বৃহস্পতিবার, ২৭ জানুয়ারী, ২০১১

বসন্তে কথোপকথোন

(নোট’স- কথিত আছে, পাখিরা সঙ্গী বাছাই করে জীবনের জন্য। তাই কখনো কোনো সঙ্গী মারা গেলে, পাখিরা নতুন সঙ্গী না খুঁজে একাকি জীবন কাটিয়ে দেয়।)
বসন্তের প্রথম দিনে আমার বান্ধবিকে নিয়ে বসেছি একটি চেইন ফুডশপে। গতরাতে কোনো কোকিলের ডাক আমি শুনিনি, তবে বান্ধবিটি আমায় ডেকেছিলো- মিষ্টি ডাক, প্রেমের ডাক, ভালোবাসার ডাক। যে ডাকে হৃদয় ব্যাকুল হয়। আর তাই ব্যাকুল হৃদয় নিয়ে আমি হাজির হয়েছি তার দোরগোরায়, যেমন মেয়ে কোকিলের ডাকে সারা দেয় তার পুরুষ সঙ্গীটি। বর্তমান বৈষয়িক উষ্ণতায়, আবহাওয়ার ওপর যে প্রভাব পড়েছে তাতে বিলুপ্ত হচ্ছে কোকিল, হারিয়ে যাচ্ছে ঋতু বৈচিত্র। তবে কোনো তরুনের কাছে কোকিলের ডাক হতে পারে- কোনো তরুণীর কণ্ঠ, আর ঋতু বৈচিত্র ধরা দিতে পারে কোনো ঋতুবতীর পোষাক ফ্যাশানে। যদিও দুধের সাধ ঘোলে মেটে না, তবুও আমি বসন্ত অনুভব করছিলাম বান্ধবির বসন্ত সাজে- ও পড়েছে বাসন্তি শাড়ি সঙ্গে লাল ব্লাউজ, খোঁপায় হলুদ গাঁদা।
আমি ভাবছিলাম, কাল ভালোবাসা দিবসে ওর সাথে কি আমার আবার দেখা হবে! যেমন প্রথম দেখা হয়েছিলো তিন বছর আগে। আমি দিনটির কথা মনে করতে পারছি, বেশ ভালো ভাবেই পারছি। ও এসেছিলো একই সাজে শুধু হাতে লাল গোলাপ। সে সময় ক্ষমতায় ছিলো একটি সেনা সমর্থিত অসংবিধানিক সরকার। চালের দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে যারা ভাতের পরিবর্তে আলু খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলো। তৎকালীন সরকারের সমর্থক না হয়েও আমরা সেদিন খেয়েছিলাম ফ্রেঞ্চফ্রাই। সময়ের আশ্চর্য সাদৃশ্য- আজো ও পড়েছে বাসন্তি শাড়ি, অর্ডার করেছি ফ্রেঞ্চফ্রাই, সে দিনের মতো আজো চালের দাম আকাশ চুম্বি। তবে ইন্টারেষ্টিং বৈশাদৃশ্য হলো আজ কোন অসাংবিধানিক সরকার নেই, ওর হাতেও কোনো গোলাপ নেই।
ইতিমধ্যে সার্ভ করা হয়েছে ফ্রেঞ্চফ্রাই, সস এবং পানীয়। ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে মিউজিক বাজছে, মমতাজের “আগে যদি জানতাম রে বন্ধু তুমি হইবা পর....। পটেটো স্টিকে সস মাখাতে মাখাতে আমি বললাম-
ঃ তুমি কি আগেই জানো আমি হবো পর, আর সে জন্যই কি আজ কোনো গোলাপ আনোনি?
