সোমবার, ৩০ জুন, ২০১৪

অন্যায়কারীর ছয়দিন আর অনাবিলের একদিন!!

এ দেশে একটা প্রবাদ আছে- "চোরের দশ দিন আর গেহস্থ্যর এক দিন"।
শেষ পর্যন্ত সত্য ও সততার বিজয়কে ইংগিত করেই এটা বলা হয়ে থাকে।
কিন্তু সমস্যা হলো- বিজয়ই যেখানে শেষ কথা, গেহস্থ্য সেখানে চোরের কাছে ১০-১ এ পরাজিত! ব্যবধান ৯!
আর করুন পরিহাস হলো- বিজয়ীর শিন্ন চোষা আমাদের চেতনা, গেহস্থ্যর বিজয় কামনা করে বিজয়ী চোরের শিন্ন চুষতে চুষতে!
৫ জানুয়ারী এ দেশে যে নির্বাচনটি হয়েছে- সেটা দেশের জন্য এক সমস্যা, গনতন্ত্রের জন্য পরিহাস।
এ দেশের আপামর ভোটার বা গেহস্থ্যর দ্বারা প্রত্যাক্ষাত এ নির্বাচনে বিজয় হয়েছে কাদের?
গনতন্ত্রকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো চোরদের! জোর যার মুল্লুক তার, মুলুকের ডাকুদের!

অনেকেই এখন বলতে পারেন- ৫ জানুয়ারীর বিজয়ীরা একটি নির্বাচিত সরকার! যারা কিনা প্রতিকূল পরিস্থিতিতে সাংবিধানিক ধারা রক্ষা করেছে!
এ কথার জবাব দেওয়ার আগে আমি তাদেরকেই প্রশ্ন করতে চাই- ৫ জানুয়ারী কি আপনি ভোট দিয়েছিলেন? এ দেশের আপামর জনগন কি ভোট দিয়েছিলো? অর্ধেকেরও বেশী ১৫৩ আসনের ১ জন ভোটারেরও ভোটাধিকার ছিলো?
না। আপনি ভোট দেন নি! এ দেশের আপামর জনগন ভোট দেয়নি! ১৫৩ আসনের ভোটারেরা ভোট দিতেই পারেনি! তাহলে এ সরকারকে নির্বাচিত সরকার বলেন কিভাবে?

অনেকে বলতে পারেন- ৫ জানুয়ারী আমি ভোট দিয়েছি, আমার এফ.এন.এফ.(ফ্রেন্ডস এন্ড ফ্যামিলি) ভোট দিয়েছে। সর্বোপরি নির্বাচন হওয়া এলাকার প্রায় ৩৮ শতাংশ মানুষ ভোট দিয়েছে। তাই এ সরকার জননির্বাচিত সরকার।
উত্তরঃ কথাটি শুনতে হয়তো খারাপ লাগবে, কিন্তু বাস্তবতা এটাই যে- ৫ জানুয়ারী নির্বাচনে যদি আপনি ভোট দিয়ে থাকেন, তবে তা এ দেশের জনগন হিসাবে দেননি, একজন আওয়ামীলীগার হিসাবে দিয়েছেন! বা আওয়ামী আর্মি হিসাবে একটি একতরফা ও অগ্রহনযোগ্য নির্বাচনকে বৈধ করার বা নুন্যতম পাতে তোলার প্রচেষ্টায় শামিল হয়েছেন!
আপনি ৩৮ শতাংশ ভোটের কথা বলছেন?
সারাদিন কেন্দ্র দখল, জাল ভোটের মহোৎসব বাদই দিলাম, বিভিন্ন টিভি ক্যামেরায় ভোট কেন্দ্র ভোটার শূন্য থাকলেও ফলাফলে, যাদুকরের রুমালে ঢাকা শূন্য টুপির ভেতর থেকে 'এ্যবরা কা ড্যাবরা' ছুমন্তরে খরগোস বেরিয়েছে!
এখন চক্ষুসাফাইয়ে যাদুকর শূন্য থেকে খরগোস বের করায় সর্বোচ্চ হাত তালি পেতে পারে, সৃষ্টিকারী স্রষ্টার স্বীকৃতি পেতে পারে না।

