বৃহস্পতিবার, ১১ আগস্ট, ২০১১

মাগো, আমার বাঁচার মতো অধিকার গুলো কৈ?

পুরোনো দিনের স্মৃতিগুলো আমাদের সকলকেই নাড়া দেয়। অতীতের সুখস্মৃতি আর বর্তমানের অভাববোধগুলো যখন সংঘর্সে লিপ্ত হয়, তখন নিজেকে বড় অসহায় মনে হয়, বড্ড একা মনে হয়। যতীন্দ্রমোহন বাগচির সেই ছোট্ট মেয়ের মতো, যখন বাঁশ বাগানের মাথার ওপর চাঁদ ওঠে, ফুলের গন্ধে যখন ঘুম ভেঙ্গে যায়, তখন কাজলা দিদির কথা বড্ড বেশী মনে পড়ে! মেয়েটি মার কাছে জানতে চায়, মাগো আমার শলুক বলা কাজলা দিদি কৈ? যে প্রশ্নের কোন জবাব নেই তাই মা আঁচলে মুখ লুকায়!
মেয়েটি যদি আরেকটু বড় হতো তাহলে হয়তো বাড়ন্ত বিবেকে গলা ছেড়ে গাইতো-"আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম"। কিন্তু বড়দের মতো গলা ছাড়ার বিলাসিতা তার কোথায়! তার গলাতো স্তব্ধ হয়ে আসে, কাজলা দিদি তুমি কৈ, কৈ?
আজকাল যখন দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিতে প্রকট হয় আমাদের মতো মধ্যবিত্তের দারিদ্র, যখন বিকিয়ে যেতে দেখি আমার সুখ সাচ্ছন্দ্য এমনকি বাঁচার মতো নুন্যতম অধিকারগুলো, তখন গলাটা আমার স্তব্ধ হয়ে আসে! প্রধানমন্ত্রীকে বলতে ইচ্ছে করে, তুমিতো দেশের মা....মাগো আমার বাঁচার মতো অধিকার গুলো কৈ?

খাদ্য


প্রতি বছর যখন বাজেট অধিবেশনে কালো ব্রীফকেস হাতে হাস্সোজ্জল অর্থমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীকে সাথে নিয়ে সংসদে ঢোকেন! আমি মিলাতে পারিনা, কারন ব্যাগ হাতে আমি যখন বাজারে ঢুকি আমার হাসি মিইয়ে যায়। আমার জানতে ইচ্ছে করে, অর্থমন্ত্রীর সেই ব্রীফকেস কিসের চামড়ার? সেটা কি গন্ডারের! যে চামড়া ভেদ করে দ্রব্যমূল্যের উত্তাপ কিম্বা দূঃখ তাকে স্পর্শ করে না!
বাজারে এখন চাল-৩৭/৪২ টাকা(kg), তেল-১৩০ টাকা(L.), ডাল-১০০ টাকা(kg), মাছের আর সবজির বাজার যেন পৃথীবিতে নয় বরং সূর্যের নিকটতম গ্রহ বুধে! উত্তাপে আর উষ্নতায় জীবনের সন্ধান পাওয়া যায় না! শুনেছি প্রতিদিন নাকি একজন মানুষের ২৫০ গ্রাম শাক আর ২৫০ মিলি দুধ খাওয়া প্রয়োজন। কিন্তু গ্রাম থেকে শহরে পড়তে আসা ছেলেটির বাবা শত কষ্টে যতই বলুক "আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে", কিন্তু সামান্য ভাত তরকারীর ব্যবস্হা করতেই তার মাথার ঘাম গায়ে শুকায়! পরিশ্রমী শরিরের সে ঘাম পা পর্যন্ত পৌছেই না!

বস্ত্র

নাইকি অ্যাডিডাসের কথা বাদই দিলাম, আমার দেশের সেলাই দিদিমনিদের সেলানো পোশাক সস্তা দামে বাজারে পাই না, ওসব নাকি বিদেশী দাদাদের জন্য! আমার গর্ব বুকটা ফুলে ওঠে- এশিয়ার সর্ব বৃহত শপিংমল আমার দেশে। যদিও আমি সেখানে যাই ঘুরতে, প্রচন্ড গরমে সময় কাটানোর জন্য এসির বাতাস খেতে, কিন্তু কিছু কেনার সাহস হয় না। হায়রে গর্ব! একসময় আমরা গর্ব করতাম, সর্ব বৃহত পাটকল(আদমজি) আমাদের, আর এখন গর্ব করি সর্ব বৃহত শপিংমল আমাদের! কিন্তু সেখান থেকে কিছু কেনার সামর্থ আমার নেই...তবে গর্ব আছে....আর এ গর্বটাইতো আমাদের মধ্যবিত্তের একমাত্র অবলম্বন! উচ্চবিত্তের সিটি আর ফিউচার পার্ক না হয় বদই দিলাম, নিউমার্কেটে জিন্স কিম্বা এ্যলিফ্যান্ট রোডে জুতা দেখার সময় আর্থিক সীমাবদ্ধতায় সংযম খুঁজি- চলছে তো....চলুক না আর কিছু দিন! এরপর আমার কোন বন্ধু যখন রং চটা জিন্স দেখে বলে- দোস্ত জটিল স্টাইল। হা..হা..আমি হাসি....আঁখি জলে ভাসি....!

