সোমবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

নির্বাচনে হবে ফয়সালা! অসাম...অসাম সালা!!

বাংলাদেশের রাজনীতি, চলচিত্র রাজনীতি!
চলচিত্রের মতোই ক্রাইসিস, ক্লাইমেক্স, অ্যাকশন, ভায়োলেন্সে ভরপুর!
চলচিত্রে যেমন ভিলেনের গুলিতে নিহত হয় আদর্শ বাবা কিম্বা ন্যায়পরায়ন স্বামী! আমাদের রাজনীতিতেও রয়েছে তেমন বাবা ও স্বামী হারানোর করুন বাস্তব ঘটনা। চলচিত্রে রয়েছে এতিম সন্তান আর বিধবা স্ত্রীর নায়িকা হবার কাহিনী। আর রাজনীতিতে রয়েছে তাদের প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেত্রী হবার ইতিহাস। চলচিত্র দেখি সিনেমা হলে টিকিট কেটে, আর রাজনীতিচিত্র দেখি ভোটকেন্দ্রে আংগুলে অমোচনীয় কালি লাগিয়ে ব্যালট কেটে।
তবে আংগুলে লাগানো অমোচনীয় কালি দিনশেষেই মুছে যায় কিন্তু ভোট দিয়ে কাউকে ক্ষমতায় বসিয়ে যে কলংকের কালি আমরা স্বতঃপূর্তভাবে হৃদয়ে মাখি তা পাঁচ বছরেও মোছে না! বিরক্ত জনগন পুরাতন কালির কলংক ঢাকতে নতুন কালি মাখে, যোগ হয় নতুন কলংক! এভাবেই চলে কালির পর কালি, কলংকের পর কলংক!
এখন প্রশ্ন হলো, চলচিত্রের মতো রাজনৈতিকচিত্রে ক্রাইসিস-ক্লাইমেক্স-অ্যাকশন-ভায়োলেন্স থাকলেও কি নেই???
উত্তর-গান।।।
আমি ভাবছিলাম, বাংলাদেশের রাজনীতিচিত্রকে আরো বিনোদনধর্মী এবং সফল করতে উপমহাদেশীয় চলচিত্র ধারা মেনে রাখা যেতে পারে গান। যে গান হতে পারে প্রেমের, বিরহের, আইটেম কিম্বা বিবেকের। চলচিত্রে যেমন প্রসংগ ক্রমে গান রাখা হয়, রাজনীতিচিত্রেও প্রসংগ ক্রমে রাখা যেতে পারে গান।
এখন প্রশ্ন আসতে পারে, এই মুহুর্তে বাংলাদেশের হট প্রসংগ কোনটি?
উত্তর- রাষ্ট্রপতি কতৃক চিন্হিত খুনি ক্ষমা করার ঘটনা।
গত বছর জুলাই মাসে আইনজীবি নুরুল ইসলাম হত্যা মামলার মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত আসামী বিপ্লবকে দলীয় বিবেচনায় ক্ষমা করেন রাষ্ট্রপতি! এ বছর ৮ ফেব্রুয়ারী বিপ্লবকে আরো দুটি মামলার সাজা কমান বা ক্ষমা করেন রাষ্ট্রপতি! একই সাথে বিপ্লবের খুনের সহযোগীকেও ক্ষমা করা হয়!
এখন চিন্হিত খুনি ও তার সহযোগীকে ক্ষমা করার ঘটনায় প্রাসংগিকতায় কি গান গাওয়া যেতে পারে?
এ গানটা হতে পারে-
হোয়ায় দিস কলাভেরী ডি..
          বা
কিভাবে তুমি আমার সাথে এমনটা করতে পারলে?
রাষ্ট্রপতির উদ্দেশ্যে কলাভেরী ডি গানটা গাওয়া যেতে পারে এবং সে গানের মাধ্যমেই তাকে প্রশ্ন করা যেতে পারে- তিনি জাতির সাথে এমনটি কিভাবে করতে পারলেন? বিপ্লব আইনজীবি নুরুল ইসলামকে খুন করেছিলো গোপনে কিন্তু তিনি তো নুরুল ইসলামকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় বার খুন করলেন পুরা জাতির সামনে! তিনি জাতির সাথে এমনটি কিভাবে করতে পারলেন?
তবে তামিল ভাষায় কলাভেরী ডি গানটি অনেকের কাছে দূর্বোধ্য মনে হতে পারে! তাই, রাজনীতিচিত্রের জন্য কোন বাংলা গান গাওয়া যেতে পারে। যে গানটি হতে পারে মীরাক্কেলের সেই বিখ্যাত গান, যেটি শুনতে শুনতে কান ঝাঁলা পালা, অসাম...অসাম সালা-

রাষ্ট্রপতি করলেন ক্ষমা খুনিকে
রাষ্ট্রপতি করলেন ক্ষমা খুনিকে
অন্যায়ের জন্য ভাঙ্গলেন, ন্যায়ের তালা,
অসাম সালা, অসাম সালা, অসাম সালা।।


