শনিবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০১১

আব্দুর রাজ্জাক, মরে প্রমান করলেন তিনি মরেন নাই!


শুক্রবার সন্ধ্যায় "মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য, বর্ষীয়ান নেতা আব্দুর রাজ্জাক আর নেই" শোক সংবাদটি রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেত্রীর শোকসহ কয়েকটি মিডিয়ায় প্রচার হবার পর, শোকভারাক্রান্ত মনে ফেসবুকে শেয়ার করলাম- 
মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা আব্দুর রাজ্জাক সাহেবের স্মৃতির প্রতি রইলো বিনম্র শ্রদ্ধা। আমাদের মাথা নত হয়ে আসে, মুক্তিযুদ্ধে তার অবদানের কৃতজ্ঞতায়....আমাদের মাথা নত হয়ে থাকবে, তাকে মূল্যায়ন না করার ব্যর্থতায়!!
কিন্তু আমার নত মাথা মাটির সাথে মিশে গেল যখন ঘন্টা খানেক পড়ে জানলাম- হাসপাতালের চিকিৎসকরা তখনও আবদুর রাজ্জাককে মৃত ঘোষণা করেননি! একজন চিকিৎসক বলেছেন, ‘হি ইজ স্টিল অ্যালাইভ।
আমি ভাবছিলাম, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, প্রবীন এ রাজনীতিবিদের জীবনের শেষ সময়ে দেশের কাছ থেকে কি চমৎকার প্রাপ্তি!!!!
হুজুকে বাঙ্গালির হুজুকপনায় আক্রান্ত মিডিয়া হয়তো অতি উৎসাহি হয়ে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেত্রীর নাম ব্যবহার করতে পারেন!!! কিম্বা আমাদের রাজনীতিবিদেরাও হয়তো কানের শোকে চিলের পেছনে দৌড়াতে পারেন!!!
প্রশ্ন হলো, আমাদের রাজনীতিবিদের বিভ্রান্ত করা কিম্বা তাদের নাম ব্যবহার করা কি এতই সহজ!! তারা এতটাই সস্তা, এতটাই দায়িক্তহীন???
তবে বর্তমান তোষামোদী রাজনীতির যুগে অচল(!)রাজনীতিবিদ আবদুর রাজ্জাক এতটা সস্তা ও দায়িক্তহীন ছিলেন না। আমৃত্যু দেশের জন্য কাজ করে যাওয়া এ যোদ্ধা, শেষ নিঃশ্বাস ও দেশের জন্য দিয়ে গেলেন! তিনি মরে প্রমান করলেন তিনি মরেন নাই! তিনি মরে এ দেশের হুজুকে মিডিয়া ও রাজনীতিবিদদের লজ্জার হাত থেকে বাঁচিয়ে গেলেন, দিয়ে গেলেন দায়িক্তশীল হবার শিক্ষা।

বৃহস্পতিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০১১

আমার নাম সমগ্র!!!




আমার পরিচিতজনেরা, প্রায়শই আমার নাম নিয়ে বিভ্রান্তিতে ভোগেন!!!
আমার ডাক নাম, ফেসবুক আইডি, সার্টিফিকেট নাম আর ব্যবহৃত নামের নানা মোহনায় বিভ্রান্ত ও বিরক্ত হওয়াই স্বাভাবিক!
জানিয়ে রাখি, পারিবারিক সুত্রে আমার নাম মোঃ আসাদুজজামান সুমন।
নিজেকে অনন্য হিসাবে মেলানোর অংশ হিসাবে ২০০৫ সালে আমি নাম নিয়ে প্রথম ব্যান্ডিং শুরু করি। আমার নাম থেকে বাদ পড়ে যায় সুমন এবং মোঃ কে কখনো মোহাম্মাদ কিম্বা মুহাম্মাদ লিখে নাম হয় মোহাম্মাদ আসাদুজজামান কখনো মুহাম্মাদ আসাদুজজামান।
২০০৬ সালে ধর্মীয় অংশ বাদ দিয়ে, আসাদুজজামান লেখা শুরু করি।
নামের আগের ও পেছনের অংশ বাদ দিয়েও আমি সন্তুষ্ট হতে পারছিলাম না তাই 69 ব্যান্ডিং বা ওলট-পালট করে "জামান আসাদ" লিখতে থাকি।
তবে আমি চাচ্ছিলাম, নামের এমন ব্যান্ডিং যা হবে অনন্য, অর্থবহ এবং অনুপ্রেরনাদায়ক।
আমার সামনে ছিলো সফল এবং বিখ্যাত ব্যাক্তিত্বরা,  কবি শামসুর রাহমান, লেখক শফিক রেহমান, অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহান, সুরকার এ আর রহমান, যারা প্রতেকেই তাদের নাম পরিবর্তন করেছিলেন এবং সে পরিবর্তনের ধারা ছিলো মাত্র একটি অক্ষর এদিক ওদিক করে!!!
অনেকেই হয়তো এ আর রহমানের ক্ষেত্রে দ্বিমত প্রসন করতে পারেন! তারা বলতে পারেন, এ আর রহমান আল্লা রাখা রহমানের সংক্ষিপ্ত রুপ, পরিবর্তিত রুপ নয়। কিন্তু তারা হয়তো জানেন না, এ আর রহমান ধর্মান্তরিত হবার পর নাম রাখেন আব্দুর রহমান। তাই তার নামের সংক্ষিপ্ত রুপ হওয়া উচিত ছিলো এ রহমান। কিন্তু তিনি লিখতে থাকেন এ আর রহমান। পরবর্তিতে বিখ্যাত তবলাবাদক ওস্তাদ আল্লা রাখা'র নামানুশারে তিনি পুনরায় নাম পরিবর্তন করেন!
তবে নামের একটি অক্ষর এদিক ওদিক করে ব্যান্ডিং করার ধারনাটি আমি পাই গ্রিক মিথ থেকে।
প্রেমের প্রতিক ROSE(রোজ), আর প্রেমের দেবতা??? ROSE এর শেষের  E সামনে এনে EROS(এরোস)।
মহান শিল্পী লিউনার্দো দ্যা ভিঞ্চি এমন  ধারনা থেকেই  সম্ভবত মোনালিসার নামকরন করেছিলেন। ভিঞ্চি নারী পুরুষের সমতায় বিশ্বাস করতেন, প্রাচীন মিশরীয় যৌনতার দেবতা আমন  এবং দেবী লিসা কে পাশাপাশি রেখে AMONLISA তে  AMON এর A কে মাঝে বসিয়ে  MONALISA করেছেন।
আমার নামের ব্যান্ডিং করার সময় খেয়াল করি ASADUZZAMAN লিখতে চারটি A প্রয়োজন হয়। কার্ড খেলা সম্পর্কে যাদের ধারনা আছে তারা জানেন, সবচেয়ে বড় কার্ড টেক্কা বা A। কিন্তু চার টেক্কা  মূল্যহীন। অপরদিকে থ্রি কার্ড খেলায় সবচেয়ে আরধ্য টেক্কার ট্রয় বা তিনটি A, যার ওপর পৃথিবী বাজি রাখা যায়। তাই আমি আমার নামে মূল্যহীন চারটি A থেকে একটি A কমিয়ে প্রেমের দেবতা এরসের অদ্যাক্ষর E দিয়ে ২০০৭ সালে নামের চুরান্ত ব্যান্ডিং ASADUZZEMAN বা আসাদুজজেমান করি। যেখানে রয়েছে তিনটি A বা টেক্কার ট্রয়, যেন আসাদুজজেমানের ওপর পৃথিবী বাজি রাখা যায়। এ নামেই আমি পত্রপত্রিকা ও বিভিন্ন ব্লগে লেখালেখি শুরু করি। ফলে আসাদুজজেমান নামটি সামাজিক ভিত্তি পায়। 
আমার নামের চুরান্ত ব্যান্ডিং এর পর প্রতি বছর আমি একটি করে নিক বেছে নিতে থাকি! যে নিক কোথাও ব্যবহৃত হয় না তবে আমাকে অনুপ্রেরনা যোগায়!
২০০৮ সালে আমার নিক ছিলো SUMAN। SUMON এ আমি O'র জায়গায় A দিয়ে MAN লিখি কারন আমি বিশ্বাস করি সবার ওপরে মানুষ সত্য।
২০০৯ সালে, আমার তারুন্য বোঝাতে থিম ব্যবহার করি- 
মেয়েদের জান
ছেলেদের ভাইজান
একমাত্র ইনসান
আসাদুজজেমান।
২০১০ সালে আমি FACEBOOK ব্যবহার শুরু করি। এবং আমার FACEBOOK ID ব্যান্ডিং করি ZEMAN ASAD।  নামের দুটি অদ্যাক্ষর Z এবং A। A তে মিশরীয় দেবতা আমন এবং Z তে শনির চাঁদ বা দুই মুখি দানব জ্যানাস!!! আসলে সবকিছুতেই দ্বিমুখিসত্তা কাজ করে। ভালো-মন্দ, দিন-রাত, আলো অন্ধকার, দেবতা ও দানব। আমার মধ্যে ভালো ও মন্দের রুপক অর্থে নামের অদ্যাক্ষরে রয়েছে দেবতা ও দানব, আমন ও জ্যানাস! লক্ষ্যনীয়, আমি দানব জ্যানাসের Z বা জেমানকে আগে এবং দেবতা আমনের A বা আসাদকে পরে স্হান দিয়েছি!!! কারন ব্যাক্তিত্বর দ্বিমুখী দন্দে শেষে টিকবে দেবতা। মন্দের বিরুদ্ধে ভালোর জয় তো চিরকালীন।
২০১১ সালে আমার নিক ছিলো ZEMANIA (ZEMAN+MANIA)! আমার উন্মাদনাময় জীবনের প্রতিচ্ছবি  ZEMANIA।

২০১২ সালে আমার নিক SHUMAN। বর্তমানে আমরা বাস করছি ব্যাক্তিকেন্দ্রিক স্বার্থপর  দুঃস্বপ্নের যুগে.....মাঝে মাঝেই ভাবি, ঘুম ভাঙ্গলেই হয়তো ফিরে পাবো মানবিক এক পৃথিবী.....কিন্তু ঘুম ভাঙ্গেনা!!! হয়তো এ ঘুম ভাঙ্গার মতো মানবিক হতে পারিনি.... তাই ২০১২ হতে পারে মানবতাবোধ জাগ্রত করার বছর। লক্ষ্যনীয়, SHUMAN এ অদ্যাক্ষর S আলাদা করলেই এ  বোধ ফুটে ওঠে...S HUMAN

রবিবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০১১

পর্নোগ্রাফি নয়, ব্লগ হয় সুলিখিত নয়তো কুলিখিত!


অশ্লীলতা শব্দটির কোন সঠিক ও গ্রহনযোগ্য ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষন কেউ করেছেন কিনা আমার জানা নেই। বাংলাদেশের এক চিত্রপরিচালক "অশ্লীলতার কোন সংগা নেই" জাতীয় কথা বলে বেশ আলোড়ন তুলেছিলেন! তবে অশ্লীলতা সম্পর্কে সুন্দর ও শুদ্ধতম মন্তব্য করেছিলেন, অস্কার ওয়াইল্ড তার পিকচার অফ ডৌরিয়্যান গ্রে বইটিতে-
There was actually nothing as a moral or immoral book, Books were either well written or badly written"
অস্কার  ওয়াইল্ড যদি আজ বেঁচে থাকতেন তাহলে হয়তো তিনি তার মন্তব্য অন্যভাবে লিখতেন। কারন আজ ভিন্নমত অশ্লীলতা, আজ অন্যায়ের সমালোচনা অশ্লীলতা, অশ্লীলতা শুদ্ধচিন্তা!
৩ ডিসেম্বর, এলজিআরডি মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন- ব্লগ এখন অনেকটা পর্নোগ্রাফিতে পরিণত হয়েছে! তথ্যসুত্র
 আমি জানিনা, সৈয়দ ইসলাম বিডিব্লগ, প্রথমআলো ব্লগ নিয়মিত পড়েন কিনা? যদি পড়ে থাকেন এবং ব্লগ যদি পর্নোগ্রাফি হয়! তাহলে আশার কথা, অন্তত পর্নোগ্রাফির টানে হলেও আমাদের রাজনীতিবিদেরা ব্লগ(আসলে রসময়গুপ্ত) পড়ছেন!
ডি.এইচ.লরেন্স যথার্থই বলেছিলেন-
What is pornography to one man is the laughter or genius to another.
অনেকের কাছে হাস্যকর, পর্নোগ্রাফি মনে হলেও আমাদের গনতন্ত্রের দূর্বল ও অথর্ব বিরোধীদল যখন ঠুনকো অযুহাতে গঠনমূলক সমালোচনা থেকে দূরে সড়ে যাচ্ছে, তখন গনমাধ্যম বিশেষকরে ব্লগগুলো যখন গঠনমূলক সমালোচনা করছে তা কি গনতন্ত্রকে সুদৃঢ় ভিত দিতে সহায়ক নয়???
তবে হ্যা, সৈয়দ ইসলামের যে কথা গুলোর যৌক্তিক  আবেদন রয়েছে-
(১)  ব্লগ গুলোতে ব্যক্তির বিরুদ্ধে অশালীন ও অসঙ্গতিপূর্ণ বক্তব্য দেওয়া হয়, কিন্তু অশালিন মন্তব্য গুলো মডারেশন করা হয় না।
(২) প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেত্রী, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক,বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব সহ অনককে নিয়ে ব্লগে অশালীন ও কুৎসিত মন্তব্য করা হয়। যার সঙ্গে বক্তব্যের কোনো সম্পর্ক নেই।
(৩) নিজেদের ক্রেডিবিলিটি ধরে রাখতে ব্লগগুলো মনিটর করা।
এ মন্তব্যের সাথে আমিও একমত তবে
(৪) সবাইকে ব্লগ মডারেট করতে হবে।
এ মন্তব্য অনেক বেশী কর্তৃত্ব পরায়ন বলে মনে হয়েছে।
 তাকে বুঝতে হবে, জনমত তাদের অনেক কাজের মডারেশন দাবি করে, তারা ক্ষমতার দম্ভে নিজেদের অযোক্তিক কাজ গুলো মজারেশন করবেন না কিন্তু জনগনের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ মডারেট করতে বলবেন তা কি করে যোক্তিক আবেদন সৃষ্টি করতে পারে??? বিনা মডারেশনে সে ব্লগ ক্ষমতাশীনের কাছে পর্নোগ্রাফি মনে হলেও ক্ষুব্ধ জনমনে তা বাস্তব মনে হতে পারে! তবে অস্কার ওয়াইল্ডের ভাষায় বলা যায়- "ব্লগ কখনো পর্নোগ্রাফি হয়না ব্লগ হয় সুলিখিত নয় তো কুলিখিত"।

বৃহস্পতিবার, ১ ডিসেম্বর, ২০১১

ঢাকা, দুই ভাগেতে হবেনা যাহা, সাত ভাগেতে সফল!


