শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৩

এরশাদ কেন গ্রেফতার হলেন?

এরশাদ কেন গ্রেফতার হলেন?

এ প্রশ্নের উত্তর দিতে হলে, পাল্টা প্রশ্ন করতে হবে- আসলেই কি এরশাদ গ্রেফতার হয়েছেন?
সাদামাঠা ভাবে এ প্রশ্নের উত্তর হতে পারে- হ্যাঁ, তিনি আসলেই গ্রেফতার হয়েছেন।
রসিকতার সাথে এ প্রশ্নের উত্তর হতে পারে- না, তিনি গ্রেফতার হননি! জনগনের বন্ধু পুলিশের সহায়তায়, পরম বন্ধু র‌্যাব তাদের অতিরিক্ত মানবিক দায়িক্তে তাকে হাসপাতালে পৌছে দিয়েছেন!!!

তবে রাজনীতি যেহেতু কোন সাদামাঠা কিংবা রসিকতার বিষয় নয়! তাই এ প্রশ্নের যথার্থ উত্তর দিতে হলে কয়েকটি মূল্যায়নে আপনাকে যেতেই হবে....

প্রথমত- এরশাদকে অঘোষিত আটকের পর স্বাভাবিক প্রবনতায় তাকে ডিবি কার্যলয়ে নেয়া হয়নি! বরং 'ইদুরের দুঃখে বিড়াল কাতর' হয়ে সেনা নিয়ন্ত্রিত সিএমএইচে নেয়া হয়েছে।

দ্বিতীয়ত- এরশাদ গ্রেফতার এড়াতে আত্বহত্যার হুমকিতে ৪ টি রিভালভার লোড করে রেখেছিলেন। এরশাদের মত কাপুরুষের আত্বহত্যার সাহস নেই সত্যি! কিন্তু তাই বলে কি নুন্যতম প্রতিরোধও হবেনা?

তৃতীয়ত- রাজনৈতিক এ ঘোলাটে সময়ে সব শেষ হবার আগে ভারতের পরামর্শপুষ্ট ও দীর্ঘ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ আওয়ামীলীগ নিশ্চই নিজেকে মিত্রহীন করার ঝুকি নেবে না।

তাই এরশাদ আটকের এ 'টম এন্ড জেরী' খেলায় এরশাদ গ্রেফতার হয়েছেন এ ধারনাটা সাদামাঠা একই সাথে রসিকতাও বটে...

এখন প্রশ্ন আসতে পারে- এ রাজনীতির কি দরকার ছিলো?

উত্তরঃ
এক.
কাদের মোল্লার ফাঁসি বিষয়ে বৈষয়িক চাপ ও দৃষ্টি গনতন্ত্রের আঘাতের দিকে ঘুরিয়ে দেয়া।

দুই.
ম্যানেজ এরশাদকে চিকিৎসার জন্য বিদেশ পাঠিয়ে ও এ সম্পর্কে সাধু বিবৃতি দিইয়ে বিশ্ববাসীর ধারনা ভুল প্রমান করা এবং নিজেদের গনতান্ত্রিক শক্তিরুপে এটেনশান প্রতিষ্ঠিত করা।

তিন.
এরশাদ কত কদিয়ে যেভাবে কথা বলেছে, তার পক্ষে আর আওয়ামীলীগের একক নির্বাচনে যাওয়া সম্ভব না, তাই একটু ঘুড়িয়ে এরশাদকে সেভ সাইডে রেখেই তাকে নির্বাচনে নিয়ে আসা।

এ মূল্যায়নকে আরো ভালোভাবে বুঝতে হলে, আপনাকে পড়তে হবে বিডিনিউজ২৪.কম এর একটি নিউজ- 'জাপার জন্য ৬০টি রেখে আ. লীগের আসন ভাগ' শিরোনামে আওয়ামীলীগের নীতি-নির্ধারকদের একজন বরাতে নিউজটিতে এসেছে- 'নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে রাখা জাতীয় পার্টির জন্য ৬০টি আসন রেখেই দশম সংসদ নির্বাচনের আসন বণ্টন চূড়ান্ত করেছে আওয়ামী লীগ।'

তাই এরশাদের আটককে গ্রেফতার হিসাবে দেখার সুযোগ নেই, বরং কূট রাজনীতির নির্বাচন যাত্রা হিসাবেই দেখতে হবে.....

