বৃহস্পতিবার, ২৩ এপ্রিল, ২০১৫

হয়তো ওদেরই ভুল!


হয়তো ওদেরই ভুল!
নয়তো কেনই বা, অঁজপাড়া গাঁয়ের রহিম কিংবা রহিমা
নুন্যতম সন্মান আর সমৃদ্ধির জন্য আসে লাশ হতে!
তাগড়া যুবক রহিম কিংবা করিম,
গৃহস্থের কামলা হয়ে কিংবা রিক্সার প্যাডাল ঘুরিয়ে
বেশ ভালোই খেয়ে পড়ে, বেঁচে থাকতে পাড়তো...
হতাশ কেউ কেউ,
অভাবে স্বভাব নষ্টে...
করতে পারতো সিঁধেল চুরি কিংবা অন্যের পকেট সাফাই...
সদ্য কিশোরী রহিমা কিংবা সকিনা,
অভাবের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে যার
বুক আর শরিরের বাঁক...
বিকাশমান গতরের খাটুনিতে
বুয়া বেশে,
গৃহকর্তৃর আড়ালে গৃহকর্তার টিপ্পুনি হজম করে
কেটে যেতে পারতো, নিরবতাময় এক নিরব জীবন।
কেউ কেউ অভাবি যৌবনে,
বাঁকা শরিরের সাথে চরিত্রকে বাঁকিয়ে-
বস্ত্রহীন বুকটা আরেকটু উন্মুক্ত করে-
ক্ষুধার্ত পেট ভরানোর পাশাপাশি
আরেকটু লোভে নিজেকেই ভরাতে পারতো
লোলুপ ষাঁড় কিংবা পাঁঠার ঐরশে...
তবুও তারা বেঁচে থাকতো
বেঁচে থাকতো, কামলা কিংবা বুয়া হয়ে
চোর কিংবা বেশ্যা হয়ে-
যে মেয়েটির বুকে ভেঙ্গেছে, কংক্রিটের দেয়াল
রং-চং মেখে সন্ধ্যায়, সংসদের কোণায় দাঁড়ালেই
সে বুক আজ শিহরিত হতো লম্পটের নরম ঠোঁটে।
আঘাতে বিচ্ছিন্ন হয়েছে যে ছেলেটির হাত
লোকাল বাসের ভিরে, পকেট সাফাইয়ে
সে হাত আজ খুঁজে নিতো সারাব আর সাবাব।
হয়তো ওদেরই ভুল!
ওরা কামলা হয়নি, ওরা বুয়া হয়নি
চোর কিংবা বেশ্যাও হয়নি...
সন্মানজনক জীবিকায় যারা বাঁচতে চেয়েছে,
সুই-সুতোর বুননে, স্বপ্ন বুনতে চেয়েছে...
অথচ স্বপ্নের প্রাসাদই তাদের ওপর ভেঙ্গে পড়েছে,
তাদের নির্মম মৃত্যু হয়েছে...
হয়তো ওদেরই ভুল!
চোর হলে যে সমাজে বেঁচে থাকা যায়,
বেশ্যা হলে যে সমাজে টিকে থাকা যায়,
সে সমাজে সন্মান নিয়ে বাঁচতে চাওয়াটা ভুল
নয়তো এ সমাজে জন্ম নেয়াটাই,
ওদের ভুল!
*(২৪ এপ্রিল ২০১৩, ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির ২দিন পর এটি লেখা)