আর সাংবিধানীক ধারা অক্ষুন্ন রাখা?
হ্যান্স ক্রিশ্চিয়ান আন্ডারসনের রুপকথা ""The Emperor's New Clothes"-এ রাজা যে নতুন পোষাক পড়েছিলো, তা শুধু সৎ মানুষেরাই দেখতে পারবে! তাই অসৎ উজির-নাজিরেরা মেকি সততার চশমা পড়ে উলঙ্গ রাজার পোশাকের প্রশংসায় মেতে ছিলো! জনগনও রাজার ভয়ে ও অসততা প্রকাশের ভয়ে চুপ ছিলো! তারা সবাই দেখেছিলো- 'রাজা নেংটা'। কিন্তু তাদের দৃষ্টিকে আচ্ছন্ন করে ফেলেছিলো তাদের অসততা।
রুপকথা পেরিয়ে বাংলাদেশের বাস্তবকথায়, এ দেশের মরাল ব্রিগেড আমাদের পরিয়ে দিয়েছে চেতনার চশমা। আর তাই আমারা সবাই দেখছি- ৫ জানুয়ারী আওয়ামীলীগ উলঙ্গ হয়ে গেছে! কিন্তু আমাদের চোখকে আচ্ছন্ন করে ফেলেছে সাংবিধানিক ধারা, দলগত পক্ষপাত এবং ব্যক্তিগত অসততা।

অনেকেই এখন বলতে পারেন- বৃহৎ দল বিএনপি এ নির্বাচনকে মেনে নিয়েছে বলেই মনে হচ্ছে! মুখোমুখি অবস্থানকারী ও সংঘাত সৃষ্টিকারী রাজনীতিও বেশ স্থীতিশীল। দেশেও শান্তি বিরাজ করছে। বিশাল অংকের বাজেট পাস হচ্ছে, পদ্মা সেতুতে বরাদ্ধ হচ্ছে, পরিক্ষায় পাশের নহর বইছে! দেশ ভালোই চলছে! তাহলে সমস্যা কোথায়?
উত্তরঃ আসলে সমস্যা যে কোথায়? এটা জানতে হলে প্রশ্নটি করতে হবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'দুই বিঘা জমির' উপেনকে!
শাক পাতা আচঁলে ধরা দরিদ্রমাতা যখন লুটেরার আদরে, পাঁচ রঙ্গাপাতা অঙ্গে আর পুষ্প কেশে ধারন করে! এটা গৌরব নয় বরং লজ্জার। এ লজ্জা দেবীর দাসী পরিনতির। সমস্যাটা এখানেই।
আর বিএনপির নির্বাচন মেনে নেওয়া?
এদেশের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ট মানুষ ৫ জানুয়ারী নির্বাচনকে প্রত্যাক্ষান করে ভোট দেয়নি। এর মানে এই নয় যে, বিএনপির সমর্থন ব্যাঙ্কে এটি ফিকস্ট ডিপোজিট হয়ে গেছে!
আমাদের বুঝতে হবে- রাজনৈতিক দলের কন্ঠ কখনো গনমানুষের কন্ঠ হতে পারে না। বরং গনমানুষের কন্ঠ রাজনৈতিক দল ধারন করে। তাই বিএনপি যদি নির্বাচনকে মেনেও নেয়, এটা জনগনের কন্ঠ হতে পারে না। এটা, জনগনের ভোটাধিকারের কন্ঠ ধারন করতে রাজনৈতিক দল হিসাবে বিএনপির ব্যর্থতা।
রাজনৈতিক দলের এ ব্যর্থতার সময়ে নিজেদের অধিকারের প্রশ্নে জনগনের কন্ঠকে জনগনের মধ্য থেকেই বেশী করে উচ্চারিত হতে হবে। যেখানে গেহস্থ্যর বিজয় প্রত্যাশা থাকবে তবে চোরের বিজয়কে মেনে নিয়ে নয়! চোরকে চোরই বলতে হবে। উলঙ্গ রাজাকে নেংটাই বলতে হবে। তাহলে চোরের দশ দিনের বিপরীতে গেহস্থ্যের একদিন নয় বরং চোরের একদিনের বিপরীতে গেহস্থ্যর দশদিন হয়ে উঠবে।