ঃ (মুচকি হেসে) আসলে মনপুরা ছবির গানটির মতো ছবিটাও আমার অসম্ভব ভালো লেগেছে। আর আমি যদি আগেই জানতাম তাহলে তোমাকে কাছে পাবার জন্য মনপুরার নায়িকার মতো তোমার বাড়ির সামনে নদীর ওপারে মশাল হাতে দাঁড়িয়ে থাকতাম।
ঃ তাহলে তোমার আর আমার মিলনতো হতোই না বরং বদ্ধ বড়ালেই সলিল সমাধী হতো দু’টি প্রাণের। যদিও প্রেমের মরা জলে ডোবেনা, তবে ডুবলে তো আর জীবনও বাঁচেনা।
ঃ তোমার ইনফরমেশন আপডেট করা দরকার, কারণ- মনপুরায় নায়ক ছিলো জীবিত এবং নায়িকা আত্বহত্যা করেছিলো বিষপানে। তাই নায়িকার সমাধী মাটিতে এবং প্রেমিক হৃদয়ে হলেও সলিল সমাধী কখনোই হয়নি।
ঃ তা হয়তো হয়নি, কিন্তু তুমি কি জানো মনপুরার এই কাহিনী ধার করা। চতুর্থ শতাব্দীর কবি মিউজিয়াউজ, হিরো ও লিয়েন্ডারের করুনরসের প্রেমগাঁথা নিয়ে একটি কবিতা রচনা করেন। মনপুরার এ কাহিনী সেখান থেকে ধার করা হতে পারে। যেখানে হেলেন্সপন্ট নদীর একপাশে বাস করতো হিরো-অন্যপাশে লিয়েন্ডার। গভীর প্রেমে আসক্ত দু’জন অভিসারে মিলিত হতো রাতের অন্ধকারে। রাতে হিরো মশাল হাতে নদীর ধারে অপো করতো, লিয়েন্ডার সে মশালকে অনুসরণ করে চলে আসতো প্রেমিকার কাছে। কিন্তু এক ঝড়ের রাতে হিরোর মশাল নিভে যায়, ফলে আলো দেখতে না পেয়ে অথৈ নদীতে পথ হারিয়ে ডুবে মারা যায় লিয়েন্ডার। এবং এই খবর পেয়ে হিরোও আত্মহত্যা করে নদীতে ডুবে। ফলে সলিল সমাধী ঘটে দু’টি প্রাণের।
ঃ তবে আমাদের ক্ষেত্রে এমন ঘটার সম্ভবনা কম। কারণ- অনেক আগেই বড়ালে বাঁধ হওয়ায় বড়াল আর খরস্রোতা নয়, তাই তোমার পথ হারানোর সম্ভবনা কম, আর হারালেও তুমি খুঁজে পেতে পারো কোনো বাঁধ, তখন হেঁটে চলে আসতে পারো আমার কাছে। আর যদি মারাই যাও, আমি চতুর্থ শতাব্দীর মেয়ে হিরো নই আমি এ যুগের মেয়ে তাই তোমার মৃত্যু শোকে আমি নদীতে ঝাঁপ নয় বরং ঝাঁপ দেবো নতুন কোনো তরুনের প্রেমে (খানিক হেঁসে)।
ঃ বিষয়টি এমন ঘটার সম্ভবনা কম, বরং হতে পারে তার উল্টো (আমার মুখে রহস্যের হাঁসি)।
ঃ মানে (কৌতুহল নিয়ে)।
ঃ হিন্দু পুরানের প্রেম কাহিনী “সাবিত্রী-সত্যবান”। স্বল্পায়ু সত্যবানের জীবন হরণ করতে আসেন যমদূত। কিন্তু প্রেমিকা সাবিত্রী শুরু করেন ক্রন্দন। তিনি কিছুতেই স্বামীর জীবন হরণ করতে দেবেন না। কোনো ভাবেই বাকপটু সাবিত্রীকে যমদূত বোঝাতে পারছিলেন না। সাবিত্রীর কথায় সন্তুষ্ট হয়ে যমদূত সাবিত্রীকে স্বামীর প্রাণ ছাড়া একটি বর চাইতে বললেন। বর পুরণ হলেও সাবিত্রী যমদূতের পিছু ছাড়লেন না। সাবিত্রীকে থামাতে যমদূত তার চারটি বর পুরণ করলেন। যমদূত তার চতুর্থ বরে এসে ফেঁসে যান। চতুর্থ বরে এসে সাবিত্রী সত্যবানের ঔরসে শতপুত্র কামনা করেন, সেটিতেও যমদূত “তথাস্ত” বলে দেন। তখন সাবিত্রী বিনয়ের সাথে স্বামীকে ফিরিয়ে দিতে বলেন নইলে সাবিত্রী সত্যবানের ঔরসে পুত্রের জননী হবেন কিভাবে! তখন যমদূত নিজের কথা রাখতে ফিরিয়ে দেন সত্যবানের জীবন। তাই আমি যদি বড়ালে ডুবে মারাও যাই, তুমি নিশ্চয়ই আমার ঔরসে শতপুত্র কামনায় যমদূতের কাছ থেকে জীবন ফিরিয়ে আনবে। আমি তো বাঁচলাম, কিন্তু আমার শতপুত্রের জন্ম দিতে গিয়ে তুমি বাঁচবে কিনা সন্দেহ। তখন তোমার রেখে যাওয়া সন্তানদের লালন পালন করতে আমার তো আরেকজনকে বেছে নিতেই হবে।
ঃ (হতাশায় দীর্ঘ শ্বাস ফেলে)আসলে মানুষ কেন পাখির মতো হয়না!
