রবিবার, ২৫ নভেম্বর, ২০১২

আজ আমি শোক জানাব না!!!



রানের পাহাড়ে চাপা পড়া বাংলাদেশ,
আজ চাপা পড়েছে
গার্ডার ভাঙ্গা ফ্লাইওভারের নিচে....

সাকিব আর নাসিরের শতক বঞ্চিত আক্ষেপ,
আজ ছাপিয়ে গেছে
সেলাই দাদা আর দিদিমণিদের দগ্ধ লাশের শতকে...

এদেশে আজও কেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ে না?
মাটি ফুড়ে বেরোয় না কেন অগ্নুৎপাত?

যদি ভূমিকম্পে চাপা পড়ত লাখ খানেক মানুষ
আমিও শোক জানাতাম,
শকুনের শোকবার্তার ভীড়ে...

যদি অগ্নুৎপাতে দগ্ধ হতো, আরো কয়েক লাখ
আমিও শিওরে উঠতাম,
মানব শরীরের কয়লা কিংবা কাবাব পরিণয়ে।

কিন্তু আজ কংক্রিটের নিচে চাপা পড়া মানুষের জন্য
আমি শোক জানাবো না!
আগুনে দগ্ধ ১১২ টি গলিত লাশ দেখে
আমি শিওরে উঠব না...
আজ আমি শোক জানাব না!

যে মানুষগুলো বসে ছিল ফ্লাইওভারের নিচে,
জীবিকার পসরা সাজিয়ে
তারা তো চাপা পড়েনি কংক্রিটে!
চাপা পড়েছে ঠিকাদারীর মুনাফার লোভে...

যে মানুষগুলো বুনছিল, সুই সুতার সেলাইয়ে,
মালিক আর দেশের সমৃদ্ধির বুনন,
তারা তো পুড়েনি আগুনে...!
পুড়েছে মালিকের অতিরিক্ত মুনাফার আকাঙ্খায়-

এতো শুধু দুর্ঘটনা নয়, এ মানবসৃষ্ট দুর্ঘটনা।

ফ্লাইওভারের টেন্ডারবাজিতে যতগুলো লাঠির দরকার হয়েছিল
ন্যূনতম সততায়,
তার অর্ধেক লাঠির পেলাতেও ফ্লাইওভারটি দাড়িয়ে থাকত।

সুইং আর কাটিং মেশিনের নিরাপত্তায় যে নজর দেওয়া হয়েছিল
ন্যূনতম মানবতায়,
তার অর্ধেক সতর্কতাতেও, জীবনগুলো বেঁচে থাকত।

এদেশে আজও কেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ে না,
মাটি ফুড়ে বেরোয় না কেন অগ্নুৎপাত?
জীবন দেবী যেখানে মুনাফা দানবের কাছে পরাজিত,
সেখানে কেন ধ্বংস নামে না...

আমি সেই ভেঙ্গে পড়া আকাশের নামে,
মাটি ফুড়ে বের হওয়া অগ্নুৎপাতের নামে,
প্রলয়কারী ধ্বংসের নামে,
আমার শোককে চাপা দিলাম...
চাপা দিলাম, কংক্রিটে চাপা পড়া মানুষের সাথে,
পুড়িয়ে দিলাম, দগ্ধ লাশের শতকে।

জীবন দেবীর প্রতি আর কোন শোক নয়
মুনাফা দানবের প্রতি দিয়ে গেলাম অভিশাপ
তোদের উপর আকাশ ভেঙ্গে পড়ুক
মাটি ফুড়ে বেরোক অগ্নুৎপাত...

মঙ্গলবার, ২০ নভেম্বর, ২০১২

আমি হৃদয়হীন এক পৃথিবীর কথা বলছি



আমি এক পরীর কথা বলতে এসেছি,
জন্মের সময় স্রষ্টা, যার ডানা দুটি খুলে রেখেছেন!
আমি এক ডানাকাটা পরীর কথা বলতে এসেছি,
আমি বলতে এসেছি এক উচ্ছল শিশুর কথা-
আর আট-দশটা শিশুর মতই যার মেতে থাকার কথা,
শিশুতোষ চাঞ্চল্যতায়.........
সকালে যে পড়বে গোলাপি ফ্রক আর বিকেলে পড়বে লাল সোয়েটার

আমি এক নজরকাড়া শিশুর কথা বলতে এসেছি-
বাহিরে বেড়োনোর আগে যার মা, কপালে দিতো কালো তিলক
যেন নজর না লাগে......
যে শিশুটি বন্ধুদের সাথে খেলত পুতুল খেলা.......সমস্বরে গাইতো- 
আমাদের দেশটা স্বপ্নপুরী, সাথী মোদের ফুলপরী
লালপরী...নীলপরী...নীলপরী...লালপরী
সবার সাথে ভাব করি, সবার সাথে ভাব করি....