তবে, চোরের দশদিন আর গেহস্থ্যর একদিনই হোক কিংবা চোরের একদিনের বিপরীতে গেহস্থ্যর দশদিন(মোট এগারদিন)। আমি ভাবছিলাম- দিনের সংখ্যা বিচারে তুলনাটি যথার্থ হয়নি! এগারো সংখ্যাটি মৌলিক, তবে দিনের সংখ্যা প্যাটার্ন নয়। প্যাটার্ন অনুযায়ী দিনের সংখ্যা ৭, ১৫ কিংবা ৩০। যেমন ৭ দিনে এক সপ্তাহ, ১৫ দিনে একপক্ষ, ৩০ দিনে একমাস। লক্ষ্যনীয়, সংখ্যা হিসাবে ১১ দিনের প্যাটার্ন নয়। তাই এ প্রবাদটি হওয়া উচিত ছিলো, মৌলিক ও সংখ্যা প্যাটার্ন ৭ কে ধরে- "চোরের ছয়দিন আর গেহস্থ্যর একদিন"।

এখন পাঠক হিসাবে আপনাকে প্রশ্ন- 'চোরের ছয়দিন আর গেহস্থ্যর একদিন' হয়তো তুলনা হিসাবে যথার্থ কিন্তু এ নব্য প্রবাদের যথার্থ উদাহরন কোনটি?
আপনি যদি এ প্রশ্নের উত্তর দিতে স্বামর্থ্য হন, তবে আপনাকে অভিনন্দন। আর যদি অস্বামর্থ্য হন, তবে খেয়াল করুন- নব্য প্রকাশিত যে পত্রিকায় আপনারা লেখাটি পড়ছেন, সপ্তাহের খবর নিয়ে আজ হতেই পত্রিকাটি যাত্রা শুধু করলো। যে পত্রিকাটা সপ্তাহের ছয় দিনের অন্যায়-অবিচারকে এক দিনে তুলে ধরবে।
আমি আশা করছি- শেষ পর্যন্ত সত্য ও সততার বিজয়ের এটাই হোক অসাধারন রুপক! "অন্যায়কারীর ছয়দিনের বিপরীতে হোক 'অনাবিলের' একদিন"।

বুধবার, ১৮ জুন, ২০১৪

দ্রুত পরাজয়ই ব্রাজিলকে চাম্পিয়ন করে তুলবে

আমি ফুটবলে ব্রাজিল সাপোর্ট করি...
আর আট-দশটা সাপোর্টারের মতোই উন্মাদের মতো সাপোর্ট করি! যে সাপোর্টে চায়ের কাপে ঝড় তুলে ঘন্টার পর ঘন্টা তর্ক করা যায়, যে তর্কে পেলে-ম্যারাডোনা, মেসি-নেইমার বড় ছোট হিস্যায় আর কাপ জয়ের ৫-২ পরিসংখ্যানে আর্জেন্টিনাকে বাতিল করে ব্রাজিলকে চাম্পিয়ন করে দেয়া যায়।(তর্কটা নির্ভর করে প্রতিপক্ষ কোন দলের সাপোর্টার তার ওপর)।