যখন পাঁচ মিনিটে রাজধানী  ঢাকাকে দুই ভাগ করা হলো...
আমি ভাবছিলাম, এ যুগের শিশুদের গনিত শিখতে আর ধারাপাতের দরকার নেই!!! শিশুরা গনিত শিখবে রাজনীতি থেকে!
মাইনাস-টু ফর্মুলা থেকে বিয়োগ।
সেই ফর্মূলা ব্যর্থ করে দুই নেত্রীর প্লাস হওয়া থেকে যোগ।
ঢাকা বিভক্তি থেকে ভাগ।
আর জনভোগান্তির ক্রমাগত বৃদ্ধি থেকে গুন।
যদিও সরকারের কর্তা ব্যাক্তিরা, ঢাকা বিভক্তি থেকে ভাগ এবং গুন এক সাথে শেখাতে চাচ্ছেন! বিভক্ত ঢাকায় নাকি সেবার মান কয়েক গুন বৃদ্ধি পাবে।
আমি ভাবছিলাম, রুপকথার সেই আটকুড়ে রাজার গল্প। যে রাজার আছে হাতিশালায় হাতি, ঘোড়াশালায় ঘোড়া, টাকশালে টাকা। কিন্তু রাজার মনে শান্তি নেই! রাজ্যে সুখ নেই!  থাকবেই বা কি করে, রাজা যে আটকুড়ে। লোকে বলাবলি করে, রাজাও সন্তানের আশায় একটার পর একটা বিয়ে করে যান।
গল্গটা যদি আধুনিক যুগের হতো তাহলে হয়তো জানা যেত রাজা নপুংসক কিনা? রুপকথা বলেই হয়তো সমস্যা জানার সুযোগ নেই। তাই নপুংসক রাজার আটকুড়েমির মাশুল দিতে হয় একটার পর একটা রানীর। জনগনও অন্তহীন প্রত্যাশায় থাকে রাজার সন্তান হবে, আটকুড়েমি ঘুচবে, রাজ্যে শান্তি আসবে...
 আমি ভাবছিলাম, বর্তমান সরকারের অবস্থাও সেই আটকুড়ে রাজার রুপকথার মতো। দেশে শান্তি নেই... শেয়ার বাজারে অব্যাহত সুচক প্রপাত, আইন শৃংখলার অবনতি, রাজধানীতে বিভিন্ন নাগরিক ভোগান্তি।
সরকার নাগরিক সুবিধা বাড়াতে সেই রাজার রানী বাড়ানোর মতো, উত্তর-দক্ষিন নামে ঢাকা বাড়াচ্ছেন!
কিন্তু তারা জানেন না তাদের সমস্যাটা কোথায়? নপুংসকের বৌ বাড়িয়ে লাভ কি? সমস্যা না জেনে, না বুঝে জনমতের তোয়াক্কা না করে ঢাকা ভাগ করেইবা কি লাভ?
তবে আমি আশাবাদি, রুপকথার সেই রাজার কিন্তু অবশেষে সন্তান হয়, আটকুড়েমি ঘোচে! রাজার স্বপ্নে দেখা দেয় এক দরবেশ। সে গান গেয় জানায়-"ছয় রানীতে দেয়নি যাহা, সাত রানীতে সফল"। রাজা দরবেশের কথায় সপ্তম বিয়ে করেন এবং সফল হন।
বর্তমান সরকারের ক্ষেত্রেও এমন কোন দরবেশ দেখা দিতে পারে। আর সেই দরবেশ হতে পারে শেয়ার বাজারের আলোচিত দরবেশ বাবা।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন-"টাকা থাকলে ঢাকাকে নাকি চার ভাগ করতেন"!
টাকা সমস্যার উত্তম সমাধান হতে পারে শেয়ার বাজারে কোটি কোটি টাকা লুটে নেয়া সেই দরবেশ বাবা!
তিনি হয়তো এখন গানের সুরে বলতে পারেন-"ঢাকা, দুই ভাগেতে হবেনা যাহা সাত ভাগেতে সফল"!
আমি আশা করছি, সফলতার জন্য ঢাকাকে দুই ভাগ নয় বরং সাত ভাগ করা হবে...
আর এতেও যদি সফলতা না আসে, তাহলে রুপকথার জনগনের মতো আধুনিক যুগের জনগনকে অনন্ত প্রত্যাশা করতে হবে না....অপেক্ষা শুধু দুই বছর....অপেক্ষা পরবর্তি নির্বাচনের।

বুধবার, ৩০ নভেম্বর, ২০১১

মুহূর্তের মন্তব্য


জুয়ার আসরের ছবি তুলে ফেরার পথে জুয়াড়িদের হামলার শিকার হয়েছেন  ‘সময় অসময়’ সম্পাদক  কেএম বেলাল হোসেন স্বপন। ২৯ নভেম্বর বিকালে কাছিকাটার এক জুয়ার আসরের ছবি তুলে ফেরার সময় জুয়ারিরা দলবদ্ধভাবে তার ক্যামেরা ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে এবং শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে।
আমি ভাবছিলাম, এ হামলার আমি নিন্দা জানাবো না। সাংবাদিকতার ঝূকিপূর্ণ পেশার এমন ঘটনা মোটেই অস্বাভাবিক নয় । ঝুকি গ্রহনের মানষিকতার প্রতিক্রিয়ায় নিন্দা জানালে তা হবে সাংবাদিকতার নীতি ও আদর্শের প্রতি অসম্মান জানানোর শামিল।
বরং আমি নিন্দা জানাতে চাই, যারা জুয়ার আসর বসাচ্ছে এবং তাদের যারা জুয়ারিদের মদদ দিচ্ছে।  আমি নিন্দা জানাচ্ছি, প্রশাসনের ভূমিকায়, যারা জুয়ার মতো বিষয়ে চক্ষু মুদিয়া থাকে!
এখন  প্রশ্ন হলো, সাংবাদিকের ওপর হামলা কি নিন্দাযোগ্য নয় । অবশ্যই এ ঘটনা ন্যাক্কারজনক । তবে নিন্দা এ ক্ষেত্রে সেকেন্ড প্রায়রিটি। আমি ভাবছিলাম, এর ইতিবাচক দিক সম্পর্কে।
লক্ষ্যনীয়, জুয়ারিরা ক্ষিপ্ত হয়ে হামলা করেছে, ক্যামেরা ছিনিয়ে নিতে চেয়েছে এবং সাংবাদিককে লাঞ্ছিত করেছে। কেন???
কারন তারা ভীত হয়েছে। তাদের ভয় এ ঘটনা প্রকাশ পেলে জুয়া বন্ধ হয়ে যাবে। অর্থ্যাৎ পত্রিকায় রিপোর্ট করে জুয়ার মতো সমস্যা বন্ধ করা যায়। এ ম্যাসেজ নিশ্চই সাংবাদিকদের এমন রিপোর্ট করতে আরো অনুপ্রানিত করবে।
দ্বিতীয়ত, বেলাল হোসেন স্বপন ছবি তুলে কিম্বা রিপোর্টের বিনিময়ে টাকা দাবি করেননি(এমন দাবি জুয়ারিরাও করেনি)। অর্থ্যাৎ সাংবাদিকেরা টাকার কাছে বিক্রি না হয়ে আদর্শের জন্য কাজ করে। এ ঘটনা সাংবাদিক ও সাংবাদিকতার ইমেজ আরো উচুতে নিয়ে যাবে।
আমি আশা করছি, ন্যাক্কারজনক ঘটনার এ ইতিবাচক দিক সাংবাদিক কেএম বেলাল হোসেন স্বপনকে করবে শানিত এবং অন্যদের করবে অনুপ্রানিত।

বৃহস্পতিবার, ২০ অক্টোবর, ২০১১

বাস্তব দৌড়কথায় পরাজিত অবাস্তব রুপকথা!!!

ছোটবেলায় ঠাকুমার মুখে শোনা ঠাকুমার ঝুলি ছিলো আমার অসম্ভব প্রিয়। মুগ্ধ হয়ে শুনতাম, রাজা-রাজপুত্র, ব্যাঙ্গমা-ব্যাঙ্গমি, রাক্ষস-খোক্ষস আর অচিনপুরের সেই ঘুমন্ত রাজকন্যার সোনার কাঠি-রূপার কাঠিতে ঘুম ভাঙ্গার গল্প!
অসম্ভব ভালো লাগায় আমার মধ্যে এক স্বপ্ন জগত তৈরি হতো। যে জগতের আমিই রাজপুত্র, যার প্রতিক্ষায় ঘুমিয়ে আছে কোন রাজকন্যা! রাক্ষস-খোক্ষসকে আমি থোড়াই কেয়ার করি! রাজকন্যার জন্য পুকুরের তলদেশ থেকে তুলে আনবো কৌটায় রাখা জীবন ভ্রমর......ভাবনা এগোয়.....রুপকথা পরিনত হয় আমার জীবন বাস্তবকথা'য়!!!
সে সময় রুপকথার অনেক গল্পই আমার কাছে বিশ্বাসযোগ্য মনে হতো! কিন্তু আজকালের অনেক বাস্তব কথাও রুপকথার চেয়েও অবিশ্বাস্য বলে হয়! তবে সব সম্ভবের দেশতো বাংলাদেশ....!!
পটুয়াখালীর সরকার দলীয় সাংসদ গোলাম মওলা রনি সেদিন টিভি টকশোতে রুপকথার মতোই যে দৌড়ের কথা শোনালেন, আমি বিষ্মিত, আমি হতবাক!!! (সুত্র)
সরকার দলীয় সাংসদ গোলাম মওলা রনি ১৮ অক্টোবর(সোমবার) রাতে বেসরকারি টেলিভিশন ‘চ্যানেল আই’তে প্রচারিত আলোচনা অনুষ্ঠান তৃতীয় মাত্রায় বলেন- “তখন ২০০৪ বা ২০০৫ সাল। তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা চীন সফরে গিয়েছিলেন। চীনের হেনদু নামের প্রদেশে সফরসঙ্গী হিসেবে ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা ওবায়দুল কাদের, সাবের হোসেন চৌধুরী ও ব্যবসায়ী সৈয়দ আবুল হোসেন।”
 সফরের এক পর্যায়ে এক রৌদ্রোজ্জ্বল বিকালে ওয়েস্ট লেকের পাড়ে হঠাৎ আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, “দেখো তো একটা বাঁশি জোগাড় করা যায় কি না। পরে বাঁশি জোগাড় হলে একটি নির্দিষ্ট দুরত্ব দেখিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, তোমরা তিনজন এই স্থানে দৌড় দাও। যে প্রথম হবে তাকে আমি মন্ত্রী বানাবো।”
হাস্যোজ্জল বিকালে নেতারাও বিষয়টিকে হালকাভাবে নিয়েই দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন। কিন্তু সৈয়দ আবুল হোসেন বিষয়টিকে এতটাই সিরিয়াসলি নেন যে তিনি ‘জানপ্রাণ’ দিয়ে দৌড়ান এবং প্রথম হন। এরপর মহাজোট ক্ষমতায় আসলে আবুল হোসেন, প্রধানমন্ত্রীকে তার কমিটমেন্টের কথা স্বরন করিয়ে দেন। এই হলো তার মন্ত্রী হবার সত্যিকারের ইতিহাস। আমরা সরকারের কাছাকাছি আছি আমরা জানি।
টিভিতে আমি যখন টকশো শুনছিলাম, অবাক বিষ্ময়ে ভাবছিলাম আমি কি ঠিক শুনছি!!! তারপর ইউটিউব থেকে ফুটেজটি ডাউনলোড করে, আমি অসংখ্যবার দেখেছি আর ভেবেছি, প্রধানমন্ত্রীর এ দৌড়কথার কাছে রুপকথার অবাস্তব কাহিনীও নস্যি!!!
কচ্ছোপ খরগোসের দৌড়ে আমরা কচ্ছোপকে জিততে শুনেছি । দৌড়ে জিতে গিটগিটির ঝুটি পাওয়ার গল্পও রুপকথায় পড়েছি! তাই বলে দৌড়ে জিতে মন্ত্রী হওয়া!!! সব সম্ভবের দেশে এটা সম্ভব হলে, এদেশের মানুষের ভাগ্য উন্নয়ন কিভাবে সম্ভব হবে???
আমি ভাবছিলাম, চারদলীয় এমপি(সাবেক) সালাউদ্দিনের সেই বিখ্যাত দৌড়ের কথা! দৌড় সালাউদ্দিনের নিশ্চই আজ মন খারাপ...! দৌড় জিতে আবুল হয় মন্ত্রী আর সে বাঁচিয়ে ছিলো জান, হারিয়েছিলো ক্ষমতা!!!
ক্ষমতার রুপকথার সাথে বাস্তবের দৌড়কথা কিম্বা ভোটকথা'র পার্থক্য সম্ভবত এটাই.......
তবে আমি আশাবাদি, টকশো'তে রনির দৌড়কথা থেকে আমি জেনেছি, আমাদের প্রধানমন্ত্রী ভঙ্গ করে না অঙ্গিকার, তিনিতো বঙ্গবন্ধুর কন্যা।
তিনি নিশ্চই জনগনকে দেয়া প্রতিশ্রুতি গুলোও রক্ষা করবেন, ১০ টাকা কেজি চাল, বিনা মূল্যে সার, ঘরে ঘরে চাকরি, যুদ্ধাপরাধীর বিচার.........রক্ষা করবেন!!!
দৌড়কথার হতাশা এবং প্রধানমন্ত্রীর আচরনের আস্থা, এ দ্বিমূখি সংকটে তাকে লিখছি,

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
আজকে যে শিশুটি জন্ম নেবে, আপনি তার ঠাকুমার বয়সি। তাই আপনার ঝুলি(ঠাকুমার ঝুলি) থেকে তাদের জন্য রেখে যান স্বপ্ন জগত তৈরি করার মতো ভবিষৎ।
দরবেশ বাবার প্রভাবে ঘুমিয়ে থাকা শেয়ার বাজার জাগিয়ে তুলুন।
মজুতদারের মায়ার প্রভাবে, দ্রব্যমূল্যের উত্তাপে পুঁড়তে থাকা বাজার রাহু মুক্ত করুন।
যুদ্ধাপরাধী, মৌলবাদী, জঙ্গি রাক্ষস-খোক্ষসদের মারতে অতল থেকে তুলে আনুন কোন সুরক্ষিত কৌটায় রাখা তাদের জীবন ভ্রমর, ছিঁড়ে দিন তাদের ডানা ভেঙ্গে দিন মেরুদন্ড।
ঘরের শত্রু বিভিষন ছাত্রলীগ যুবলীগের ভর্তি, দখল, টেন্ডার বানিজ্য বন্ধ করুন।
বুদ্ধিজীবি নামক ব্যাঙ্গমা-ব্যাঙ্গমীর কথা শুনুন।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, শেয়ার বাজার, আইন-শৃংখলা নিয়ে সাধারন মানুষ এমনিতেই দৌড়ের ওপর আছে,
কোনটি বেশী মূল্যবান???
মন্ত্রী হবার জন্য আবুলের সৌখিন দৌড় নাকি জীবন যুদ্ধে টেকার জন্য সাধারন মানুষের নাভিঃশ্বাস দৌড়???