রাষ্ট্রপতির  শরির যে বড় দূর্বল
কোমর আর বুকেতে নেইতো বল
এরাই দেয় গনতন্ত্রে মালা,
অসাম সালা, অসাম সালা, অসাম সালা।।


অসৎ সংঙ্গে হয় যে সর্বনাশ
এ কথায় আরতো কারো নেই বিশ্বাস
খুনির বন্ধুও পাবে ফুলের মালা
ক্ষমায় এবার সহযোগীর পালা
অসাম সালা, অসাম সালা, অসাম সালা।।


রাষ্ট্রপতি বয়সে থুড়থুড়ে
যৌবনে মুড়িরটিন ঝুড়ঝুড়ে
দেশবাসীকে দেখালেন, নপুংসকের কলা
অসাম......অসাম সালা।।
তবে ভারতীয় টিভি চ্যানেলের অনুকরনে এ গান শুনে অনেকেই জাত গেলো, জাত গেলো বলে তেড়ে আসতে পারে! ভারতীয় আগ্রাসনে জাত, সাংস্কৃতি, রাজনীতি সব গেলো বলে মাতন তুলতে পারেন!
তাই সব ধরনের বিতর্ক এড়াতে রাজনীতি চিত্রের গানটি হতে পারে- "লাগ ভেল্কি লাগ, চোখখে মুকখে লাগ" বলে গাওয়া দেশীয় সাংস্কৃতির বায়োস্কোপের গান-
কি চমৎকার দেখখা গেলো
খুনির দন্ড কইমা গেলো
ন্যায়-নীতি ভাইসা গেলো;
ইবলিশ দেইখা ভেংচি কাটলো..


তার পরেতে দেখেন ভালো
খুনির সংগিও মওকুফ হইলো
অসৎ সংগে পুরুষকার মিললো


কেমন কইরা থাকবেন ভালো
দিন বদলের যে নমুনা হইলো
আমি মনে করি, দেশীয় সাংস্কৃতির এ বায়োস্কোপের গান আমাদের রাজনীতিচিত্রকে আরো আকর্ষনীয় করবে। এমনিতেই আমাদের দেশ, সমাজ, রাজনীতি সবকিছুই আজব বায়োস্কোপে পরিনত হয়েছে!
আমি ভাবছিলাম, প্রয়াত সন্জিব চৌধুরির সেই বিখ্যাত গান-
তোমার বাড়ির রংয়ের মেলায়
দেইখ্যাছিলাম বায়োস্কোপ,
বায়োস্কোপের নেশায় আমায় ছাড়েনা...
...সেই ভাবনায় বয়স আমার বাড়েনা
তবে রাজনৈতিক বায়োস্কোপের নেশায় আমার বয়স বাড়ুক আর না বাড়ুক। সরকারের মেয়াদ বাড়ছে...বাড়ছে ক্ষোভ...আসছে নির্বাচন।
তখন আর জনগন বলবে না- হোয়ায় দিস কলাভেড়ী ডি...বরং বলবে-
ভোটের দিনে হবে ফয়সালা
অসাম...অসাম সালা।




শনিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

নাগরিক সাংবাদিকতার ১ বছরে, পাওয়া আর হারানো!!!