বাসস্থান

মিরপুরে আমি ৭ তলা যে বাসায় থাকি, দুই রুম-৮,০০০ টাকা(বিদ্যু, পানি, গ্যাস বিল আলাদা)। লিফট বিহীন বাসার সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে আমি ভাবি, এ বাসার অনুমোদন কয় তলার? ৭ তলার নাকি ৫ তলার? এটা কি দেখার কেউ আছে? এরপরও যখন কয়েক মাস পর পর বিদ্যু, পানি, গ্যাস বিল আর বছর শেষে বাসা ভাড়া বাড়ানোর কথা শুনি, তখন ভাবি কি আর করবো, আর কোথায়বা যাবো? আমি তো আর বাংলা ছবির নায়ক নই যে কষ্টে গাইবো- "ঘর ছোট ক্ষতি নেই, আকাশ তো বড়"। তাই কি আর করা, ছোট ঘরে আকাশসম ভাড়া দিয়ে থাকতে হচ্ছে....থাকতে হবে।

শিক্ষা


উচ্চশিক্ষার জন্য সবচেয়ে প্রতিযোগীতামূলক(সবচেয়ে নিষ্ঠুর) যে প্রতিযোগীতায় অবতীর্ন হয়েছিলাম, তা একপ্রকার বিশ্বভ্রমন! ঢাকা-রাজশাহী-চট্টগ্রাম-খুলনা। আমাদের মধ্যে যারা তুলনামূলক মেধাবী তারা সুযোগ পেলো বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে। আর অন্যরা? শিক্ষা যাদের কাছে পন্য, মাছের বাজার! আপনার টাকা আছে ইলিশ মাছ খাবেন, নেইতো পুটি মাছই সম্বল। আপনার টাকা আছে, কোনো দামী-নামী প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হবেন, না থাকলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কিম্বা পাস কোর্সে। তারপরও দুশচিন্তা, কটার ট্রেন কটায় ছাড়ার মতো ৪ বছরের অনার্স কয় বছরে শেষ হবে?
বর্তমান T20'র যুগে সেশন জটে উচ্চশিক্ষা পরিনত হয়েছে কয়েক বছরের টেস্টে। তবুও যদি শিক্ষার পরিবেশ থাকতো! ভর্তি বানিজ্য, হল দখল, টেন্ডারবাজী, মাদকব্যবসা সে তো সরকারি দলের ছাত্র সংগঠনের মেইন সাবজেক্ট, আর শিক্ষা যাদের কাছে নন মেজর।
তবে শিক্ষা নামক মাছের বাজারে আমার প্রাপ্তি পুটি মাছ! মেলা থেকে তালপাতার বাঁশি কেনার মতো, আমার মেধা আর সামর্থে পুটি মাছ ছাড়া ভালো কিছু জোটেনি। তারপরও ভয় হয়, এ মাছ কি ফরমালিন বা প্রিজারভেটিব মুক্ত?

চিকিৎসা

আমাদের দেশের রাজনীতিবীদেরা দেশের বাহিরে কি চেনেন???
উত্তর- নির্বাচনের আগে মক্কা-মদীনা আর অসুস্থ্য হলে সিংগাপুরের মাউন্ট এলিজাবেদ হাসপাতাল! এ দেশের রাজনীতিবীদ আর বিশিষ্ট ব্যক্তিরা যেভাবে গনহারে মাউন্ট এলিজাবেদে ভর্তি হন, আমার মনে হয় পৃথিবী তথা সিংগাপুরের একমাত্র হাসপাতালের নাম 'মাউন্ট এলিজাবেদ'। আমি ভাবছিলাম, কখনো অসুস্থ্য হলে যাব সিংগাপুর ভর্তি হবো মাউন্ট এলিজাবেদে.....বাংলাদেশী শুনলে নিশ্চই ডিসকাউন্ট দেবে....হাজার হোক, তাদের এতো ক্লাইন্টের দেশ! কিন্তু পরক্ষনে ভাবি, ডিসকাউন্টতো দূরের কথা পুরা ফ্রি করে দিলেও সম্ভব নয় কারন আমার সিংগাপুর যাবার টাকা নেই.....এ দেশের সাধারন মানুষেরও নেই.....আমার সামর্থ নেই কোন হাসপাতালে উচ্চ ভিজিটে ডাক্তার দেখিয়ে অন্তত ৪-৫ টি টেস্টের প্রেসকিপসন লেখিয়ে টেস্টগুলো করানো(৬০০০-১০০০০টাকার মামলা, কিম্বা কমিশন বানিজ্য) এবং আবারো ভিজিট দিয়ে সে একি ডাক্তারকে রিপোর্ট দেখিয়ে প্রেসকিপসন নিয়ে উচ্চমূল্যের ঔষুধ(ডাক্তারের কমিশন খাওয়া কোম্পানির) কেনার। তাই ভাবছিলাম, সিংগাপুর না হোক হেমায়েতপুর(পাবনা) যাবো। অসুস্থ্য সমাজের একজন হিসাবে মানষিক চিকিৎসা নিয়ে আসবো। কিন্তু সেখানে যে চিকিৎসা খরচ কত কে জানে?

 মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মাগো বাংলার আর আট দশটা মায়ের মতো তুমি কিছুই জানো না! তুমি শুধু জানো ঘুমপাড়ানী গান শোনাতে....আমার স্বপ্নের ধানগুলো কোন বুলবুলিতে খাচ্ছে, খেয়েছে? স্বপ্নের রাজ্যে কোন বর্গি এসেছে? আমার ঘুম আসে না। আমি হিসাব মেলাতে পারি না.....জানি কোন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টও এ হিসাব মেলাতে পারবে না। তুমি কি আমায় মিলিয়ে দেবে, খুঁজে দেবে আমার অধিকার গুলো?