মঙ্গলবার, ২৫ জুন, ২০১৩

এ দেশে মানবাধিকার কমিশনের দরকার কি???



'এ দেশে গরিবের জন্য বিচার নাই'!!!

নির্মম সত্যটা অনেক দেরিতে বুঝলেন লিমনের বাবা তোফাজ্জেল হোসেন।
গরিবের ভাত নাই, কাপড় নাই, নাই মাথা গোজার ঠাই।
ইয়াসমিনদের ইজ্জত নাই, লিমনদের পা নাই, শাহিনাদের জীবনের নিরাপত্তা নাই! এ দেশে গরিবের বিচার নাই, নাই গরিবের মানবতাও!
প্রতি মাসে আদালতে হাজিরা দেবার খরচের অক্ষমতায় এ বিচার বিক্রি হয়! একটি সরকারী অথবা বেসরকারী চাকরির প্রয়োজনে, প্রধানমন্ত্রীর ফটোসেশানের সহায়তার দাবীতে এ বিচার চাপা পড়ে! নুন্যতম স্বাভাবিক জীবন যাপনের স্বার্থেও বিচার গরিবের জন্য শুধুই মধ্যস্থতা!
আর তাইতো গরিবের জন্য মানবাধিকার কমিশন হয়ে যায় বর্বরতা আর মানবতার 'মধ্যস্থতা কমিশন'! মুখে মানবতার বুলি কপচে করে ক্ষমতার পূজা! বলে- 'র্যাবের সাথে যুদ্ধ করে পারা যাবে না। কারন রাষ্ট্র তাদের পক্ষে। রাষ্ট্রের সাথে লড়াই করে টেকা যায় না।"
যে রাষ্ট্রের একটি বাহিনীর মানবাধিকার লংঘনের বিচার প্রত্যাশিকে মধ্যস্থতার প্রস্তার দেয় সয়ং মানবাধিকার কমিশন! সে দেশে মানবাধিকার কমিশনের দরকার কি?
যে দেশে এক পা হারানো পঙ্গু লিমনের বিচার নাই সে দেশে দুই পা হারানো লুলা 'মধ্যস্থতা কমিশনের' কোন দরকার নাই।।।

***মধ্যস্থতা সফল হোক না হোক, মাহশাল্লাহ্ মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান দ্বিতীয় মেয়াদে আরও তিন বছরের জন্য নিয়োগ পেয়েছেন। অভিনন্দন জনাব রহমান। লিমন বিচার না পাক আপনি তো চাকরির বর্ধিত মেয়াদ পেয়েছেন।

সোমবার, ২৪ জুন, ২০১৩

তুমি আর নেই সে তুমি!!!

আষাঢ়ের প্রথম সপ্তাহ চলছে...
গ্রীষ্মের দাবদাহ পেরিয়ে আর আম-কাঁঠাল পাকা গুমোট গরম ছাপিয়ে যখন নামছে স্বস্তির বৃষ্টি।
কিন্তু হায়! আষাঢ়ের বরষন শুধু প্রকৃতি আর মানব শরিরেই শান্তি আনতে পারছে, এদেশের রাজনীতি এবং রাজনীতি প্রিয় মানুষের মনে শান্তি আনতে পারছে না! পারবেই বা কি করে? এদেশের প্রকৃতি বৈচিত্রময়, রাজনীতি নয়! এদেশের প্রকৃতিতে গ্রীষ্ম পেরিয়ে বর্ষা আসে কিন্তু রাজনৈতিক পালা বদল সেই একই ভাঙ্গা রেকর্ড! একই তালে, একই সুরে বারবার বেজে যাওয়া একই উৎকন্ঠা। নির্বাচন নিয়ে একই অনিশ্চয়তা! বৈচিত্রহীন এ রাজনীতিতে গ্রীষ্মের পর শুধু গ্রীষ্মই আসে বর্ষা আসে না!
রাজনীতির এ চিরন্তন হতাশা নিয়েই বারান্দায় দাড়িয়ে বৃষ্টি দেখছিলাম। বাহিরে ঝুম বৃষ্টি। বৃষ্টি ভেজা বাতাস আমাকে করছে শিতল, বাতাসের ঝাপটায় ছুটে আসা বৃষ্টি ফোটা আমাকে করছে শিহরিত। আমি হাত বাড়িয়ে বৃষ্টি ছুই, ভিজি। রুমে বেজে চলছে, ভেসে আসছে হৈমন্তি শুক্লার গান-
♫♪ওগো বৃষ্টি আমার চোখের পাতা ছুয়ো না,
আমার এতো সাধের কান্নার দাগ ধুয়ো না,
সে যেন এসে দেখে,পথ চেয়ে তার কেমন করে কেঁদেছি ।।
দোহাই গানের বীণা,মনকে ভরে তুলো না, ।।
দেখেই তাকে ব্যথার এ গান ভুলো না,
সে যেন এসে শোনে,তার বিরহে কী সুর আমি সেধেছি ।।
ক্লান্ত প্রদীপ ওগো,হঠাৎ আলোয় ফুটো না,।।
দেখেই তাকে উজল হয়ে উঠো না,
সে যেন এসে জানে,কোন আঁধারে এ রাত আমি বেঁধেছি ।।♫♪