ঃ তুমি কেন আজ ফ্রাইড রাইচ অর্ডার করলে না?
ঃ কেন?
ঃ বাজারে এখন চালের দাম আকাশ চুম্বি, আর আলুর দাম তুলনামূলক কম। স্বভাবতই ফ্রাইড রাইচে বিক্রেতার লাভ হবে কম, তুলনায় ফ্রেঞ্চফ্রাইয়ে লাভ হবে বেশি। বিক্রেতার কম লাভ যেহেতু ভোক্তা বা ক্রেতার জন্য আদর্শ তাই এ র্দূমূল্যের বাজারে তোমার অর্ডার করা উচিৎ ছিলো ফ্রাইড রাইচ।
ঃ কিন্তু এটা তো আমার ইচ্ছা অনিচ্ছার উপর নির্ভরশীল। তাই নয় কি?
ঃ হ্যাঁ, উত্তরটা এখানেই। মানুষ পাখির মতো হয়না, কারণ মানুষের রয়েছে ইচ্ছা-অনিচ্ছার এক আশ্চর্য মতা, যা মানুষকে অন্য সবার থেকে স্বতন্ত্র করেছে। তাই মানুষের তুলনা পাখি কেনো অন্যকারো সাথেই হবে না। মানুষের তুলনা শুধুই মানুষ।
ঃ (দীর্ঘ নিঃশ্বাস শেষে) প্রেমিকেরা কেন শাহজাহানের মতো হয়না?
ঃ তাহলে হয়তো মানুষ বিলুপ্ত হয়ে যেতো, আর পৃথিবী পরিণত হতো স্থাপনার নগরীতে।
ঃ মানে!
ঃ আসলে পৃথিবীর তিনশ’ কোটি প্রেমিক পুরুষ যদি একেকজন শাহজাহান হতো, তিনশ’ কোটি মমতাজ নিশ্চয়ই মারা যেতো এবং তৈরী হতো তিনশ’ কোটি তাজমহল। একই সাথে নারী না থাকায় প্রজনন এবং বংশবৃদ্ধি হয়ে যেতো বন্ধ।
ঃ আরে বুদ্ধু! আমি আসলে শাহজাহানের হৃদয়ের কথা বলেছিলাম।
ঃ তুমি কি জানো, শাহজাহান একটা ফ্রট। তাই প্রেমের রেফারেন্সে শাহজাহানকে আনা মোটেই উচিৎ নয়। প্রেমিকার মৃত্যুতে শাহজাহান কষ্ট নয় বরং খুশি হয়েছিলেন। তার স্বপ্ন-তাজমহল তৈরীতে এ মৃত্যুর দরকার ছিলো। তবে মমতাজের মৃত্যুতে শাহজাহান যে কষ্ট পাননি তা নয়। মমতাজ বিরহে তিনি প্রতিজ্ঞা করেছিলেন আর কোনো দিন মদ ও নারী স্পর্শ করবেন না। সে প্রতিজ্ঞা তিনি রেখেছিলেন তবে মাত্র তিনদিন। এখনো কি তুমি বলবে, সব প্রেমিকেরা কেন শাহজাহানের মতো হয়না? তবে শাহজাহান এটি প্রমাণ করে দিয়েছেন, “প্রেমিকার জন্য তাজমহল গড়া সহজ কিন্তু আজীবন বিশ্বস্ত থাকা কঠিন”।
অনেকণ কারো মুখে কোন কথা নেই। বান্ধবিটি ছলছল চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। হয়তো সে চোখের ভাষায় বুঝতে চাচ্ছে আমি তার জন্য তাজমহল না গড়ি, কিন্তু আজীবন বিশ্বস্ত থাকতে পারবো কিনা। ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে মিউজিক বাজছে “ফলবান নিরবতাই প্রার্থনা, স্বার্থক প্রার্থনা বিশ্বাস, আর সকল বিশ্বাসের অপর নাম প্রেম”। দীর্ঘক্ষণ নিরব আমি অনুভব করলাম সত্যি ওকে আমি অনেক ভালোবাসি।
-পহেলা বসন্ত’১৪১৭।

রবিবার, ২৩ জানুয়ারী, ২০১১

টু চিয়ার্স ফর হীরা!