১১ ফেব্রুয়ারি ২০১২- এ পূর্ন হয়েছে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম ব্লগের নাগরিক সাংবাদিকতার ১ বছর। অভিনন্দন বিডি ব্লগ।। জয়তু নাগরিক সাংবাদিকতা।।
কেউ যদি নিতান্তই আগ্রহ ভরে বিডি ব্লগে আমার প্রোফাইলে যান, দেখতে পাবেন...আমি ব্লগে যোগদান করেছি, শুক্রবার, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১১! অর্থ্যাৎ বিডি ব্লগের সাথে, নাগরিক সাংবাদিকতার সাথে আমার নিজেরও এক বছর পূর্তি হয়েছে। আমি আনন্দিত, আমি সন্মানিত।
সাধারনত, কোন বর্ষপূর্তি কিম্বা নতুন বছরকে আমরা অনুপ্রেরনার জায়গা হিসাবে নেই। যেখানে পুরানো জ্বরা ধুয়ে-মুছে নতুন করে ঢেলে সাজানোর ব্যাপার থাকে। তাই অনেকে নতুন বছরে কেনেন ডাইরি, লেখেন দিনলিপি। ব্যবশাহীরা করেন নতুন খাতায় নতুন হিসাবের হালখাতা। তবে পূর্তির এ ফূর্তির মাঝেও পাওয়া না পাওয়ার বিষয় থাকে!  প্রাপ্তির আনন্দ থাকে, থাকে হারানোর বেদনা।
আমি ভাবছিলাম, বিডি ব্লগের এক বছর পূর্তিতে একটি ব্যালান্সশীট তৈরি করবো! ব্লগে এই এক বছর কি পেয়েছি.....কি হারিয়েছি.....
আমার একটি প্রিয় গান- আমি তোমারও সঙ্গে বেধেঁছি আমারো প্রান, সুরেরও বাঁধনে।
ব্লগিং করতে গিয়ে এ গান মিশে গেছে দিনলীপির সাথে- আমি তোমারও সঙ্গে বেধেঁছি আমারও প্রান, লেখনীর বাধঁনে.....এ বাধঁনই এক বছরের প্রাপ্তি......রণদীপম বসু, সাইফ ভূঁইয়া, আবু সুফিয়ান, মোঃ হাসেম, জহিরুল চৌধুরী, আব্দুল মোনেম, জাহেদ-উর-রহমান, রীতা রায় মিঠু, বাসন্ত বিষুব, ম, সাহিদ, দুরন্ত বিপ্লবনুরুন্নাহার শিরীন, মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধূরী, মামুন ম. আজিজ, প্রবীর বিধান, (আরো অনেকেই...) এ সব লেখকেরা তাদের অসাধারন লেখনীতে এ বাধঁন তৈরি করেছেন, এক বছর প্রাপ্তিতে পূর্ন করেছেন।
আর হারানো???
আমার খুব প্রিয় একজন ব্লগার মোসাদ্দিক উজ্জ্বল, যিনি হারিয়ে গেছেন। হারিয়ে গেছেন- আমিন আহম্মদ, হেলজিনোম২০১০, আকাশের তারাগুলি, মুশফিক ইমতিয়াজ চৌধুরী,(আরো অনেককেই...)
হারিয়েছি, নাহুয়াল মিথের লেখনী!
একজন পাঠক হিসাবে, যাদের লেখা আমি মিস করি। যাদের লেখনীতে বিডি ব্লগ হতে পারতো আরো মুখরিত, আরো পরিপূর্ন। তারা কেন হারিয়ে গেলেন? হৃদয়ের বাধঁনকে কি অস্বীকার করা যায়?
আমি ব্লগ কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করবো, তাদের সাথে যোগাযোগ করুন। হারানো বন্ধুকে বার্তা পাঠালে মহাভারত অসুদ্ধ হবেনা কষ্মিনকালেও......
হারানো ব্লগার বন্ধুদের বলবো, আপনারা ফিরে আসুন। আপনাদের লেখনিতে সমৃদ্ধ হোক বিডি ব্লগ, ভালোবাসায় পূর্ন হোক হৃদয়।
আমি আশা করছি, গ্রামীনফোনের বিজ্ঞাপনের মতো- বন্ধুরা ঘরে ফিরবেই। হারানো অতৃপ্তি লেখনীতে পূর্ন করবেই।


শুক্রবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

সত্য প্রকাশের ব্যর্থতা, অসংখ্য মিথ্যার জন্ম দেবে!!!

প্রয়াত হুমায়ন আজাদ স্যার, একবার বলেছিলেন-
"ক্ষমতায় থাকার সময় যারা সত্য প্রকাশ করতে দেয় না, ক্ষমতা হারানোর পর তারা অজস্র মিথ্যার প্রকাশ রোধ করতে পারে না"।
আসলে সত্য প্রকাশের ব্যর্থতাই, অজস্র মিথ্যাকে উষ্কে দেয়। যখন সন্দিহান মনে মিথ্যাকেও সত্যর মতো শোনায়! অনেক সত্যকেও মিথ্যা বলে ভ্রম হয়!
আজ ছুটির দিনের অলস অপরান্হে, বিভিন্ন ব্লগ সাইডে বিভিন্ন লেখা পড়ছি- সাংবাদিক সাগর-রুনি হত্যাকান্ড: এক্সক্লুসিভ গোয়েন্দা তথ্য ফাঁস। শিরোনামে একটি লেখা দেখে চমকে উঠলাম!  প্রচন্ড আগ্রহ নিয়ে বিস্তারিত পড়তে গিয়ে নিতান্তই হতাশ হলাম! সুত্র ও সারবেত্তাহীন, রাজনৈতিক সুরসুরির কলম সন্ত্রাস! লেখাটির সারসংক্ষেপ হলো-
সাংবাদিক সাগর-রুনি খুন করার কিলিং মিশেনর দায়িত্ব পালন করেন এটিএন বাংলার চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমানের ছোট ভাই। খুনের পর দিনই সে গোয়েন্দাদের হাতে গ্রেফতার হয়। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তাকে ছেড়ে দিয়ে বিদেশ পাঠিয়ে দেয়া হয়। সাংবাদিক রুনি বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক খান ও তার সামিট গ্রুপের দূর্নীতির একটি সেনসেটিভ এন্ড এক্সক্লুসিভ প্রতিবেদন তৈরি করেছিল। কিন্তু এটিএন বাংলা সেটা প্রচার করেনি। রুনি পরে সেই রিপোর্টটি তার স্বামীকে দেয় মাছরাঙায় প্রচারের জন্য। এ প্রতিবেদন প্রকাশ হলে বাণিজ্যমন্ত্রীসহ প্রধানমন্ত্রী ব্যাপকভাবে ফেঁসে যেত। তাই এ খবরটি এটিএন বাংলার চেয়ারম্যান প্রধানমন্ত্রীর কানে পৌঁছে দেন। ফারুক খান মাহফুজুর রহমানসহ পরিকল্পনা করেন। সাগরের ল্যাপটপ কব্জা করার দায়িত্ব পড়ে মাহফুজুর রহমানের ছোটভাইয়ের ওপর। রুনিকে আয়ত্বে আনতে না পেরে খুনীরা দুই সাংবাদিককেই দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেয়।