শনিবার, ১৫ অক্টোবর, ২০১১

ভয়ংকর অনুভূতি জাগানিয়া এক প্রতিবাদ!


সৌদি আরবে আট বাংলাদেশীর মৃত্যুদন্ড কার্যকরের নৃশংস পদ্ধতি নিয়ে ক্ষুব্ধ ও শোকার্ত ব্লগগুলোতে হঠাৎ চোখে পড়লো, আশীফ এন্তাজ রবি ভাইয়ের লেখা। "নিজের শরীরে দড়ি বেঁধে আমরা মাথা নিচু করে রাজপথে দাঁড়িয়ে থাকবো কিছুক্ষণ" শিরোনামে তার আহবান ছিলো- সৌদি আরবে ৮ বাংলাদেশীকে শিরচ্ছেদ করার সময়, সেই অসহায় মানুষেরা যেভাবে হাঁটুতে ভর দিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন, যেভাবে তাদেরকে হত্যা করা হয়েছিল, অবিকল সেইভাবে। নিজের শরীরে দড়ি বেঁধে আমরা মাথা নিচু করে রাজপথে দাঁড়িয়ে থাকবো কিছুক্ষণ। আমাদের বিশ্বাস- প্রকৃত ব্যাপারটা কতখানি বিভৎস্য ছিল, এই কর্মসূচীর মাধ্যমে সাধারণ মানুষ সেই বিভৎস্যতার স্বরূপটি ধরতে পারবেন। আর এভাবেই আমরা আমাদের ঘৃণা, আমাদের প্রতিবাদ আমরা ছড়িয়ে দেবো সবখানে।
আমি ভাবছিলাম, এই তো সেদিন হঠাৎ করে বিডি নিউজে দেখেছিলাম নিউজটি! আমি শিউড়ে উঠেছিলাম, আট বাংলাদেশীর শিরোচ্ছেদের দৃশ্য দেখে রাতে আমার ঘুমাতে সমস্যা হয়েছে। বর্বর এ হত্যাযজ্ঞের দৃশ্য সবসময় আমার চোখে ভেসেছে আর মনে হয়েছে- সভ্যতার কোন যুগে আমরা দাঁড়িয়ে?
শনিবার সকালে রবি ভাইয়ের লেখার আহবানে জাতীয় জাদুঘরের সামনে গেলাম, চরম কষ্টবোধ নিয়ে যেতে বাধ্য হলাম। ঘৃনা আর প্রতিবাদ ছড়িয়ে দিতে, বিভৎস্যতার স্বরূপটি ধরতে সে ভাবেই দাড়িয়ে গেলাম, সৌদি আরবে ৮ বাংলাদেশীকে শিরচ্ছেদ করার সময়, সেই অসহায় মানুষেরা যেভাবে হাঁটুতে ভর দিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। আমরা আটজন হাঁটুতে ভর দিয়ে দাঁড়ালাম, ঠিক যেমন পত্রিকায় দেখেছি। মরুর বুকে হাঁটু গেরে মৃত্যু প্রতিক্ষায় থাকা আট বাংলাদেশী, আটজন মানুষ।

আগেই অনুরূপ কসটিউম পড়ে নিয়েছি, সাদা পোশাক, শরীর দড়ি দিয়ে বাধাঁ, কাপড়ে মুখ ঢাকা। আট আসামি, দুই জল্লাদ!
কিছু সময় পর গরমে ঘেমে উঠলাম, যে ঘাম ভেজাচ্ছে শরির, শরীর বেয়ে ভেজাচ্ছে রাজপথ! রাজপথের পিচ জিন্স ভেদ করে ব্যাথা করে দিচ্ছে পা! চারিদিকে উৎসুক দৃষ্টি অনুভব করছি।
আমি ভাবছিলাম, জীবন হারানো সেই অভাগা মানুষগুলোকি এভাবেই ঘেমে উঠেছিলো?
মনে হয় তারা ঘামেনি!!! তারাতো পরিবারকে একটু সুখে রাখতে, আর্থিকভাবে সচল রাখতে, ঘাম বিক্রি করতেই গিয়েছিলো......! তাদের ঘামেই তো বেড়েছে এদেশের বৈদেশীক মূদ্রার রিজার্ভ। এদেশের উন্নয়নের ইট-বালু-সিমেন্টের মাঝে মিশে আছে তাদের প্রবাশ জীবনের অবর্ননীয় পরিশ্রমের ঘাম। এ দেশের পতাকার মাঝে একটু হলেও লাল রয়েছে তাদের শ্রমে ঘামে পানি করা এক ফোঁটা রক্ত!
সময় বাড়ার সাথে সাথে আমাদের কষ্টও বেড়ে যাচ্ছিলো, ঘামে পুরো শরীর ভিজে উঠেছে, পা দুটো ব্যাথায় টনটন করছে! তবুও সান্তনা খুঁজছিলাম- এটাতো প্রতিকি, আমাদেরতো আর শিরোচ্ছেদ হবে না! কিন্তু আরবের সেই অভাগা গুলো সে সান্তনা পায় নি! আমি ভাবতেই শিহরিত হই কি কঠিন সময় ছিলো সেটা! ভয়ংকর এক অনুভূতি আমাকে গ্রাস করছিলো।
তারা কি ভাবছিলো, তাদের ছোট্ট মেয়ের কথা, সামনের ঈদে যার পুতুলের বিয়ে হবার কথা ছিলো, সৌদি থেকে একটা বর পুতুল আনার কথা দিয়েছিলো সে!
কিম্বা ভাবছিলো, তাদের স্ত্রী'র কথা। এয়ারপোর্টে বিদায় দিতে আসা বউকে লাল শাড়িতে নতুন বৌয়ের মতোই লাগছিলো। কিন্তু হায়, শিরোচ্ছেদের রক্ত তাদের বৌয়ের শাড়ির রং কেড়ে নেবে!!
মরুর বুকে হাটু গেড়ে থাকা, দড়িতে বাধা, মুখ ঢেকে রাখা সেই মানুষ গুলো, তাদেরও হয়তো ব্যাথা হয়েছিলো পা! তারাও হয়তো অনুভব করেছিলো উৎসুক দৃষ্টি! তারা হয়তো ভেবেছিলো, এ এক বিভৎস দুঃস্বপ্ন! কিছু সময় পর তারা ফিরে আসবে বাস্তব পৃথিবীতে, মানবিক পৃথিবীতে।
শিরোচ্ছেদ হওয়ায় তারা হয়তো জেনে যেতে পারেনি, সভ্যতার উৎকর্ষের পরও এ পৃথিবীর অনেক কিছুই আজো অমানবিক, আজো বিভৎস দুঃস্বপ্ন!

পুনশ্চঃ কর্মসূচি চলার সময় যোগ দেন বাংলাদেশের প্রথম এভারেস্ট জয়ী মূসা ইব্রাহীম। আমি ভাবছিলাম, মানবের উন্নতশির এভারেস্ট জয় করার জন্য, এভারেস্টকে ছাড়িয়ে যাবার জন্য, বর্বরের আঘাতে ভূলুন্ঠিত হবার জন্য নয়।


শুক্রবার, ৭ অক্টোবর, ২০১১

দেবী, মন্দিরে-বাহিরে-ক্ষমতায়!!!


ছোটবেলায় দুর্গোৎসব ছিলো আমার অসম্ভব প্রিয়। দশমীর দিনে যে মেলা হতো, তাতে প্লাস্টিকের লাটিম পাওয়া যেতো, হাতে পেঁচিয়ে শূন্যে ছেড়ে দিলে যে লাটিম বাতাসে ঘুরে উঠতো। লোহার আলযুক্ত কাঠের লাটিম ঘোরানোর সাহস আমার তখনো হয়নি!
ছোটবেলায় ভিতু ছিলাম কিনা জানিনা, তবে কখনো হাতি দেখলে ভয়ে দৌড়ে পালাতাম। অথচ আশ্চর্য, ষষ্টীর সকালে আমি মন্দিরের সামনে ছুটে যেতাম গনেশ ঠাকুরকে দেখার প্রত্যাশায়!

আমি এখনো ছুটে যাই, তবে গনেশকে নয় দেবী দুর্গাকে দেখতে, দুর্গাদের দেখতে!!! মন্দিরের ভেতরে এক দুর্গা, বাহিরে অসংখ্য দুর্গা!!! মন্দিরে অসুর বিদ্ধ হয় ত্রিশুলে আর বাহিরে আমি বিদ্ধ হই দৃষ্টির দংশনে!!!
তবে দৃষ্টি কিম্বা ত্রিশুলে যেমন বিদ্ধ হয় সুর কিম্বা অসুর! তেমনি গনতন্ত্রে বিদ্ধ হয়, হয়েছিলো অগনতান্ত্রিক অসুরেরা!
ওয়ান/ইলেভেনের পর এ জাতির ওপর চেপে বসেছিলো অসংবিধানিক অসুরেরা। যারা দুই নেত্রীকে করেছিলো কারাঅন্তরীপ, মেতেছিলো প্লাস-মাইনাসের দানবীয় খেলায়!

কিন্তু সেদিন দূর্গতিনাশিনী দূর্গা ভর করেছিলো, দুই নেত্রীর মাঝে! ত্রিশুলে বিদ্ধ না হলেও অসুরেরা নির্বাচন দিতে বাধ্য হয়েছিলো, গনতন্ত্রের কাছে পরাজিত হয়েছিলো অসংবিধানিক সরকার।
এবার দূর্গতিনাশিনী দূর্গা মর্তে এসেছেন হাতির পিঠে! আর আমাদের অগনতন্ত্রনাশিনী এক দেবী ক্ষমতায় এসেছেন থ্রি/ফোর্থ মেজরিটির রোলস রয়েস-এ! সঙ্গে নিয়ে এসেছেন অনেক প্রত্যাশা......ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়া, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন, জঙ্গিবাদ ও দূর্নীতি দমন, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রনের স্বপ্ন নিয়ে।

আড়াই বছর চলে গেছে...চারিদিকে অসুরেরা ফেলিছে নিঃশ্বাস...ধর্মের নামে জঙ্গি ও যুদ্ধাপরাধী অসুর! শেয়ার বাজারে দরবেশ অসুর! বাজারে মজুতদার অসুরেরা নিঃশ্বাস ফেলছে! রাজপথে গরু-ছাগল চিনলেও অচেনা মানুষের ওপর নিঃশ্বাস ফেলছে চলন্ত অসুরেরা.....!!!

এর মধ্যেই আবার কল্যানময়ী, দূর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গা শারদ বার্তা নিয়ে এসেছেন। আমি জানিনা, হিন্দু ধর্মালম্বীরা এবার দেবীর কাছে কি চাইবে?
তবে শেয়ার বাজারে পুঁজি হারানো, পাগলপ্রায় ব্যাক্তিটি চাইতে পারে-
কল্যানময়ী মা, শেয়ার বাজারে কল্যান দাও...
সঞ্চয় হারানো মধ্যবিত্ত, বাজার থেকে ফিরে দীর্ঘশ্বাসে চাইতে পারে-
মা দূর্গতিনাশিনী, দ্রব্যমূল্যের দূর্গতি দূর করো...
জীবিকার প্রয়োজনে রাস্তায় থাকা স্বামীর জন্য ভীত স্ত্রী চাইতে পারে-
মা, আমার সীথির সিঁদুর তুমি অক্ষয় করো...

এর পাশাপাশি দেশের দেবীর কাছে সবাই চাইতে পারে-

প্রধানমন্ত্রী মা,
কল্যান দাও।
শেয়ার বাজারে দরবেশ অসুর, বাজারে মজুতদার অসুর, শিক্ষাঙ্গনে ছাত্রলীগের অসুর, দমন করো...
যদি তারা তোমার দলের হয় তবুও...!!! তুমিতো আর অসুরদের দেবী নও....তুমি দেশের দেবী।
তুমি বাস্তবায়ন করো, তোমার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি....দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রন করো,  ফ্রী দিতে নাই পারো কৃষককে কম মূল্যে সার দাও, ঘরে ঘরে চাকরি নাই দাও...ঘরে ঘরে নিরাপত্তা দাও।
মা, যানজটের শহরে জটের মতো কি আটকে থাকবে যুদ্ধাপরাধী বিচার প্রক্রিয়া! সিগনাল শুধু সবুজ রাখো মা, এক্ষেত্রে আমরা লাল সিগনাল দেখতে চাইনা।
চারিদিকে ঢাকের শব্দে, ধিরে ধিরে বিদায়ের সুর.....দেবী আর কিছুক্ষন পর বিদায় নেবেন....তবে তিনি যে কল্যান রেখে যাবেন তা আরো কল্যানময় করার জন্য, দূর্গতিনাশ করার জন্য, সবাই চেয়ে থাকবে দেশের দেবীর দিকে.......

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমরা আপনার দিকে চেয়ে রয়েছি.....

শনিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১১

কতটা ধার্মিক আমরা হয়েছি আজকাল?