সপ্তাহ খানেক আগেই শেষ হয়েছে চাটমোহর পৌরনির্বাচন। যে নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী এইচ ইসলাম হীরা বেশ বড় ব্যবধানেই বিজয়ী হয়েছেন। অভিনন্দন এইচ ইসলাম হীরা। যদিও এ অভিনন্দন অসম্পূর্ণ!
সাধারনত আমরা যখন খুব বেশী উচ্ছসিত হই, তখন বলি, হিপ-হিপ-হুররে। লক্ষ্য করুন, এখানে শব্দ আছে তিনটি- হিপ, হিপ এবং হুররে। আনন্দ প্রকাশের এইধারা অনুযায়ি, কোন আনন্দ কিম্বা সে বিষয়ে অভিনন্দন পূর্ণতা লাভ করে তিনে, যাকে বলা হয় থ্রি চিয়ার্স।
এখন প্রশ্ন আসতে পারে, নতুন পৌর পিতার প্রতি আমার অভিনন্দন অসম্পূর্ন কেন? পাঠক লক্ষ্যকরুন, আমি তাকে থ্রি চিয়ার্স নয় বরং টু চিয়ার্স দিয়েছি, তার দুটি বিষ্ময় এবং সাফল্যের জন্য।
ওয়ান চিয়ার- পৌর নির্বাচনে এইচ ইসলাম হীরার বিএনপির মনোনয়ন পাওয়াটা ছিলো প্রথম বিষ্ময় এবং সাফল্য। তার মতো হাইভোল্টেজ সমাজসেবক এবং লোভোল্টেজ পলিটিশিয়ানদের স¦তন্ত্র প্রার্থী
হিসাবে দাড়ানোর নজির থাকলেও বিএনপির সেক্রেটারি এবং ১২ বছরের মেয়রকে বাদ দিয়ে হীরার মনোনয়ন পাওয়াটা ছিলো বড় বিষ্ময় এবং তার বড় সাফল্য। ওয়ান চিয়ার ফর সিলেকশন।
টু চিয়ার্স- যেহেতু বিএনপির প্রার্থী ছিলেন দুজন অন্যদিকে আওয়ামীলীগের একজন। তাই হয়তো অনেকে ধরে নিয়েছিলেন, আওয়ামীলীগ প্রার্থী মির্জা রেজাউল করিম দুলাল এবার ফাঁকা ফিল্ডে গোল দেবেন। নির্বাচনের আগে ও চলাকালীন সময়ে দুলাল কর্মীদের আত্মবিশ্বাস এবং জনসাধারনের ধারনা অনেকটা সেরকমই ছিলো। কিন্তু যখন ফলাফল প্রকাশ হতে শুরু করলো, যা মিলিত হয়ে বিষ্ময়ের রুপ নিলো, সবাই বুঝতে পারলো মাঠ এক সময় ফাঁকা থাকলেও শক্তিশালী অদৃশ্য এক প্রতিপক্ষ সময়মতো মাঠে ঢুকেছে, প্রফেসর মান্নানকে লাল কার্ড দেখিয়ে মাঠের বাহিরে পাঠিয়েছে, এবং মির্জা দুলালের থেকে বলের নিয়ন্ত্রন নিয়ে সময়মতো জালে জড়িয়েছে। কিন্তু এতো কিছুর পরও দীর্ঘ দিনের পলিটিশিয়ান এবং ফাঁকা ফিল্ড পাওয়া ক্ষমতাশীন দলের একক প্রার্থী মির্জা দুলালের বিরুদ্ধে পাওয়া হীরার এই জয়টা তার দ্বিতীয় বিষ্ময় এবং দি¦তীয় সাফল্য। টু চিয়ার্স ফর উইন।
