রবিবার, ২৫ নভেম্বর, ২০১২

আজ আমি শোক জানাব না!!!



রানের পাহাড়ে চাপা পড়া বাংলাদেশ,
আজ চাপা পড়েছে
গার্ডার ভাঙ্গা ফ্লাইওভারের নিচে....

সাকিব আর নাসিরের শতক বঞ্চিত আক্ষেপ,
আজ ছাপিয়ে গেছে
সেলাই দাদা আর দিদিমণিদের দগ্ধ লাশের শতকে...

এদেশে আজও কেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ে না?
মাটি ফুড়ে বেরোয় না কেন অগ্নুৎপাত?

যদি ভূমিকম্পে চাপা পড়ত লাখ খানেক মানুষ
আমিও শোক জানাতাম,
শকুনের শোকবার্তার ভীড়ে...

যদি অগ্নুৎপাতে দগ্ধ হতো, আরো কয়েক লাখ
আমিও শিওরে উঠতাম,
মানব শরীরের কয়লা কিংবা কাবাব পরিণয়ে।

কিন্তু আজ কংক্রিটের নিচে চাপা পড়া মানুষের জন্য
আমি শোক জানাবো না!
আগুনে দগ্ধ ১১২ টি গলিত লাশ দেখে
আমি শিওরে উঠব না...
আজ আমি শোক জানাব না!

যে মানুষগুলো বসে ছিল ফ্লাইওভারের নিচে,
জীবিকার পসরা সাজিয়ে
তারা তো চাপা পড়েনি কংক্রিটে!
চাপা পড়েছে ঠিকাদারীর মুনাফার লোভে...

যে মানুষগুলো বুনছিল, সুই সুতার সেলাইয়ে,
মালিক আর দেশের সমৃদ্ধির বুনন,
তারা তো পুড়েনি আগুনে...!
পুড়েছে মালিকের অতিরিক্ত মুনাফার আকাঙ্খায়-

এতো শুধু দুর্ঘটনা নয়, এ মানবসৃষ্ট দুর্ঘটনা।

ফ্লাইওভারের টেন্ডারবাজিতে যতগুলো লাঠির দরকার হয়েছিল
ন্যূনতম সততায়,
তার অর্ধেক লাঠির পেলাতেও ফ্লাইওভারটি দাড়িয়ে থাকত।

সুইং আর কাটিং মেশিনের নিরাপত্তায় যে নজর দেওয়া হয়েছিল
ন্যূনতম মানবতায়,
তার অর্ধেক সতর্কতাতেও, জীবনগুলো বেঁচে থাকত।

এদেশে আজও কেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ে না,
মাটি ফুড়ে বেরোয় না কেন অগ্নুৎপাত?
জীবন দেবী যেখানে মুনাফা দানবের কাছে পরাজিত,
সেখানে কেন ধ্বংস নামে না...

আমি সেই ভেঙ্গে পড়া আকাশের নামে,
মাটি ফুড়ে বের হওয়া অগ্নুৎপাতের নামে,
প্রলয়কারী ধ্বংসের নামে,
আমার শোককে চাপা দিলাম...
চাপা দিলাম, কংক্রিটে চাপা পড়া মানুষের সাথে,
পুড়িয়ে দিলাম, দগ্ধ লাশের শতকে।

জীবন দেবীর প্রতি আর কোন শোক নয়
মুনাফা দানবের প্রতি দিয়ে গেলাম অভিশাপ
তোদের উপর আকাশ ভেঙ্গে পড়ুক
মাটি ফুড়ে বেরোক অগ্নুৎপাত...

মঙ্গলবার, ২০ নভেম্বর, ২০১২

আমি হৃদয়হীন এক পৃথিবীর কথা বলছি



আমি এক পরীর কথা বলতে এসেছি,
জন্মের সময় স্রষ্টা, যার ডানা দুটি খুলে রেখেছেন!
আমি এক ডানাকাটা পরীর কথা বলতে এসেছি,
আমি বলতে এসেছি এক উচ্ছল শিশুর কথা-
আর আট-দশটা শিশুর মতই যার মেতে থাকার কথা,
শিশুতোষ চাঞ্চল্যতায়.........
সকালে যে পড়বে গোলাপি ফ্রক আর বিকেলে পড়বে লাল সোয়েটার

আমি এক নজরকাড়া শিশুর কথা বলতে এসেছি-
বাহিরে বেড়োনোর আগে যার মা, কপালে দিতো কালো তিলক
যেন নজর না লাগে......
যে শিশুটি বন্ধুদের সাথে খেলত পুতুল খেলা.......সমস্বরে গাইতো- 
আমাদের দেশটা স্বপ্নপুরী, সাথী মোদের ফুলপরী
লালপরী...নীলপরী...নীলপরী...লালপরী
সবার সাথে ভাব করি, সবার সাথে ভাব করি....