সুত্র বিহীন এ লেখায় সরকার বিরোধীরা বিনোদিত হতে পারেন! আবার সরকার দলীয় লোকেরা অবজ্ঞায় পাশ কাটিয়ে যেতে পারেন!
হতে পারে এ ঘটনা সত্য! হতে পারে এটা মিথ্যা, এবং মিথ্যার স্বপক্ষে এ এক ভয়ানক অপপ্রচার! ঘটনা যাই হোক, এর দায়টা অবশ্যই সরকারের!
আমি ভাবছিলাম,  সত্য প্রকাশের ব্যর্থতাই, অজস্র মিথ্যাকে উষ্কে দেয়।
সরকারের ৪৮ ঘন্টা পেড়িয়ে ১৩ দিনের ব্যর্থতাই, এমন প্রচারকে উস্কে দিচ্ছে.....ক্ষমতায় থাকতেই যারা এমন প্রচারের শিকার হচ্ছে....কখনো ক্ষমতাহারা হলে এ বিষয়ে আরো কতো অপপ্রচারের শিকার হতে হবে, তা সরকারকে দ্রুতই উপলব্ধি করা উচিত। এ তদন্ত অবিলম্বে শেষ করে, দোষিদের দ্রুত গ্রেফতার করা উচিত। না হলে ৪৮ ঘন্টার আশাবাদের ব্যর্থতা, আর বেডরুম তত্ব যে অবিশ্বাসের জন্ম দেবে, সেখানে অনেক মিথ্যা সত্য বলে প্রতিষ্ঠিত হবে.......!!!