এখন প্রশ্ন আসতে পারে, হীরার দুটি বিষ্ময় এবং সাফল্য কিভাবে অর্জিত হয়েছে? এবং কোন সে অদৃশ্য প্রতিপক্ষ যে মির্জা দুলালের ফাঁকা ফিল্ড তত্ত্বকে উড়িয়ে দিয়ে বিজয়ী হয়েছে। এ মূল্যায়ন করতে গেলে বিশ্লেষন করতে হবে বিজয়ী এইচ ইসলাম হীরাকে।
প্রথমত, তিনি সমাজ সেবক হিসাবে হাইভোল্টেজের হলেও সেভাবে তার একক ভাবমূর্তি গড়ে ওঠেনি। বরং তার সমাজ সেবার কৃতিত্ব তার বড় ভাই রাজার।
দি¦তীয়ত, পলিটিশিয়ান হিসাবে তিনি লো-ভোল্টেজের।
তৃতীয়ত, তার বাবার মতো সমাজ শ্রদ্ধেয়(মাষ্টার) বা অনুভূতি পাবার মতো তার কোন পরিচিতি নেই।
যেহেতু মূল্যায়নের প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে তিনি মাইনাস রেটেড তাই বলা যায়, এ বিজয়ের মূল চালিকা শক্তি টাকা! যে টাকায় ম্যানেজ হয়েছে ভোটারেরা, হয়েছে রাজনীতিবীদেরা, ম্যানেজ হয়েছে প্রশাসন। যা কিনা চাটমোহরে ওপেন সিক্রেট!
এ কথা সত্য, এ সিক্রেট কখনোই ওপেন হবেনা যে, এ নির্বাচনে এইচ ইসলাম হীরার প্রকৃত নির্বাচনী ব্যয় কত ছিলো? এবং ভোটার প্রতি তার কত খরচ হয়েছিলো?
কিন্তু এ সিক্রেট ওপেন করে দেয় কিছু লজ্জা।
যে লজ্জা- পৌর ভোটারদের, যারা টাকার কাছে বিক্রি হয়ে যায়।
এ লজ্জা- প্রশাসনের, যাদের কাছে টাকাই প্রকৃত ক্ষমতাবান।
যে লজ্জা- বিজয়ী হিসাবে হীরার নিজের, যিনি জননেতা হিসাবে নয় বরং টাকা নির্ভর নির্বাচন করেছেন। এর ফলে তার ধারনা জন্মাবে, টাকাতেই সব সম্ভব।
যদিও টাকাতেই সবকিছু সম্ভব নয়, তবে এ ক্ষেত্রে মূল্যায়ন করা যেতে পারে আমাদের সামাজিক অবস্থা! বাজারে এখন মোটা চাল ৩৮-৪৫ টাকা কেজি, তেল ১০০ টাকা লিটার। দ্রব্যমূল্যের উর্ব্ধগতির এই র্দুমূল্যের বাজারে যখন চাল-তেল কিনতেই শেষ হয়ে যাচ্ছে অধিকাংশ মানুষের উপার্জন, তখন প্রচন্ড শীতে বাঁচার মতো গরম কাপড় আসবে কোত্থেকে? আর অভাবে নষ্ট হতে পারে মূল্যয়ন ক্ষমতা, বিবেকের পাশাপাশি বিক্রি হতে পারে ব্যালট। এছাড়াও পরিবর্তনের জন্য ভোট দিয়ে যেহেতু পাঁচ বছর পর পর হতাশই হতে হয় তখন নগদ যা আসে তাই হাত পেতে নেয়াইতো বুদ্ধিমানের কাজ! সবচেয়ে বড় কথা, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রনে সরকারের যে ব্যর্থতা, মনোনয়ন দেবার ক্ষেত্রে বিএনপির যে