আমি এক শিক্ষানবিশ শিশুর কথা বলতে এসেছি-
নিজস্ব ভাষায় যে শিখতো বর্ণমালা,
অ'তে অজগর। অজগর ঐ আসছে তেড়ে।
আ'তে আম। আমটি আমি খাব পেড়ে।
পড়ার শেষে মা, শিশুটিকে দিত এক গ্লাস দুধ।
শিশুটির মনের মতোই শুভ্র সে দুধ
আমি সেই শুভ্র শিশুর কথা বলতে এসেছি।

আমি সেই ভীতু শিশুর কথা বলতে এসেছি-
যাকে খেলনা পিস্তল কিনে দিয়েছিলো বাবা
বিপুল বিক্রমে ঢিয়া ঢিয়া বলে যে গুলি ছুড়তো শুন্যে
বাবার দিকে তাক করতো না কখনোই,
যদি গুলি লেগে যায়........

আমি এক দুষ্টু শিশুর কথা বলতে এসেছি-
মায়ের সাথে দুষ্টুমিতে, ঘুমের অভিনয়ে যে শুয়ে থাকতো
চোখটি বন্ধ করে....
বোকা মা, মেয়ে তার ঘুমিয়েছে ভেবে উঠতে গেলেই
যে শিশুটি খিলখিল করে হেসে উঠতো
আমি সেই ঘুমহীন শিশুর কথা বলতে এসেছি-
মায়ের মিষ্টি বকুনিতেও যে শিশুর ঘুম আসতো না
অবশেষে মা তাকে শোনাতেন ঘুমপাড়ানি গান-
খোকা ঘুমালো পাড়া জুড়ালো বর্গী এলো দেশে....
মা তাকে শোনাতেন রুপকথার গল্প-
রাক্ষস-খোক্ষস আর দেও-দানবের গল্প
সোনারকাঠি-রুপোর কাঠির প্রভাবে রাজকন্যার
ঘুমিয়ে থাকার গল্প......

অবশেষে শিশুটি ঘুমিয়ে পড়ে
আমি সেই ঘুমপাড়া রাজকন্যার কথা বলতে এসেছি

যে শিশুটি ঘুমিয়েছে, যাকে ঘুম পাড়িয়ে দেয়া হয়েছে!
ঘুম পাড়ানো হয়েছে বুলেট আর বোমার আঘাতে-
যাকে হত্যা করা হয়েছে.......
আমি সেই খুন হওয়া শিশুটির কথা বলতে এসেছি-

যে শিশুটি জীবনের বিনিময়ে বুঝে গেছে-
এ পৃথিবী কোনো স্বপ্নপুরী নয়,
ক্ষুদ্র জীবনকাল যেন নরকীয় দুঃস্বপ্ন!
এখানে লালপরী আর নীলপরীতে ভাব হয়না
ভাব হয় লাল রক্তের সাথে নীল বেদনার...
এ পৃথিবী কোনো শিশুর পুতুল খেলার জায়গা না,
বরং পৃথিবীই সাম্রাজ্যবাদী হায়েনাদের খেলার পুতুল
শিশু হাতের খেলনা পিস্তলে যারা ভরে দেয় বারুদ
অস্ত্রের খেলায় চলে তাদের সমৃদ্ধির মানবতা

যে শিশুটি অ'তে ছুটে আসা অজগরে আর ভয় পাবে না!
যখন ছুটে আসে বুলেট......
আ'তে হওয়া আমটি যার আর পাড়া হবে না!
আমের জন্য ঢিল ছুড়লে সে হয় মৌলবাদী
আর বিনিময়ে ছুটে আসে মিসাইল.....
তেমনি এক বোমার আঘাতে নিহত হয়েছে সে...