মঙ্গলবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

ঋতু বয় মহাকাল

বসন্তের প্রথম দিনেই কোকিলের ডাক শুনেছিলাম......
কুহু কুহু, কুহু কুহু।।
মিষ্টি ডাক, ভালোবাসার ডাক, প্রেমের ডাক।
হয়তো প্রকৃতির এ ডাকে সারা দিতেই পহেলা ফাল্গুনে বাসন্তি রং শাড়ি আর লাল ব্লাউজ পড়ে মেয়েরা, যাদের গলায় কিম্বা হাতে থাকে গাঁদা ফুলের মালা। পরের দিন ভালোবাসা দিবসে বাসন্তি রং এর পাশে যোগ হয় গোলাপের লাল রং, সাথে ভালোবাসার ডাক। যে ডাকে হৃদয় ব্যাকুল হয়!
 এ দিনে আমায় কেউ ডাকলে, আমি সোজা হাজির হতাম তার দোরগোড়ায়! এ সময় ব্যাকুল হৃদয় নিয়ে আমি চাইবো- ফাগুনের এই আগুন ঝড়া দিনে বাসন্তি রং শাড়ি শারিহিতা কোন মেয়ে বলবে- "ভালোবাসি"। যার এক হাতে থাকবে লাল গোলাপ, অন্য হাতে 'ফেরারো রশার' ইটালিয়ান চকলেট।
কিন্তু একটি জাতি এ সময় ব্যাকুল হয়ে কি চাইতে পারে?
যদিও এ চওয়া টা স্হান এবং কাল ভেদে আলাদা হতে পারে! এটা হতে পারে স্বাধীনতা, হতে পারে গনতন্ত্র কিম্বা অর্থনৈতিক অগ্রগতি। যেহেতু সময়কাল বসন্ত, আর ষড়ঋতুর বাংলাদেশ। তাই আইকন হিসাবে বাংলাদেশকে রাখা যেতে পারে! যে দেশ লড়েছে ভাষার জন্য, স্বাধীনতার জন্য, লড়েছে গনতন্ত্রের জন্য।
কোন এক বসন্তের ২১শে ফেব্রুয়ারীতেই রাজপথে রক্ত আর শিমুল ফুল একাকার হয়েছিলো। যে দেশ জিতেছিলো ভাষার যুদ্ধে, স্বাধীনতা যুদ্ধে, জিতেছিলো গনতন্ত্রের যুদ্ধে। এবং প্রায় ১৫ বছর হয়েছিলো নিরবচ্ছিন্ন গনতন্ত্রের চর্চা! তারপর হঠাৎ ছন্দপতনে রাজপথে সাপের মত লাঠিপেটায় মরেছিলো মানুষ, মরেছিলো গনতন্ত্র! সুশাসনের ওঝা হয়েছিলো সেনা সমর্থিত এক অসাংবিধানিক সরকার, যারা দেশ রক্ষার নামে গনতন্ত্রের কফিনে ঠুকতে চেয়েছিলো মাইনাস-টু পেরেক! কিন্তু গনতন্ত্রকামি এদেশের মানুষের সুতীব্র আকাক্ষায় ব্যর্থ হয় মাইনাস-টু। এক নেত্রী দেশে ছিলেন, আরেক নেত্রী দেশে ফেরেন....দেশে ফেরে গনতন্ত্র! যদিও গনতন্ত্রের প্রত্যাবর্তনটা হয়েছিলো রাজসিক, কিন্তু এখন গনতন্ত্র পথ চলছে খুঁড়িয়ে এবং যথারীতি দূর্বলভাবে...!
এখন পাঠক হিসাবে আপনাকে প্রশ্ন......
এ সময়ে ব্যাকুল হয়ে  বাংলাদেশ কি চাইতে পারে?
আপনার উত্তরটা যদি হয়, 'অর্থনৈতিক অগ্রগতি' তাহলে বলবো দূর্ভাগ্য পাঠক আপনার! দূর্ভাগ্য বাংলাদেশের! আপনি সঠিক উত্তর দিতে ব্যর্থ হয়েছেন আর বাংলাদেশ গনতন্ত্রকে সুসংহত করতে ব্যর্থ হয়েছে। এখনো, তিন-চতুর্থাংশ মেজরিটির দাম্ভিক মহাজোট আর সাংগঠনিকভাবে দূর্বল এবং কর্মকান্ডে অথর্ব চারদলের  গনতন্ত্রকে অকার্যকর করার টম এন্ড জেরীর খেলায় ডালপালা মেলছে অসাংবিধানিক সরকারের আশংকা!!! মানুষ পুঁজি হারাচ্ছে শেয়ার বাজারে, জীবন হারাচ্ছে সীমান্তে ও রাজপথে, মধ্যবিত্ত সঞ্চয় হারাচ্ছে দ্রব্যমূল্যে। পুন্জিভূত হচ্ছে ক্ষোভ, আস্থা হারাচ্ছে রাজনীতি।