ব্যর্থতা, রাজনীতিবীদদের এ ব্যর্থতায়, শূন্যতা পূরন করবে ব্যবসায়ীরা এটাই স্বাভাবিক। তবে এই স্বাভাবিকতার মধ্যেও অস্বাভাবিকতা বা ক্ষতিকর দিক হলো- এ নির্বাচনে চাটমোহরের রাজনৈতিক খতে পঁচন ধরেছে। চাটমোহরের ভোটারেরা টাকা চিনেছে, এ কারনে ভবিষৎএ যে কোন নির্বাচনে অবশ্যম্ভাবিভাবে টাকা ছড়াতে হবে! তখন রাজনীতিবীদদের টেক্কা দিয়ে ক্ষমতায় আসবে ব্যবসায়ীরা। পদ যখন পরিনত হবে পণ্যে! তখন ভোটারদের প্রতি দায়বদ্ধতা-জবাবদীহিতা আসবে কি করে?
ইতিমধ্যেই আমি পৌর পিতা এইচ ইসলাম হীরাকে অসম্পূর্ন অভিনন্দন বা টু চিয়ার্স জানিয়েছি। আমার অভিনন্দন সেদিনই পূর্ণ হবে যখন তিনি জনপ্রতিনিধি হিসাবে তার দায়বদ্ধতা পূরন করবেন, পুরাপুরি স¦চ্ছ থেকে জনমানুষের জন্য কাজ করবেন এবং ব্যক্তি জীবনের দুই সন্তানের জনক থেকে চাটমোহর পৌরবাসীর যোগ্য অভিভাবকে পরিনত হবেন। সেদিনই আমার অভিনন্দনটা থ্রি চিয়ার্সে পরিনত হবে।
তবে এই মুহূর্তে আমি পৌর পিতা এইচ ইসলাম হীরাকে পরামর্শ দেবো মেয়র হিসাবে শপথ নেবার আগে তিনি যেনো রি-ফ্রেস থাকেন। মেয়র পদকে সেলিব্রেট করার জন্য তিনি যেতে পারেন লং ড্রাইভে কিম্বা নিজেকে আরো শানিত করবার জন্য ডুবে থাকতে পারেন পড়াশোনায়, এবং তার পড়ার তালিকায় থাকতে পারে আরব্য রজনীর আলেফ লায়লা ওয়া লায়লানের সর্বশেষ গল্প জাকাতুল আবদ বা ক্রীতদাসের হাসি। যেখানে পরাক্রমশালী বাদশা হারুনুর রশীদ রাতের ব্যবধানে হাবশী গোলাম তাতারিকে আমিরে পরিনত করেছিলেন এবং বাদী মেহেরজানকে বেগম বানিয়ে ছিলেন। কিন্তু তিনি ব্যর্থ হয়েছিলে একজন ক্রীতদাসের হাসি কিনতে। গল্পের শেষদিকে গোলাম তাতারি হারুনুর রশীদকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলো- “হারুনুর রশীদ টাকা থাকলে একজন গোলামকে আমির বানানো যায় বাদীকে বেগম বানানো যায় কিন্তু একজন ক্রীতদাসের হাসি কেনা যায় না”।
সতিৎ, টাকা থাকলে হয়তো ভোট কেনা যায় কিন্তু ভোটারদের প্রতি দায়বদ্ধতা-কৃতজ্ঞতা তৈরি হয় না। এটা তৈরি করতে হবে নিজের ভেতর থেকে। আর এ দায়বদ্ধতা-কৃতজ্ঞতা তৈরি করাই বর্তমান পৌর পিতার জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। -১৯ জানুয়ারী’১১।