ে তার রেসের সঙ্গী করেছে। কিন্তু এরশাদের যে দ্রুত রং পরিবর্তন করা গিটগিটি চরিত্র! আগামী কয়েকটি হরতাল-অবোরোধে পরিস্থিতি যখন আরো নাজুক হয়ে যাবে, আওয়ামীলীগের একতরফা ক্ষমতা যাবার ট্র্যাক ক্ষতিগ্রস্থ হবে, তখন সন্মান আর পিঠ বাঁচানোর খাতিরে এরশাদ তার ৭ মন্ত্রী নিয়ে পদত্যাগ করবে! এবং এর মাধ্যমেই একতরফা নির্বাচনে যাবার আগেই আওয়ামীলীগের ক্ষমতাগাড়ীর চাকা খুলে যাবে! এবং গেমের লাস্ট স্টেজে আওয়ামীলীগের শোচনীয় পরাজয় হবে।
আর এভাবে রাজনীতির বড় গেমার আওয়ামীলীগ, স্বরণকালের সবচেয়ে বড় লুজারে পরিনত হবে......

বুধবার, ৩০ অক্টোবর, ২০১৩

দুটি কবিতা

আসছে যে জলপাই!

গনতন্ত্র ভ্রমরের, অস্থির ছোটাছুটিতে
ঘটছে ফুলে পরাগায়ন
আসছে শীতে হয়তো হবে-
জলপাই'য়ের বাম্পার ফলন!
বাগান থেকে, আড়ত থেকে
ব্যারাক থেকে বাজার টানে
বিকোবে আগোরা, স্বপ্ন হয়ে
হকারের ঐ চলন্ত ভ্যানে...
কাগজে টিভিতে রেসিপি ফ্যাসনে
মেন্যু হবে জলপাই
সামরিক রোলার গ্রেভি কিংবা
অলিভ পিপল ফ্রাই...
তবুও ভ্রমর করে ছোটাছুটি-
শীতের সঞ্চয় চাই
বুঝবে কি তারা, তাদেরই ভুলে
আসবে, আসছে যে জলপাই।


 বেজম্ম ঐরশ!

গনতন্ত্রের কুমারীমাতা এক সন্তান জন্ম দিয়েছে....
চারিদিকে ঘোর আলোচনা- পোলা কালা না ধলা!
অভিনন্দনের জোয়ারেও ভাসছে কেউ কেউ- বাধাই হো, বাধাই হো...

তোমার জন্য দুঃখ হয় হে সমাজ,
কুমারীমাতার জন্য, নবাগত সন্তানের জন্য
তোমার যে দরদ,
এ অপরাধও কম নয়
নাম না জানা সে পাপিষ্ঠ পিতার চেয়ে...

নবাগত সন্তান
তুমি হতে পারো, কালা কিংবা ধলা!
এতে আমার কিছুই যায় আসে না।
তোমার নিষ্পাপ মুখের দিকে চেয়ে আমার দুঃখ হয়-
কি বেজন্মা পরিনতি তোমার?
ভালোবাসার ঐরশ তোমায় অবৈধ জন্ম দিয়েছে..
আর সমাজের বিবেক বিক্রি ঐরশ
তোমাকে প্রকৃতই বেজম্মা করেছে!

ফোনালাপ ফাঁদ! নির্বাচন তো বটেই!

দুই নেত্রীর ফোনালাপ ফাঁস হওয়াটা প্রয়োজনীয় ছিলো!
এ কথা ঠিক যে, এ ফোনালাপ নিয়ে দেশবাসীর আগ্রহ আকাশ ছুয়েছিলো। তবে তাদের কথপকথন জানার জন্য নয় বরং এ ফোনালাপটা ফাঁস হওয়া প্রয়োজনীয় ছিলো-
খালেদা জিয়ার আপোষহীনতা এবং রাজনৈতিক প্রজ্ঞা জানতে, এবং শেখ হাসিনার রাজনৈতিক হীনমন্যতা বুঝতে...

প্রধানমন্ত্রী সংলাপের জন্য ফোন দিলেও, খালেদা জিয়া কেন হরতালের জন্যে সে প্রস্তাব গ্রহন করলেন না? হরতাল প্রত্যাহারের আহবান করার পরও কেন হরতাল প্রত্যাহার করলেন না?
সাদা চোখে, তাৎক্ষনিকভাবে দুদিন আগেও এ প্রশ্নগুলোই আলোচিত হচ্ছিল এবং খালেদা জিয়া বিভিন্ন মহল থেকে সমালোচিত হচ্ছিল।
কিন্তু রাজনৈতিক হীন উদ্দেশ্যে দুই নেত্রীর ফোনালাপ মিডিয়া ফাঁস হওয়া প্রমান করেছে- ফোলকল, সংলাপ এসব আন্তরিক সদিচ্ছা নয় বরং রাজনৈতিক ফাঁদ। সাদা চোখে খালেদা জিয়ার যত সমালোচনাই হোক, অন্তত সময় প্রমান করেছে তার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা। তিনি দুষ্ট লোকের মিষ্টি কথায় ভোলেন নি, ফোনকল নাটকে আন্দোলন বন্ধ করে আবেগী ফাঁদে পা দেন নি।

অপরদিকে শেখ হাসিনা, যিনি মুখোমুখি রাজনৈতিক অবস্থানের সময়ে বিরোধী নেত্রীকে ফোন করে এবং সংলাপের প্রস্তাব দিয়ে সবার সপ্রসংশ মনঃযোগ আকর্ষন করলেও কোন নোটিস বিহীনভাবে তা রেকর্ড করা এবং রাজনৈতিক হীন উদ্দেশ্যে শিষ্টাচার বহিঃভূত ভাবে তা মিডিয়া প্রচার হওয়া তার রাজনৈতিক হীনমন্যতাই প্রকাশ করেছে!

এখন প্রশ্ন আসতে পারে- সরকারই যে এ ফোনালাপ ফাঁস করেছে, এর সত্যতা কি?
এ কথা ঠিক যে এমন ঘটনার দায় কেউ স্বীকার না করলে নিশ্চিতভাবে দোষ দেয়াটা কঠিন। তবে প্রেমিক-প্রেমিকার অন্তরঙ্গ ভিডিও ফাঁসের পর সে ভিডিওতে যদি একজনেই চেহারাই দেখা যায় আর অপর সঙ্গীর চেহারা না বোঝা যায়! তখন কি আর বুঝতে বাকি থাকে?
ফাঁস হওয়া ফোনালাপে শেখ হাসিনার স্বভাব বিরুদ্ধ শান্ত থাকা কি প্রমান করে?
বিষয়টির সাথে সেই জোকসের সাদৃশ্য খোঁজা যেতে পারে, যেখানে চালককে সাবধানে গাড়ি চালাতে দেখে-

সার্জেন্ট : আপনার ড্রাইভিং লাইসেন্সটা দেখি ।
গাড়ি চালক : আমি তো খুব সাবধানে গাড়ি চালাচ্ছি । বেআইনি কোনও কিছু তো করিনি । গাড়ির স্পিড ও তো ঠিক আছে ।
সার্জেন্ট : সেই জন্যই তো আমার সন্দেহ হল ।
তবে গাড়ি অতি সাবধানে চালানোর সন্দেহ আর সন্দেহ থাকে নি! লাইসেন্স দেখেই প্রমান হয়ে গেছে! যেমন প্রমান হয়েছে ফোনালাপ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কথায়- 'জনগণ অল্প জানবে কেন, তাই পুরোটাই জানার ব্যবস্থা করা হয়েছে'।

এখন অনেক গনতন্ত্রমনা, আমাকে প্রশ্ন করতে পারেন- 'জনগনকে এ পুরো তথ্য জানানোয় আমি শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ দেবো কিনা?
উত্তর : না।
জনগনকে পুরো তথ্য জানানোয় যদি ধন্যবাদ দিতে হয়, তবে তো আমাকে ধন্যবাদ দিতে হবে রাজিবকেও!
অপূর্বর সাথে প্রভার পলায়ন এবং বিয়ের পর যখন রাজিব-প্রভা-অপূর্ব নিয়ে চলছিল ত্রিমুখি মিডিয়া গসিপ।
তখন রাজিবই জনগনের উষ্নতার স্বার্থে শরিরালাপ প্রকাশ করেছিলেন! এবং মিডিয়া গসিপের আংশিক নয় বরং জনগনকে পুরো তথ্যই জানিয়েছিলো!
অনেকে হয়তো বলতে পারেন, এ তুলনাটা সঠিক হয় নি। রাজিব-প্রভার ব্যক্তি জীবনের সাথে দুই নেত্রীর কথোপকথন তুলনা যোগ্য নয়। দুই নেত্রী জাতীয় বিষয় নিয়ে সংকট উত্তোরনের জন্য কথা বলছিলেন। তাই এটা জাতীয় সম্পত্তি। জনগন এটা জানার অধিকার রাখে...
উত্তর : এক.- হেরোইন ছবিতে একটা ডায়ালগ আছে- 'তারকাদের জীবনও পাবলিক প্রোপার্টি'। তবে কি জনগনের সম্পত্তি নাম দিয়ে সব অন্যায় বৈধ হয়ে যাবে?
দুই.- ক'দিন আগে হাসিনা-এরশাদ মান ভাঙ্গানিয়া বৈঠকও নিশ্চই পাবলিক প্রোপার্টি! সেটা কি প্রকাশ করা হবে?
তিন.- যে যুদ্ধাপরাধির বিচার দেশবাসীর আগ্রহ আর আশাবাদের কেন্দ্রবিন্দু। সে বিচার সম্পর্কে জানার জন্য বিচারপতির স্কাইপি সংলাপও নিশ্চই পাবলিক প্রোপার্টি! তবে তা জানানোর জন্য মাহমুদুর রহমান জেলে কেন?
চার.- দুই নেত্রীর যদি পাবলিক প্রোপার্টিই হয় তবে ফোনালাপের শুরুতেই টিভিতে প্রচার করা হলো না কেন? কেন কোন নোটিস না করে গোপনে রেকর্ড করা হলো?
আসলে এটা ছিলো একটা ফাঁদ। যেটা ফোনালাপ ফাঁস হওয়াতেই প্রমান হয়েছে। প্রমান হয়েছে-
যার সাথে ফোনে কথা বলা নিরাপদ না, তার মিষ্টি কথায় আন্দোলন থেকে সরে আসাও সঠিক হতো না।
এটাই যদি হয় তার বিশ্বাসযোগ্যতা, তবে তার অধিনে সংলাপও নিরাপদ না, নির্বাচন তো নয়ই....

সোমবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

কুতর্কের দোকান

 শীতের কাছে গরমের অপমান!!