হঠাৎ করে বৃষ্টি আমার কাছে দৃষ্টি কটু হয়ে ওঠে! আমি ভাবি, বৃষ্টি যদি আমার চোখের পাতা ছুয়ে দেয়? গনতন্ত্রের জন্য, একটি সুষ্ঠ নির্বাচনের জন্য আমার সাধের আবেগের দাগ ধুয়ে দেয়? বৃষ্টি যদি সুষ্ঠ নির্বাচনের জন্য তত্বাবধায়ক সরকারের পথ চেয়ে কান্নার আকুতি মুছে দেয়?
যদিও ইতিমধ্যেই ৪ টি সিটিতে দলীয় সরকারের সময়েই সুষ্ঠ নির্বাচন হয়েছে। কিন্তু দোহাই গনতন্ত্রের মুলা, মনকে ভরে তোলা যাবে না, দেখেই তাকে ব্যথার আশংকার গান ভোলা যাবে না। সরকারের দমনে ক্লান্ত প্রদিপ, এ হঠাৎ আলোয় ফোটা যাবে না। ৪-০ ফল দেখেই উজ্জল হয়ে ওঠা যাবে না।

হঠাৎ করে অসহ্য হয়ে ওঠা বৃষ্টি আর বৃষ্টির গান থেকে বাঁচতে আমি চলে যাই রুমে। গানের প্লে লিস্ট চেন্জ করে সব সময়ের প্রিয় শচীন দেব বর্মন সিলেক্ট করেই হাতে নিয়েছি দৈনিক পত্রিকা। বাহিরে ঝুম বৃষ্টির শব্দ, রুমে চলা মৃদু স্বরে বেজে যাওয়া গান পাশে রেখেই আমি পড়ে চলছি-  শনিবার গণভবনে রংপুর জেলা আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপির তত্ত্বাবধায়ক সরকার-বিষয়ক দাবি প্রসঙ্গে বলেছেন, "অনির্বাচিত কোনো সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে না। তত্ত্বাবধায়ক সরকার এসে একবার নির্যাতন-অত্যাচার চালিয়েছে। বিরোধীদলীয় নেতা ও আমাকে জেলে পাঠিয়েছে।"
 তিনি আরো বলেন, "এর আগে তারা তিন মাসের জন্য ক্ষমতায় এসে দুই বছর পার কেরছে। আরেকবার ক্ষমতায় আসলে তিন বছর নয়, কেয়ামত পর্যন্ত থাকবে।"
আমি দীর্ঘশ্বাস ছাড়ি। প্লেয়ারে তখন বেজে চলছে- 
♫♪তুমি আর নেই সে তুমি. তুমি আর তুমি আর তুমি আর নেই সে তুমি। জানি না জানি না কেন এমনও হয়, তুমি আর নেই সে তুমি.♫♪
আমি ভাবছিলাম- শচীনজি, তুমি আসলেই গ্রেট। তুমি, তোমার সৃষ্টি আজো প্রাসংগিক। তুমিরা কখনোই আর সেই তুমি থাকে না। আগেও না, এখনো না এমনকি ভবিষেৎও থাকবে না!
একসময় যিনি তত্বাবধায়ক সরকারের জন্য আন্দোলন করেছিলো, প্রচার করেছিলো তত্বাবধায়ক সরকার তার ব্রেইন চাইল্ড। 'নির্যাতক' সেনা-সমর্থিত সরকার ক্ষমতা দখলের পরও যিনি তাকে নিজেদের 'আন্দোলনের ফসল' হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলো। ক্ষমতায় গিয়ে তাদের সকল কর্মকাণ্ডের বৈধতা দেবেন মর্মেও ঘোষণা দিয়েছিলো, যেই তিনি। তিনি আর নেই সে তিনি।
তবে দিনবদলের কথা বলে ক্ষমতায় আসা প্রধানমন্ত্রীর এতটুকু বদল হয়তো সহজেই মেনে নেয়া যায় কিন্তু মেনে নিতে কষ্ট হয় তার ব্রেইন চাইল্ডকে তিনিই যখন জনমতকে উপেক্ষা করে হত্যা করেন। কিসের স্বার্থে? এর মাঝে কি দুরভিসন্ধি লুকিয়ে আছে?
আজ তিনি তত্বাবধায়ক বাতিলে নির্যাতন-অত্যাচার, জেল-জুলুম আর কেয়ামতের ভয় দেখান। অথচ তার আন্দোলনের ফসলের  নির্যাতন-অত্যাচার, জেল-জুলুমের দায় কি অবলিলায় এড়িয়ে যান। এ দায় তিনি এড়াতে পারেন না। তার আন্দোলন ফসলেই সেনা সমর্থিত সরকার ৩ মাসের জন্য ক্ষমতায় এসেছিলো আর তার সকল কাজের বৈধতা দেবার ঘোষনাতেই তারা দুই বছর পার করার সাহস পেয়েছিলো এবং এখনো নিরাপদে আছে! এ দায় বদলে যাওয়া তিনি কিভাবে অস্বীকার করবেন?

দেশের সর্বোচ্চ রাজনৈতিক ব্যক্তির দূর্বল নৈতিক অবস্থানের হতাশায় ছুড়ে ফেলি পত্রিকা!
বাহিরে তখনো বৃষ্টির শব্দ, প্লেয়ারে তখনো বেজে চলছে-
♫♪তোমার চোখেরও পাতা নাচে না
নাচে না আমারো পথ চেয়ে
তোমার পায়ে পায়ে মল বাজে না
বাজে না আমারো সাড়া পেয়ে 
হাসো না হাসো না সে হাসি মধুময়
তুমি আর নেই সে তুমি♫♪