আওয়ামীলীগ কি আবার ক্ষমতা আসতে যাচ্ছে?

আওয়ামীলীগ কি আবার ক্ষমতা আসতে যাচ্ছে?

বিশেষত, তাদের ইশতেহারের মেগা ইস্যু যুদ্ধাপরাধীর বিচার সম্পন্ন হওয়া, এ বিচারকে কেন্দ্র করেই মৃতপ্রায় গনজাগরন মঞ্চকে পূনজাগরন করা, চাপে ফেলে এরশাদকে নির্বাচনে নিয়ে এসে একতরফা নির্বাচনকে বৈধ করা, একই সাথে তাদের একগুয়েমী মনোভাব এবং আবার ক্ষমতা পেতে মরিয়া চেষ্টা, এ প্রশ্নটিকে সামনে নিয়ে আসছে এবং গুরুত্বপূর্ন করে তুলছে...

ইতিমধ্যেই, সংলাপ-সমঝোতা-সর্বদলীয় নির্বাচন নিয়ে সকল প্রচেষ্টাই ফেল করেছে! এমনকি ব্যর্থ হয়েছে জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকোর মিশন!
তবে কি সমঝোতা বিহীন একদলীয় একগুয়েমিতেই নির্ধারন হবে বাংলাদেশের ভবিষৎ?

উত্তরঃ না। আওয়ামীলীগের পক্ষে সেটা সম্ভব হবে না! কারন তাদের পরিকল্পনায় হয়তো সবকিছুই রেডি আছে, শুধু পূবের বাতাসটা ছাড়া!!

চীনে ২২০- ২৮৩ সাল ছিলো তিন রাজার যুগ। তখন বিখ্যাত রণকুশলী কাও কাও-এর নেতৃত্বে উই রাজ্যের সেনাবাহিনীকে মোকাবেলা করেছিলো সম্মিলিতভাবে অপর দুই রাজ্য উ এবং শু রাজ্যের সেনাবাহিনী। উ রাজ্যের ঝো উ পরিকল্পনা করেছিলেন কাও কাও-য়ের নৌবহর পুড়িয়ে দেবার জন্য কয়েকটি জাহাজে আগুন ধরিয়ে সেদিকে ঠেলে দেবেন। তখন ছিলো শীতকাল এবং ঝো উ-র নৌবহর ছিলো পূর্বদিকে। কাও কাও-য়ের নৌবহর ছিলো পশ্চিম দিকে। কাও কাও-য়ের নৌবহরের দিকে প্রজ্জলিত জাহাজ পাঠানোর জন্য সবকিছুই প্রস্তুত ছিলো, শুধু ছিলো না পূবালী বাতাস। পূবদিকের বাতাস প্রয়োজনীয় ছিলো প্রজ্জলিত জাহাজকে লক্ষ্যস্থানে পাঠানোর জন্য।
এ উপকথা থেকে আমরা বুঝতে পারি- গুরুত্বপূর্ন বিষয় বাদ দিয়ে আর সব কিছু রেডি থাকাও মূল্যহীন....

এখন অনেকে প্রশ্ন করতে পারেন- বাংলাদেশের বাস্তবতায় পূবের বাতাসটা কি?

উত্তরঃ জনসমর্থন।

আওয়ামীলীগ জনসমর্থন হারিয়েছে কিন্তু বাকি সব রেডি করেছে।
কিন্তু হায়! বাকি সব কোন কাজে দেবে না, পূবালী বাতাস ছাড়া। কাজে দেবেনা জনসমর্থন ছাড়া।
আর এ জন্যই, বাকি সব রেডি থাকলেও আবার ক্ষমতায় আসতে পারবে না আওয়ামীলীগ....