আমি সেই নিষ্পাপ শিশু হত্যার কথা বলছি-
আমি হৃদয়হীন এক পৃথিবীর কথা বলছি-


শনিবার, ২০ অক্টোবর, ২০১২

সহস্র ও দুই রাত্রি



আকর্ষণীয় রজনীর নিদারুণ বিকৃতি

রাত্রি নেমেছে শরতের আকাশে, যে আকাশে ভেসে বেড়াচ্ছে কাশফুলের মত মেঘ। রাত্রি নেমেছে সে শরতের মেঘেও।
এভাবেই সহস্র কাল ধরে রাত্রি নামছে শরৎ এবং বর্ষায়। আরব এবং বাংলায়।
তবে বিশেষ কারণেই বিশেষায়িত হয় একে থেকে অন্য।
তাইতো বর্ষার আকাশ থেকে সুন্দর শরতের আকাশ, বাংলার রজনীর থেকে আকর্ষণীয় আরব্য রজনী।
যে আকর্ষণেই ছোটবেলায় প্রতীক্ষায় থাকতাম সে রাতের জন্য যে রাতে টিভিতে আলিফ লায়লা প্রচারিত হতো। ছোটবেলায় শোনা সে সুর এখনো আমার কানে বাজে-
“আলেফ লায়লা, আলেফ লায়লা, ওয়া লায়লা, শোনো সব নতুন কাহিনী, মন ভরে যায় যার বাণী, কতযুগ পেড়িয়ে গেছে, সময় তবু রয়ে গেছে........”


যদিও সময় রয়ে যায়নি। বরং যুগ পেরেনোর সাথে সাথে সময়ও পেড়িয়ে গেছে, অনেক কিছুই বিকৃত হয়ে গেছে। বিকৃত হয়েছে এটি নামেও!
আশ্চর্য মনে হলেও, উপন্যাসটি আলেফ লায়লা ওয়া লায়লা নয় বরং আলেফ লায়লা ওয়া লায়লানে। সহস্র ও এক রাত্রি নয় বরং সহস্র ও দুই রাত্রি।
আমি ভাবছিলাম আমরা না হয় অসভ্য, আমরা নিজস্ব প্রয়োজনে ইতিহাসের বিকৃতি ঘটাই। আমরা বিকৃতি করি মুক্তিযুদ্ধের ঘটনা! বিকৃত করি স্বাধীনতার ঘোষকের নাম! এটা আমাদের অসভ্যতা!
কিন্তু পশ্চিমা বিশ্ব, তারা তো সভ্য। তারা কেন বিকৃত করলো বিশ্ব সাহিত্যের এ অমূল্য সম্পদ?

লোমহর্ষক বঙ্গীয় রজনী

আরবের হেরেমখানায় মদ পানরত বাদশা, আর মৃত্যু ভয়ে গল্পরত বেগম, সকালেই যার গর্দান যাবে- এমন রাত অনেক আগেই ফুরিয়েছে....। এখনকার রাত, আলো আধারী কোন এক নাইট ক্লাবের রাত! যেখানে সারাব আছে, সাবাবও আছে, শুধু গল্প নেই ...... গল্পের প্রয়োজনও নেই। এখনতো আইটেম সংয়ের যুগ!
তবে কল্পনাপ্রবণ মনের দুর্নিবার আকর্ষণে আমি ঢুকে পড়েছি বঙ্গীয় রজনীর এক হেরেমখানায়, যেখানে বাদশাকে গল্প শোনাচ্ছে তার বেগম- যে গল্প আলি বাবা আর চল্লিশ চোরের, চিচিং ফাক বলে গুপ্তধন সন্ধানের গল্প নয়। বরং এ গল্প হলমার্কের সোনালী ব্যাংক ফাক করে চার হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের গল্প। যে গল্প দস্যু জিংগালু জংলার জঙ্গিপনার নয় বরং এ গল্প শিক্ষাঙ্গনে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসপনার গল্প। আলাদীনের আশ্চর্য প্রদীপ ছাপিয়ে যে গল্প পরমাশ্চর্য প্রদীপের ছোয়ায় শেয়ার বাজার থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটে নেয়ার গল্প! এভাবেই চলবে সহস্র কাল ধরে! প্রতি রাতেই নতুন নতুন গল্প.............কুইক রেন্টালে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটে নেয়ার গল্প! যুদ্ধাপরাধী দস্যুদের বিচার বানচাল করার ষড়যন্ত্র! ধর্মের দোহাইয়ে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীর মন্দির, বাড়ি পোড়ানো অধর্মের গল্প!
আমি ভাবছিলাম, আরব্য রজনী আকর্ষণীয় তবে বঙ্গীয় রজনী অনেক বেশী লোমহর্ষক।


অবিক্রিত জনগনের হাসি!