বুঝলা জেমান, গরমে হইবো শীতের কাছে অপমান..
অবাক হইয়া কইলাম- 'কন কি সাঁইজি? এই আশ্বিন মাসে শীত পড়বো নাকি?
সাঁইজি একতারাটা হাতে নিয়া কন্ঠ ছাড়িল-
♫♪আওয়ামীলীগের হাড় কাঁপাইতাছে, ক্ষমতা হারানোর শীত
নেভার আগে প্রদিপ শিখার জ্বলন, বিপরীত
মায়ে গায় এক সুর আর পোলার গান ভিন্ন
এমন হইলে হইবো কেমনে? লক্ষ্য হইলে অভিন্ন♫♪

সুরের মায়া কাটাইয়া আমি কইলাম- 'বুঝলাম, তেল ফুরাইনা আওয়ামীলীগ এখন নেভার আগে তারুন্যের সইলতা জয়র দিয়া শেষ বারের মত জ্বলতে চাইতাছে! কিন্তু এখানে কোথায় শীত? আর কোথায় ভিন্ন গীত?
সাঁইজি হাসিয়া কইলো- 'বৎস, আওয়ামীলীগে পাইয়া বইছে ক্ষমতা হারানোর শীত। অপর দিকে তারুন্যের গরমে ওয়াজেদ জয় পুরাই বিপরীত। এই বিপরীত্ব খালি শীত-গরমের অনুভূতিতে না, এ বিপরীত্ব তাদের বক্তব্যেও!!! 'শীতের কাঁপনে যখন শেখ হাসিনা গাইছে- '‘প্রার্থী নয় নৌকা দেখে ভোট দিয়েন'। তখন তারুন্যের গরমে জয়ের সুর- 'মার্কা নয়, যোগ্য নেতৃত্ব'!
তা কথা হইলো, যোগ্য নেতৃত্ব যদি আওয়ামীলীগে থাকিত তবে দলীয় সভানেত্রীরে শুধু নৌকা দেখাইতে হইতো না! এখন জয়ের গরমে সাধারন ভোটার বাদই দিলাম দলীয় দালালেরাও যদি মার্কা বাদ দিয়া যোগ্য প্রার্থী!(মন্দের ভালো) বাছিয়া লয়, তবে আওয়ামীলীগের কি হাল হইবো?
আমি বিষ্ময় লইয়া কইলাম- 'ক্ষমতা হারানোর শীতের কাঁপন থামাইতে আসিয়া, জয়ের গরম তো আরো কাঁপন বাড়াইয়া দিবো!!!


সাঁইজি হাসিয়া কইলো- 'বুঝলাতো জেমান, গরমে হইবো শীতের কাছে অপমান'।


 বাস্তবতার তুফান!!

বুঝলা জেমান, অগ্নি শপথ নিভাইবে, বাস্তবতার তুফান..
অবাক হইয়া কইলাম- 'কন কি সাঁইজি? অগ্নি শপথ ভাঙ্গে ক্যামনে? আর ভাঙ্গিলে তা অগ্নি শপথ হয় ক্যামনে?
সাঁইজি একতারাটা হাতে নিয়া কন্ঠ ছাড়িল-
♫♪শপথেরও নাই দরজা
খাঁচা ভাঙ্গাও নয়রে সোজা
তবু পাখি যাবে উড়ে
শুন্য খাঁচা রবে পড়ে।।
বলে সাঁই, এ নয় ছলাকলা
খাঁচার যে নাই তলা♫♪
...
সুরের মায়া কাটাইয়া আমি কইলাম- 'আওয়ামীলীগের এক শাসনে তলা বিহীন ঝুড়ি'র কথা জানতাম কিন্তু তলা বিহীন শপথের কথা তো জানতাম না!! এখানে শপথের অগ্নিইবা কি আর বাস্তবতার তুফানইবা কি?
সাঁইজি হাসিয়া কইলো- 'বৎস,তলা বিহীন ঝুড়িওয়ালারা এখন মিডিয়ার আশির্বাদে আর কথার ফুলঝুড়িতে ভোটারদের চক্ষুসাফাই করতাছে! প্রচারকে অপপ্রচার নাম দিয়া ঘোলা পানিতে ক্ষমতা শিকারের পায়তারা করতাছে। ভাব দেখাইতাছে- 'অপপ্রচার রুখতে পারলেই আওয়ামীলীগ আবার ক্ষমতায়!!!
কিন্তু প্রশ্ন হইলো, আওয়ামী কথিত এ অপপ্রচার রুখবে কারা? আওয়ামীলীগের কর্মীরাইতো, নাকি???
এখন কথা হইলো- 'অপপ্রচার রুখবার অগ্নি শপথ নেয়া আওয়ামী একনিষ্ঠ কর্মিকেও দিনশেষে বাজারে যাইতে হয়! ৪৫ টাকা কেজিতে চাল আর ৮০ টাকা কেজিতে পেঁয়াজ কিনতে হয়!! পেঁয়াজের ঝাঁঝে চোখে জল আসা সে কর্মীর নিশ্চই বুঝতে কষ্ট হয়- কোনটা অপপ্রচার? ৪৫ টাকায় চাল আর ৮০ টাকায় পেঁয়াজ? এটা কি অপপ্রচার? নাকি এ বাস্তবতাকে অপপ্রচারে ঢাকতে চাওয়াই অপপ্রচার?
বৎস, জীবনের প্রয়োজনে সে কর্মীকে বাজার করিতেই হইবে, আর এ বাস্তবতার তুফানে তার অপপ্রচার রুখার শপথ কি অটুট থাকিবে?

বুঝিলো জেমান, অগ্নি শপথ নিভাইবে, বাস্তবতার তুফান।


 অগ্নিসম জালা নিভাইতে বিদ্যুৎফুল মালা!!!

সাঁইজিকে কইলাম- 'সুন্দরবনের এ দূর্ভাগ্যের হেতু কি?
সাঁইজি কইলো- পরশ্রীকাতরতা....
অবাক হইয়া কইলাম- 'কন কি সাঁইজি? সুন্দরবন তো প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চার্য হয় নাই। হইলে না হয় কইতাম- ড. ইউনুসের মতো পুরষ্কার পাওয়াই সুন্দরবনের কাল হইছে...
পরশ্রীকাতরতা কি শুধু পুরষ্কারেই হয়??? বলিয়াই সাঁইজি একতারা হাতে নিলো-
♫♪হরিনের মাংসে, জাগে বাঘের সাধ
সুন্দর হওয়াটাই বড় অপরাধ।
কুটিলের প্রনাম্য নয়, দেবী স্বরসতী
কি করে মানিবে, তার চেয়ে সুন্দর সে অতি♫♪

সুরের মায়া কাটাইয়া আমি কইলাম- বাঘের নজরে, হরিনের মাংস হরিনের শত্রু হইতে পারে কিন্তু সৌন্দর্য্য সুন্দরবনের শত্রু হয় ক্যামনে?
সাঁইজি কইলো- 'আওয়ামীলীগের নজরে বৎস, আওয়ামীলীগের নজরে!!!
যে ফ্যাসিবাদী নজরে এখন আওয়ামীলীগই রাইট, অন্য সবাই রং, নুন্যতম ভিন্নমতও নাকি যুদ্ধাপরাধ বিচার বানচালের ঢং!!
আওয়ামীলীগের এমন লুকিং সেটাপে, সুন্দর মানেই আওয়ামীলীগ আর সুন্দরী মানেই নৌকা! সে মাইন্ড সেটাপে, সুন্দরী নামক গাছ আর সুন্দর নামক বন থাকিবে ভাবিলা কি করিয়া? বলিয়াই সাঁইজি গান ধরিল-
♫♪ সুন্দর নামেতেই, অগ্নিসম জ্বালা
পড়াইতে চাহে তারে বিদ্যুৎফুলমালা♫♪


 ব্যর্থতার বাতায়ন নাকি প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন!!!

বুঝলা জেমান, লোডশেডিং এরও আছে ইতিবাচক অবদান..
অবাক হইয়া কইলাম- 'কন কি সাঁইজি? অন্ধকারে অবদান পাইলেন কৈ?
সাঁইজি একতারাটা হাতে নিয়া কন্ঠ ছাড়িল-
♫♪ও মন তুমি, খুঁজতে জানো না
পায়ের নিচে রইলো পড়ি
হাত দিলেই পাইতা সোনা
মন তুমি, খুঁজতে জানো না♫♪

সুরের মায়া কাটাইয়া আমি কইলাম- 'অন্ধকারে খুঁজলে হয়তো সোনা পাইতাম, কিন্তু অনেক খুঁইজাও তো লোডশেডিংএর অবদান পাইতাছি না!!
সাঁইজি কইলো- 'বৎস, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ...বিভিন্ন সময় কহিয়াছিলো- 'দশ ট্যাকা সের চাইল দিবো, ঘরে ঘরে চাকরী দিবো, ফ্রি'তে সার দিবো, বিরোধী দল থাইকা ডেপুটি স্পিকার দিবো, ঈদের পর ইচ্ছা কইরা লোডশেডিং দিবো...
বিষ্ময় লইয়া কইলাম- 'সাঁইজি, খুঁজতে গিয়া অবদান, এ তো দিতাছেন ব্যর্থতার খতিয়ান?
মুচকি হাসিয়া, সাঁইজি কইলো- 'এখানে শুধু ব্যর্থতার মেঘই দেখলা, আড়ালে থাকা সফলতার সূর্য দেখলা না!! তোমরা শুধু লোডশেডিংয়ের আধারই দেখলা, প্রতিশ্রুতি পালনের আলো দেখলা না!
বৎস, অন্য সবকিছুতে যেখানে খুলিয়াছে ব্যর্থতার বাতায়ন, ঘনঘন লোডশেডিং যে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতিরই বাস্তবায়ন।
তাই লোডশেডিংয়ে হতাশ হইয়ো না! বরং আরো লোডশেডিং কামনা কর!! ইহাতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি রক্ষা হোউক, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করার অভ্যাস হোউক। বলিয়াই সাঁইজি একতারা হাতে নিলো-
♫♪লোডশেডিং এমনে প্রতিশ্রুতি ভূবনে
বাস্তবায়নের অভ্যাস করে, গোপনে গোপনে♫♪

আমি লোডশেডিংয়ের অন্ধকার অজ্ঞতায় চুপসে গেলাম।
সাঁইজি হাসিয়া কইলো- 'বুঝলাতো জেমান, লোডশেডিংয়ের ইতিবাচক অবদান!

শনিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

কুতর্কের দোকান

(নোট'স- পত্রিকায় মাঝে মাঝে কলাম লিখতে গিয়ে, বিবেকের বোতামগুলো খুলে দেখি- 'কুতর্কের দোকান' খুলে বসেছি! 'অলিক কু নাট্যরঙ্গে, মজে আছি রাঠে ভঙ্গে, নিরিখিয়া প্রানে নাহি সয়'।
তাইতো আধ্যাত্বিক সংস্পর্শ নিতে ছুটে যাই সাঁইজির কাছে। একতারা হাতে নিয়ে সে গান ধরে- "সিরাজ সাঁই ডেকে বলে লালনকে কুতর্কের দোকান সে করে না আর"।
কিন্তু কুতর্ক এড়ানোর জন্য সপ্ত তলা ভেদ করে হাওয়ার ঘরে পৌছানো আমার পক্ষে সম্ভব না। আর তাই সাঁইজিকে সাথে নিয়েই খুলে বসেছি, লিখছি কলাম 'কুতর্কের দোকান'।)

 বিবেক বিজ্ঞান

বুঝলা জেমান, বিবেক হইলো বিজ্ঞান!
আমি অবাক হইয়া কইলাম- 'কি কন সাঁইজি, বিবেক বিজ্ঞান হয় ক্যামনে?
সাঁইজি একতারাটা হাতে নিয়া কন্ঠ ছাড়িল-
♫♪দেখলিনা, বুঝলিনা ওরে মন ধুন্দা
জগৎ হইলো মুখস্তর জালে বান্ধা।।...
অন্বেষনে থাকতো যদি চিন্তার সততা
দেখতি, দেখতিরে মন বিবেকের আপেক্ষিকতা।।♫♪

সুরের মায়া কাটাইয়া আমি কইলাম- 'সময়ের আপেক্ষিকতা শুনছি কিন্তু বিবেকের আপেক্ষিকতা?
সাঁইজি গাইয়া চলিল-...
♫♪সময়ের পছন্দে বিবেক হয় ধীর
অপছন্দে বিবেক, গতিতে অধির।।
আদর্শের কপটতায় লালায় ভাসে যাহারা
এক যাত্রার ভিন্ন ফলে হৃদয় মরু সাহারা।।♫♪

কিছু না বুঝিয়া আমি কইলাম- 'ভাব বড্ড দুর্বোধ্য...
সাঁইজি হাসিয়া কইলো- 'দুর্বোধ্য তো মানুষের বিবেক!!
শাহ্ শফি যখন পুরুষ সুলভ লোলুপতায় মাইয়াদের তেঁতুল কইলো! ন্যায্য ভাবেই নারী অবমাননা হইলো। সুশিল বিবেকও ছিঃ ছিঃ করিল...
অথচ শেখ হাসিনা যখন নারী হইয়াও খালেদা জিয়াকে সাজুগুজু করা তেঁতুল কইলো। আশ্চর্য্য, এতে নারী অবমাননাও হইলো না! সুশিল সমাজ কথাও কইলো না!!
এইডাই হইলো দলীয় পক্ষপাতে বিবেকের আপেক্ষিকতা........ 

বুঝিলো জেমান, বিবেক হইলো বিঙ্জ্ঞান!!!

হাজারো বন্ধু অপেক্ষা নির্বোধ শত্রু শ্রেয় 

"আওয়ামীলীগ যার শত্রু, তার কোন বন্ধুর দরকার নাই"!
অবাক হইয়া কইলাম- 'কন কি সাঁইজি! শত্রুর আবার ভালা কি? তারপর আবার আওয়ামীলীগ?
সাঁইজি কইলো- 'বৎস, শত্রুই সৌন্দর্য্যময়!! সে শত্রু জ্ঞানীই হোক কিংবা নির্বোধ..
আমি জিগাইলাম- 'ক্যামনে?
সাঁইজি কইলো- 'নির্বোধ বন্ধু অপেক্ষা জ্ঞানী শত্রু শ্রেয়' আর "হাজারো বন্ধু অপেক্ষা নির্বোধ শত্রু শ্রেয়"! আওয়ামীলীগ হইলো নির্বোধ শত্রু!!
আমি কইলাম- 'আওয়ামীলীগরে আগ্রাসী জানিতাম।...... নির্বোধ হইলো ক্যামনে? আর শ্রেয়ই বা ক্যামনে?
সাঁইজি হাসিয়া কইলো- 'ড. ইউনুস নোবেল পাইয়া কি করিয়াছে? আওয়ামী শত্রু পয়দা করিয়াছে। সে শত্রুতাতেই সরকার এনবিআররে দিয়া নোবেল জয়ীরে দুর্নীতিবাজ প্রমানে গত ৭ বছরের আয়কর না দেয়া বিদেশ থেকে সম্মানী, পুরস্কার ও রয়্যালিটি বাবদ ৫০ কোটি ৬১ লাখ টাকা আয়ের হিসাব বাহির করিয়াছে..
আমি কইলাম- 'তো?
সাঁইজি হাসিয়া কইলো- 'এখানেই তো টুইস্ট! ছোট করিতে গিয়া সরকার ড. ইউনুসকে আরো বড় কইরা দিয়াছে। আওয়ামী প্রচারে এ দেশের মানুষ যে ব্যক্তিডারে রক্তচোষা সুদখোর বলিয়া জানিত, সে মানুষরাই আজ জানিতেছে- 'আমাদের দেশে এমন এক বড়মাপের মানুষ আছে যে কিনা বিদেশ থাইকা বক্তব্য আর পুরুষ্কার দিয়া ৫০ কোটি ৬১ লাখ টাকা আয় করিতে পারেন। বিদেশে যার এত সন্মান, আমরা তারে নিয়া গর্ব করিবো না কেন...
আমি কইলাম- 'খাইছে, এ তো শাপে বড় হইছে। শত্রুতা করিতে গিয়া হাজারো বন্ধুর কাজ করিয়াছে...
সাঁইজি হাসিয়া কইলো- 'বুঝলাতো, আওয়ামীলীগ যার শত্রু, তার কোন বন্ধুর দরকার নাই!



 তথ্য বিভ্রান্তির টুইস্ট!

বুঝলা জেমান, আগামী নির্বাচনেই হইবে আওয়ামী ক্ষমতার অবসান"।
অবাক হইয়া কইলাম- 'কন কি সাঁইজি! গায়েবি তথ্য নাকি?
সাঁইজি একতারাটা হাতে নিয়া কন্ঠ ছাড়িল-
♫♪ডিজিটাল জামানায়, কি খুঁজিবো গায়েবানায়?
প্রমান ছাড়া বিশ্বাস রাখা ভার
সত্য জানাইলো ওয়াজেদ জয়, তথ্যরো আঁধার..♫♪
সুরের মায়া কাটাইয়া আমি কইলাম- 'কোথাও ভুল করিতেছেন সাঁইজি! জয় তো ক্ষমতা অবসানের তথ্য না বরং আবার ক্ষমতা আসার তথ্য দিয়াছেন...
সাঁইজি গাইয়া চলিল-
♫♪বক্তব্যের টিউনে মন আনন্দে মাথা দোলাও তালে
বুঝলিনা ঘুমন্ত ভোটার, টুইস্ট কি যে বলে!
আবহাওয়ার পূর্বাভাসে যদি বৃষ্টি হবে বলে
ছাতা ছাড়া বেড়োয় সেদিন লোকে দলে দলে♫♪
কিছু না বুঝিয়া আমি কইলাম- 'ভাব বড্ড দুর্বোধ্য, সহজ ভাষায় খোলাসা করেন....
সাঁইজি হাসিয়া কইলো- 'বৎস, এ দেশে আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য ভুল প্রমান হইতে হইতে তথ্য আর ট্রু নাই টুইস্ট হইয়া গেছে! এখন পূর্বাভাস যদি দেয় বৃষ্টি হইবো, জনগন বুঝে ঠাঠা রোদ উঠবো...
না বোঝার ক্লান্তিতে আমি কইলাম- 'তো???
সাঁইজি কইলো- 'জয়ে কইছে- 'বিএনপি'র সময়ে দেশ ১ নম্বর দুর্নীতিগ্রস্থ দেশ হইছে'!
অথচ সত্য হইলো, বাংলাদেশ ১ নম্বর দুর্নীতিগ্রস্থ দেশ হয় ২০০০ সালে যখন আওয়ামীলীগ ক্ষমতায়।
জয়ে আরো কইছে- 'বিএনপির সময়ে সারা বিশ্ব বাংলাদেশরে 'ফেইলিয়র স্টেট' হিসাবে চিনতো আর এখন 'নেকস্ট ইলেভেন' হিসাবে চিনে!
অথচ সত্য হইলো- ২০০৫ সালে বিএনপি যখন ক্ষমতায় তখন মার্চেন্ট ব্যাংকার গোল্ডম্যান স্যাকস বাংলাদেশকে নেকস্ট ইলেভেন বলিয়া মত দিয়া ছিলো।
তাইলে বিষয়ডা কি দাঁড়াইলো???
এক.- জয় মিথ্যা তথ্য দিতাছে।
অথবা দুই.- জয়ের তথ্যে বিভ্রাট রহিয়াছে।
এখন কথা হইলো যার তথ্য এত মিথ্যা আর বিভ্রান্তি ভরা! তার তথ্য কি আর ট্রু আছে? টুইস্ট হইয়া গেছে। জয়ের তথ্য যখন কইছে 'নির্বাচনে আওয়ামী বৃষ্টি হবো' তখন ঠাঠা রোদই তো ওঠার কথা!!!
 বুঝিল জেমান, আগামী নির্বাচনেই হইবে আওয়ামী ক্ষমতার অবসান"

শুক্রবার, ২ আগস্ট, ২০১৩

অবোধগম্য অনুভূতি!

গ্রামীনফোনের আবেগঘন অথচ বাসতসম্মত বিজ্ঞাপনের মতোই এ দেশের অবস্থা!!
মেয়ে কলেজ যাচ্ছে, আর চুপিচুপি পিছু নিচ্ছে বাবা। অবশেষে বাবা যখন ধরা পড়ে যায়, মেয়ের সেকি রাগ!
বড় হওয়ার আত্বসন্মানী অভিমানে মেয়েটি বলে চলে- 'তোমারে কতবার না কইছি, এভাবে পিছু নিবা না। তুমি কি আমারে বড় হইতে দিবা না?
ছলছল অপরাধী চোখে বাবা বলে- 'বাপ হইলে বুঝতি রে মা!"
 

আসলে সন্তানেরা এভাবে বোঝে না! বোঝেনা ক্ষমতাশীনেরাও!
তাইতো বিজ্ঞা...পনের অভিমানি কন্যার মতোই বঙ্গবন্ধু কন্যা সমালোচনার অভিমানে, জনগনকে শিক্ষা দেবার জন্য ঈদের পরে ঘোষণা দিয়ে চার দিন বিদ্যুৎ বন্ধ রাখার কথা বলেছেন!!!

জনগন এখন কি করবে?

বিজ্ঞাপনের সেই বাবার মতো ছলছল অপরাধী চোখে প্রধানমন্ত্রীকে বলতে পারে- 'জনগন হলে বুঝতি রে মা। শেয়ার বাজারে নিঃস্ব হলে বুঝতি। যানজটে ঘন্টা খানেক আটকা থাকলে বুঝতি। ব্যাগ হাতে বাজারে গেলে বুঝতি...বুঝতি রে মা, জনগন হইলে বুঝতি....'

২ + ২ = ১৪!!!

জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের রায়ের আগে সাঁইজিকে কইলাম- 'অবশেষে তাইলে জামায়াত নিষিদ্ধ হইতাছে...
সাঁইজি হাসিয়া কইলো- 'এ ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি মার্কা স্বপ্ন বাদ দাও!
আমি বিষ্ময় লইয়া জিগাইলাম- 'মানে কি?
সাঁইজি কইলো- 'মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়। তোমার উচ্চতা যেহেতু ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি তাই এ স্বপ্নও ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি...কিন্তু বাস্তবতা যে প্রাগৈতিহাসিক!!!
আমি কইলাম- 'প্রাগৈতিহাসিক.....
... সাঁইজি কইলো- 'চিন্তা করো বৎস, এখানেই রহিয়াছে চিন্তাশীলের জন্য নিদর্শন। প্রাগৈতিহাসিকে প্রাচীর পায়ের দগদগে ঘাঁ কেন চিকিৎসা বিহীন রহিয়া যায়?
আমি জবাব দিলাম- 'এ ঘাঁ ই যে ব্যবসার পুঁজি! ঘাঁ সারিলে যে ভিক্ষায় ভাটা পড়িবে!
সাঁইজি হাসিয়া কইলো- 'প্রাগৈতিহাসিক কাল হইতে ইহাই রীতি, তা ভিক্ষাবৃত্তিতেই হোক কিংবা চেতনা ব্যবসায়। চিকিৎসা করিয়া, আইন করিয়া কেই বা পুঁজি হারাইতে চায়.....


কিন্তু সাঁইজির অনুমান মিথ্যা প্রমান করিয়া, আদালতে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল হইলো!  বিজয়ের হাসি হাসিয়া, সাঁইজিকে কহিলাম- 'প্রাগৈতিহাসিক কাল কি আর আছে সাঁইজি? দিন বদলাইছে না? প্রাচীর ঘা না সারিলেও জামায়াত কিন্তু ঠিকই নিষিদ্ধ হইয়াছে!
বিরক্তি নিয়া সাঁইজি কইলো- 'তোমরা হইলা হাইকোর্ট দেখা বাঙ্গাল! অল্প পানির রাজনৈতিক ব্যাঙ, সমুদ্রের বেশী পানির রাজনৈতিক প্যাচে পইড়া লাফাইতাছ...
আমি কইলাম- মানে কি?
সাঁইজি কইলো- 'জামায়াত তো নিষিদ্ধ হয় নাই, নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন বাতিল হইয়াছে মাত্র।
আমি কইলাম- 'ঐ একই তো হইলো?
সাঁইজি হাসিয়া কইলো- 'ওরে বেভুল তুই করছিস ভুল। ফেসবুকে আইডি ব্লক আর রং পাসওয়ার্ডে এন্টার চাপায় লগইন ব্যর্থতা কি এক হইলো? যদিও দুইডাই লগআউট অবস্থা!
আমি কইলাম- 'না। রং পাসওয়ার্ডে এন্টার চাপার লগইন ব্যর্থতা, রাইট পাসওয়ার্ডে লগইন হবে কিন্তু ব্লক হইলে তো আইডি ই গেল....
সাঁইজি কইলো- 'এখানেই রহিয়াছে চিন্তাশীলের জন্য নিদর্শন। রাজনৈতিক রং পাসওয়ার্ডে এন্টার মারা জামায়াত, আওয়ামী সঠিক পাসওয়ার্ডে এন্টার মারিলেই আবার নিবন্ধনে লগইন করিবে....
বলিয়াই সাঁইজি শুরু করিল, রক এন্ড রোল- "কলিজায় সাউন্ড মারছে ৯৬'র ডাক, ডারলিংয়ের নিবন্ধন আজ জিন-ভূতে খাক"...
আমি বিরক্তি নিয়া কইলাম- 'স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তির বিরুদ্ধে এ আপনার কেমনতর বিবেচনা?
সাঁইজি হাসিয়া কইলো- 'দুইয়ে দুইয়ে চার মিলাও বৎস। উপাত্ত হিসাবে মন্তব্য দুইডাও রাখিও-
মন্তব্য এক.- "শর্ত পূরন করে ফের আবেদন করতে পারবে জামায়াত"--নির্বাচন কমিশনের প্রধান আইনজীবি শাহদীন মালিক।
মন্তব্য দুই.- "জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই"--সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।

তাগাদার স্বরে সাঁইজি কইলো- 'কিহে, দুইয়ে দুইয়ে চার মিলিয়াছে?
আমি করুন স্বরে কইলাম- আমার তো চার মিলিয়াছে সাঁইজি! কিন্তু অনেকেই দেখি দুইয়ে দুইয়ে, চারের আগে এক বসাইয়া চৌদ্দ মিলাইতাছে!
সাঁইজি হাসিয়া কইলো- 'দলকাঁনারা তো দিন শেষে চৌদ্দই মিলাবে, মিলিবে! হাজার হোক জোটটা তো চৌদ্দ দলেরই, নাকি?

শনিবার, ২০ জুলাই, ২০১৩

কত ধানে, কত চাল!!!

গরিবের কথা বাসি হলে ফলে!
দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার অছিউদ্দিনের একটি ধানের ভেতর থেকে দুই থেকে তিনটি চাল আবিষ্কারের খবর দেখে দুই মাস আগে এক কলামে লিখেছিলাম- ""এবার এক ধানে পাওয়া যাবে দুই চাল"। শুধু কৃষি প্রধান দেশ বলেই নয়, নির্বাচনের বছরে এ অসাধারন ঘটনাটি, সাফল্যের এক অনন্যসাধারন রাজনৈতিক রুপক। কৃষি গবেষনার এ সফলতা ১৬ কোটি(!!) মানুষের যেমন খাদ্য ঘাটতি পূরন করবে। তেমনি এ ঘটনায় অনুপ্রানিত রাজনৈতিক গবেষনায় সব দলের অংশ গ্রহনে নির্বাচনকে গ্রহনযোগ্য করে তুলবে! অদূর ভবিষৎ এ এদেশের মাঠে শুধু এক ধানে দুই চালই বেরোবেনা, নিকট ভবিষৎএ এ দেশের রাজনৈতিক ময়দানে এক 'ধানের শীষে' দুই বা ততোধিক দলও বেরোবে! ফলে খাদ্য ঘাটতি যেমন মিটবে, তেমন দলীয় সরকারের অধীনে অগ্রহনযোগ্য নির্বাচনের গ্রহযোগ্যতার ঘাটতিও মিটবে....! অভিনন্দন কৃষি গবেষকেরা। অগ্রিম অভিনন্দন রাজনৈতিক গবেষকেরা....!!!"
ইতিমধ্যেই মাহশাল্লাহ্ এ গরিবের কথার সফল ফলনে  রাজনৈতিক গবেষকদের গবেষনায় নতুন দল হিসাবে নিবন্ধিত হতে যাওয়া বিএনএফকে গমের শীষ প্রতিক বরাদ্ধ দিতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন!!!!
নুন্যতম স্থানীয় নির্বাচনের একই ব্যালটে কলস আর জগ প্রতিক থাকার বিরম্বনা সম্পর্কেও যদি ধারনা থাকে তবে জাতীয় পর্যায়ের নির্বাচনে এমন হটকারী স্বীদ্ধান্ত নেবার সুযোগ নেই। পারস্পারিক আস্থা, বিশ্বাসের ঠুনকো রাজনৈতিক অবস্থানে থাকা দু দলকে নির্বাচনে আনা এবং অবাধ ও সুষ্ঠ নির্বাচন সম্পন্ন করার কান্ডারি হিসাবে নির্বাচন কমিশনের এ স্বীদ্ধান্ত অবিবেচনা প্রসুত এবং একটি বিশেষ দলের প্রতি সুস্পষ্ট পক্ষপাত! যা কিনা ভবিষৎ এ শুধু খারাপ দৃষ্টান্ত হিসাবেই নয় বরং কার্যকরও হবে! সাক্ষরতা দিয়ে শিক্ষার হার বাড়ানো পশ্চাৎপদ একটি দেশে ধানের শীষকে বেকায়দায় ফেলতে গমের শীষ প্রতিক দিয়ে বরং ভবিষৎ এ নৌকাকে বেকয়দায় ফেলতে ছই বিহীন নৌকা প্রতিক বরাদ্ধ দেয়ার নোংরামির সূচনা করা হলো.....শেইম ইসি। শেইম ইসি'র কাঁধে বন্দুক রাখা সরকারি ভিসি!!!

 এখানে সরকারি ভিসি, বলতে চালবাজ সরকারকেই বোঝানো হচ্ছে। যারা বাজারে এনেছে এ নতুন চাল!
বাজারে এখন হরেক রকমের চাল!!! মিনিকেট, আটাশ, জিরা, নাজিরশাহ.....আরো আছে আতোপ চাল, পোলাও চাল, আছে রাজনৈতিক চাল! তবে এই মুহূর্তে বাজারের সেরা চাল সম্ভবত বিএনপিকে ঘায়েল করতে বিএনএফ দল এবং তাদের গমের শীষ প্রতিক দেওয়া আওয়ামী চাল!
নতুন এ উদ্ভাবনী চালের জন্য চালবাজ সরকার অভিনন্দন প্রাপ্য। যদিও কথায় আছে- 'পুরানো চাল ভাতে বাড়ে'। আর জনসমর্থনই যে রাজনৈতিক দলের পুরানো এবং চিরন্তন চাল। জনসমর্থন হারিয়ে, ধানের শীষ আর গমের শীষের ধোয়াসার নতুন কূট চালে, ভাত কতটুকু বাড়বে? আর ভোটেই বা কতটুকু প্রভাব পড়বে?
তবে এ কূটচালে ভাত আর ভোট বাড়ুক না বাড়ুক। অন্তত '"দশ ট্যাকা সের চাল খাবো, আওয়ামীলীগে ভোট দেবো" শ্লোগান দেয়া জনগনকে দশ ট্যাকা সের চাল খাওয়াতে না পারলেও, ফ্রি তে যে কূট চাল খাওয়ানো যাচ্ছে! এটাও চালবাজদের বড় সফলতা!!

অনেকেই প্রশ্ন করতে পারেন- নতুন দল পয়দা হইছে, ভালো কথা। তা প্রতিক গমের শীষ হলো কেন?
আসলে জনসংখ্যাধিক্যে খাদ্য ঘাটতি মোকাবেলায়, আপনাকে হয় খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে হবে নয়তো জনসংখ্যা কমাতে হবে। তেমনি জনসমর্থনহীনতায় ভোট ঘাটতি মোকাবেলায়, সরকারকে হয় নিজেদের ভোটার বাড়াতে হবে নয়তো প্রতিপক্ষের ভোট কমাতে হবে।
কিন্তু সরকারের জন্য পরিহাস হলো, শেয়ার বাজার, হলমার্ক, পদ্মাসেতু, ছাত্রলীগ, হেফাজত ইস্যু সহ দাম্ভিকতার ভাঙ্গাতরী ছেঁড়া পালে আর কতকাল??? পাঁচ সিটির ফলাফলই যার প্রমান এবং ভবিষৎ পরিনতির নমুনা। জনসমর্থনের আর অদক্ষতার তলানীতে থেকে সরকারের পক্ষে যেহেতু নিজেদের ভোট বাড়ানো সম্ভব নয় তাই অবধারিত ভাবেই বিএনপি তথা ধানের শীষের ভোট কমাতে হবে। আর এ প্রক্রিয়ার অংশ হিসাবেই নিবন্ধন পেয়েছে বিএনএফ এবং প্রতিক পেয়েছে গমের শীষ।

দলীয় সরকারের অধীনে ধান আর গমের একাকার ছাড়াও আরো দুইটি বিষয় এখানে আশংকা জাগানিয়া!
আশংকা এক.- ভোট গ্রহন শেষ হয় বিকালে। অর্থ্যাৎ ভোট গননা হয় বিকালের হালকা আলোয়। যেখানে প্রশাষনিক প্রভাবে ধানের শীষের ব্যালট, গমের শীষের মধ্যে ঢুকিয়ে দেয়া হতে পারে।
আশংকা দুই.- শেষ পর্যন্ত যদি বিএনপি দলীয় সরকারের অধিনে নির্বাচনে না আসে তবে বিএনপি'র স্থলে বিএনএফ'কে এবং ধানের শীষের স্থলে গমের শীষ দেখিয়ে নির্বাচন বৈধ করার চেষ্টা করা হবে।
আসল কথা হলো, ফাউল রাজনীতিতে এটা আওয়ামীলীগের বড় একটি ফাউল। আর এ ফাউল সম্পর্কে গরিবের ভবিষৎবানী হলো- এটা নোংরামির দৃষ্টান্ত স্থাপন করলো। যার ফলে একসময় আসবে যখন আওয়ারা লীগ নামে নতুন দল পয়দা হবে! আর যার প্রতিক হবে ছই বিহীন নৌকা!
দেখা যাক গরিবের এ কথাটাও বাসি হলে ফলে কিনা........