তবে এ বসন্তে কোকিলের ডাক শুনে আপনি হতে পারেন ব্যাকুল আর বাংলাদেশ হতে পারে আশাবাদি। যে দেশের জনসংখ্যা প্রায় ১৬ কোটি। এর মধ্যে প্রায় ৮৭% মুসলিম, যার বেশীর ভাগই সুন্নি। ধর্মভীরু এ মানুষগুলো মনস্তাত্বিক ভাবেই আরবমুখী। যে আরব-ইরান মুখীতায় ক্ষেপে গিয়ে মধ্যযুগে কবি আব্দুল হাকিম করেছিলেন অমর কতিপয় পক্তি-
"যে সব বঙ্গেতে জন্মি হিংসে বঙ্গবাণী
সে সব কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি"।
এ আরবমুখিতার ফলে সমভূমির এ দেশে এসেছে মরু সংস্কৃতি। যে প্রান্তরের মানুষেরা লক্ষন বিচার করে চলে...চলে আকাশ দেখে, বাতাশ দেখে, সূর্যের উচ্চতা দেখে। নির্দিষ্ট একটি পাখি দেখলে বোঝে, আশে পাশে নির্দিষ্ট ধরনের সাপ রয়েছে। কোন এক ধরনের ঝোপ দেখলে বোঝে, কাছাকাছি রয়েছে পানির উৎস। তবে পূর্ণের আশায় মরু সংস্কৃতি পালন করা এদেশের মানুষ লক্ষন বিচারে অনুপ্রানিত হতে পারে। ফলে এ বসন্তে কোকিলের ডাক হতে পারে গনতন্ত্রকে সুসংহত করার লক্ষন।
যদিও বসন্ত চিনতে দ্বিধাহীন কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় লিখেছিলেন- "ফুল ফুটুক না ফুটুক আজ বসন্ত"
অবশ্য এবার বসন্তে ফুলও ফুটেছে, পাখিও ডেকেছে। তাই লক্ষন বিচারে পাখির ডাক গনতন্ত্রকে সুসংহত করার লক্ষন হলে ফুল ফোঁটা হতে পারে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির লক্ষন! যদিও এ দেশটা একসময় অনেক সমৃদ্ধ ছিলো, গোলা ভরা ধান ছিলো, গোয়াল ভরা গরু ছিলো, পুকুর ভরা মাছ ছিলো! শায়েস্তা খানের আমলেতো টাকায় আটমন ধান পাওয়া যেত! শুনতে অনেকটা রুপকথার মতো শোনায়। আমি কিন্তু একে রুপকথাই বলবো!!! এর গল্পকারেরা কি আমায় বলবেন, এতো কিছুর মধ্যেও কেন মানুষ না খেয়ে মরতো? টাকায় আট মন ধান পাওয়া যেতো ঠিক, কিন্তু সে ধান কেনার মতো একটি টাকা কজনার কাছে ছিলো? বরং প্রকৃত সত্যতো এটাই, গোলা ভরা ধান তাদেরই ছিলো, যাদের ধান রাখবার জন্য গোলা ছিলো। আর সে ধান গোলাতে তুলে দিতো গফুরেরা, যাদের খাবার ধান দুরে থাক, চালে দেবার মতো কিম্বা মহেষকে খাওয়াবার মতো নুন্যতম খড়টুকুও জুটতো না! ছোটলোকের মধ্যে ছোটলোক কুবেরেরা মাছ ধরতো ঠিকই কিন্তু তাদের আমিষের চাহিদা মিটতো আঁশটের গন্ধে! বুলবুলিতে সামান্য ধান খেলেও, খাজনার টাকা দিতে যাদের অপেক্ষা করতে হতো পরবর্তি রসুনের ওপর! কোথায় ছিলো গোয়াল ভরা গরু! গোলা ভরা ধান! আসলে এগুলো ছিলো একটা বিশেষ শ্রেনীর হাতে। সমৃদ্ধিটাও এই বিশেষ শ্রেনীর কাছে বন্দি।