বঙ্গীয় রজনীর প্রতিটি রাতে উঠে আসে জনগনের দুঃখ, বেদনার কাহিনী। যারা প্রবল উৎসাহে পরিবর্তনের জন্য ভোট দেয় এবং বারবার হতাশ হয়! পরিবর্তনের জন্য দেয়া দুই-তৃতীয়াংশ কিংবা তিন-চতুর্থাংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা যেখানে পরিপূর্ণ ব্যর্থতায় পরিণত হয়। তাইতো বঙ্গীয় রজনীর কাহিনী হতাশার কাহিনী, যেখানে কষ্ট আছে-হাসি নেই! যেখানে আক্ষেপ নিয়ে বিবেক গেয়ে চলে- আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম.....
আর তাইতো হাসতে ভুলে যাওয়া জনগনের জন্য আজ রাতে বঙ্গীয় বেগম তার বাদশাকে শোনাচ্ছেন আলেফ লায়লা ওয়া লায়লানের সর্বশেষ গল্প জাহাকুল আবদ।
যদিও এ গল্প আমাদের প্রথম শুনিয়েছিলেন, ঔপন্যাসিক শওকত ওসমান। আলেফ লায়লা ওয়া লায়লানের আসল পান্ডুলিপি থেকে তিনি 'ক্রীতদাসের হাসি' নামে অনুবাদ করেন জাহাকুল আবদ।

এ গল্পে পরাক্রমশালী বাদশা হারুনুর রশীদ রাতের ব্যবধানে হাবশী গোলাম তাতারিকে আমিরে পরিণত করেছিলেন এবং বাদী মেহেরজানকে বেগম বানিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি ব্যর্থ হয়েছিলেন একজন ক্রীতদাসের হাসি কিনতে। গল্পের শেষে গোলাম তাতারী হারুনুর রশীদকে বলেছিল-
“শোন, হারুনুর রশীদ। দীরহাম দৌলত দিয়ে ক্রীতদাস গোলাম কেনা চলে। বান্দী কেনা সম্ভব। কিন্তু- কিন্তু-ক্রীতদাসের হাসি না.............”


গল্পে ছেদ পড়ল বঙ্গীয় বাদশার অট্টহাসিতে...........

বাদশাঃ বেগম ...... সরাব খাচ্ছি আমি, আর সরাবি হয়ে উঠছো তুমি?

বেগমঃ আপনি বড্ড দুর্বোধ্য! ভাবকে আরো প্রসারিত করুন জাহাপনা!

বাদশাঃ বঙ্গীয় রজনীতে তুমি শোনাচ্ছো, আরব্য কাহিনী! এ কেমন তামাশা?

বেগমঃ এ তামাশা জনগনের ভাগ্য এবং ভবিষ্যতের সাথে তামাশা .... কখনো কখনো আরব্য রজনী একাকার হয় বঙ্গীয় রজনীতে! আরব সাগরের পানি মেশে ভারত মহাসাগরে।

বাদশাঃ আমার বিরক্তিতে তলোয়ার আর তোমার গর্দানের মাঝে হেয়ালী করো না বেগম!

বেগমঃ গোস্তাকী মাফ জাহাপনা, শওকত ওসমান ক্রীতদাসের হাসি লিখেছিলেন ১৯৬৩ সালে আইয়ুব খানের সামরিক স্বৈরতন্ত্রের যুগে। স্বৈরাচারের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে ধরা বাজিতে তিনি জিতেছিলেন। সে বছরই ক্রীতদাসের হাসি পেয়েছিল শ্রেষ্ঠ উপন্যাসের পুরষ্কার! এ হাসি শুধু হাবশি গোলাম তাতারির হাসি নয়, এ হাসি ছিলো এ দেশের প্রতিটি নিপীড়িত মানুষের মুক্তি আকাঙ্খার। যারা বলছিলো- আইয়ুব খান, অস্ত্রের জোরে শাসন ক্ষমতা দখল করা যায়, কিন্তু জনগনের মুখে হাসি ফোটানো যায় না।

বাদশাঃ হুম, কিন্তু এখনতো দেশটা স্বাধীন হয়েছে, স্বৈরশাসনও বিদায় নিয়েছে। যদিও বিশ্ববেহায়া এক স্বৈরাচার ক্ষমতাসীনদের ঘাড়ে সওয়ার হয়েছে, তবুও দেশে গণতন্ত্রই চলছে। এখন এ গল্পের প্রাসঙ্গিকতা কি?

বেগমঃ প্রাসঙ্গিকতা জনগনের হাসিতে জাহাপনা! তিন-চতুর্থাংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার মহাজোট সরকার আজ ধরাকে সরাজ্ঞান করছে। যেমন করেছিলো চারদলীয় জোট সরকার এবং তাদের পতনও হয়েছিলো। এ বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠদের জন্যই এটা প্রাসঙ্গিক। তারা জেনে যাক- সংখ্যাগরিষ্ঠতা দিয়ে সরকার গঠন করা যায়। মানি লোককে সিঁধেল চোর বলে, হাটের খালু বলে হেয় করা যায়, কিন্তু জনগনের মুখে হাসি ফোটানো যায় না!
চারপাশে সুনসান নিরবতা নেমে এসেছে। বাদশা শান্ত ও সমহিত ভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করলেন- তাহলে জনগনের মুখে হাসি ফোটানো যায় কিভাবে?