শনিবার, ৬ জুলাই, ২০১৩

নির্বাচন সুষ্ঠতার ডিলারেরা আসেন অংক করি

নির্বাচন সুষ্ঠ হয়েছে, সরকারের নৈতিক বিজয় হয়েছে, প্রমান হয়েছে দলীয় সরকারের অধিনে সুষ্ঠ নির্বাচন সম্ভব....
বলে বলে সান্তনা খোঁজা সুষ্ঠতার ডিলারেরা আসেন অংক করি-

প্রশ্ন এক.- গাজীপুরের মোট ভোটার ছিল ১০ লাখ ২৬ হাজার ৯৬৪ জন। ইসি'র দেয়া তথ্যমতে, ভোট কাস্টের হার ৬০% হলে, মোট কাস্টকৃত ভোটের পরিমান কত?

সমাধান-
১০০ জনে কাস্ট হয় ৬০ ভোট
১ জনে কাস্ট হয় ৬০/১০০ =০.৬ ভোট
১০২৬৯৬৪ জনে কাস্ট হয় ৬০*১০২৬৯৬৪/১০০ = ৬১৬১৭৮ ভোট(প্রায়)

উত্তর- মোট কাস্টকৃত ভোটের পরিমান ৬১৬১৭৮ ভোট(প্রায়)।

যেহেতুএর মধ্যে নষ্ট ভোটও আছে তাই কাস্টকৃত ভোট থেকেই নষ্ট ভোট বাদ দিলেই পাওয়া যাবে সঠিক ভোটের সংখ্যা। ধরা যাক নষ্ট ভোট ১০০০০, তাহলে সঠিক ভোটের সংখ্যা=৬১৬১৭৮-১০০০০=৬০৬১৭৮ ভোট।

প্রশ্ন দুই.- মান্নান পেয়েছেন- ৩,৬৫৪৪৪ ভোট, আজমত পেয়েছেন- ২,৫৮৮৬৭ ভোট এবং অন্যান্য প্রার্থীরা পেয়েছেন- ১১৭৩৭ভোট। তাহলে সকল প্রার্থীর মিলিত ভোট কত?

সমাধান-
মান্নানের ভোট+ আজমতের ভোট+ অন্যান্য প্রার্থীর ভোট= ৩,৬৫৪৪৪+২,৫৮৮৬৭+১১৭৩৭ =৬৩৬০৪৮ ভোট।

উত্তর- সকল প্রার্থীর মিলিত ভোট ৬৩৬০৪৮।

প্রশ্ন তিন.- সঠিক ভোট ভোট ৬০৬১৭৮, অথচ সকল প্রার্থীর মিলিত ভোট ৬৩৬০৪৮! এখানে অতিরিক্ত ভোট কত?

সমাধান-
সকল প্রার্থীর মিলিত ভোট - সঠিক ভোট = ৬৩৬০৪৮ - ৬০৬১৭৮ = ২৯৮৭০ ভোট!

উত্তর- অতিরিক্ত ভোট-২৯৮৭০!!

এইবার কন ভাই, সুষ্ঠ নির্বাচন নিয়া কি যেন কইতে লাগছিলেন???
 

মঙ্গলবার, ২৫ জুন, ২০১৩

এ দেশে মানবাধিকার কমিশনের দরকার কি???



'এ দেশে গরিবের জন্য বিচার নাই'!!!

নির্মম সত্যটা অনেক দেরিতে বুঝলেন লিমনের বাবা তোফাজ্জেল হোসেন।
গরিবের ভাত নাই, কাপড় নাই, নাই মাথা গোজার ঠাই।
ইয়াসমিনদের ইজ্জত নাই, লিমনদের পা নাই, শাহিনাদের জীবনের নিরাপত্তা নাই! এ দেশে গরিবের বিচার নাই, নাই গরিবের মানবতাও!
প্রতি মাসে আদালতে হাজিরা দেবার খরচের অক্ষমতায় এ বিচার বিক্রি হয়! একটি সরকারী অথবা বেসরকারী চাকরির প্রয়োজনে, প্রধানমন্ত্রীর ফটোসেশানের সহায়তার দাবীতে এ বিচার চাপা পড়ে! নুন্যতম স্বাভাবিক জীবন যাপনের স্বার্থেও বিচার গরিবের জন্য শুধুই মধ্যস্থতা!
আর তাইতো গরিবের জন্য মানবাধিকার কমিশন হয়ে যায় বর্বরতা আর মানবতার 'মধ্যস্থতা কমিশন'! মুখে মানবতার বুলি কপচে করে ক্ষমতার পূজা! বলে- 'র্যাবের সাথে যুদ্ধ করে পারা যাবে না। কারন রাষ্ট্র তাদের পক্ষে। রাষ্ট্রের সাথে লড়াই করে টেকা যায় না।"
যে রাষ্ট্রের একটি বাহিনীর মানবাধিকার লংঘনের বিচার প্রত্যাশিকে মধ্যস্থতার প্রস্তার দেয় সয়ং মানবাধিকার কমিশন! সে দেশে মানবাধিকার কমিশনের দরকার কি?
যে দেশে এক পা হারানো পঙ্গু লিমনের বিচার নাই সে দেশে দুই পা হারানো লুলা 'মধ্যস্থতা কমিশনের' কোন দরকার নাই।।।

***মধ্যস্থতা সফল হোক না হোক, মাহশাল্লাহ্ মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান দ্বিতীয় মেয়াদে আরও তিন বছরের জন্য নিয়োগ পেয়েছেন। অভিনন্দন জনাব রহমান। লিমন বিচার না পাক আপনি তো চাকরির বর্ধিত মেয়াদ পেয়েছেন।

সোমবার, ২৪ জুন, ২০১৩

তুমি আর নেই সে তুমি!!!

আষাঢ়ের প্রথম সপ্তাহ চলছে...
গ্রীষ্মের দাবদাহ পেরিয়ে আর আম-কাঁঠাল পাকা গুমোট গরম ছাপিয়ে যখন নামছে স্বস্তির বৃষ্টি।
কিন্তু হায়! আষাঢ়ের বরষন শুধু প্রকৃতি আর মানব শরিরেই শান্তি আনতে পারছে, এদেশের রাজনীতি এবং রাজনীতি প্রিয় মানুষের মনে শান্তি আনতে পারছে না! পারবেই বা কি করে? এদেশের প্রকৃতি বৈচিত্রময়, রাজনীতি নয়! এদেশের প্রকৃতিতে গ্রীষ্ম পেরিয়ে বর্ষা আসে কিন্তু রাজনৈতিক পালা বদল সেই একই ভাঙ্গা রেকর্ড! একই তালে, একই সুরে বারবার বেজে যাওয়া একই উৎকন্ঠা। নির্বাচন নিয়ে একই অনিশ্চয়তা! বৈচিত্রহীন এ রাজনীতিতে গ্রীষ্মের পর শুধু গ্রীষ্মই আসে বর্ষা আসে না!
রাজনীতির এ চিরন্তন হতাশা নিয়েই বারান্দায় দাড়িয়ে বৃষ্টি দেখছিলাম। বাহিরে ঝুম বৃষ্টি। বৃষ্টি ভেজা বাতাস আমাকে করছে শিতল, বাতাসের ঝাপটায় ছুটে আসা বৃষ্টি ফোটা আমাকে করছে শিহরিত। আমি হাত বাড়িয়ে বৃষ্টি ছুই, ভিজি। রুমে বেজে চলছে, ভেসে আসছে হৈমন্তি শুক্লার গান-
♫♪ওগো বৃষ্টি আমার চোখের পাতা ছুয়ো না,
আমার এতো সাধের কান্নার দাগ ধুয়ো না,
সে যেন এসে দেখে,পথ চেয়ে তার কেমন করে কেঁদেছি ।।
দোহাই গানের বীণা,মনকে ভরে তুলো না, ।।
দেখেই তাকে ব্যথার এ গান ভুলো না,
সে যেন এসে শোনে,তার বিরহে কী সুর আমি সেধেছি ।।
ক্লান্ত প্রদীপ ওগো,হঠাৎ আলোয় ফুটো না,।।
দেখেই তাকে উজল হয়ে উঠো না,
সে যেন এসে জানে,কোন আঁধারে এ রাত আমি বেঁধেছি ।।♫♪

হঠাৎ করে বৃষ্টি আমার কাছে দৃষ্টি কটু হয়ে ওঠে! আমি ভাবি, বৃষ্টি যদি আমার চোখের পাতা ছুয়ে দেয়? গনতন্ত্রের জন্য, একটি সুষ্ঠ নির্বাচনের জন্য আমার সাধের আবেগের দাগ ধুয়ে দেয়? বৃষ্টি যদি সুষ্ঠ নির্বাচনের জন্য তত্বাবধায়ক সরকারের পথ চেয়ে কান্নার আকুতি মুছে দেয়?
যদিও ইতিমধ্যেই ৪ টি সিটিতে দলীয় সরকারের সময়েই সুষ্ঠ নির্বাচন হয়েছে। কিন্তু দোহাই গনতন্ত্রের মুলা, মনকে ভরে তোলা যাবে না, দেখেই তাকে ব্যথার আশংকার গান ভোলা যাবে না। সরকারের দমনে ক্লান্ত প্রদিপ, এ হঠাৎ আলোয় ফোটা যাবে না। ৪-০ ফল দেখেই উজ্জল হয়ে ওঠা যাবে না।

