সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৪

১৬ই ডিসেম্বরের যে শিক্ষাটা বাংলাদেশ নিতে পারে...

প্রায় ৯ মাস এক রক্তক্ষয়ি যুদ্ধে ১৬ই ডিসেম্বরর ১৯৭১, স্বাধীন হয় বাংলাদেশ।
বিজয় হয়, হানাদারেরর বিপক্ষে মুক্তিকামী মানুষের।
পরাজয় হয়, স্বাধীনতার ইচ্ছার বিরুদ্ধে দখলদার আর তার দোসরদের।
সুসংগঠিত একটি বাহিনীর বিপক্ষে প্রায় নিরস্ত্র একটি জাতির যে অসম লড়াই, সে লড়াইয়ে কি শামিল হয়েছিলো এ দেশের প্রতিটি মানুষ?
না, তা হয়নি! অনেকেই ছিলো, যারা পরাধীনতার ইচ্ছায় পাকিস্তান কাঠামোর অভ্যান্তরেই থাকতে চেয়েছিলো!
যাদের অনেকেই ছিলো পূর্ব পাকিস্তানের ওপর পশ্চিম পাকিস্তানের শোষনের উচ্ছিষ্ঠভোগী! অনেকেই ছিলো বিজয়ের বিষয়ে দ্বিধান্নিত, ফলে তারা গোলামী করেছে তাদের ধারনার সম্ভাব্য বিজয়ীর! তবে অধিকাংশই ছিলো ১৯৪৭এর দেশ বিভাগকেই স্বাধীনতা জ্ঞান করা ইসলামী রাষ্ট্র পাকিস্তানের অখন্ডতাকেই ইসলামের রক্ষা কবজ ভাবা তৎকালিন পরিস্থিতির অবিবেচকরা।
উচ্ছিষ্ঠভোগী ও দ্বিধান্বিত মানুষদের নিয়ে আমার কিছু বলার নেই, এরা সব সময়ের এবং সমাজেরই সমস্যা। আমি নজর দিতে চাই শান্তির ধর্ম ইসলামের আবেগী অযুহাতে যারা হায়েনা পাকিস্তানের অখন্ডতা রক্ষায় স্বাধীনতাকামী দেশবাসীর বিপক্ষে দাড়িয়ে নরকের বিভিষিকায় জ্বালানী দিয়েছিলো।
হ্যাঁ, ইসলাম এবং ইসলামী রাস্ট্রের প্রতি তাদের এ অবস্থান ছিলো আবেগীয় ভাবে সঠিক, তবে বিবেকীয় ভাবে সম্পূর্ন ভুল। ইসলামের কথিত আবেগের অন্ধত্বে তাদের বিবেক এতটাই চাপা পড়েছিলো, তাদের নজরে পরেনি শোষন বৈষম্য, তারা এড়িয়ে গেছে ইসলামের শান্তির বিপরীতে গনহত্যা, লুটতরাজ, ধর্ষন। তারা আবেগী দাসত্ব করেছে ইসলামী রাষ্ট্র নামের এক শয়তানের।
আজ সময়ের নিরিখে আমরা দেখি, তাদের অবস্থান ছিলো ভুল। তারা ইসলামের কথা বলে দাড়িয়েছিলো ইসলামেরই বিপক্ষে। তারা দাড়িয়েছিলো ঈমানী অঙ্গ দেশপ্রেমের বিপক্ষে। এবং তারা ক্ষতি করেছিলো ইসলামেরই!! আজ টিভি, সিনেমা থেকে শুরু করে সর্বত্রই ভিলেন মানেই দাড়িওয়ালা, টুপিওয়ালা ইসলামি ব্যক্তিত্ব! এটা কি তাদেরই পাপের ফসল নয়?
১৯৭১ এর ১৬ই ডিসেম্বর, সেই কথিত ইসলামপ্রেমীদের ভুল প্রমান করেছিলো। শিক্ষা দিয়েছিলো- সময়ের দাবী আবেগীয় অন্ধত্বে নয় বরং বিবেকীয় বীরত্বের। তাই সকল অবস্থাতেই আবেগকে নয় বিবেককেই গুরত্ব দিতে হবে। সময়ের প্রয়োজনে নির্মোহ হয়ে বুক উচিয়ে দাঁড়াতে হবে।
অনেকেই এখন প্রশ্ন করতে পারেন, ২০১৪এ এ থেকে বাংলাদেশ কি শিক্ষা নিতে পারে?
উত্তরঃ ২০১৪তেও কি আমরা উচ্ছিষ্ঠভোগী, দ্বিধান্বিত এবং আবেগীয় শ্রেনী দেখতে পাচ্ছি না?
৫ জানুয়ারীর যে অগ্রহনযোগ্য নির্বাচন হয়েছে! ভোটাধিকার বঞ্চিত অনেক মানুষেরাই নির্বাচন মেনে নিয়েছে! এরাই এ সময়ের উচ্ছিষ্ঠভোগী, দ্বিধান্বিত এবং আবেগীয় শ্রেনী।
আগের মতোই, আমি উচ্ছিষ্ঠভোগী ও দ্বিধান্বিতদের নিয়ে কিছু বলবো না, এরা সব সময়ের এবং সমাজেরই সমস্যা। আমি নজর দিতে চাই সেই আবেগীয় শ্রেনীর প্রতি, যারা ৫ জানুয়ারীতে ভোট দিয়েছে, এ নির্বাচনকে মেনে নিয়েছে কারন তারা আওয়ামীলীগকে ভালোবাসে, তারা বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসে। এ ভালোবাসার আবেগীয় অন্ধত্বে তারা গনতন্ত্রের বিপক্ষে দাঁড়িয়েছে, জনমানুষের বিপক্ষে দাঁড়িয়েছে।
হ্যাঁ, আওয়ামীলীগের প্রতি তাদের এ অবস্থান আবেগীয় ভাবে সঠিক, তবে বিবেকীয় ভাবে সম্পূর্ন ভুল। আওয়ামী আবেগের অন্ধত্বে তাদের বিবেক এতটাই চাপা পড়েছে, তাদের নজরে পরেনি একদলীয় অগ্রহনযোগ্য নির্বাচন যেখানে ভোটের আগেই সরকার গঠনের সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া হয়ে গিয়েছিলো, যেখানে মানুষ ভোটাধিকার বঞ্চিত ছিলো, গনতন্ত্রের কফিনে ঠোকা হয়েছিলো পেরেক। আওয়ামী আবেগে তারা দাড়িয়েছিলো গনতন্ত্রের জন্য দীর্ঘ সংগ্রাম করা দলটির মূল আদর্শের বিপরীতে। তারা বিবেকীয় বীরত্বের বিপরীতে গ্রহন করেছিলো আবেগী অন্ধত্ব।
সময়ের নিরিখে একদিন প্রমান হবে, তাদের অবস্থান ছিলো ভুল। প্রমান হবে- আওয়ামী আবেগে তারা ক্ষতি করেছে গনতান্ত্রিক দল হিসাবে আওয়ামীলীগেরই। ঠিক যেমন ইসলামের ক্ষতি করেছিলো ১৯৭১এ ইসলাম আবেগীরা।
তাই, এ ১৬ই ডিসেম্বরে বাংলাদেশ শিক্ষা নিতে পারে- সময়ের দাবীতে আবেগীয় অন্ধত্ব নয় বরং বিবেকীয় বীরত্বের। যেখানে সকল বাংলাদেশী আবেগকে নয় বিবেককেই গুরত্ব দিয়ে, সময়ের প্রয়োজনে একটি গ্রহনযোগ্য নির্বাচনের দাবীতে, নিজেদের ভোটাধিকার ও গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নির্মোহ হয়ে বুক উচিয়ে দাঁড়াবে।

শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৪

সুন্দরবনের দুর্ভাগ্যের হেতু...

সাঁইজিকে কইলাম- 'সুন্দরবনের এ দূর্ভাগ্যের হেতু কি?
সাঁইজি কইলো- দূর্ঘটনাই দূর্ভাগ্যের হেতু...
হতাশ কন্ঠে কইলাম- ভালই বলিয়াছেন সাঁইজি, দূর্ঘটনা..হাহ..!
বনের মধ্য দিয়া তেলবাহী জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেওয়া স্বাভাবিক ঘটনা! আর একদিন না একদিনের অনিবার্যতা দূর্ঘটনা??
সাঁইজি বিরক্তি নিয়া কইলো- ভুল ব্যাখ্যা করিও না বৎস! আমি বোঝাইছি- গরিবের সুন্দরী বৌ কিংবা সুন্দরবোন থাকাটাই দূর্ঘটনা।
নতস্বরে কইলাম- গোস্তাখি মাপ সাঁইজি। আমি জানতে চাইছি- জাহাজ ডুবি না হয় জাহাজ চলতে দেবার অনিবার্য ঘটনা কিংবা দূর্ঘটনা। কিন্তু ২ দিন পেরিয়ে গেলেও ক্যান তেল অপসারনের সরকারী উদ্যোগ নাই?
সাঁইজি কইলো- পরশ্রীকাতরতা....
অবাক হইয়া কইলাম- 'কন কি সাঁইজি? সুন্দরবন তো প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চার্য হয় নাই। হইলে না হয় কইতাম- ড. ইউনুসের মতো পুরষ্কার পাওয়াই সুন্দরবনের কাল হইছে...
পরশ্রীকাতরতা কি শুধু পুরষ্কারেই হয়??? বলিয়াই সাঁইজি একতারা হাতে নিলো-
♫♪হরিনের মাংসে, জাগে বাঘের সাধ
সুন্দর হওয়াটাই বড় অপরাধ।
কুটিলের প্রনাম্য নয়, দেবী স্বরসতী
কি করে মানিবে, তার চেয়ে সুন্দর সে অতি♫♪