মসজিদ থেকে ভেসে আসছে ফজরের আযান। গল্প আজকের মত শেষ। আবার আগামী রাতে শুরু হবে নতুন গল্প। ভোরের স্নিগ্ধতায় তবুও বেগম বলে চলছে- জনগনের হাসি সে তো হেকিমী দাওয়াই। বিভিন্ন অনুপাতে মেশাতে হয় হাসির উপকরণ। বাজারে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, সমাজে সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণ, শিক্ষাঙ্গনে সরকারী ছাত্র সংগঠন নিয়ন্ত্রণ, সেবাখাতে উন্নয়ন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি...ইত্যাদি...ইত্যাদি.....এ সবকিছুর অনুপাতে কার্যকর শাসনব্যবস্থাই জনগনের মুখে হাসি ফোটাতে পারে। তবে, জনগনের মুখে হাসি ফোটানো যায়, কিন্তু জনগনের হাসি কেনা যায় না।

সহস্র ও দুই রাত্রি

মহাজোট সরকারের প্রায় চার বছর চলে গেছে। চলে গেছে ১৩৮৯ দিন বা ১৩৮৯ রাত কিংবা চলে গেছে সহস্র রাত!
এ সহস্র রাতের ভীড়ে কিছু কিছু রাত ছিলো আরব্য রজনীর ভয়ঙ্কর রাত থেকেও ভয়ঙ্কর। কিছুদিন আগেই রামু সহ কয়েকটি বৌদ্ধপল্লীর সেই নৃশংস রাতের আধার এখনো কাটেনি, ক্ষত এখনো শুকায় নি। যে ক্ষত কলংকিত করেছে এদেশের সম্প্রীতির বন্ধন, সন্দেহ বাড়িয়েছে ধর্ম থেকে ধর্মে। নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টানেরা। অপরাধবোধে ভুগছে মুসলিমেরা।
এমন আস্থাহীনতার মাঝেই এসেছে শারদীয় উৎসব, আসছে ঈদুল আযহা।
পাশাপাশি দুই ধর্মের প্রধান এ দুই ধর্মীয় উৎসব নির্বিঘ্নে উদযাপন নিশ্চই সম্প্রীতির বন্ধন জোড়ালো করবে। আস্থা তৈরী করবে একের সঙ্গে অপরের। 
তাই সহস্র রাত অতিক্রম করা সরকারকে নিষ্কন্টক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে উৎসবের এ দুই রজনীর। এখন এ দুই রাতই হতে পারে আরব্য রজনীর সেই সহস্র রাতের দুই রাত। যে দুই রাত সাম্প্রদায়িক কলংকে ঢেকে দিতে পারে সম্প্রীতির প্রলেপ।

বুধবার, ৩ অক্টোবর, ২০১২

সহিংস অক্টোবরে ছড়াক অহিংসার আলো


সময়কাল-অক্টোবর ২০০৬
সেবার ঈদ উৎসবটা অনেক আগেই শুরু হয়েছিলো। যে উৎসবে বাড়ি ফেরার তাড়া ছিলো না, টিকিট কাটার লাইন ছিলো না ! বাসে ট্রেনে অস্বাভাবিক ভিড়ও ছিলো না!
তবে ঈদের মতোই খুশি ছিলো, আনন্দ ছিলো, ছিলো বিশ্বকে কিছু দিতে পারার গর্ব। একজন বাংলাদেশীর (ডঃ ইউনুস) নোবেল জয় ঈদের ঠিক ১৩ দিন আগেই পুরো জাতিকে এনে দিয়েছিল সার্বজনীন এক আনন্দের উপলক্ষ।

কিন্তু শান্তিতে নোবেল জয় এদেশের মানুষকে আনন্দিত করলেও শান্তি এনে দিতে ব্যর্থ হয়েছিলো। তাইতো সেসময় রাজনৈতিকভাবে উত্তপ্ত হয়েছিলো, রক্তাক্ত হয়েছিলো, রাজপথ। লগি বৈঠার আঘাতে সাপের মতো মরেছিলো মানুষ। মৃত মানুষের লাশের উপর হয়েছিলো উদ্দাম নৃত্য। যে দৃশ্য হার মানিয়েছিল কোন অ্যাকশন-থ্রিলার ছবিকেও। আমি জানিনা কোন ড্রামাক্রিটিক এই দৃশ্যকে কিভাবে নিতেন।