বাংলাদেশ পীর আউলিয়ার দেশ, এলাকায় এলাকায় মাজারের দেশ!
ধর্মপ্রান এ দেশের মানুষের ধর্মভীতি এতটাই যে, নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক নেতাদের মক্কা-মদিনা ঘুরে আসতে হয় ভোটের প্রত্যাশায়! প্রচারনা শুরু করতে হয় শাহ্ জালাল(রাঃ) ও শাহ্ মকদম(রাঃ) মাজারের সিন্নি খেয়ে! এ দেশে টিভি চ্যানেলে সংবাদ পাঠিকাদের মাথায় কাপড় ওঠে রমজানে! হাজার কোটি টাকা অপচয়ে, মুক্তিযোদ্ধার নাম পাল্টে আউলিয়ার নাম বসে বিমানবন্দরে! মন্ত্রীসভায় আল্লার মালেরা মন্ত্রী হয়! শেয়ার বাজার দরবেশ বাবার আশির্বাদে ওঠানামা করে! মন্ত্রীসভার নতুন আউলিয়া, স্বাভাবিক মৃত্যুর ডেড সার্টিফিকেট প্রদান করে!
১৫ সেপ্টেম্বর’১১ রাজধানীর এক অভিজাত হোটেলে স্বাস্হ্য ও পরিবার কল্যান প্রতিমন্ত্রী মজিবুর রহমান ফকির বলেছেন- “ধর্মমতে মুসলমানদের কোন অকাল মৃত্যু নেই। তারেক- মিশুক তাদের জন্য নির্ধারিত সময়েই মারা গেছেন”। [সুত্র-প্রথম আলো।]
আমি বিষ্মিত, বিমূট, হতবাক! কতটা বোধহীন এ সমাজ, বোধহীন আমরা! মজিবর রহমান ফকিরের তো ধর্মমন্ত্রী হবার কথা! আমার প্রশ্ন, “আরোগ্যতো আল্লাহ’র হাতে”, তাহলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর দরকার কি?
স্বাস্হ্য প্রতিমন্ত্রী কি পারবেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বলতে- “১৫ আগষ্টে বঙ্গবন্ধুর সপরিবারে হত্যাকান্ড কোন হত্যা নয়! আল্লাহ্’র ইচ্ছায় নির্ধারিত সময়েই তারা মারা গেছেন!! ১৫ আগষ্ট কোন শোকদিবস নয় বরং নির্ধারিত মৃত্যু দিবস!!!
হয়তো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও কথাটিকে সহজভাবেই নেবেন! কারন রাজনীতিতো বাতাস বুঝে পালতোলা, ৮৫% মুসলিম অধ্যাসিত দেশে ধর্মের অনুভূতি বুঝে পাল না তুললে কিভাবে চলে, একটু ধার্মিক না হলে কি আর হয়!!!

বৃহস্পতিবার, ১১ আগস্ট, ২০১১

মাগো, আমার বাঁচার মতো অধিকার গুলো কৈ?

পুরোনো দিনের স্মৃতিগুলো আমাদের সকলকেই নাড়া দেয়। অতীতের সুখস্মৃতি আর বর্তমানের অভাববোধগুলো যখন সংঘর্সে লিপ্ত হয়, তখন নিজেকে বড় অসহায় মনে হয়, বড্ড একা মনে হয়। যতীন্দ্রমোহন বাগচির সেই ছোট্ট মেয়ের মতো, যখন বাঁশ বাগানের মাথার ওপর চাঁদ ওঠে, ফুলের গন্ধে যখন ঘুম ভেঙ্গে যায়, তখন কাজলা দিদির কথা বড্ড বেশী মনে পড়ে! মেয়েটি মার কাছে জানতে চায়, মাগো আমার শলুক বলা কাজলা দিদি কৈ? যে প্রশ্নের কোন জবাব নেই তাই মা আঁচলে মুখ লুকায়!
মেয়েটি যদি আরেকটু বড় হতো তাহলে হয়তো বাড়ন্ত বিবেকে গলা ছেড়ে গাইতো-"আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম"। কিন্তু বড়দের মতো গলা ছাড়ার বিলাসিতা তার কোথায়! তার গলাতো স্তব্ধ হয়ে আসে, কাজলা দিদি তুমি কৈ, কৈ?
আজকাল যখন দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিতে প্রকট হয় আমাদের মতো মধ্যবিত্তের দারিদ্র, যখন বিকিয়ে যেতে দেখি আমার সুখ সাচ্ছন্দ্য এমনকি বাঁচার মতো নুন্যতম অধিকারগুলো, তখন গলাটা আমার স্তব্ধ হয়ে আসে! প্রধানমন্ত্রীকে বলতে ইচ্ছে করে, তুমিতো দেশের মা....মাগো আমার বাঁচার মতো অধিকার গুলো কৈ?

খাদ্য


প্রতি বছর যখন বাজেট অধিবেশনে কালো ব্রীফকেস হাতে হাস্সোজ্জল অর্থমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীকে সাথে নিয়ে সংসদে ঢোকেন! আমি মিলাতে পারিনা, কারন ব্যাগ হাতে আমি যখন বাজারে ঢুকি আমার হাসি মিইয়ে যায়। আমার জানতে ইচ্ছে করে, অর্থমন্ত্রীর সেই ব্রীফকেস কিসের চামড়ার? সেটা কি গন্ডারের! যে চামড়া ভেদ করে দ্রব্যমূল্যের উত্তাপ কিম্বা দূঃখ তাকে স্পর্শ করে না!
বাজারে এখন চাল-৩৭/৪২ টাকা(kg), তেল-১৩০ টাকা(L.), ডাল-১০০ টাকা(kg), মাছের আর সবজির বাজার যেন পৃথীবিতে নয় বরং সূর্যের নিকটতম গ্রহ বুধে! উত্তাপে আর উষ্নতায় জীবনের সন্ধান পাওয়া যায় না! শুনেছি প্রতিদিন নাকি একজন মানুষের ২৫০ গ্রাম শাক আর ২৫০ মিলি দুধ খাওয়া প্রয়োজন। কিন্তু গ্রাম থেকে শহরে পড়তে আসা ছেলেটির বাবা শত কষ্টে যতই বলুক "আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে", কিন্তু সামান্য ভাত তরকারীর ব্যবস্হা করতেই তার মাথার ঘাম গায়ে শুকায়! পরিশ্রমী শরিরের সে ঘাম পা পর্যন্ত পৌছেই না!

বস্ত্র

নাইকি অ্যাডিডাসের কথা বাদই দিলাম, আমার দেশের সেলাই দিদিমনিদের সেলানো পোশাক সস্তা দামে বাজারে পাই না, ওসব নাকি বিদেশী দাদাদের জন্য! আমার গর্ব বুকটা ফুলে ওঠে- এশিয়ার সর্ব বৃহত শপিংমল আমার দেশে। যদিও আমি সেখানে যাই ঘুরতে, প্রচন্ড গরমে সময় কাটানোর জন্য এসির বাতাস খেতে, কিন্তু কিছু কেনার সাহস হয় না। হায়রে গর্ব! একসময় আমরা গর্ব করতাম, সর্ব বৃহত পাটকল(আদমজি) আমাদের, আর এখন গর্ব করি সর্ব বৃহত শপিংমল আমাদের! কিন্তু সেখান থেকে কিছু কেনার সামর্থ আমার নেই...তবে গর্ব আছে....আর এ গর্বটাইতো আমাদের মধ্যবিত্তের একমাত্র অবলম্বন! উচ্চবিত্তের সিটি আর ফিউচার পার্ক না হয় বদই দিলাম, নিউমার্কেটে জিন্স কিম্বা এ্যলিফ্যান্ট রোডে জুতা দেখার সময় আর্থিক সীমাবদ্ধতায় সংযম খুঁজি- চলছে তো....চলুক না আর কিছু দিন! এরপর আমার কোন বন্ধু যখন রং চটা জিন্স দেখে বলে- দোস্ত জটিল স্টাইল। হা..হা..আমি হাসি....আঁখি জলে ভাসি....!

বাসস্থান

মিরপুরে আমি ৭ তলা যে বাসায় থাকি, দুই রুম-৮,০০০ টাকা(বিদ্যু, পানি, গ্যাস বিল আলাদা)। লিফট বিহীন বাসার সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে আমি ভাবি, এ বাসার অনুমোদন কয় তলার? ৭ তলার নাকি ৫ তলার? এটা কি দেখার কেউ আছে? এরপরও যখন কয়েক মাস পর পর বিদ্যু, পানি, গ্যাস বিল আর বছর শেষে বাসা ভাড়া বাড়ানোর কথা শুনি, তখন ভাবি কি আর করবো, আর কোথায়বা যাবো? আমি তো আর বাংলা ছবির নায়ক নই যে কষ্টে গাইবো- "ঘর ছোট ক্ষতি নেই, আকাশ তো বড়"। তাই কি আর করা, ছোট ঘরে আকাশসম ভাড়া দিয়ে থাকতে হচ্ছে....থাকতে হবে।

শিক্ষা


উচ্চশিক্ষার জন্য সবচেয়ে প্রতিযোগীতামূলক(সবচেয়ে নিষ্ঠুর) যে প্রতিযোগীতায় অবতীর্ন হয়েছিলাম, তা একপ্রকার বিশ্বভ্রমন! ঢাকা-রাজশাহী-চট্টগ্রাম-খুলনা। আমাদের মধ্যে যারা তুলনামূলক মেধাবী তারা সুযোগ পেলো বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে। আর অন্যরা? শিক্ষা যাদের কাছে পন্য, মাছের বাজার! আপনার টাকা আছে ইলিশ মাছ খাবেন, নেইতো পুটি মাছই সম্বল। আপনার টাকা আছে, কোনো দামী-নামী প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হবেন, না থাকলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কিম্বা পাস কোর্সে। তারপরও দুশচিন্তা, কটার ট্রেন কটায় ছাড়ার মতো ৪ বছরের অনার্স কয় বছরে শেষ হবে?
বর্তমান T20'র যুগে সেশন জটে উচ্চশিক্ষা পরিনত হয়েছে কয়েক বছরের টেস্টে। তবুও যদি শিক্ষার পরিবেশ থাকতো! ভর্তি বানিজ্য, হল দখল, টেন্ডারবাজী, মাদকব্যবসা সে তো সরকারি দলের ছাত্র সংগঠনের মেইন সাবজেক্ট, আর শিক্ষা যাদের কাছে নন মেজর।
তবে শিক্ষা নামক মাছের বাজারে আমার প্রাপ্তি পুটি মাছ! মেলা থেকে তালপাতার বাঁশি কেনার মতো, আমার মেধা আর সামর্থে পুটি মাছ ছাড়া ভালো কিছু জোটেনি। তারপরও ভয় হয়, এ মাছ কি ফরমালিন বা প্রিজারভেটিব মুক্ত?

চিকিৎসা

আমাদের দেশের রাজনীতিবীদেরা দেশের বাহিরে কি চেনেন???
উত্তর- নির্বাচনের আগে মক্কা-মদীনা আর অসুস্থ্য হলে সিংগাপুরের মাউন্ট এলিজাবেদ হাসপাতাল! এ দেশের রাজনীতিবীদ আর বিশিষ্ট ব্যক্তিরা যেভাবে গনহারে মাউন্ট এলিজাবেদে ভর্তি হন, আমার মনে হয় পৃথিবী তথা সিংগাপুরের একমাত্র হাসপাতালের নাম 'মাউন্ট এলিজাবেদ'। আমি ভাবছিলাম, কখনো অসুস্থ্য হলে যাব সিংগাপুর ভর্তি হবো মাউন্ট এলিজাবেদে.....বাংলাদেশী শুনলে নিশ্চই ডিসকাউন্ট দেবে....হাজার হোক, তাদের এতো ক্লাইন্টের দেশ! কিন্তু পরক্ষনে ভাবি, ডিসকাউন্টতো দূরের কথা পুরা ফ্রি করে দিলেও সম্ভব নয় কারন আমার সিংগাপুর যাবার টাকা নেই.....এ দেশের সাধারন মানুষেরও নেই.....আমার সামর্থ নেই কোন হাসপাতালে উচ্চ ভিজিটে ডাক্তার দেখিয়ে অন্তত ৪-৫ টি টেস্টের প্রেসকিপসন লেখিয়ে টেস্টগুলো করানো(৬০০০-১০০০০টাকার মামলা, কিম্বা কমিশন বানিজ্য) এবং আবারো ভিজিট দিয়ে সে একি ডাক্তারকে রিপোর্ট দেখিয়ে প্রেসকিপসন নিয়ে উচ্চমূল্যের ঔষুধ(ডাক্তারের কমিশন খাওয়া কোম্পানির) কেনার। তাই ভাবছিলাম, সিংগাপুর না হোক হেমায়েতপুর(পাবনা) যাবো। অসুস্থ্য সমাজের একজন হিসাবে মানষিক চিকিৎসা নিয়ে আসবো। কিন্তু সেখানে যে চিকিৎসা খরচ কত কে জানে?

 মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মাগো বাংলার আর আট দশটা মায়ের মতো তুমি কিছুই জানো না! তুমি শুধু জানো ঘুমপাড়ানী গান শোনাতে....আমার স্বপ্নের ধানগুলো কোন বুলবুলিতে খাচ্ছে, খেয়েছে? স্বপ্নের রাজ্যে কোন বর্গি এসেছে? আমার ঘুম আসে না। আমি হিসাব মেলাতে পারি না.....জানি কোন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টও এ হিসাব মেলাতে পারবে না। তুমি কি আমায় মিলিয়ে দেবে, খুঁজে দেবে আমার অধিকার গুলো?

বৃহস্পতিবার, ২১ জুলাই, ২০১১

রাষ্ট্রপতি কি মাতৃ প্রধান পরিবারের অসহায় পতি? নাকি সংসদীয় গনতন্ত্রের শোভা বর্ধনকারী অলংকার!