আমি এক শিক্ষানবিশ শিশুর কথা বলতে এসেছি-
নিজস্ব ভাষায় যে শিখতো বর্ণমালা,
অ'তে অজগর। অজগর ঐ আসছে তেড়ে।
আ'তে আম। আমটি আমি খাব পেড়ে।
পড়ার শেষে মা, শিশুটিকে দিত এক গ্লাস দুধ।
শিশুটির মনের মতোই শুভ্র সে দুধ
আমি সেই শুভ্র শিশুর কথা বলতে এসেছি।

আমি সেই ভীতু শিশুর কথা বলতে এসেছি-
যাকে খেলনা পিস্তল কিনে দিয়েছিলো বাবা
বিপুল বিক্রমে ঢিয়া ঢিয়া বলে যে গুলি ছুড়তো শুন্যে
বাবার দিকে তাক করতো না কখনোই,
যদি গুলি লেগে যায়........

আমি এক দুষ্টু শিশুর কথা বলতে এসেছি-
মায়ের সাথে দুষ্টুমিতে, ঘুমের অভিনয়ে যে শুয়ে থাকতো
চোখটি বন্ধ করে....
বোকা মা, মেয়ে তার ঘুমিয়েছে ভেবে উঠতে গেলেই
যে শিশুটি খিলখিল করে হেসে উঠতো
আমি সেই ঘুমহীন শিশুর কথা বলতে এসেছি-
মায়ের মিষ্টি বকুনিতেও যে শিশুর ঘুম আসতো না
অবশেষে মা তাকে শোনাতেন ঘুমপাড়ানি গান-
খোকা ঘুমালো পাড়া জুড়ালো বর্গী এলো দেশে....
মা তাকে শোনাতেন রুপকথার গল্প-
রাক্ষস-খোক্ষস আর দেও-দানবের গল্প
সোনারকাঠি-রুপোর কাঠির প্রভাবে রাজকন্যার
ঘুমিয়ে থাকার গল্প......

অবশেষে শিশুটি ঘুমিয়ে পড়ে
আমি সেই ঘুমপাড়া রাজকন্যার কথা বলতে এসেছি

যে শিশুটি ঘুমিয়েছে, যাকে ঘুম পাড়িয়ে দেয়া হয়েছে!
ঘুম পাড়ানো হয়েছে বুলেট আর বোমার আঘাতে-
যাকে হত্যা করা হয়েছে.......
আমি সেই খুন হওয়া শিশুটির কথা বলতে এসেছি-

যে শিশুটি জীবনের বিনিময়ে বুঝে গেছে-
এ পৃথিবী কোনো স্বপ্নপুরী নয়,
ক্ষুদ্র জীবনকাল যেন নরকীয় দুঃস্বপ্ন!
এখানে লালপরী আর নীলপরীতে ভাব হয়না
ভাব হয় লাল রক্তের সাথে নীল বেদনার...
এ পৃথিবী কোনো শিশুর পুতুল খেলার জায়গা না,
বরং পৃথিবীই সাম্রাজ্যবাদী হায়েনাদের খেলার পুতুল
শিশু হাতের খেলনা পিস্তলে যারা ভরে দেয় বারুদ
অস্ত্রের খেলায় চলে তাদের সমৃদ্ধির মানবতা

যে শিশুটি অ'তে ছুটে আসা অজগরে আর ভয় পাবে না!
যখন ছুটে আসে বুলেট......
আ'তে হওয়া আমটি যার আর পাড়া হবে না!
আমের জন্য ঢিল ছুড়লে সে হয় মৌলবাদী
আর বিনিময়ে ছুটে আসে মিসাইল.....
তেমনি এক বোমার আঘাতে নিহত হয়েছে সে...

আমি সেই নিষ্পাপ শিশু হত্যার কথা বলছি-
আমি হৃদয়হীন এক পৃথিবীর কথা বলছি-