হঠাৎ করে অসহ্য হয়ে ওঠা বৃষ্টি আর বৃষ্টির গান থেকে বাঁচতে আমি চলে যাই রুমে। গানের প্লে লিস্ট চেন্জ করে সব সময়ের প্রিয় শচীন দেব বর্মন সিলেক্ট করেই হাতে নিয়েছি দৈনিক পত্রিকা। বাহিরে ঝুম বৃষ্টির শব্দ, রুমে চলা মৃদু স্বরে বেজে যাওয়া গান পাশে রেখেই আমি পড়ে চলছি-  শনিবার গণভবনে রংপুর জেলা আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপির তত্ত্বাবধায়ক সরকার-বিষয়ক দাবি প্রসঙ্গে বলেছেন, "অনির্বাচিত কোনো সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে না। তত্ত্বাবধায়ক সরকার এসে একবার নির্যাতন-অত্যাচার চালিয়েছে। বিরোধীদলীয় নেতা ও আমাকে জেলে পাঠিয়েছে।"
 তিনি আরো বলেন, "এর আগে তারা তিন মাসের জন্য ক্ষমতায় এসে দুই বছর পার কেরছে। আরেকবার ক্ষমতায় আসলে তিন বছর নয়, কেয়ামত পর্যন্ত থাকবে।"
আমি দীর্ঘশ্বাস ছাড়ি। প্লেয়ারে তখন বেজে চলছে- 
♫♪তুমি আর নেই সে তুমি. তুমি আর তুমি আর তুমি আর নেই সে তুমি। জানি না জানি না কেন এমনও হয়, তুমি আর নেই সে তুমি.♫♪
আমি ভাবছিলাম- শচীনজি, তুমি আসলেই গ্রেট। তুমি, তোমার সৃষ্টি আজো প্রাসংগিক। তুমিরা কখনোই আর সেই তুমি থাকে না। আগেও না, এখনো না এমনকি ভবিষেৎও থাকবে না!
একসময় যিনি তত্বাবধায়ক সরকারের জন্য আন্দোলন করেছিলো, প্রচার করেছিলো তত্বাবধায়ক সরকার তার ব্রেইন চাইল্ড। 'নির্যাতক' সেনা-সমর্থিত সরকার ক্ষমতা দখলের পরও যিনি তাকে নিজেদের 'আন্দোলনের ফসল' হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলো। ক্ষমতায় গিয়ে তাদের সকল কর্মকাণ্ডের বৈধতা দেবেন মর্মেও ঘোষণা দিয়েছিলো, যেই তিনি। তিনি আর নেই সে তিনি।
তবে দিনবদলের কথা বলে ক্ষমতায় আসা প্রধানমন্ত্রীর এতটুকু বদল হয়তো সহজেই মেনে নেয়া যায় কিন্তু মেনে নিতে কষ্ট হয় তার ব্রেইন চাইল্ডকে তিনিই যখন জনমতকে উপেক্ষা করে হত্যা করেন। কিসের স্বার্থে? এর মাঝে কি দুরভিসন্ধি লুকিয়ে আছে?
আজ তিনি তত্বাবধায়ক বাতিলে নির্যাতন-অত্যাচার, জেল-জুলুম আর কেয়ামতের ভয় দেখান। অথচ তার আন্দোলনের ফসলের  নির্যাতন-অত্যাচার, জেল-জুলুমের দায় কি অবলিলায় এড়িয়ে যান। এ দায় তিনি এড়াতে পারেন না। তার আন্দোলন ফসলেই সেনা সমর্থিত সরকার ৩ মাসের জন্য ক্ষমতায় এসেছিলো আর তার সকল কাজের বৈধতা দেবার ঘোষনাতেই তারা দুই বছর পার করার সাহস পেয়েছিলো এবং এখনো নিরাপদে আছে! এ দায় বদলে যাওয়া তিনি কিভাবে অস্বীকার করবেন?

দেশের সর্বোচ্চ রাজনৈতিক ব্যক্তির দূর্বল নৈতিক অবস্থানের হতাশায় ছুড়ে ফেলি পত্রিকা!
বাহিরে তখনো বৃষ্টির শব্দ, প্লেয়ারে তখনো বেজে চলছে-
♫♪তোমার চোখেরও পাতা নাচে না
নাচে না আমারো পথ চেয়ে
তোমার পায়ে পায়ে মল বাজে না
বাজে না আমারো সাড়া পেয়ে 
হাসো না হাসো না সে হাসি মধুময়
তুমি আর নেই সে তুমি♫♪

বৃহস্পতিবার, ৩০ মে, ২০১৩

সত্য সেখানে চাপা পড়বেই

বিশ্বাসীরা তো বিশ্বাসী বটেই,
এতদিন যারা বলেছে অবিশ্বাস দীর্ঘজীবি হোক-
তারাও বিশ্বাস এনেছে প্রশ্নবিহীন অনুগত্যে!
বিশ্বাস এনেছে আবেগের অতিশয্যে....


আসলে ব্যাপারটা হলো-
মতাদর্শ প্রচারই যেখানে চুরান্ত লক্ষ্য
যুক্তি যেখানে নিজকে প্রতিষ্ঠিত করার যন্ত্র
ভন্ডামি যেখানে সুশিলতার পরিচায়ক
সত্য সেখানে চাপা পড়বেই....

আর চাপা পড়া, বিচ্ছিন্ন হওয়া,
সে সত্যের গলিত লাসের ফসিল
আবেগ, বিশ্বাস আর মতাদর্শের ফর্মায় ফেলে
হয়ে যাবে চিরন্তন!!!
পূজারিরা মাথা ঝুকাও....

সত্যের পচে  যাওয়া, গলে যাওয়া
মাংসপিন্ড, কখনো ভারী করবে বাতাস,
সে দুর্গন্ধময় বাতাসও চাপা পড়বে-
ব্যাক্তি পূজারিদের,
ধুপ আর আগরবাতির কৃত্তিম সুবাসে


পূজারিরা মাথা ঝুকাবে...
মাথা ঝুকাবে- প্রশ্নবিহীন অনুগত্যে!
মাথা ঝুকাবে- আবেগের অতিশয্যে....

শুক্রবার, ৩ মে, ২০১৩

নিশ্চিন্ত প্যাকেজ রকস! জনগন শকস!!



দেশের সবকিছুই এখন চলছে, গ্রামীনফোনের নিশ্চিন্ত প্যাকেজে!
মাছের বাজার থেকে শেয়ার বাজার, আক্কেল ডেন্টাল থেকে কুইক রেন্টাল, ঝাকুনির হেতু থেকে পদ্মা সেতু!
এছাড়াও শিবিরের চোরাগোপ্তা হামলা, বিরোধী দলের বিরুদ্ধে গাড়ি পোড়ানোর সাজানো মামলা!
তত্বাবধায়ক ইস্যু আর তা ঠেকেনোর জন্য সংশোধনী টিস্যু!
ধ্বসে পড়া শ্রমিকের লাশ, আর তার ওপর দাড়িয়ে রাজনৈতিক উপহাস!
সবকিছুই চলছে নিশ্চিন্ত প্যাকেজে......
তবে এ নিশ্চিন্ত প্যাকেজের ব্যান্ড অ্যামবাসেডর সম্ভবত অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবুল মুহিত!
শেয়ার বাজারে যখন কোটি কোটি টাকা লুটে নেয়া হলো, তিনি ছিলেন নিশ্চিন্ত! বললেন- "এ বাজার দুষ্টু বাজার"!
হলমার্ক কেলেংকারিতে দেশের ব্যাংকি খাত যখন টালমাটাল, তিনি তখন নিশ্চিন্ত প্যাকেজের মোড়ক খুলে বললেন-"চার হাজার কোটি টাকা, এটা কোন বড় অঙ্কের অর্থ নয়। এ নিয়ে হৈচৈ করারও কিছু নেই”!
সাভারে ভবন ধ্বসে যখন ৫২৮জন(এখন পর্যন্ত প্রকাশিত) নির্মম ভাবে মারা গেল, নিশ্চিন্ত প্যাকেজের বড় বিজ্ঞাপনে তিনি বললেন-"সাভারের ঘটনা তেমন বড় কিছু নয়"!

নিশ্চিন্ত, সবই নিশ্চিন্ত! জমি-জিরাত বিক্রি করে, বাপের পেনশনের টাকা ভেঙ্গে, মায়ের বিয়ের বালা বিক্রি করে শেয়ার বাজারে সরকারের দুষ্টুমিতে পুঁজি হারিয়েছি, তবুও মেনে নিয়েছি.....
আমাদের ট্যাক্সের টাকায় গড়ে ওঠা রাষ্ট্রীয় ব্যাংক থেকে হাজার কোটি লুটে নিলো হলমার্ক, তবুও চার হাজার কোটি টাকা বড় কিছু নয় ভেবে সহ্য করেছি এ কথা ভেবে - যে দেশের প্রধানমন্ত্রীর আপ্যায়নে একদিনেই ব্যয় হয় ২ লাখ ১৪ হাজার টাকা! সে দেশে হয়তো চার হাজার কোটি সত্যি বেশি কিছু নয়!
কিন্তু আমার ভাই, বোনেরা যখন স্বার্থের ক্রংকিটে চাপা পড়লো! লাশের সংখ্যা যখন সেঞ্চুরির রেকর্ডের পর রেকর্ড ভাঙ্গলো! অন্তত প্রিয়জনের শরিরের একটুকরা গলিত মাংস পিন্ডের জন্য, এক বিকৃত অবয়বে একমুঠো মাটি দেবার জন্য, রাতের পর দিন, বৃষ্টিতে ভিজে রোদে শুকালো! সেই শোকের ওপর দাড়িয়ে, চার অংকের(!) লাসের, ক্ষতবিক্ষত শরির আর বিক্ষত হৃদয়ের ওপর দাড়িয়ে- আমি কি করে নিশ্চিন্ত হবো? অর্থমন্ত্রীর বেহুদা কথায়, কিছুই হয়নি মেনে নেবো?

নাদের আলী, আমি আর কত বড় হবো? আমি আর কত নিশ্চিত হবো? আমি আর কত বেহায়া হবো?

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০১৩

হয়তো ওদেরই ভুল!!!



হয়তো ওদেরই ভুল!
নয়তো কেনই বা, অঁজপাড়া গাঁয়ের রহিম কিংবা রহিমা
নুন্যতম সন্মান আর সমৃদ্ধির জন্য আসে লাশ হতে!

তাগড়া যুবক রহিম কিংবা করিম,
গৃহস্থের কামলা হয়ে কিংবা রিক্সার প্যাডাল ঘুরিয়ে
বেশ ভালোই খেয়ে পড়ে, বেঁচে থাকতে পাড়তো...
হতাশ কেউ কেউ,
অভাবে স্বভাব নষ্টে...
করতে পারতো সিঁধেল চুরি কিংবা অন্যের পকেট সাফাই...

সদ্য কিশোরী রহিমা কিংবা সকিনা,
অভাবের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে যার
বুক আর শরিরের বাঁক...
বিকাশমান গতরের খাটুনিতে
বুয়া বেশে,
গৃহকর্তৃর আড়ালে গৃহকর্তার টিপ্পুনি হজম করে
কেটে যেতে পারতো, নিরবতাময় এক নিরব জীবন।
কেউ কেউ অভাবি যৌবনে,
বাঁকা শরিরের সাথে চরিত্রকে বাঁকিয়ে-
বস্ত্রহীন বুকটা আরেকটু উন্মুক্ত করে-
ক্ষুধার্ত পেট ভরানোর পাশাপাশি
আরেকটু লোভে নিজেকেই ভরাতে পারতো
লোলুপ ষাঁড় কিংবা পাঁঠার ঐরশে...