বেশ কদিন ধরে পত্রিকায় মৃত্যু, হত্যা, যৌননিপিড়ন, আর ধর্ষনের রিপোর্ট দেখতে দেখতে অনুভূতি গুলো ভোতা হয়ে গেছে! এখন মনে হয় অসুস্থ্য এ সমাজে ধর্ষন বা যৌননিপিড়নই একমাত্র বিনোদন! আর মৃত্যু বা হত্যা স্বাভাবিক নিয়তি!
মিরসরাইয়ে যে এতগুলো প্রান ঝড়ে গেলো, তা কি শুধুই দূর্ঘটনা নাকি চালকরূপী হেলপার কিম্বা হেলপার রূপী যমদূতের সুনিপুন কাজ! আমিনবাজারে ডাকাত সন্দেহে আঘাতে আঘাতে যে ছয় ছাত্রে করুন মৃত্যু হলো তা কি এলাকাবাসীর নিরপত্তা সচেতনতা নাকি উত্তেজনার অতিসজ্জে বিকেকহীনতা!
এতো হত্যা! বিকৃত চিন্তায় হত্যা!
তবুও অবাধ্য মন কিছু যদির মাঝে বন্দি হয়ে যায়.......।
যদি মিরসরাইয়ে সেই ট্রাকটা চালক চালাতো, তাহলে হয়তো এতোগুলো প্রান ঝড়তো না।
যদি আমিনবাজারে একজন এলাকাবাসীরও অনুভূতি কাজ করতো, তাহলে হয়তো শবে বরাতের রাতে সেই ছয় ছাত্রের ভাগ্যলীপি অন্যভাবে লেখা হতো!
কিন্তু যখন পত্রিকায় পড়ি- "খুনিকে রাষ্ট্রপতির ক্ষমা", লক্ষীপুরের নুরূল ইসলাম হত্যা মামলার ফাঁসির দন্ডাদেশ পাওয়া আসামি এ এইচ এম বিপ্লবকে রাজনৈতিক বিবেচনায় ক্ষমা করেছেন রাষ্ট্রপতি! তখন আমার চিন্তাকে আর কোনো যদির মাঝে বন্দি করতে পারি না। এটাও তো হত্যা! সামাজিক শৃংখলাকে হত্যা, বিচারপ্রার্থী সমাজকে হত্যা, বিচার ব্যবস্হা কে উপর্যপরি ধর্ষন ও হত্যা!
মিরসরাইয়ের সেই চালকতো ছিলো- চালকরুপী হেলপার। আমিনবাজারে এলাকাবাসীরতো লোপ পেয়েছিলো বিচারবোধ।
কিন্তু মহামান্য রাষ্ট্রপতি, আপনি কি? আপনি ও কি রাষ্ট্রপ্রতি রুপী সেই হেলপার? বয়সের ভারে আপনার ও কি লোপ পেয়েছে বিচারবোধ? আপনি কি মাতৃপ্রধান পরিবারের অসহায় পতি নাকি সেই ঘরজামাই, যার কোন ব্যক্তিত্ব থাকতে নেই! কৃতজ্ঞতায় যাকে শশুরবাড়ীর অনেক অন্যায় আবদার মাথা পেতে নিতে হয়! রাষ্ট্রপতি পদের কৃতজ্ঞতায় কি রাজনৈতিক বিবেচনায় মাথা পেতে সই দিতে হবে? নাকি আপনি সংসদীয় গনতন্ত্রের শোভা বর্ধনকারী অলংকার, পুতুল নাচের পুতুল-"যেমনে নাচাও তেমনে নাচি পুতুলের কি দোষ"!
মহামান্য রাষ্ট্রপতি হয়তো আমারি ভুল! আপনিতো ধারাবাহিকতা রক্ষা করেছেন, আপনার পূর্বে যিনি এ পদে ছিলেন, সাবেক রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ, তিনিও দলীয় বিবেচনায় কানাডা প্রবাসী জিন্টুকে ক্ষমা করেছিলেন।
হয়তো রাষ্ট্রপতি হলেই ক্ষমার অধার হতে হয়! ব্যক্তিত্ব বিসর্জন দিয়ে শোভাবর্ধনকারী অলংকার হতে হয়! ইয়াজউদ্দিনকে ইয়েস উদ্দিন হতে হয়! জিল্লুর রহমানকে হতে হয় জি হুজুর রহমান!
প্লিজ, রাষ্ট্রপতি পদ কে আপনারা ইয়েস আর জি হুজুরের মাঝে বন্দী করবেন না। ব্যক্তিত্ব বিসর্জন দিয়ে পুতুল হবেন না।
আপনাদের পূর্বে এ পদে ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, জিয়াউর রহমান, সাহাবুদ্দিন আহম্মেদের মতো ব্যক্তিরা। প্লিজ রাষ্ট্রপতি পদকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তাদের ছোট করবেন না....প্লিজ....প্লিজ....!


বুধবার, ২০ জুলাই, ২০১১

স্বপ্ন ফেরতের দাবি


[এই লেখাটি আমার লেখা না। ফেসবুক-এ বর্ণালী সাহার অসাধারন এই লেখাটি মুগ্ধতার সাথে পড়লাম। কবি নির্মলেন্দু গুন একবার সুন্দরের সংজ্ঞায় বলেছিলেন-"যা কিছু পেতে ইচ্ছা করে তাই সুন্দর"। তাই হয়তো সুন্দরের প্রতি আকাংখায় লেখাটি বর্ণালী সাহার প্রতি কৃতজ্ঞতা সহ আমার ব্লগে দিয়ে দিলাম]

অনেকেই আমাদের বলেন আমরা নাকি ‘ফরচুনেট গ্রুপ’।
বাঙালি শিক্ষিত মধ্যবিত্তের সন্তানই আমাদের অধিকাংশ। বিত্তবান না হলেও স্বচ্ছল বলা চলে আমাদের অনেককেই। খাওয়া-পরা-পড়াশোনা-টিভি দেখা-ঘুরে বেড়ানো এসব খাতে হিসেবের মধ্যে থেকেও আমাদের জন্য কিছুটা বিলাসি খরচ মাঝে-মাঝেই হয়তো করেন আমাদের অভিভাবকেরা। আব্দার-আহ্লাদ করে খেলনা-জামাকাপড়-গল্পের বই দশবার চাইলে পাঁচবার তো নিদেনপক্ষে মিলেই যায়! কিন্তু স্বাচ্ছল্যের নির্ভরতার চেয়েও বড় ‘ফরচুন’ হল আমাদের জীবনের এক পুঁজি যা থেকে বাংলাদেশের অধিকাংশ মেয়েশিশু বঞ্চিত সেই পুঁজির নাম ‘স্বপ্ন’।
আমাদের মা কিংবা বাবা যেদিন প্রথম আমাদের নির্ভরতার-আঙ্গুল-পেলেই-মুঠি-মুড়ে-ধরে-ফেলার ছোট্ট হাত ধরে এই বিশাল চত্বরের মাঝে ছেড়ে দিয়েছিলেন, সেদিন প্রথম নিজেদের স্বপ্ন আমাদের মাঝে সংক্রমিত করেছেন তাঁরা। তাঁদের মেয়েদের রয়েছে স্বপ্ন দেখার অধিকার, ব্যক্তিত্ব বিকাশের অধিকার, বড় হয়ে সমাজ-গড়ায় নিজ নিজ হাতের ছাপ রাখার অধিকার—তাঁরা জানতেন এবং বিশ্বাস করতেন! বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রতিযোগিতামূলক, প্রায়-নিষ্ঠুর পরীক্ষা –প্রথম শ্রেণীর ভর্তি পরীক্ষার ভয়-ভীতি-বাধার তীব্রতা অতিক্রম করে অবলীলায় মা’কে স্কুল গেটের বাইরে পিছে ফেলে এসে নতুন বন্ধুর পাশে এসে বসতে পেরেছি আমরা শুধু ওই স্বপ্ন-সংক্রমণের কারণে। ওই সংক্রমণ আমাদের পুতুলের মত ঠুনকো শিশু শরীরে সঞ্চার করেছে অপার শক্তি। পাঁচ-ছয় বছর বয়সে মায়ের শ্রমে শিখে আসা বাংলা বর্ণমালা আর ইংরেজি অ্যালফাবেট দিয়ে দুনিয়াটাকে দেখতে শিখেছি; পড়তে শিখেছি ক্লাসের আপার দেওয়া পাঠ; কাঁড়ি-কাঁড়ি হোমওয়ার্কের বোঝা বহন করেছি; সমাধান করেছি বীজগণিতের খটোমটো ফরমুলা; চোখ গোল করে গল্প শুনেছি ইতিহাসের; পাবলিক পরীক্ষার ভুতুড়ে সকালে চুলে তেল দিয়ে টান-টান করে বেণি বেঁধে কলমের খসখসানিতে পৃষ্ঠা ভরিয়েছি; কেমিস্ট্রি ল্যাবের বিকারে সবজে-নীল অধঃক্ষেপ দেখে পৃথিবীকে রঙ্গিন ভেবেছি; বিতর্কের মঞ্চে প্রতিপক্ষের তার্কিক আর বিচারক প্যানেলকে চমৎকৃত করেছি বৈশ্বিক অর্থনীতির ভরাডুবির খতিয়ান দেখিয়ে; বিশাল কাঠের বোর্ডে স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে মেধাবী সিনিয়ার আপুদের নাম, সেই ১৯৬১ সাল থেকে; ঘাড় কাত করে সেই নামগুলো দেখেছি আর ভেবেছি ওদের মত হতে পারব কিনা। আর বাড়ি এসে মাকে দিয়েছি তাচ্ছিল্যের ভর্তসনা—“ধ্যুত, আমাদের আপা বলেছেন এটাই ঠিক। মা, তুমি কিচ্ছু জানো না!” মা নিশ্চয়ই খুশি হয়ে ভাবতেন, “ছোট্ট মেয়েটা কত বড় হয়ে যাচ্ছে!” বাবাকে বলতেন, “জানো তোমার মেয়ে স্কুলে কি কি করে? কি কি শেখে?” বাবা আত্মপ্রসাদের হাসি হাসতেন। মুখে বলতেন না, কিন্তু মনে মনে জানতেন এই স্কুলে তার মেয়ের স্বপ্নগুলো হেলায় মাটিতে গড়াবে না।
হ্যাঁ, আমাদের স্বপ্নই আমাদের অনন্য করেছে। গুঁড়ি- গুঁড়ি মাইক্রো অর্গানিগজমের মত স্বপ্নরা অঙ্কুরিত হওয়ার জন্য বিদ্যায়তনে আসে। ফলবান বৃক্ষ হয়ে ওঠার চরম প্রতিশ্রুতি আদায় করে নিতে শিক্ষাগুরুর কাছে আসে। এক আত্মা থেকে আরেক আত্মায় সংক্রমিত হওয়ার জন্য আকুল হয়ে আসে—অভিভাবক থেকে সন্তানের মধ্যে, শিক্ষক থেকে ছাত্রের মধ্যে, বন্ধু থেকে বন্ধুর মধ্যে, অগ্রজ থেকে অনুজের মধ্যে। কতই না চাওয়ার এই ‘সংক্রমণ’! এই সংক্রমণই তো সভ্যতার শুরু থেকে যুগ-যুগ ধরে মানুষের ‘হয়ে ওঠার’ কারণ। শারীরিক জন্ম নিয়ে বাবা-মায়ের আশ্রয় ছেড়ে বিদ্যালয়ে এই নতুন করে ‘হয়ে ওঠা’র দ্বিতীয় জন্মের আকাংক্ষা নিয়ে শিশুরা আসে দেখেই তো শিক্ষক হন পিতার সমান; মাতার সমান। নতুন জন্ম নিয়ে নতুন আঁতুড়ঘর পাই আমরা যার নাম স্কুল। স্কুল হয় নিরাপদ আশ্রয়। সহপাঠীরা হয় ভাই-বোন। সত্যিই তো! বাংলা দ্বিতীয় পত্রের ভাব-সম্প্রসারণ যখন করতাম ‘শিক্ষক জাতির কারিগর’ বা ‘শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড’, তখন এতটা তলিয়ে ভাবিনি। আজ যতটা তলিয়ে ভাবছি। এই স্বপ্নই তো আমাদের শিক্ষালয়ে এক-কে অন্যের সাথে ধরে রাখে। শিক্ষা-প্রক্রিয়াকে সচল রাখে।
কিন্তু স্বপ্নও ধাক্কা খায়। পৃথিবীর সব মূর্ত-বিমূর্ত বস্তুকণার মধ্যে একমাত্র স্বপ্নই ধাক্কা খেয়ে আঘাত পেয়ে কষ্ট পায় বেশি। কারণ স্বপ্নের সাথে প্রত্যাশা আসে; নির্ভরশীলতা আসে। পিতা কন্যাকে নিশ্চিন্তে স্কুল-প্রাঙ্গণে ছেড়ে যান শুধু অতটুকু নির্ভরতার কারণেই। মায়েরা মেয়েদের নিয়ে কোচিং ক্লাসে ছোটেন শুধু আরো ভালো শিক্ষা, ভাল ফলাফলের নিশ্চয়তা দেওয়া শিক্ষকের উপর নির্ভরতার জন্যই। বাবা-মায়েরা গভর্নিং বডির অভিভাবক-সদস্য নির্বাচনে অংশ নেন শুধু আদরের সন্তানের জন্য আরেকটু ভাল শিক্ষার পরিবেশের প্রত্যাশাতেই। অংক আর পদার্থবিদ্যার শিক্ষক গণিত অলিম্পিয়াডের দৌড়ে নামতে ছাত্রদের অনুপ্রাণিত করেন শুধু ‘ওরা পারবে!’–এই স্বপ্ন আর ওদের ক্ষমতার উপর নির্ভরতার ভরসাতেই। পারস্পরিক ভরসার এই জায়গাটা না থাকলে পৃথিবীর অনেককিছুই সম্ভবত অর্থহীন হয়ে পড়ে—কিন্তু নিঃসন্দেহে অর্থহীন হয়ে পড়ে মানুষ গড়ার এই প্রক্রিয়া—যার প্রাতিষ্ঠানিক নাম হল ‘শিক্ষা’।
কিন্তু আমরা ‘ফরচুনেট’ নই। আমরা আসলে দুর্ভাগা। আমাদের খুব অল্প বয়সেই—যে বয়সে সহজ, নির্মল জিনিস নিয়ে ভাবা ছাড়া, কাগজের প্লেন নিয়ে ক্লাসরুমে টার্গেট প্র্যাকটিস করা ছাড়া, টিফিন নিয়ে বন্ধুর সাথে কাড়াকাড়ি করা ছাড়া আর কোনো কঠিন চিন্তা আমাদের করার কথা না; শিক্ষকের চোখ ফাঁকি দিয়ে লাস্ট বেঞ্চে বসে গল্পের বই কমিক বই কিভাবে পড়ব—এই জটিল সমস্যার সমাধানেই যে বয়সে আমাদের দিন কেটে যাওয়ার কথা, সে বয়সে আমাদের মাথা অধিকার করে নিল অনেকগুলো বিষাক্ত, কঠিন, ভীতিপ্রদ, নিষ্ঠুর, এবং বাস্তব শব্দ। এর মাঝে আছে শিক্ষাবাণিজ্য, ভর্তিবাণিজ্য, যৌন-নিপীড়ন, ‘গোপালগঞ্জ’, গভর্নিং বডি, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ, বহিরাগতদের উস্কানি, মিডিয়া, এড-হক কমিটি—আরও নানান জটিল ধারণা এবং কঠিন কঠিন বস্তু। যে বয়সে আমাদের কোচিং ক্লাসের অলস দুপুরে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে চড়ুই পাখির তিড়িংবিড়িং দেখে মন-খারাপ করে অতঃপর সহপাঠির সাথে খাতার পিছে কাটাকুটি খেলার কথা, সেই বয়সে কোচিং শিক্ষক আমাদের শেখালেন যে আমরা মেয়ে, তিনি পুরুষ, আমাদের বয়স যাই হোক না কেন, আমাদের দেহ একটি আকাঙ্ক্ষার বস্তু, এবং পুরুষ হওয়ার কারণে সেই আকাঙ্ক্ষা তিনি আমাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে, নির্যাতন করে, ধর্ষণ করে, ইন্টারনেটে ছবি ছাপার ভয় দেখিয়ে, যেভাবে ইচ্ছা চরিতার্থ করতে পারেন।
বিশ্বাস করুন, এত কঠিন কঠিন কথা আমরা আগে জানতাম না। কি করে জানব? যে বয়সে আমাদের ছুটোছুটি, হুটোপাটি করে বেড়ানোর কথা, পোশাকের আব্রু কাকে বলে– সেই নিয়ে মাথা-ঘামানোর দায়িত্ব মা আর বড়দের হাতে ছেড়ে দিয়ে নিশ্চিন্তে পৃথিবীকে চেনার আর জানার কথা, সেই বয়সে ধর্ষিত হওয়ার পর প্রথম আলোর মত পত্রিকার রিপোর্টার ছেপে দিলেন ধর্ষিত হবার সময় আমাদের পরণে কি কাপড় ছিল, যেন দেশের সব তাঁতিদের বোনা লাখ লাখ ইয়ার্ড কাপড় দিয়ে আমাদের গা ঢেকে দিলেও আমরা পশুদের থেকে নিরাপদ, যেন এর অন্যথা হলেই পুরুষের জন্মগত অধিকার আছে আমাদের ধর্ষণ করার, যেন শাড়ি, কামিজ, বোরখা, হিজাব পরা কোনো নারী কোনোদিন যৌন-নির্যাতনের শিকার হননি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রুমানা মঞ্জুর ছিলেন আমাদের প্রতিষ্ঠানেরই এক বড় বোন। তিনি স্বামীর হাতে নির্যাতিত হবার পর যারা বলাবলি করছিলেন, ‘এক হাতে তালি বাজে না; নিশ্চয়ই ভদ্রমহিলার দোষ ছিল’, সেই তালি-বিশারদেরা আবার গর্ত ছেড়ে উঠে এলেন আমাদের বন্ধু ধর্ষিত হবার পর। তারা বলাবলি করতে লাগলেন যে মা-বোনেরা ‘শালীন’ কাপড় পরলে সমাজে এসব ঘটে না। ভিকারুননিসার একজন প্রাক্তন ছাত্রী এবং একজন বর্তমান ছাত্রী—দু’জনের উপরেই এক-মাসেরও কম ব্যবধানে এই তালি-তত্ত্ব প্রয়োগ হবার পর আজকাল আমাদের নির্মল কৈশোরের অনেকগুলো ঘণ্টা কেটে যায় শালীন কাপড় কি জিনিস, এবং কতটুকু শালীন হলে আমরা কারো কদর্য আকাঙ্ক্ষার শিকার হব না –সেই গবেষণা করতে করতে। পত্রিকায়, টিভিতে, ফেসবুকে, ইন্টারনেটে, ব্লগে, ফোরামে যাঁরা এত কথা লিখলেন, বললেন, তাঁরা হয়তো কখনো ভাবেন নি আমাদের সুন্দর শৈশব-কৈশোর, আমাদের অবুঝ চাওয়াগুলো, আমাদের পথ-হারিয়ে-কোন-বনে-যাই মনটা তাঁরা সজ্ঞানে বা অজ্ঞানে কিভাবে আলগোছে মাড়িয়ে গেলেন। পথ হারিয়ে আর কোন বনে যাওয়ার পথ কি আমাদের আদৌ আছে? বা কখনো ছিল? কবিগুরু লাইনগুলো বুঝি লিখেছিলেন শুধু আমাদের সমসাময়িক ছেলে-বন্ধুদের কথা মাথায় রেখে। আমাদের ধর্ষিত বন্ধুটি তার বাড়িতে যে ঘরে থাকে, তার বাইরেই হয়তো আছে কোনও মাঠ বা পার্ক, ওই পাড়ায় ১৩-১৪-১৫ বছরের ছেলেরা নিশ্চয়ই আছে, আর আমাদের বয়সী ওই ছেলেগুলো নিশ্চয়ই ঝুম বৃষ্টির দিনে কাদা-মেখে ফুটবল খেলে, বা হরতালের দিনে খালি রাস্তায় ক্রিকেট খেলতে খেলতে ‘হাউজ দ্যাট’ বলে চেঁচিয়ে ওঠে। জানালার পাশে বসে আমাদের বন্ধুটি আহত চোখে চেয়ে দেখে সেই উল্লাস, আর অলক্ষ্যে হাত বুলায় ওর নিজের শরীরের ক্ষত আর কালশিটের উপর। বড়রা বলতেন বটে সবসময়—“ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের মেন্টাল ম্যাচুরিটি আগে হয়; মেয়েরা অনেক কষ্টের সাথেও খাপ-খাইয়ে নিতে পারে; ছেলেদের সেই ক্ষমতা কই?” হ্যাঁ, আমাদের আছে সেই ক্ষমতা; কিন্তু আমরা জানতাম না সেই ক্ষমতা এমনি এমনি আসে না। সেই ক্ষমতা মূল্য দিয়ে কিনতে হয়। সেই মূল্য হল আমাদের শৈশব। আমাদের কৈশোর। জীবনের এই কখনো-ফিরে-না-আসা সময়টা একবার স্বত্ব ত্যাগ করে দিয়ে দিলে আর কখনো ফেরত পাওয়া যায় না।
আমাদের যে সরল, প্রাণখোলা শৈশবকে আমরা আজ ত্যাগ করছি, গভর্নিং বডির রাজনীতি, নাবালিকা ধর্ষণের আইনানুগ শাস্তি আর পুরো ঘটনায় মিডিয়া কতটুকু ভূমিকা রাখল, তাই নিয়ে ছোট্ট মাথাটাকে জেরবার করছি, ধর্ষিত হয়ে শিক্ষক-নামের-অযোগ্য এক পুরুষের বিরুদ্ধে বিচার চাইতে গিয়ে আমাদের তৎকালীন ‘মাতৃ শ্রেষ্ঠা’ প্রিন্সিপাল আপা’র কাছে শুনছি যে ধর্ষণ নয়, এটা আসলে উভয় পক্ষের সম্মতিতে ঘটেছিল, শহীদ মিনারের মানব-বন্ধনের মত অরাজনৈতিক সমাবেশে সরকার বিরোধীসহ আরো নানান পক্ষের রাজনৈতিক এজেন্ডার স্বার্থপর প্রচারের শিকার হয়েছি, অনমনীয় ব্যক্তিত্বের প্রশাসনিক উচ্চাকাঙ্ক্ষাহীন আম্বিয়া আপাকে সঠিক সম্মান দিতে ব্যর্থ হয়েছি, স্কুলে ধর্ষণের খবর নানা মহলের ধামাচাপা দেবার প্রয়াসের কারণ হিসাবে শুনছি যে ভিকারুননিসার সম্মান এতে নষ্ট হবে (যেন ভিকারুননিসা কোনো সামন্ত-প্রভুর ভেতর-বাড়ি; কলংকের সংবাদে পারিবারিক ঐতিহ্যের মানহানি হবে), আমাদের সেই ত্যাগকে কেউ মহিমান্বিত করল না।
লৈঙ্গিক রাজনীতি আর রাষ্ট্রীয়-প্রাতিষ্ঠানিক রাজনীতি আমরা আজ বুঝতে শিখেছি প্রাপ্তবয়স্ক হবার আগেই; আমাদের একদা সংক্রমিত স্বপ্নগুলো ডালপালা মেলবার আগেই। বড় হবার আগেই আজ আমরা যে বড় হয়ে গেলাম, এত দ্রুত এত বড় কি আমরা আসলেই হতে চেয়েছিলাম? কাগজের প্লেনের পর কাগজ দিয়ে ওরিগামির ব্যাং বা চোখা-মুখের সারস পাখি বানিয়ে বন্ধুকে চমকে দেবার যে প্ল্যানটা গত মাসে করেছিলাম, সেই প্ল্যানটা কি আসলেই গতমাসের ছিল? নাকি কয়েক যুগ আগের ছিল? পরীক্ষার পড়া নষ্ট হবে দেখে মা যে আমাদের কমিক বইগুলো নাগালের বাইরে আলমারির উপর রেখে দিয়েছিলেন পরীক্ষার পর নামিয়ে দেবেন বলে, সেগুলো কি আর পড়া হবে? নাকি সেগুলোতে ধুলো জমতে থাকবে? বাসা বদলানোর সময় সের মাপা দরে বেচে দেব?
ওঃ, কেউ ভাববেন না যেন আমরা সস্তা করুণা চাইছি। মানবতা চাইছে ধর্ষকের বিচার। সুধীমহল চাইছে মানবিক, যৌক্তিক, ধামাচাপা-না-দেয়া পূর্ণাঙ্গ মিডিয়া রিপোর্টিং। শিক্ষানুরাগীরা চাইছেন রাজনীতিমুক্ত শিক্ষাঙ্গন এবং শিক্ষাপ্রশাসন।
আর আমরা ফেরত চাইছি আমাদের স্বপ্নগুলো।
ফেরত চাইছি আবার স্বপ্ন দেখার অধিকার। এই ‘আমরা’ শুধু ভিকারুননিসা স্কুলের গুটিকয়েক ‘ফরচুনেট’ ছাত্রী নই। পুরো বাংলাদেশের সবখানে ছড়িয়ে থাকা মেয়েরা, যারা নামী-দামী স্কুলে যাই, কিংবা প্রত্যন্ত অঞ্চলের টিনশেড দেওয়া স্কুলঘরে সকালবেলা পড়তে বসি আর দুপুরবেলা ঘরের কাজ বা ক্ষেতির কাজে হাত লাগাই। চড়া দামের শৈশবটা তো সস্তা দরে বিকিয়েই দিয়েছি। স্বপ্নগুলো ফেরত দিন।