কিন্তু বসন্ত কোন বিশেষ শ্রেনীর জন্য আসেনি, ফুলও শুধু তাদের জন্য ফোঁটেনি। যদিও নজরুলের প্রিয়ার মতো করে কেউ আপনাকে বলবেনা,
"বেল ফুল এনে দাও চাইনা বকুল, চাইনা হেনা আনো আমেরি মকুল"
 তাই তাকে দিতে পারেন গোলাপের পাশাপাশি অর্কিড এবং তার চুলের ছোঁয়া পাবার পাশাপাশি স্বর্গিয় স্পর্শ নিতে খোপায় গুজে দিতে পারেন ল্যাভেন্ডার। তার চোখের দিকে তাকিয়ে ভূলতে পারেন আপনার আর্থিক সীমাবদ্ধতার কথা। পাশাপাশি, বসন্তে কোকিলের ডাক শুনে ভূলতে পারেন দেশের তলা বিহিন ঝুড়ির অর্থনীতি হবার কথা কিম্বা দুর্নীতিগ্রস্থ দেশ হবার কথা! বিষ্ময় নিয়ে ভাবতে পারেন, বিচ্ছিন্ন কিছু অশান্তিকর ঘটনা, ব্যপক দুর্ণীতি এবং একটি প্রায় অকার্যকর পলিটিক্যাল সিষ্টেম যেখানে সরকার ও বিরোধী দল দুই মেরুতে অবস্থান করছে তা সত্বেও দূর্বল গনতন্ত্রের সময়ে বাংলাদেশের বিষ্ময়কর অগ্রগতির কথা। যেখানে বাংলাদেশের ভালো বাস্তব অবস্থা ডেভেলপমেন্ট থিওরির কিছু মূল মতবাদকে অগ্রাহ্য বা অসার প্রমান করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, অর্থনৈতিক উন্নতির খুব জরুরি পূর্ব শর্ত হচ্ছে- রাজনৈতিক স্হিতিশীলতা এবং কার্যকর শাসন ব্যবস্থা। কিন্তু ঘনবসতিপূর্ন ১৬ কটি মানুষের এ দেশ সেসব ছাড়াই চোখে পড়ার মতো উন্নতি করছে। দক্ষিন এশিয়াতে বাংলাদেশ অধিকাংশ সামাজিক খাতগুলোতে নেতৃত্ব দিচ্ছে। যে সব খাতে এ অঞ্চলে বাংলাদেশ এগিয়ে আছে তার অন্যতম হলো নারী শিক্ষা ও দারিদ্র বিমোচন। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারও কমেছে। আর দক্ষিন এশিয়াতে বাংলাদেশই একমাত্র দেশ যেটি দারিদ্র দূরীকরনে জাতিসংঘের স্থির করা লক্ষ্যমাত্রার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোলস (Millenium Development Goals) নামে জাতিসংঘের দেয়া লক্ষ্যমাত্রায় বলা হয়েছে ২০১৫ সালের মধ্যে দারিদ্র অর্ধেকে কমিয়ে ফেলতে হবে। দক্ষিন এশিয়াতে বাংলাদেশই সেদিকে ঠিকমত এগিয়ে যাচ্ছে......শেয়ার বাজারে অব্যাহত দরপতন, মুদ্রাস্ফিতি, জ্বালানি তেলের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি সর্বপরি একটি অকার্যকর পলিটিক্যাল সিষ্টেম স্বত্তেও বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, যার প্রধান চালিকা শক্তি- বাড়ন্ত রপ্তানি খাত, শক্ত সামর্থ গারমেন্টস খাত এবং প্রবাসিদের পাঠানো রেমিটেন্স। ফলশ্রুতিতে বিশ্বের ৫০ টি গরিবতম দেশগুলোর মধ্যে একটি বাংলাদেশ, উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে অগ্রগামী ১১ টি দেশের মধ্যে পড়েছে। বিশ্বের ৪ টি শক্তি যারা ইকোনমিক মিরাকল ঘটাচ্ছে- ব্রাজিল, রাশিয়া, ইন্ডিয়া ও চায়নার পেছনে উন্নয়নশীল ৭ টি দেশ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে যার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম।(গোল্ডম্যান স্যাকস এর মতে)।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ, দারিদ্র, দুর্ণীতি ও সহিংসতায় আক্রান্ত একটি জাতির জন্য যা কিনা বিষ্ময়কর! আর সেটা সম্ভব হয়েছে এদেশের মানুষের লড়াকু মানষিকতা এবং দূর্বল তবে অব্যাহত গনতন্ত্রের ফলে। এটা ঠিক আমাদের গনতন্ত্রে অনেক ত্রুটি আছে। আবার এটাও ঠিক, গনতন্ত্র দূর্বল করে কিম্বা গনতন্ত্র রোধ করে এ ত্রুটি দূর করা সম্ভব নয়। অব্যাহত ও অধিকতর গনতন্ত্র চর্চার ফলেই এ ত্রুটি দূর করা সম্ভব।
আর অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি?
আপনি যদি বসন্তে ফুল ফোঁটা দেখে সমৃদ্ধির বিষয়ে নিশ্চিত হন তাহলে জেনে রাখুন, ফুল ফোঁটা অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির লক্ষন হতে পারে কিন্তু সমৃদ্ধি নিশ্চিত করতে পারে না! অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য আমাদের সকলকে বিভেদের উর্ধে থেকে স্ব স্ব কাজ যথাযত ভাবে করতে হবে। আর যে কাজের পরিবেশের জন্য চাই গনতন্ত্র, প্রয়োজন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং কার্যকর শাসন ব্যবস্থা। তাই এ বসন্তে বাংলাদেশ চাইতে পারে সুসংহত গনতন্ত্র। আর তা হতে পারে সকল দলের ও মতের সদিচ্ছা ও সহবস্থানের ফলে।