তবুও তারা বেঁচে থাকতো
বেঁচে থাকতো, কামলা কিংবা বুয়া হয়ে
চোর কিংবা বেশ্যা হয়ে-

যে মেয়েটির বুকে ভেঙ্গেছে, কংক্রিটের দেয়াল
রং-চং মেখে সন্ধ্যায়, সংসদের কোণায় দাঁড়ালেই
সে বুক আজ শিহরিত হতো লম্পটের নরম ঠোঁটে।
আঘাতে বিচ্ছিন্ন হয়েছে যে ছেলেটির হাত
লোকাল বাসের ভিরে, পকেট সাফাইয়ে
সে হাত আজ খুঁজে নিতো সারাব আর সাবাব।

হয়তো ওদেরই ভুল!
ওরা কামলা হয়নি, ওরা বুয়া হয়নি
চোর কিংবা বেশ্যাও হয়নি...
সন্মানজনক জীবিকায় যারা বাঁচতে চেয়েছে,
সুই-সুতোর বুননে, স্বপ্ন বুনতে চেয়েছে...
অথচ স্বপ্নের প্রাসাদই তাদের ওপর ভেঙ্গে পড়েছে,
তাদের নির্মম মৃত্যু হয়েছে...

হয়তো ওদেরই ভুল!
চোর হলে যে সমাজে বেঁচে থাকা যায়,
বেশ্যা হলে যে সমাজে টিকে থাকা যায়,
সে সমাজে সন্মান নিয়ে বাঁচতে চাওয়াটা ভুল
নয়তো এ সমাজে জন্ম নেয়াটাই,
ওদের ভুল!

বৃহস্পতিবার, ১১ এপ্রিল, ২০১৩

আওয়ামী অবমাননার ব্লাসফেমি!!!

'আমার দেশ' আমার নিয়মিত পঠন তালিকায় না থাকলেও দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সাম্প্রতিক সময়ে নিয়মিত পাঠ্য হয়ে উঠেছিলো..
এ কথা ঠিক যে, আমার দেশ পত্রিকা এবং সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের অনেক ভুমিকাই ছিলো দলীয় পক্ষপাতে দুষ্ট, এক কথায় অখাদ্য...
আবার এ কথাও ঠিক যে, সরকারের সৈরাচারি আচরনে যখন অন্যান্য পত্রিকাগুলো সুশিল পক্ষপাতের ব্যালান্স চেষ্টায় সেলফ সেন্সরশীপে যাচ্ছিলো, তখন মাহমুদুর রহমান জাউরামির বিপরিতে অধিক জাউরা হয়ে খেলছিলো....
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি উক্তি প্রাসংগিক ভাবেই এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে-
"ভদ্রলোকের সাথে ভদ্রলোকের মত করেই খেলো ; কিন্তু জাঊরার সাথে খেলার সময় মাথায় রেখো - তুমি যাতে বড় জাউরার মত করে খেলতে পারো ; নইলে তুমি হেরে যাবে"। "প্লে লাইক অ্যা বিগার বাস্টার্ড উইথ এ বাস্টার্ড!"
তাই বুনো ওলের বিপরীতে কখনো কখনো কিংবা সবসময়ই বাঘা তেঁতুলের দরকার হয়। মাহমুদুর রহমানও জাউরা বুনো ওলের বিপরীতে অধিকতর জাউরা বাঘা তেঁতুল! আর তাই সরকার, সরকারপন্থী, বাঘা তেঁতুলের টকে মুখের রুচি নষ্ট হওয়া মানুষ, দলীয় সংকির্নতায় বিরক্ত হওয়া এবং আমার দেশের দলীয় সংকির্নতায় বিরক্ত হওয়া মানুষগুলোর বিরাগ ভাজন হয়েছে মাহমুদুর রহমান ও দৈনিক আমার দেশ। এবং অনেক দেরিতে হলেও ভিন্নমতের প্রতি অসহিষ্নু সরকার মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করেছে, এবং আমার দেশের প্রেস সিলগালা করে দিয়েছে ফলে অবধারিতভাবে বন্ধ হয়ে গেছে আমার দেশ।

কিন্তু আমি অবাক হয়েছি, মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করতে ভিন্নমত দমনে আগ্রাসি সরকার এতো সময় নিলো কেন? সরকারের আচরন পর্যালোচনা করলে এ গ্রেফতার আরো আগেই হওয়ার কথা ছিলো.....

এ কথা সত্যি যে, মাহমুদুর রহমান গ্রেফতারের উর্ধে কেউ নন। সে যদি অপরাধ করে থাকে তো গ্রেফতার অস্বাভাবিক কিছু নয়। এখন দেখার বিষয় মাহমুদুর রহমানের অপরাধ গুলো কি কি....
অপরাধ এক-ব্লগারদের লেখা ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোড করে দৈনিক আমার দেশ পত্রিকায় প্রকাশ করে সাধারণ মানুষের ধর্মীয় অনভূতিতে আঘাত।
অপরাধ দুই-বিচারপতির স্কাইপি কথোপকথন প্রকাশ।
অপরাধ তিন-আদালত, সরকার, টাইব্যুনালসহ নানা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে লেখালেখি।
অপরাধ চার- কাবা শরীফের গিলাফ পরিবর্তন নিয়ে যে মিথ্যাচার।
ইত্যাদি ইত্যাদি....................

এ গ্রেফতারে প্রসংগে সরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যও উল্লেখযোগ্য- “আমরা বাধ্য না হলে কাউকে গ্রেফতার করি না। আর মাহমুদুর রহমানকে আগের মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে। আমরা তাকে গ্রেফতার করতে চাইনি, কিন্তু তিনি আমাদের বাধ্য করেছেন।”

লক্ষ্যণীয়, মাহমুদুর রহমান তার নিজেকেই গ্রেফতার করতে সরকারকে বাধ্য করেছেন। অথচ যে অভিযোগ গুলোয় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে সবই পুরোনো!!! তা হলে তিনি কি করে বাধ্য করলেন???
এ প্রশ্নটাই সম্ভবত এ গ্রেফতারের বড় টুইস্ট! গ্রেফতারের দিন (১১ই এপ্রিল'১৩) "আমাদের দেশ" এর শিরোনাম- "উইকিলিকসে শেখ মুজিবের শাসনকাল"।


যে সময় নিয়ে হীনমন্যতায় ভোগা আওয়ামীলীগ সরকার যে পুরানো ধর্ম অবমাননায় ব্লাসফেমি তে না গিয়ে, উইকিলিকসে ফাঁস হওয়া তথ্য নিয়ে আজকের আমার দেশে প্রকাশ হওয়া আওয়ামী অবমাননায় ব্লাসফেমিতে বাধ্য হবেন এটাই স্বাভাবিক।

আমি আশা করছি, মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার মাধ্যমে হীনমন্যতায় ভোগা এ আহত আওয়ামী অনুভূতি আবার চাঙ্গা হবে, এবং আমার দেশ বন্ধ করার মাধ্যমে তা পূর্নতা পাবে।

অভিনন্দন সরকারকে- তাদের জাউরা খেলার অতি জাউরা এক প্রতিপক্ষ কমাতে পারার জন্য। কিন্তু আশংকার কথা হলো- মূল আশংকার কথা গুলো রয়েছে বন্ধ করার দিনে আমার দেশে ধারাবাহিক ছাপানোর ঘোষনা দেয়া উইকিলিকসে! কি রয়েছে সে ই উইকিলিকসে?
১৬ আগস্ট'৭৫ বঙ্গবন্ধু হত্যার পরের দিন মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টে পাঠানো এক তারবার্তায় ডেভিস বোস্টার উল্লেখ করেন, "নতুন সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরিত হলো, যা সর্বোপরি মুজিব এবং বাঙালি জাতির মধ্যকার বিচ্ছিন্নতাকে নির্দেশ করে। বাঙালি জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষাগুলো পরিপূর্ণ করতে ব্যর্থ, নিজেকে রাজনৈতিকভাবে আরও শক্তিশালী করে তোলার উদ্দেশ্য, রাজনীতি এবং ক্ষমতাকে আঁকড়ে ধরে রাখার স্বচ্ছ উচ্চাভিলাষই তার ও বাঙালি জাতির মধ্যকার বিচ্ছিন্নতার মূল কারণ। এভাবেই মুজিব তার পরামর্শকারীদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন।"

জন বিচ্ছিন্নতার পরিনাম ভয়াবহ হয়, দুই এক জন ভিন্ন মতাদর্শী গ্রেফতার করে চক্ষু মোদা যায় কিন্তু প্রলয় বন্ধ করা যায় না।

রবিবার, ৭ এপ্রিল, ২০১৩

যে প্রশ্নের উত্তর জানা দরকার....


আব্দুর রব সিদ্দিক রানা।
বয়স ২৫ বছর। সরকারী এডওয়ার্ড কলেজে অর্থনীতির অনার্সের ছাত্র ছিলো। বছর খানেকের মধ্যেই যার অনার্স সম্পন্ন হতো। হয়তো কিছুদিনের মধ্যেই ভালো একটি চাকরীও জুটে যেতে পারতো.....
পড়াশোনার পাশাপাশি, চাটমোহর রেজেস্ট্রি অফিসে কাজ করতো রানা। কিছুদিনের মধ্যে যার লাইসেন্স হবার কথা ছিলো। তাই ভালো কোন চাকরী না পেলেও বেশ ভালো ভাবেই তার জীবনটা চলে যেতে পারতো। যে জীবনে কোন অনিশ্চয়তা ছিলো না......

অথচ এ নিশ্চিন্ত জীবনটাই আজ সবকিছু পেছনে ফেলে, অনিশ্চিত এক জীবন এবং জগতে চলে গেছে!!!
কিন্তু কেন? এ বয়সে, এভাবে কেন চলে যেতে হবে?
এ কি প্রচন্ড অভিমান? নিদারুন হতাশা? প্রতারিত বেদনা? একই সাথে ছেলে মানুষি আর বোকামী...