শুক্রবার, ১০ জুন, ২০১১

বড়াল ব্যবসায়িক ধান্দা, আর প্রভাবশালীরা স্বার্থের জালে বান্ধা!

বাংলা বাউল সংগীতের কিংবদন্তী সম্রাট শাহ্ আব্দুল করিম জন্ম গ্রহন করেন ১৯১৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারী সুনামগন্জের উজান ধলের কালনী নদীর তীরে। যিনি মাঠের টানে, মাটির গানে নিজেকে সমর্পন করেছিলেন। কালনীর ঢেউ ও বাতাস যাকে সাধক পুরুষে পরিনত করেছিলো। সহজ ভাষায় সুরের ইন্দ্রজাল তৈরি করে মানুষের হৃদয়ে যিনি স্হান করে নেন। ছোটবেলায় যে রাখাল বালক কালনীতে চলা নৌকা দেখে মুগ্ধতায় গেয়েছিলেন-
"কোন মেস্তরি নাও বানাইছে কেমন দেখা যায়, ঝিলমিল ঝিলমিল করেরে ময়ুরপঙ্গী নাও"
লক্ষ্যনীয়, শাহ্ আব্দুল করিম একজন মরমী সাধক ছিলেন এবং উল্লেখিত গানে তিনি নৌকাকে শুধু নাও না বলে ময়ুরপঙ্গী নাও বলেছেন। তবে কি তিনি উপলব্ধি করেছিলেন, নদীমাতৃক এ দেশ একদিন আন্তর্জাতিক নদী আগ্রাসনের শিকার হবে? আর এ দেশের দোষরেরা নদীকে নিয়ে ব্যবসায় মেতে উঠবে! যখন নাও পানিতে নয় বরং ময়ুরপঙ্গী হয়ে ভাসবে আকাশে! মৃত্যুর আগে তিনি বলেছিলেন-
"আমি মরে গেলে আমার হাড়গুলো নিয়েও বানিজ্য হবে"
তিনি কি বুঝেছিলেন, বাঁধ দিয়ে নদীকে হত্যার পরও সে নদী নিয়ে বানিজ্য হবে? তিনি কি কখনো কল্পনা করেছিলেন কালনীর ঢেউ একদিন থেমে যাবে, যেদিন বাংলাদেশে আর কোন নদী থাকবে না! ২০০৯ সালের ১২ সেপ্টেমবরে মারা যান এ বাউল সম্রাট। তার মৃত্যুর পর সত্যি তার হাড় বা তার গানগুলি নিয়ে বাজেভাবে ব্যবসা চলছে। যেমন ব্যবসা চলছে বাঁধ দিয়ে হত্যার পরও বড়াল নিয়ে! শাহ্ আব্দুল করিমের মৃত্যুর প্রায় দুই বছর পর আরেক শাহ্(চাটমোহরের ইউএনও ফিরোজ শাহ্) হয়তো নদী, মৃত্যু নিয়ে কল্পনা আর উপলব্ধি দিয়ে সাধক পুরুষ হবার চেষ্টা করছেন! ১ জুন সাপ্তাহিক নয়া আন্দোলন পত্রিকায় প্রথম কলাম রিপোর্টে এসেছে- ৩০ মে উপজেলা স্বাস্হ্য কমপ্লেক্স মিলনায়তনে আর্সেনিকোসিস রোগ নির্নয় ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ক প্রশিক্ষন ওয়ার্কশপে সভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেন- একসময় আসবে যখন আমাদের দেশে কোনো নদী থাকবে না...........! যদিও জনাব শাহ্ এ কথার পেছনে কোনো তথ্য উপাত্ত উপস্থাপন করেননি! হতে পারে তার এ বক্তব্য পরিসংখান নির্ভর নয় বরং আত্মীক। এখন প্রশ্ন আসতে পারে, শাহ্ আব্দুল করিম, লালন শাহ্ মরমী সাধকদের মতো ফিরোজ শাহ্'র এ আত্মীক সাধনা প্রকৃতি ও স্রষ্টার প্রতি নাকি এ আত্মীক বন্ধন বড়াল ব্যবসাহীদের সাথে? আমি ভাবছিলাম,বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে নিয়ে করা সেই ঐতিহাসিক পঙ্গতি-
"যতোদিন রবে পদ্মা মেঘনা যমুনা সুরমা বহমান, ততোদিন রবে কৃর্তি তোমার শেখ মুজিবর রহমান"
রুপক অর্থে ব্যবহৃত কথাটি এটাই বোঝায় যে, বাংলাদেশের অস্তিত্ব ততোদিন থাকবে যতোদিন নদী থাকবে আর বাংলাদেশের অস্তিত্ব যতোদিন থাকবে বঙ্গবন্ধুর কৃর্তি ততো দিন থাকবে। তবে কি ফিরোজ শাহ্'র মতে- একসময় আসবে যখন আমাদের দেশে কোনো নদী থাকবে না, সেদিন কি পদ্মা মেঘনা যমুনা বহমান না থাকায় বঙ্গবন্ধুর কৃর্তিও থাকবে না? সে সময় কি বাংলাদেশের অস্তিত্বও থাকবে না? আমি ভাবছিলাম, এক সময় বাংলাদেশে কোন নদী থাকবে কি থাকবে না তার চেয়েও বড় প্রশ্ন, যখন বদ্ধ বড়াল প্রবাহমান হবার স্বপ্ন দেখছে, যখন বড়ালকে নিয়ে নতুন করে ষড়যন্ত্র হচ্ছে তখন মি. শাহ্'র এমন বক্তব্য কি ষড়যন্ত্রকারীদের স্বার্থ রক্ষা করছে না? তাকে বুঝতে হবে, কারো মা চিরকাল বেঁচে থাকেনা তাই বলে সন্তান শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগের আগে মার জন্য কাফনের কাপড় কেনে না! বরং শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত সর্বস্য দিয়ে মাকে বাচানোর চেষ্টা করে। তাই একসময় নদী থাকবে কি থাকবে না তার চেয়ে বড় কথা নদীমাতৃক বাংলাদেশে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত সর্বস্য দিয়ে নদী বাঁচানোর চেষ্টা করতে হবে। একই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য উপজেলা চেয়ারম্যান এড. একেএম সামসুদ্দিন খবির বলেন- বড়াল নদী উন্মুক্ত করে জনগনের কতটুকু স্বার্থ রক্ষা হচ্ছে তা দেখতে হবে। খালি মিছিল মিটিং ও মাইকিং করা হচ্ছে। বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। যদিও উপজেলা চেয়ারম্যান বলেন নি কোনটা সত্য আর কোনটা ভ্রান্ত? কারা ছড়াচ্ছে বিভ্রান্তি আর কারা বিভ্রান্ত? সত্য তো এটাই, বড়ালে যখন বাঁধ দেয়া হয় তখন তিনি এ এলাকার সংসদ সদস্য ছিলেন। এ অপকর্মের দায় তিনিও কি এড়াতে পারেন? তিনি কেনো সেদিন বাধা দেননি? সত্যতো এটাই, তিনি নিজেও বড়াল নদী রক্ষা আন্দোলনের মিছিল মিটিংএ অংশ নিয়েছেন! বড়ালে বাঁধ ভেঙ্গে সুদৃশ্য ব্রীজ করার ঘোষনা তিনিই দিয়েছিলেন! বড়াল নদী রক্ষা আন্দোলনের মিছিল মিটিং যদি বিভ্রান্তি ছড়ানো হয়, তাহলে তো তিনিও একদিন বিভ্রান্তি ছড়িয়েছেন। বড়ালে বাধ ভেঙ্গে ব্রীজ করার ঘোষনা কি বিভ্রান্ত করা ভোটের রাজনীতি? অথচ তিনিই দোষ চাপাচ্ছেন বিভ্রান্ত করার! শাহ্ আব্দুল করিম হয়তো এজন্যই গেয়েছিলেন-
"আমি তোমার কলের গাড়ি তুমি হও ড্রাইভার, তোমার ইচ্ছায় চলে গাড়ি দোষ কেনো পড়ে আমার"?
সত্যি আমরা জনপ্রতিনিধিদের কলের গাড়ি! তাদের ইচ্ছায় এ গাড়ি চলবে, তাদের ইচ্ছায় নদীতে বাঁধ হবে, ব্রীজ করার ঘোষনা হবে, নদীর মধ্যে বাঁধ দেয়া হবে, বড়াল নিয়ে ব্যবসা হবে। অথচ দোষ হবে........! আজ বড়ালের কান্না শোনার লোক নেই, বড়াল পাড়ের মানুষের আক্ষেপ বোঝার লোক নেই। বড়ালে কান পাতলেই হয়তো শোনা যাবে সে বাস্তবতা, কালনী পাড় থেকে ভেসে আসা শাহ্ আব্দুল করিমের গান-
"শুনবে কি বুঝবে কি ওরে মন ধুন্ধা, এ দুনিয়া মায়ার জালে বান্ধা"
সত্যি বড়াল আজ অনেকের ব্যবসায়িক ধান্দা, যারা মায়ার জালে, স্বার্থের জালে বান্ধা। ১০ জুন'১১।