সুরের মায়া কাটাইয়া আমি কইলাম- বাঘের নজরে, হরিনের মাংস হরিনের শত্রু হইতে পারে কিন্তু সৌন্দর্য্য সুন্দরবনের শত্রু হয় ক্যামনে?
সাঁইজি কইলো- 'আওয়ামীলীগের নজরে বৎস, আওয়ামীলীগের নজরে!!!
যে ফ্যাসিবাদী নজরে এখন আওয়ামীলীগই রাইট, অন্য সবাই রং, নুন্যতম ভিন্নমতও নাকি যুদ্ধাপরাধ বিচার বানচালের ঢং!!
আওয়ামীলীগের এমন লুকিং সেটাপে, সুন্দর মানেই আওয়ামীলীগ আর সুন্দরী মানেই নৌকা! সে মাইন্ড সেটাপে, সুন্দরী নামক গাছ আর সুন্দর নামক বন থাকিবে ভাবিলা কি করিয়া? তাই তারা এ বন ধংস করিতে বিদ্যুৎ কেন্দ্র বানাইতে চাই! তাই তারা এ বন ধংস হইতে দেখিয়াও নিরব থাকে! বলিয়াই সাঁইজি গান ধরিল-
♫♪ সুন্দর নামেতেই, অগ্নিসম জ্বালা
নিরবতায় পড়াইতেছে কালো তেলমালা♫♪

শুক্রবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০১৪

মরন ভাবনা

এক.
অসুস্থ্ হলে আমার মৃত্যুভাবনা চলে আসে!
মনে হয়- আমার সময় শেষ হয়ে এসেছে, আমি আর বাঁচবো না...

গত ক'দিন হলো শরীরটা খুব খারাপ। মাথা ব্যথা, সর্দি, গলা ব্যথা, বুক ব্যথা করা শুকনো কাশি। কাশতে কাশতে মনে হয় অচিরেই আমি মারা যাবো! কেন জানি না, মৃত্যু নিয়ে আমার পরম আগ্রহ। হয়তো মৃত্যু অনিবার্য এক পবিত্র নিয়তি বলে কিংবা আমি বেঁচে আছিই মরার জন্য...

তবে আমার ভয় হয়। এ ভয় মৃত্যু নিয়ে নয়! বরং মৃত্যু পরবর্তি অন্ধকার, একাকিত্বময় কবরের। এভয় পাপ-পূন্যের হিস্যায় বিচারের মুখোমুখি হওয়ার। এ ভয় অনন্ত শাস্তি ভোগের...

আমি ভাবছিলাম- জীবনের প্রতি মানুষের যে সুতীব্র আকুতি, তা কি জীবনের মাধ্যমে যতটা পারা যায় অনিশ্চিত পরকালীন জগৎকে এড়ানোর চেষ্টা?

দুই.
মরনে আমার ভয় নেই, মরন নিয়ে আমার পরম আগ্রহ!! আমি ভয় পাই এর পরবর্তি জগৎ নিয়ে...
অনেকেই হয়তো প্রশ্ন করতে পারেন- তফাৎ কি? যখন মরন সে জগৎএরই দরজা?

আসলে আমি মরনকে দেখি জীবনের অর্থ দিয়ে। স্রষ্টা আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন, আমাকে নিয়ে তার উদ্দেশ্য আছে বলে। সে উদ্দেশ্য সফল হলে কিংবা আমার দ্বারা আর তা সফল হওয়া সম্ভব না হলে, আমার মৃত্যু ঘটবে।

আমার দ্বারা স্রষ্টার উদ্দেশ্য সফল হলে- আমার মরতে আপত্তি নেই।
আর আমার দ্বারা সে উদ্দেশ্য সফল হবার সম্ভবনা যদি না থাকে তবে আমার বাঁচার প্রয়োজন নেই।

তিন.
মানব জীবনের বড় ভ্রান্তি হলো- বাঁচার তীব্র আকুতিতে, মরনের মতো অনিবার্য নিয়তিকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা।

শীতকে এড়াতে চাওয়া, পিঁপড়ের গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্তেরই অপচয়।

চার.
চোখ বন্ধ করে, ধিরে ধিরে চলা শ্বাস-প্রশ্বাসে আমি যখন মনকে কেন্দ্রিভূত করি...
আমি অনুভব করি, আমার ভেতর 'আমি'র অস্তিত্ব...
এটা কি সেই, খাঁঁচার ভেতর অচিন পাখি? জীবনের মাধ্যমে যে দেহখাঁচায় বন্দি?

মরন, অভূতপূর্ব এক পবিত্র বিষয়। যেখানে দেহখাঁচায় আত্মার বন্দিত্ব শেষ হয়।