বিংশ শতাব্দীর ইংল্যান্ডের বিখ্যাত ড্রামাক্রিটিক ছিলেন কেনেথ টাইনান। উপন্যাসিক হিসেবে সমাদৃত এবং নাট্য সমালোচক হিসাবে বিখ্যাত টাইনান কখনো নাটক লেখেননি! কেন নাটক লেখেননি এমন এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন-
একজন মানুষ তার জীবনে কলম দিয়ে যা কিছু লিখতে পারে তার মধ্যে সবচেয়ে কঠিন হলো নাটক লেখা”


কঠিন বলেই হয়তো টাইনান নাটককে এড়িয়ে গেছেন। কিন্তু তিনি বলে যাননি, আমাদের জীবনটাই একেকটা নাটক, আর সে নাটক এড়ানো সম্ভব নয়! সেটা ব্যক্তি জীবনেই হোক কিংবা জাতীয় জীবনে!

তাইতো ২৮ অক্টোবর’০৬ বাংলাদেশ এড়াতে পারেনি রাজপথের লগি বৈঠার নাটক। কোন মঞ্চ কিংবা টিভি নাটকের সাথে এ লগি বৈঠার নাটকের বৈসাদৃশ্য হলো-
টিভি নাটকে ঝুঁকিপূর্ণ দৃশ্যে স্ট্যানম্যান ব্যবহার করা হয়। যেখানে রক্ত ঝরে না, ঝরে আলতা। কিন্তু ২৮ অক্টোবরের সেই লগি বৈঠার নাটকের মানুষগুলো কোন স্ট্যানম্যান ছিলো না। লগি বৈঠার আঘাতে তাদের শরীর থেকে আলতা ঝরেনি বরং রক্তই ঝরেছিলো।

সময়কাল- অক্টোবর ২০১২
আশ্বিন মাসের শেষ সপ্তাহ চলছে। বাংলা প্রবাদে একটা কথা আছে- আশ্বিন, গা শিন শিন। কিন্তু বৈষয়িক উষ্ণতায়, আশ্বিনে পড়ে না গা শিন শিনে শীত, সব কিছুই যে এখন সুসময়ের বিপরীত। পৃথিবীটাই তো এখন উষ্ণ হয়ে উঠছে!

ধর্ম ও ধর্মীয় নেতাকে অবমাননা করে মুসলিমদের সংবেদনশীলতায় আঘাত করা আমেরিকার “ইনোসেন্স অফ মুসলিমস” মুভিকে কেন্দ্র করে তো উষ্ণতার পারদ শীর্ষে পৌঁছেছে, ইতোমধ্যেই আরব দেশগুলো সহ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোতে বিক্ষোভ হচ্ছে, আমেরিকার দূতাবাসে হামলা হচ্ছে….. লিবিয়াতে হামলায় নিহত হয়েছে আমেরিকান রাষ্ট্রদূত সহ ৪ জন, মিশরে বিক্ষোভ সহিংসতা ছাড়িয়েছে, পাকিস্তানে বিক্ষোভ চলাকালীন সংঘর্ষে ১৯ জন নিহত হয়েছে। বাংলাদেশে একদিন হরতাল পালিত হয়েছে, যদিও এ হরতালের ছিল বিক্ষোভের জন্য পল্টন ময়দান নিষিদ্ধ করার প্রতিবাদে।

সুপরিকল্পিতভাবে বিদ্যেশ ছড়ানো নিষ্পাপ নামের কলুষিত প্রজেক্ট “ইনোসেন্স অফ মুসলিমস” এর উষ্ণ উত্তেজনা হয়তো আরো কিছুদিন থাকবে! মুসলিমরাও হয়তো ষড়যন্ত্রকারিদের পাতা ফাঁদে পা দিয়ে এ উত্তেজনার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ফেলবে। যার উত্তাপ পুনঃ পুনঃ ছড়িয়ে পড়বে লিবিয়া থেকে মিশর, পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ!

তবে ধর্মপ্রাণ বাংলাদেশের মানুষ এ উত্তেজনার ফাঁদে পা দেয়নি। তাদের বিবেচনাবোধ সঠিক দিকেই ধাবিত হয়েছে, সেটা সচেতনভাবেই হোক কিংবা অসচেতনভাবে। ইতিমধ্যেই সরকার থেকে এ ছবিটির বিষয়ে নিন্দাসহ ছবিটি বাজেয়াপ্ত করতে আমেরিকার প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। ইউটিউব বন্ধ করে দেয়া হয়েছে! সাধারণ মানুষ রাস্তায় মানববন্ধন এবং বিক্ষোভ সমাবেশ করলেও তা ছিলো শান্তিপূর্ণ যা কোন সহিংসতার রূপ নেয়নি। যা কিনা আমাকে স্বস্তি দিয়েছে! কিন্তু বেশ কিছুদিন থেকে একটি বিষয় আমার অস্বস্তির কারণ হচ্ছে…..