কিন্তু কোকিলের ডাক আমাকে করেছে ব্যাকুল! আমি ভাবতে চাই, বাসন্তি রং শাড়ি পরা সেই অধরা মেয়ের কথা। আমি তাকে না ছুলেও যে আমার হৃদয় স্পর্শ করেছে। সে ডাকলে আমি সোজা হাজির হতাম তার দোরগোরায়। আমি জানি সে একদিন ডাকবে....। আমার হাতে গোলাপ আর ফেরারো রশার তুলে দিয়ে বলবে "ভালোবাসি"। আমি বলবো, ভালোবাসি আমিও।

বৃহস্পতিবার, ২ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

ভাঁড় বদল হয়, ভাঁড়ামি নয়!!!

প্রত্যেক কালে, যুগে ক্ষমতাশীন সভায় ভাঁড়ের দেখা পাওয়া যায়!!! যারা তাদের চাটুকারিতা আর ভাঁড়ামি দিয়ে হাস্যরসের জন্ম দেন! নিজেরা হাসেন, অন্যদেরও হাসান। বিনিময়ে মেলে এনাম, আর রাজ্যসভা পায়  হাসির উপলক্ষ্য।
আমরা পড়েছি, সম্রাট আকবরের নবরত্ন সভার রত্ন বীরবল, যিনি তাৎক্ষনিক রসিক জবাব দিতেন। রসিক বীরবল যদি একটু গম্ভির হতেন তাহলে হয়তো তার বুদ্ধিমত্তার জন্য ইতিহাস তাকে বুদ্ধিবিশারদ হিসাবে পরিচিত করতো! তবে হাস্যরসে মেধার ছাপ রাখা বীরবল ভাঁড় হিসাবেই পরিচিত।
আমরা পড়েছি, রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের সভার গোপাল-ভাঁড়, যিনি জীবনে অসংগতি পাগলামো, পরিমিতিবোধের অভাব, রঙ্গরসিকতায় তুলে ধরতেন। হাস্যরসের মাধ্যমে যিনি ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত করতেন। কিন্তু বাহ্য হাস্যরস বুদ্ধিমান গোপালকে বুদ্ধিজীবি না করে ভাঁড় হিসাবে পরিচিত করেছে।
লক্ষ্যনীয়, এসব ভাঁড়দের কথায় হাস্যরস সৃষ্টি হতো, কিন্তু তাদের কথায় মেধার ছাপ ছিলো, পরিস্থিতির নির্মোহ মূল্যায়ন ছিলো।
আধুনিক যুগেও ক্ষমতাশীন সভায় আমরা ভাঁড়দের দেখতে পাই! কিন্তু এসব মেধাহীন ভাঁড়দের কথায় হাস্যরস যাও বা পাওয়া যায় কিন্তু সারবেত্তা খুঁজে পাওয়া যায় না!
গত চারদলীয় জোট সরকারের সময় আমরা দেখেছি, স্পাইক চুলের এক স্পাইসি বাংলিশ ভাঁড়! যার ইংলিশের ভাঁড়ামো শুনে গোপাল ভাঁড়ও হেসে খুন হতেন নিশ্চই!! সে সময়ই আমরা দেখেছিলাম, হাস্যরস বাদ দিয়ে আল্লার মালের করুন রসের ভাঁড়ামি!!!
এরপর দিনবদলের কথা বলে যখন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসলো, সবাই আশা করেছিলো, অন্তত ভাঁড়ামিতেও আমরা বদল দেখতে পাবো, হাস্যরসের পাশাপাশি খুঁজে পারো সারবেত্তা! কিন্তু হায়!!! শেয়ার বাজারে পুজিঁ হারানো, রাজপথে জীবন হারানো, দ্রব্যমূল্য সঞ্চয় হারানো, চিরদূঃখী এ দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে তামাশা করার জন্য ভাঁড় বদল হলেও ভাঁড়ামি বদল হয়নি!!! সম্ভবত হবেও না!!!
এখন প্রশ্ন আসতে পারে, ভাঁড় বদলের পালায় এখন ভাঁড় কে? কিম্বা বর্তমান ক্ষমতাশীন সভার প্রধান ভাঁড় কে?
আপনার উত্তর যদি হয়- হাস্যজ্জল কার্টুন সৈয়দ আবুল, তাহলে বলবো দূঃখিত পাঠক, চেহারা দেখে  সবকিছু মূল্যায়ন করা ঠিক নয়! বরং উত্তরটা হবে সৈয়দ আশরাফ!! অব্যাহত ভাঁড়ামিতে যিনি হাস্যরস ও করুনরস সৃষ্টি করে যাচ্ছেন!
৩ ডিসেম্বর  যিনি ভাঁড়ামিতে গুপ্তরস এনে বলেছিলেন- ব্লগ এখন অনেকটা পর্নোগ্রাফিতে পরিণত হয়েছে! 
২১ জানুয়ারী তিনি সীমান্তে হত্যা আর নির্যাতনে চিন্তাহীন তামাশায় বলেছিলেন- সীমান্তে যা কিছু ঘটছে তা নিয়ে রাষ্ট্র চিন্তিত নয়। সব কাজ ফেলে রেখে শুধু এদিকে দৃষ্টি দেওয়ার প্রয়োজন আছে বলেও সরকার মনে করে না। এসব অতীতে ঘটেছে, এখনো ঘটছে এবং ভবিষ্যতেও ঘটবে। এগুলো নিয়ে রাষ্ট্র খুব বেশি চিন্তিত নয়।
আর ২ ফেব্রুয়ারিতে তিনি অবহেলা, অদক্ষতা আর বিনা পরীক্ষায় লাইসেন্স দেবার চাটুকারিতার বললেন- সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হলে প্রতিবাদ জানানোর কিছু নেই!
সৈয়দ আশরাফের এ ভাঁড়ামিতে তার কোন এনাম মিলছে কিনা জানিনা! শুধু অনুভব করি, যারা স্বজন হারিয়েছে বিএসএফের গুলিতে কিম্বা ঘাতকের বেপরোয়া গাড়িতে, এসব ভাঁড়ামো তাদের হাসির উপলক্ষ্য দেয় না, দেয় হৃদয়ে রক্তক্ষরনের উপলক্ষ্য। তাইতো, সরকারদলীয় সাংসদ অ্যাডভোকেট তারানা হালিম, যিনি দুর্ঘটনায় হারিয়েছেন তার আদরের ভাতিজাকে, তিনি পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে তার মনের বেদনার অনুভূতি প্রকাশ করেছেন, প্রতিবাদ করে বলেছেন- আজকে সংসদে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে কথা বলা হয়েছে সেটা খুবই দুঃখজনক। এই বক্তব্যের বিষয়ে আমার মনের বেদনার অনুভূতি প্রকাশ করতে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়েছি। ‘সব সড়ক দুঘর্টনা নিছক দুর্ঘটনা নয়। অবহেলা, অদক্ষতা ও ইচ্ছকৃতভাবে যে ঘটনা ঘটে সেটা নিছক দুর্ঘটনা নয়। এটা মর্মন্তুদ বিষয়।’ ৩০৪ (ক) মতে যে দুর্ঘটনা এড়ানো যায় তাকে নিছক দুঘর্টনা বলা যায় না। এটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আর দুঘর্টনা এড়ানো যায় না, ঘটে যায় তাকে দুঘর্টনা বলা যায়।
 আমি জানি, তারানা হালিমের মতো স্বজন হারানোদের বেদনা কোন ভাঁড়কে স্পর্শ করবে না! তারা অপরিমিতিবোধের রঙ্গরসিকতায় বলেই যাবে- “অ্যাকসিডেন্ট ইজ অ্যাকসিডেন্ট! বাচ্চো লোগ তালিয়া বাজাও! আল্লার মাল আল্লাই নিয়ে যাবে!