রবিবার, ১ মে, ২০১১

সিগারেটের মূল্যবৃদ্ধি, ফুসফুস নাকি চিন্তার ক্যানসার!!!

সিগারেটের দাম বেড়েছে!!!
অনেকেই দেখি খুশি হয়েছে! যে খুশির প্রকাশ ফেসবুক-এর স্ট্যাটাস হয়ে ব্লগেও আলোড়িত হচ্ছে।
আমি ভাবছিলাম, এ খুশির কারন কি শুধুই ধুমপানের ক্ষতি নাকি আমাদের নির্বুদ্ধিতা!!! সিগারেটের দাম বেড়েছে কিন্তু কারা বাড়িয়েছে?? সরকার কি অতিরিক্ত দামের মূল্য সংযোজন কর(ভ্যাট) পাচ্ছে??
সরকার তো দাম বাড়ায়নি? সরকার তো ভ্যাট পাচ্ছে না? তবে কারা, ধুমপানের ক্ষতির জুজু তুলে অবৈধ ভাবে দাম বাড়িয়ে কোটি কোটি টাকা অতিরিক্ত মুনাফা লুটে নিচ্ছে?
এরাতো সেই কপট, যারা ক্যান্সারের বিষ হাতে তুলে দেয় সঙ্গে সতর্কবার্তা-"ধুমপান ফুসফুস ক্যান্সারের কারন" বলে নিজেদের দায় মোচন করে নেয়। এরাই দাম বাড়িয়ে মুনাফা লুটে নেয় আর আমাদের বুঝিয়ে দেয় দুধের দাম নয় বিষের দাম বেড়েছে...তালিয়া।
আমরাও খুশি মনে তালি বাজাই........আমি ভাবছিলাম, এরা সিগারেট দিয়ে আমাদের ফুসফুসের কতটা ক্ষতি করেছে জানিনা, তবে প্রতারনায় যে আমাদের চিন্তা শক্তি পঁচিয়ে দিয়েছে সে লক্ষন স্পষ্ট!!!

মঙ্গলবার, ২৬ এপ্রিল, ২০১১

ব্যক্তিত্বহীন সাংবাদিকতার প্রয়োজনীয় শিক্ষা!!!

জারো্লাভ সিফার্ট-এর জন্ম হয়েছিল ১৯০১-এ  একটি খেটে খাওয়া পরিবারে, চেক প্রজাতন্ত্রের জিজকভ শহরের উপকণ্ঠে। পরিবার ও শহরের দারিদ্র্য তাকে কমিউনিস্ট হতে উদ্বুদ্ধ করেছিল। তিনি ১৯২১-এ কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেন। কিন্তু তাদের বলশেভিক চিন্তাধারার সমালোচনা তিনি করতে থাকেন এবং আট বছর পরে পার্টি থেকে বহিষ্কৃত হন।
তিনি একাধিক কমিউনিস্ট পত্রিকা ও ম্যাগাজিনের সম্পাদনা করতেন। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী কমিউনিস্ট সরকারের কঠিন সমালোচনা করায় তিনি প্রভাবশালীদের বিরাগভাজন হন। সিফার্ট সাংবাদিকতায় লেগে থাকেন। সরকারের প্রতিবন্ধকতার মুখে সিফার্ট ১৯৪৯-এ এক পর্যায়ে সাংবাদিকতাও ছেড়ে দিতে বাধ্য হন।
তিনি তার একক সংগ্রাম চালিয়ে যান। তিনি বহু রকমের লেখায়, বিশেষত কবিতা লেখায় মনোনিবেশ করেন। কিন্তু কমিউনিস্ট সরকার তার লেখালেখির ওপর কড়া নজর রাখে এবং তার অনেক লেখা অপ্রকাশিত থেকে যায়। ১৯৭৭-তে চার্টার ৭৭ মানব অধিকার ম্যানিফেস্টোতে সই দেয়ার জন্য তিনি ব্ল্যাক লিস্টেড হন।   তার কবিতা বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ১৯৮৪-তে তিনি সাহিত্যে নোবেল প্রাইজ পান।  এবং এখন পর্যন্ত তিনিই একমাত্র চেক যিনি নোবেল প্রাইজ পেয়েছেন।
এখন প্রশ্ন আসতে পারে সিফার্ট-এর শিক্ষাগত যোগ্যতা কি ছিলো?
এ বিষয়ে উইকিপিডিয়ায় কোন তথ্য না থাকলেও নোবেল প্রাইজের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে সিফার্ট এর বায়োগ্রাফিতে লেখা আছে তিনি সেকেন্ডারি স্কুলে যোগ দিয়েছিলেন। অর্থাৎ তিনি উচ্চ শিক্ষিত ছিলেন না বা কোন সার্ভিস কমিশনের ক্যাডারও  ছিলেন না। তবে কি সিফার্ট ভালো লেখক বা ভালো সাংবাদিক, সর্বপরি নোবেল পাবার যোগ্য ছিলেন না???
 হয়তো সিফার্টের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন করা যেতে পারে কিন্তু চেক জনগণের কাছে সিফার্ট সকল বিতর্কের ঊর্ধ্বে। চেক জনগণ মনে করে তিনি ছিলেন একজন সাহসী ও প্রতিবাদী লেখক যিনি তার নীতির সঙ্গে আপস করেননি।  জারো্লাভ সিফার্ট ভাগ্যবান, তিনি বাংলাদেশে চাটমোহরের বড়াল তীরে জন্ম নেননি! তাহলে হয়তো তার যোগ্যতা হতো প্রশ্নবিদ্ধ এবং তিনি হতেন বিতর্কিত!
এই মুহূর্তে  আমি পড়ছিলাম, ৭ এপ্রিল দৈনিক চলনবিল'এর একটি রিপোর্ট। "ইউএনও'র সাংবাদিক জ্ঞান" শিরোনামে রিপোর্টে এসেছে- চাটমোহরের ইউএনও ফিরোজ শাহ্ স্থানীয় দুজন সাংবাদিকের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরন করেছেন, সাংবাদিকদের অশিক্ষিত বলেছেন এবং তাদের বিসিএস উত্তির্ন হয়ে আসতে বলেছেন!!!
আমি ভাবছিলাম, উচ্চ শিক্ষিত ইউএনও তার বোধকে কতটা নিম্ন পর্যায়ে নিয়ে গেছেন! কারন, লেখক কিম্বা সাংবাদিকের সৃষ্টিশীল পেশার  জন্য ভালো পড়াশোনা দরকার, পড়াশোনার ওপর ডিগ্রি নয়!(আমি বলছি না যে উচ্চ শিক্ষার দরকার নেই, আমার মতে, এ বিষয়ে উপদেশ হতে পারে, কটাক্ষ নয়)। যদিও বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে গনযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা নামে বিভাগ চালু আছে এবং এর ওপর পড়ালেখা করতে হয় তবুও বলবো সৃষ্টিশীল কাজে পড়ালেখা করে বোদ্ধা হওয়া যায় সৃষ্টিশীল মানুষ হওয়া যায়না, এ জন্য প্রয়োজন অনুশীলনের।  আর চাটমোহরের ইউএনও'র মতো বোধ যদি সিফার্টের থাকতো তাহলে হয়তো তিনি লেখালেখি ছেড়ে তার বাবার মতো কারখানার শ্রমিক হতো। এ বোধ যদি দুখুমিয়া'র থাকতো তাহলে হয়তো সে নজরুল না হয়ে আজীবন রুটির দোকানে কাজ করতো।
আমি আশা করছি, ইউএনও মি. শাহ্ এ বিষয়ে সিফার্টের জীবন থেকে শিক্ষা নেবেন এবং তার ভুল বুঝতে পারবেন।
এখন প্রশ্ন হলো, এ থেকে চাটমোহরের সাংবাদিকেরা কি শিখবেন???
এ  প্রশ্নর উত্তর দিতে গেলে স্বভাবতই যে প্রশ্ন দুটি আসবে-
এক, ইউএনও'র বক্তব্য কি সাংবাদিকদের অপমানবোধ জাগ্রত করেছে?
উত্তর-না! কারন এ বক্তব্যের পরও চাটমোহরের সাংবাদিকেরা ঐক্যমতে পৌছাতে পারেনি। তারা মিলিত ভাবে প্রতিবাদ করেনি! সাংবাদিকদের একদল একটি রিপোর্ট, একটি ফলোআপ ও একটি মিটিং করলেও তা সম্ভবত অপমানবোধ থেকে নয় বরং অহংবোধ সমস্যা থেকে তাই তারা অল্পতে মিইয়ে গেছে বা থেমে গেছে। আর থামার মাধ্যমেই তারা ইউএনও'র বক্তব্য মেনে নিয়েছে, প্রমান হয়েছে ইউএনও সত্য বলেছেন!!!
দুই, ইউএনও যদি সত্য না বলে থাকেন এবং তার বক্তব্য যদি অপমানজনক হয়ে থাকে তাহলে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হলো না কেন?
উত্তর- সাংবাদিকদের দূর্বল ব্যক্তিত্ব।
তাই এ ঘটনা  থেকে চাটমোহরের সাংবাদিকেরা শিখতে পারে, ব্যক্তিত্ববান হতে এবং সিফার্টের মতো সাহসী, প্রতিবাদী ও আপসহীন হতে।-২৪এপ্রিল'১১।

রবিবার, ২৪ এপ্রিল, ২০১১

স্রষ্টা সবার জন্য নয়!!!