হলমার্ক কেলেংকারী, পদ্মা সেতুর দুর্নীতি, শেয়ার বাজার কেলেংকারী, কুইক রেন্টালে দেশকে কুইক ডেস্ট্রয় নীতি, আইন শৃঙ্খলার ক্রমাবনতি এ সবকিছুতেই সরকার ব্যর্থতায় টালমাটাল! এর যে কোন এক ইস্যুতেই ঝড় উঠতে পারে চায়ের কাপে, উষ্ণ হতে পারে রাজপথ।

কিন্তু আশ্চর্য, এ বিষয়গুলো নিয়ে চায়ের কাপে ঝড় উঠলেও, তা রাজপথকে প্রভাবিত করেনি। রাজপথ এখন থমকে আছে! আর আমার উৎকন্ঠাটা এখানেই……. ঝড়ের পূর্বেও তো থমকে থাকে আকাশ। রাজপথের থমকে থাকা কি বড় কোন ঝড়ের পূর্বাভাস?

১৬ সেপ্টেম্বর, সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করে দেয়া রায়ে স্বাক্ষর করেন সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক। এ রায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিলুপ্তি করা সহ কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়।

১৯ সেপ্টেম্বর, প্রধানমন্ত্রী ও ১৪ দলীয় জোট নেত্রী শেখ হাসিনা সংসদে জানিয়েছেন-
“সংসদ রেখে নির্বাচন হবে না। ওয়েস্ট মিনিস্টার টাইপ অব গভর্নমেন্টে সরকারপ্রধান সম্ভাব্য তারিখ জানিয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রস্তাব দেবেন। তিনিই ঠিক করবেন সংসদ কবে ভেঙে দেবেন, কতজনের মন্ত্রিসভা থাকবে। তিনি যে নির্দেশ দেবেন, সে অনুযায়ী নির্বাচন হবে।”

২০ সেপ্টেম্বর, বিরোধীদলীয় নেত্রী ও ১৮ দলীয় জোট নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন-
“নির্দলীয়, নিরপেক্ষ সরকার না হলে বিএনপি কোন নির্বাচনে অংশ নেবে না, নির্বাচন হতেও দেবে না”।


এখন যে প্রশ্নগুলো সাধারণ মানুষের মনে ঘুরপাক খাচ্ছে-
আগামী সংসদ নির্বাচন কি আদৌ হবে?
নির্বাচন হলে কার অধীনে হবে?
সরকার কি বিরোধী দলের দাবী মেনে তত্ত্বাবধায়ক ফিরিয়ে আনবে?
বিরোধী দল কি তত্ত্বাবধায়ক ছাড়া নির্বাচনে অংশ নেবে?
যদি নির্বাচনের আগে প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের সমঝোতা না হয় তবে কি ২৮ অক্টোবরের ২০০৬ এর মতো রাজপথ আবারো সংঘাতের দিকে যাবে?

আমরা কি এগিয়ে যাচ্ছি, আরেকটি লগি বৈঠার তান্ডবের দিকে?
আমি ভাবছিলাম, ২০০৬ এর প্রশ্নগুলো কি নিদারুণভাবে ২০১২ তে করতে হচ্ছে! ২০০৬ এর অক্টোবর আর ২০১২ এর অক্টোবর একই প্লাটফর্মে রয়েছে। ৬ বছরের ব্যবধানে দেশটার অবস্থান একই স্থানে!

আশ্চর্য!

সেই ১৯৫৮ থেকে সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে এই দেশে আন্দোলন চলছে। ৭১’এবং ৯০ এ সেই আন্দোলন চরমে পৌঁছেছিল। তারপর কিছুদিন বেসামরিক শাসনের পর আবার কিভাবে যেন ঘুরেফিরে সামরিক কিংবা অসাংবিধানিক সরকারই ফিরে আসছে। ফিরে আসছে অসাংবিধানিক সরকারের আশংকা।

সেই ৯০ থেকে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য এই দেশে আন্দোলন চলছে। তারপরও প্রতিটি নির্বাচনেই চলছে নির্বাচনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা। জনগনের ভোটের অধিকারকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে এ খেলাই ঘুরেফিরে চলছে ১৯৯৬, ২০০১, ২০০৬ এ, এমনকি ২০১২ তেও।