এ কথা সত্যি যে, জীবনে এমন সময় আসতে পারে যখন সবকিছু তুচ্ছ হয়ে যায়, জীবন যখন মূল্যহীন হয়ে যায়, বেঁচে থাকা যখন অর্থহীন হয়ে পড়ে!
রানার ক্ষেত্রেও কি এমন সময় এসেছিলো? নাকি হতাশাময় সময়ের অতিমূল্যায়নে জীবনের অপচয় করেছে রানা?
এ অবধারিত প্রশ্নই, এক প্রানচ্ছোল তরুনের অকাল মৃত্যুতে শোকের পাশাপাশি তারুন্যের পিছলে পড়া মনোঃসমিক্ষনকে গুরুত্বপূর্ন করে তোলে। যে মনোঃসমিক্ষন, একটি নির্দিষ্ট বয়স থেকে কোন ছেলেকে কোন মেয়ের দিকে কিংবা কোন মেয়েকে কোন ছেলের দিকে টানে। যখন জীবনের অর্থ, সৌন্দর্য্য, সার্থকতা এককেন্দ্রিক হয়ে পরতে পারে! যখন জীবনের অপরাপর সুখ, স্বপ্ন, সফলতা অযৌক্তিকভাবেই মূল্যহীন হয়ে যেতে পারে!
হয়তো রানার ক্ষেত্রেও এমনটিই হয়েছিলো!!!
যে মেয়েটিকে ভালোবেসেছিলো রানা। মেয়েটিও ভালবেসেছিলো রানাকে! দিন, মাস, বছরের হিসাবে যে সম্পর্কটি দীর্ঘ সময়ে গড়িয়েছিলো। মেয়েটি হঠাৎ করে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছিলো! প্রত্যাহার করেছিলো- ভালোবাসা থেকে, স্বপ্ন থেকে, একটি পরিনতি থেকে......
মেয়েটির এ অবস্থানে হয়তো, পারিবারিক এবং সামাজিক সংগত কারন থাকতে পারে! কিন্তু এ সংগত কারন ও আপত সঠিক সীদ্ধান্ত নেবার আগে কেটে গেছে ৪-৫ বছর! যে সময়ে তৈরী হয়েছে অনেক সুখস্মৃতি, লেনদেন হয়েছে অজস্র প্রতিশ্রুতি। সে সময়ে তৈরী হওয়া আস্থা, বিশ্বাস, মানুষিক নির্ভরতাকে কোন ভাবেই ছোট করে দেখার সুযোগ নেই।
একটি ছেলে কিংবা মেয়ের জীবনে এমন আকর্ষিক বিপরীতমূখি সীদ্ধান্ত যে কি ভয়াবহ মানষিক প্রতিক্রিয়া তৈরী করতে পারে, তার এক ভয়াবহ সর্বোচ্চ রুপ আমরা দেখলাম রানার ক্ষেত্রে।

আমি আশা করছি- প্রেম প্রত্যাশি কোন তরুন, এবং সম্মতির হাসি হাসার আগে কোন তরুনী এ বিষয়গুলো মাথায় রাখবে। যারা প্রেম করবে জীবনকে অর্থবহ করার জন্য, জীবনকে মূল্যহীন করার জন্য নয়।

এখন প্রশ্ন আসতে পারে, রানাতো জীবনকে অর্থবহ করতে চেয়েছিল, তবে তার এমন পরিনতি কেন?
মূলত, রানার তীব্র ভালোবাসার বিপরিতে মেয়েটির আবেগীয় পর্যায়ের ভালোবাসা অবধারিতভাবে বিচ্ছেদের দিকে গড়িয়েছে! যা কিনা রানার মনে বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। দীর্ঘ দিনের প্রেম ভেঙ্গে যাওয়া, কাছের মানুষকে না পাওয়া, তাকে নিয়ে তৈরী হওয়া স্বপ্ন জগত ভেঙ্গে যাওয়ায় যে হতাশার তৈরী হয়েছে। যা সময়ের ব্যবধানে তীব্র থেকে তীব্রতর হয়েছে। এ হতাশাকে, অপ্রাপ্তির বেদনাকে কন্ট্রোল করতে না পারা। ছেলে মানুষি অভিমানে, জীবনের মূল্য হারিয়ে ফেলার বোকামিতেই ঘটে গেছে এমন বাজে পরিনতি! তৈরী হয়েছে শূন্যতা, শূন্যতা তৈরী হয়েছে বাবা-মা, ভাই-বোন, নিকট স্বজন, বন্ধু-বান্ধবের হৃদয়ে......

আমি ভাবছিলাম, প্রকৃতি তো শূন্যতা পছন্দ করে না। রানার অকাল মৃত্যুতে যে শূন্যতা তৈরী হয়েছে তা কি কখনো পূরন হবে?
এ কথা ঠিক যে, আবার সবকিছু আগের মতোই চলবে! কিন্তু রানার মা-বাবা মনে যে শূন্যতা তৈরী হয়েছে তা কখনোই পূরন হবে না! প্রতিনিয়তই বিষয়টি তাদের কাঁদাবে, তাদের চোখ দিয়ে অশ্রু ঝড়বে...
বন্ধুরা আবার আগের মতোই আড্ডা দেবে! মুখরিত আড্ডার এক পর্যায়ে হঠাৎ সবাই নিরব হয়ে যাবে, "ইশ আজ যদি রানা থাকতো"!

বোকা রানা, একজনের ভালোবাসাহীনতায় জীবনের মূল্য হারিয়ে ফেললো! অথচ মা-বাবার চোখের জলের মূল্য, বন্ধুদের নিরবতার মূল্য সে বুঝলোই না! বুঝলো না, জীবনের দু-একটি অধ্যায় বাদ দিলে জীবন অনেক সৌন্দর্য্যময়, অনেক অর্থবহ......


লেখাটি এখানেই শেষ হতে পারতো!!!
লেখাটি লিখেছিলাম- রানার মৃত্যুর পরের দিন।

সে সময় আমার ধারনায়, বেদনাদায়ক এ ঘটনার ব্যাখ্যা ছিলো- মেয়েটির নিজেকে প্রত্যাহার করার ফলশ্রুতিতে এটা রানার ভয়াবহ মানুষিক প্রতিক্রিয়ায় জীবনের অপচয়!
একটি জীবন এভাবে অকালে ঝড়ে যাওয়ার তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়ায় এটাই ছিলো আমার, হয়তো অনেকেরই এক লাইনের মূল্যায়ন!
কিন্তু জীবন অনেক বড়। জীবনের অনেক কিছুই অনেকের কাছেই অজানা থেকে যায়। সময়ের সাথে সাথে অনেক কিছুই উঠে আসে যা স্বাভাবিকতার সাথে যায় না, তাৎক্ষনিক ভাবে নির্মোহ বিশ্লেষনও করা যায় না!

বিশ্লেষন করা যায় না বলেই, তাৎক্ষনিকভাবে মেয়েটির বিপরীতমূখি অবস্থানকে প্রত্যাহার বলতে হয়! প্রতারনা বলা যায় না।
কিন্তু এটা প্রত্যাহার ছিলো না, এটা ছিলো প্রতারনা!
একটি সম্পর্ক সেটা যত দীর্ঘই হোক, বাস্তবতার নিরিখে প্রত্যাহার মেনে নেয়া যায় কিন্তু প্রতারনা কখনোই না।
নিজেকে প্রত্যাহার করার পেছনে থাকতে পারে পারিবারিক ও সামাজিক সংগত কারন। কিন্তু প্রতারনার পেছনে সংগত কারন থাকে না। প্রতারনা সংগঠিত হয় একজনকে প্রতারিত করে, নিঃস্ব করে।
রানাও প্রতারিত হয়েছিলো, নিঃস্ব হয়েছিলো!
যে মেয়েটিকে ভালোবেসেছিলো রানা। গত জানুয়ারীতেই সে ১৮ বছরে পা দিয়েছে। দীর্ঘ দিনের আস্থা, বিশ্বাস, মানুষিক নির্ভরতায় তারা যে চুরান্ত পরিনতির দিকে এগোচ্ছিলো তা এ জানুয়ারীকে ঘিরেই।
কিন্তু পরিনত বয়স আর পরিনতির কাছাকাছি এসেই মেয়েটি হঠাৎ নয় বরং ধিরে ধিরে পাল্টাতে থাকে। পাল্টায় তার রিলেশন স্ট্যাটাস, শো করতে থাকে রাতের পর রাত ওয়েটিং। তারপরও বিভিন্ন অযুহাতে চলতে থাকে ভালোবাসার অভিনয়। স্বপ্ন গড়তে থাকে, কিংবা স্বপ্ন গড়ার সহযোগী হয় পরিনত বয়সের পরিনতির।
কিন্তু পরিনত বয়সে এসেই মেয়েটি পরিপূর্ন পাল্টে যায়! আর তত দিনে বিয়ের একরকম গোপন প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছিলো রানা। বানিয়ে ফেলেছিলো বিয়ের পোশাক!
একটি ছেলের এভাবে স্বপ্ন জগৎ ভেঙ্গে যাওয়ায় জীবনের মূল্য হারিয়ে ফেলা, কি খুবই অস্বাভাবিক?
বিষয়টি স্বাভাবিক কি অস্বাভাবিক, স্বাভাবিক হলেও কতটুকু স্বাভাবিক? এ প্রশ্নের চেয়েও বড় প্রশ্ন-
মেয়েটি পরিনয়ের জন্য আইনসিদ্ধ বয়স ১৮তে পা দিয়েছিলো জানুয়ারীর মাঝামাঝিতে। ধারনা করা যায়, প্রতিশ্রুত বিয়ের জন্য রানা চাপ দিয়েছিলো তখনই এবং মেয়েটিও চুরান্ত প্রতারনা করেছিলো সে সময়েই! অর্থ্যাৎ প্রেমটা ভেঙ্গেছিলো জানুয়ারীর মাঝামাঝি সময়ে! হতাশাগ্রস্থ আবেগে রানার আত্বহত্যা করলে তো সে সময় করার কথা! কিংবা সেটা হতে পারতো ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে, মার্চের শেষ সপ্তাহে কেন? এত দীর্ঘ সময় ধরে কি আত্বহত্যার মতো আবেগ ধরে রাখা যায়? কি ঘটেছিলো মধ্যবর্তি এ সময়ে? কি ঘটেছিলো শেষ সময়ে?
শেষ সময়ের কথা আসলে, যে কথাটি যোগ করা দরকার- রানার লাশ পাওয়া গিয়েছিলো রাজশাহীর পদ্মার চরে!
আমি ভাবছিলাম- আত্বহত্যার জন্য তো চাটমোহরেই অনেক জায়গা আছে! সেটা রেখে রাজশাহী কেন? এর একটা সরল জবাব হচ্ছে- মেয়েটি রাজশাহীতে পড়তো, সম্ভবত এ কারনেই!
তার মানে মেয়েটির সাথে শেষ মুহূর্তে রানার যোগাযোগ হয়েছিলো! কি ঘটেছিলো সে সময়?

আমি মনে করি এ প্রশ্নের উত্তর জানা দরকার। এ প্রশ্নের উত্তর জানা দরকার সেই বাবা-মার জন্য যারা সন্তান হারিয়েছেন. সেই ভাই-বোনের জন্য যারা ভাই হারিয়েছেন, সেই শুভাকাংক্ষির জন্য যারা বন্ধুদের হারিয়েছেন...তারা সবাই যা হারিয়েছেন তা আর কখনোই ফিরে আসবে না! তবে এ প্রশ্নের উত্তর জানা দরকার যে উত্তর অন্তত সান্তনা নিয়ে আসবে....
এ প্রশ্নের উত্তর জানা দরকার, সমাজের জন্যও! যেন আর কোন ছেলে ও মেয়ের জীবনে এমন না ঘটে.......