এবার যখন বিশ্বকাপ ডামাডোল শুরু হলো। আমি ঝালিয়ে নিচ্ছিলাম, আমার সমর্থন। হিসাব কষে মিলাচ্ছিলাম- রাত জেগে খেলা দেখার টাইম শিডিউল। বন্ধুদের সাথে কয়েক দফা জড়িয়েছি তর্কেও, যে তর্কের কোন সমাধান নেই!
তবে তর্কের এ তালগাছটার একটা গতি হতে পারে ১৩ই জুলাই রিও ডি জেনিরোর ফাইনালে।
আর সব সমর্থকের মতো, আমিও চাচ্ছিলাম এবারের ফাইনালটা ব্রাজিল জিতে নিক বা ব্রাজিল চাম্পিয়ন হোক।
তাই ১২ জুন সাও পাওলোতে যখন বিশ্বকাপের পর্দা উন্মোচন হয়েছিলো, সেদিনেই উদ্বোধনী ম্যাচে আমি নজর রাখছিলাম ব্রাজিল-ক্রোয়েশিয়া ম্যাচে নেইমার সহ স্বপ্ন সারথী ১১ জনের ওপর। ঠিক সে সময়ই আমার নজর চলে গেল স্টেডিয়ামের বাহিরে জড়ো হওয়া প্রায় দশ লক্ষ তরুনের ওপর! যে তরুনেরা টিকিটের অভাবে বিশ্বকাপ বঞ্চিত নয় বরং তারা ছিলো বিশ্বকাপ বিরোধী! যারা বিক্ষোভ করছিলো এবং বলছিল- ফুটবলে এত টাকা খরচ না করে অনাহারি শিশুদের খাবার যোগানো ব্রাজিলিয়ান সরকারের অগ্রাধিকার হওয়া উচিত। বিশ্বকাপে ব্রাজিল ব্যয় করছে ১,৪০০ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি!(এক লক্ষ কোটি টাকা প্রায়)! অথচ মাত্র দুই ডলার বা সমমানের এক প্যাকেট সিগারেটের বিনিময়েও ব্রাজিলের যুবতীরা পতিতাবৃত্তি করছে। রাষ্ট্র আর জনগনের এ হচ্ছে দুরত্ব! যেখানে রাষ্ট্র জনগনের ট্যাক্সে ফুর্তি করছে, আর জনগন ট্যাক্সের যোগান দিতে পতিতা হচ্ছে!
আর তাই লাখো ব্রাজিলিয়ান রাস্তায় নেমে এসেছে, তারা শ্লোগান দিচ্ছে- ফাক ফিফা! ফাক ওয়ার্ল্ড কাপ! তারা বলছে- ফুটবলের নামে জনগণের অর্থ নিতে এটা ছিনিমিনি খেলা। ব্রাজিলিয়ান সরকারের এমন চাকচিক্যের ছিনিমিনি বাদ দিয়ে জনকল্যান মনোযোগ দেয়া উচিত।
উত্তরে ব্রাজিলিয়ান সরকার বিদ্রোহ দমনের অংশ হিসেবে ‘রাবার বুলেট’ ছুঁড়েছে। নির্বিচারে!!
ফলে, মাঠে ব্রাজিলিয়ান খেলোয়ারদের ঘাম ঝড়লেও, মাঠের বাহিরে ব্রাজিলিয়ান জনগনের রক্ত ঝড়ছে!

আমি ভাবছিলাম, মাঠে ১১ ব্রাজিলিয়ান খেলছে একটা কাপের জন্য! আর মাঠের বাহিরে লক্ষ ব্রাজিলিয়ান লড়ছে তাদের অধিকারের জন্য।
এটা ঠিক, খেলা যত এগোবে গোল, গোল চিৎকারের নিচে চাঁপা পড়বে অধিকারের দাবীতে আন্দোলনকারীর চাওয়াগুলো। ব্রাজিল যদি চাম্পিয়ন হয় তাহলে এর আলোকছটার চাকচিক্যে আধারে ঢাকবে মৌলিক দাবীগুলো। কিন্তু মাঠে যদি ব্রাজিল হেরে যায়, তখন জন স্বার্থের বিপরীতে চাকচিক্যের ছিনিমিনি খেলা সরকারের কিছুই বলার থাকবে না, তখন ব্রাজিলের প্রতিবাদী মানুষ আরো বেশি গর্জে উঠবে। মাঠে ১১ জন হারবে তবে রাজপথের লক্ষজনতার বিজয়ের ভিত তৈরী করবে।

আমি চাই ব্রাজিল চাম্পিয়ন হোক, তবে সেটা দ্রুত পরাজয়ের মাধ্যমে!
যে পরাজয়ে ব্রাজিল শুধু মাঠে হারবে কিন্তু রাজপথে লক্ষ জনতা চাম্পিয়ন হয়ে উঠবে।