সকালে পত্রিকা কিনে সবে মাত্র চা'র দোকানে বসেছি। কালো রং, উসকো খুসকো চুল, বিশেষত্বহীন টোকাই চেহারার একটি ছেলে, কতই আর বয়স? নয়-দশ। এক হাতে রুটি অন্য হাতটা আমার দিকে বাড়িয়ে করুন চেহারায় বললো- পাঁচটা ট্যাকা দেন।
বিরক্তি নিয়ে বললাম-টাকা দিয়ে কি করবি?
চা দিয়া রুটি খামু, ছেলেটির তাৎক্ষনিক জবাব।
করুনা প্রত্যাশি একটি ছেলের স্পষ্ট জবাবে বিরক্ত আমি ততোক্ষনে পত্রিকায় মনোযোগ দিয়েছি। কিছুক্ষন পর খেয়াল করে দেখি, ছেলেটি তখনো দাড়িয়ে, আনমনে রুটির ফোলা অংশ ছিড়ে খাচ্ছে।
আমি দোকানদারকে ছেলেটির জন্য চা দিতে বলে পত্রিকায় চোখ বোলাচ্ছি, প্রথম আলো'র সারা বিশ্ব পাতায় পড়ছিলাম "পাঁচ বছরের তারকা সুরি"। স্বনামখ্যাত হলিউড তারকা টম ক্রুজ ও কেটি হোমসের মেয়ে সুরি। গায়ের উজ্জল রং, ভিন্ন ধাঁচের বাদামি চুল, সবুজ চোখ ও মিষ্টি চেহারায় অন্য রকম বিশেষত্ব এনে দেয়া সুরি, নিজ মহিমাতেই শিশু তারকা। যার প্রত্যেকটি পোষাকের দাম দুই হাজার ডলার, যার ওয়ারড্রোবেই আছে ২৫ লাখ ডলারের পোশাক!
মনটা হঠাৎ খাখা করে ওঠে.....চোখ তুলে তাকাই- টোকাই ছেলেটি তখন চায়ে রুটি ভিজিয়ে খেতে ব্যস্ত।
আমি বলি- স্কুলে যাস?
কোন জবাব আসে না!
হয়তো শুনতো শুনতে পায়নি, হয়তো শুনলেও জবাব দেবার প্রয়োজন বোধ করে নি! টোকইয়ের আবার স্কুল!!!
আমি ভাবছিলাম. স্রষ্টা সতিৎ দয়াময়! তার দয়ায় এই ছেলেটির স্কুল ভাগ্য নেই!
এই ছেলেটি যদি স্কুলে যেতো, তাহলে হয়তো হিসেব কষে বের করে ফেলতো, ২৫ লাখ ডলার সমান কত টাকা! ছেলেটি তখন বুঝে যেতো স্রষ্টা সবার জন্য নয়! স্রষ্টা  থাকেন কোনো ভদ্র পল্লিতে, সুরিদের ওয়ারড্রোবে, টোকাইয়ের চায়ের কাপে নয়!
আমার চোখ ছলছল করে ওঠে.....আমি পত্রিকায় মুখ ঢাকি। লজ্জায়....না না ভয়ে! ছেলেটি যদি আমার চোখের ভাষা বুঝে ফেলে।

বুধবার, ২০ এপ্রিল, ২০১১

মূল্যবোধের বনসাই, ভগ্ন মহিলা কলেজ!!!

এই উপমহাদেশে "বৃদ্ধস্য তরুনি ভার্যা" বলে একটা কথা প্রচলিত আছে। সাধারনত বৃদ্ধরা তরুনী প্রেমিকা কিম্বা তরুনী স্ত্রীর সঙ্গ পছন্দ করেন। এই পছন্দ করাটা নৈতিক মূল্যবোধে চাপা পড়তে পারে আবার অনৈতিক বাসনার ভীমরতিতে পরিনত হতে পারে। আর যে ভীমরতিকে বলা যেতে পারে শুদ্ধ চিন্তার প্রহসন!
হয়তো মাইকেল মধুসূদন দত্ত এ ভীমরতি কাছ থেকে দেখেছিলেন, ব্যথিত হয়েছিলেন এবং ভগ্ন হৃদয় নিয়ে ১৮৬০ সালে লিখেছিলেন, সার্থক প্রহসন "ভগ্ন শিবমন্দির"। যদিও প্রকাশকালে তিনি নাম পরিবর্তন করে রাখেন- 'বুড়ো শালিখের ঘারে রোঁ'। সে বছরের প্রথমার্ধে তিনি লিখেছিলেন প্রহসন "একেই কি বলে সভ্যতা"?
প্রায় একই সময়ে লেখা তার এ দুটি প্রহসনে ছিলো বিপরীত চিত্র! 'একেই কি বলে সভ্যতা' প্রহসনটি ছিলো নব্য শিক্ষিত নাগরিক যুবকদের নিয়ে আর 'বুড়ো শালিখের ঘারে রোঁ' প্রহসনটি ঐ সমাজের বিপরিত পৃষ্ঠার অশিক্ষিত অথচ প্রভাবশালীর বাস্তব গল্প। যেখানে ধর্মে আস্হাশীল বৃদ্ধ ভক্ত, ভক্তি মালা হাতে নিয়ে দান দক্ষিনা দেয় না কিন্তু নারী দেহে লোলুপ হয়ে খাজনা মাফ করে দেয়। জাত-ধর্মের কথা বলে উপদেশ দেয়, আবার সেই কপট, নিষিদ্ধ আকাংক্ষায় মুসলিম নারির সান্নিধ্য কামনা করে।
এখন প্রশ্ন হলো, অশিক্ষিত বৃদ্ধ ভক্তের মতো অশিক্ষিতরাই কি বয়সের ভীমরতিতে আক্রান্ত হয় নাকি শিক্ষিত শালিখের ঘারেও রোঁ উঠতে পারে?
এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজার আগে আমি পড়ছিলাম, ১৮ এপ্রিলের সপ্তাহের পত্রিকা সময় অসময়ের একটি রিপোর্ট। "সর্ব মহলে সমালোচনার ঝড়, প্রভাষক বায়েজিদ বোস্তামি কর্তৃক ছাত্রীকে বিয়ে তালাক নাটক রচনা", শিরোনামে রিপোর্টিতে এসেছে- চাটমোহর মহিলা কলেজের ইংরেজির প্রভাষক বায়েজিদ বোস্তামি তার স্ত্রী, কলেজ পড়ুয়া মেয়ে ও স্কুল পড়ুয়া ছেলে ফেলে, মেয়ে বয়সী সাবেক এক ছাত্রীকে জানুয়ারী'১১তে গোপনে বিয়ে এবং এপ্রিলে পারিবারিক চাপে ডিভোর্স দিয়েছে!
আমি ভাবছিলাম, অনৈতিক বাসনার ভীমরতি শুধু অশিক্ষিত শালিখ নয় বরং প্রভাষক শালিখেরও ঘারে রোঁ তুলতে পারে! এবং এই রোঁ'টা যদি তিন মাসের ধরা ছাড়ার নাটক হয় তাহলে একে কোনোভাবেই 'বৃদ্ধস্য তরুনী ভার্যা' বলা যাবে না,  বরং একে বলতে হবে 'বৃদ্ধস্য তরুনী বিনোদন'!
 যদিও প্রভাষক বায়েজিদ বোস্তামির এই তরুনী বিনোদন সমাজের জন্য মুখরোচক সুখপাঠ্যেরও অযোগ্য......মূল্যবোধের কি চমৎকার পরাজয়! নীতি-নৈতিকতার আশ্চর্য প্রহসন! পিতৃসম শিক্ষক যেখানে প্রেমিক পুরুষ! মহান পেশায় নিয়োজিত স্বামী কিম্বা পিতা যেখানে প্রতারক! প্রতিকুলতা জয় করে বিয়ে অতঃপর তালাকদাতা সে তো কপট দুরাচারি!
কিন্তু এতোকিছুর পরও মি. বোস্তামির যে গুন ও দোষটা আমাকে বিশেষভাবে ভাবাচ্ছে- তিনি একজন বনসাই শিল্পি। কোন এক বৃক্ষমেলায় আমি তার বনসাই দেখেছিলাম এবং মুগ্ধ হয়েছিলাম। হয়তো তার এই বিশেষ গুনেই মুগ্ধ হয়েছিলো তার সেই ছাত্রীটিও! চাটমোহরের বাস্তবতায় এ শৌখিনতাটি এক অনন্য আভিজাত্য। সম্ভবত এ শৌখিনতাটি তাকে প্রভাবিত করেছে!!! এবং তিনি কোন নির্দিষ্ট গাছের পাশাপাশি বনসাইয়ের মতো ছোট  করে ফেলেছেন, তার চিন্তা-চেতনা-মূল্যবোধ। বনসাই করে ফেলেছেন, তার দায়বদ্ধতা-কৃতজ্ঞতা-দায়িক্তশীলতা। সংকির্ন করে ফেলেছেন শিক্ষা ও শিক্ষকতা।
তবে আমি শংকিত, হয়তো এ বনসাই প্রক্রিয়ায় আক্রান্ত হতে পারে চাটমোহর মহিলা কলেজ! কিছুদিন আগেই শেষ হয়েছে মাধ্যমিক পরিক্ষা। আর কিছুদিন পর রেজাল্ট পরবর্তী উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তির জন্য, এমন ঘটনার পর শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকেরা স্বভাবতই মহিলা কলেজের বিষয়ে আগ্রহি হবে না তখন ভাবমূর্তি সংকটের পাশাপাশি কলেজ পড়বে ছাত্রী সংকটে!
তাই এই মুহূর্তে কোন বনসাই নয় বরং বিকাশিত করতে হবে চিন্তা ও মূল্যবোধ। কারন চাটমোহরের একমাত্র মহিলা বিদ্যাপিঠ(উচ্চ) কোন ভগ্ন কলেজে পরিনত হতে পারে না!-২০এপ্রিল'১১।

বৃহস্পতিবার, ১০ মার্চ, ২০১১

কাঙ্গালের হস্ত, করে সমস্ত কাঙ্গালের ধন চুরি!


বাংলায় একটা প্রবচন আছে, পেটের নাম মহাশয়, যাহা সহায় তাহাই সয়
আর তাইতো, সবজিতে বিষ, মাছে ফরমালিন, মুড়িতে ইউরিয়া, সবকিছুই অসহায়, হজম করে মহাশয়!
আমি জানিনা, ক্ষমতাশীনদের পেট নিয়ে এমন কোন প্রবাদ আছে কিনা? যে মহাশয়, আরো বড় বিষ্ময়! হজম করে ত্রানের টিন, রিলিফে ম্বল, দুম্বার মাংস এমন পেট নিয়ে কোন প্রবচন না থাকা সত্যি দূর্ভাগ্যজনকযা আমাকে করেছে বিষ্মিত ও বন্চিত। তবে এই মুহূর্তে আমি পড়ছিলাম চাটমোহরের কয়েকটি স্থানীয় পত্রিকা যেখানে ক্ষমতাশীন ম্যজিশিয়ানদের দুম্বার মাংস ভ্যানিশের রিপোর্ট এসেছে।
আমি ভাবছিলাম , নীতি নৈতিকতার দেউলিয়াত্বে দুই বিঘা জমির মত, দুই টুকরা মাংসের খেলায় ক্ষমতাশীনেরা হয়তো দুস্থদের দুম্বার মাংস  খেয়েছেন কিংবা খাননি। কিন্তু নিয়ে কোন প্রশ্ন নেই যে, তারা নিজেদের বিবস্ত্র করে ফেলেছেন এবং সকলকে দেখিয়ে দিয়েছেন কেমন দুস্থ তারা হয়েছেন ইদানিং। এখানে ইদানিং শব্দটা হয়তো দৃষ্টিকটু মনে হতে পারে কারন অনেক আগেই রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন  “রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙ্গালের ধন চুরি”। তাই রাজার হস্ত , কাঙ্গালের ধন, ত্রানের টিন, দুম্বার মাংস চুরি করবে এটাই স্বাভাবিক!
কিন্তু প্রশ্ন হলো আমরা কাদের রাজা বলবো, বলছি?
যারা ত্রানের টিন, রিলিফের কম্বল, দুস্থের মাংস, মেরে খান! যাদের রুচি মানসিক সুস্থতা নিয়ে প্রশ্ন করা যায়!
 দুস্থরা তো কাঙ্গাল সম্পদে, কিন্তু এরাতো কাঙ্গাল মানসিকতায়। তাই এক্ষেত্রে রাজার হস্ত কোন কাঙ্গালের ধন চুরি করেনি! বরং কাঙ্গালেরাই চুরি করেছে কাঙ্গালের ধন!
এখন পাঠক, আপনাদেরকে প্রশ্ন, বড় কাঙ্গাল কে? সম্পদের কাঙ্গাল নাকি মানসিকতার কাঙ্গাল?
আপনারা প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে পারেন এবং সে সব কাঙ্গালদের চিন্হিত করতে পারেন! 
 অনেকে হয়তো বলতে পারেন, নিজের খেয়ে মরুর দুম্বা তাড়ানোর দরকার কি? বা এসব কাঙ্গালদের চিন্হিত করার প্রয়োজনীয়তা কতটুকু?
আমি বলবো, প্রয়োজনীয়তা তাৎপর্যময়। বছরেই বাংলাদেশে আদমশুমারী  হবার কথা রয়েছে। কিন্তু  দূঃখজনক হলেও সত্য, আদম বা মানুষ গননার মতো কাঙ্গাল গননা বা কাঙ্গালশুমারী পৃথিবীর কোন দেশেই নেই। আমরা কাঙ্গাল গননা করে নজির স্থাপন করতে পারি। এবং সেইসব চিন্হিত কাঙ্গালদের নিজের টাকায় মশলা কিনে দিতে পারি! কারন যারা গরিবের হক দুম্বার মাংস চুরি করতে পারে, তারা নিজের টাকায় মসলা কিনে সে মাংস রান্না করবে তা বিশ্বাস যোগ্য নয়, তাই আমরা এসব  কাঙ্গালদের মশলা কিনে দিয়ে লজ্জা দিতে পারি, এবং তারাও লজ্জা পেয়ে নিজেদের সংশোধন করতে পারে। আর এর পরও যদি তারা নিজেদের সংশোধন না করেন তাহলে বলবো, আমাদের দেশে একসময় ঘোষনা দিয়ে ফকির হবার রেয়াজ ছিলো, ঋনের ভারে জর্জরিত হয়ে উপায়ন্তর না দেখলে যে কেউ ঘোষনা দিয়ে ভিক্ষাবৃত্তি শুরু করতে পারতো এবং করতো। তেমনি ভাবে দুম্বার মাংস ভ্যানিশ করা ম্যাজিশিয়ানেরা যদি নিজেদের সংশোধন করতে নাই পারেন, তাহলে তারা সমাজে নিজেদের কাঙ্গাল হিসাবে ঘোষনা দিতে পারেন এবং সতিৎকারের কাঙ্গাল হয়ে বৈধভাবেই দুম্বার মাংস খেতে পারেন!!!

পুনশ্চঃ গোপন সুত্রে প্রকাশ, দুম্বার মাংসের অপর্যাপ্ততা নিয়ে এসব কাঙ্গালদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। আমি দাতা দেশগুলোর কাছে দাবি জানাচ্ছি, আগামী বছর মাংস নয় যেন আস্ত দুম্বা পাঠানো হয়। যদিও জানি সাড়ে সাত কোটি মানুষের জন্য দশ কোটি কম্বলের মতো, ষোলো কোটি মানুষের জন্য বিশ কোটি দুম্বাও যথেষ্ট নয়!!!-১০মার্চ’১১।