আসলে আলোচনা করার জন্য আমাদের চায়ের কাপ উষ্ণ হলেও জীবনটা বড় একঘেয়ে-

একটা রেকর্ডের মাঝেই যেন আটকে গেছে গ্রামোফোনের পিন! বারবার একই সুরে একই কথায় রেকর্ডটা বাজছে। গণতন্ত্রের জন্য, প্রভাবমুক্ত সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবীতে চিৎকার করতে করতেই কি জীবনটা শেষ হয়ে যাবে? দেশটা কি একটুও এগোবে না? আমরা কি এগিয়ে যাবো আরেকটি লগি বৈঠার তান্ডবের দিকে? রাজপথের নৃশংস হত্যাকান্ডের দিকে? আরেকটি ওয়ান/ইলেভেনের দিকে?

এ সকল অস্থির ভাবনার মাঝে আমি দেখছিলাম, আজকের দিনপঞ্চি-
আজ ২রা অক্টোবর, আন্তর্জাতিক সহিংসতা প্রতিরোধ দিবস বা আন্তর্জাতিক অহিংস দিবস।

অহিংসার আলোয় ভালোবাসার মন্ত্র ছড়িয়েছিলেন যে মহাত্মা
১৮৬৯ সালের এই দিনে জন্মগ্রহণ করেছিলেন অখন্ড- ভারতের অন্যতম প্রধান রাজনীতিবিদ এবং অখন্ড- ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অগ্রগামী ব্যক্তি মোহন দাস করমচাঁদ গান্ধী বা মহাত্মা গান্ধী।

যিনি ছিলেন সত্যাগ্রহ আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা। যে আন্দোলন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো অহিংস মতবাদ বা দর্শনের ওপর এবং এটি ছিলো ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম চালিকাশক্তি। সারা বিশ্বের মানুষের স্বাধীনতা এবং অধিকার পাওনায় আন্দোলনের অন্যতম অনুপ্রেরণা।

মহান এ নেতার স্মরণে ভারত সরকার দিবসটিকে গান্ধী জয়ন্তী হিসাবে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করলেও ২০০৭ সালে জাতিসংঘ দিবসটিকে আন্তর্জাতিক অহিংস দিবস হিসাবে পালনের ঘোষণা দেয়।

এ অক্টোবরেই জন্ম নিয়ে মোহন দাস করমচাঁদ গান্ধী অহিংসার যে আলো ছড়িয়েছেন, সে আলো তাকে করেছিলো মহাত্মা আর বিশ্বব্যাপি ছড়িয়ে দিয়েছিলো ঘৃনার বিপরিতে ভালোবাসার মন্ত্র!!!

আমি ভাবছিলাম, ২০০৬ এর সহিংস অক্টোবর কি ২০১২ তে অহিংস রূপ নেবে? রাজপথে সহিংসতার বিরুদ্ধে, রক্ত ও জীবন নাশের বিরুদ্ধে ছড়িয়ে দেবে অহিংসার আলো !?

যে আলোয় আন্তর্জাতিক সহিংসতা প্রতিরোধ দিবসেই সুষ্ঠু নির্বাচন আর গণতন্ত্র সুরক্ষার আন্দোলনে অহিংস হয়ে উঠবে দীর্ঘকাল রাজনৈতিক সহিংসতার আক্রান্ত এ জাতি।

পুনশ্চ: লেখাটি লেখার পরের দিন, রাজনৈতিক সহিংসতার আক্রান্ত জাতিটি হঠাৎ করে ধর্মীয় সহিংসতায় আক্রান্ত হয়েছে!!! কক্সবাজারের রামু, টেকনাফ, উখিয়া, ও চট্রগ্রামের পটিয়ায় ধর্মের নামে অধর্মের পাশবিক প্রকাশ ঘটিয়েছে মুসলিম সম্প্রদায়ের কিছু অংশ……লজ্জা….লজ্জা

মন্দির কিম্বা মূর্তি নয়, ভেঙ্গেছে অনুভূতিশীল মানুষের হৃদয়
আমি মনে পড়ছে মুক্তিযুদ্ধের সময় আঁকা নিতুন কুন্ডুর সেই সাড়া জাগানো পোস্টারের কথা ‘বাংলার হিন্দু, বাংলার বৌদ্ধ, বাংলার খ্রিস্টান, বাংলার মুসলমান আমরা সবাই বাঙালি’,। ভাবছিলাম- ‘আমরা সবাই বাঙালি থেকে কি করে এতো ধার্মিক হয়ে উঠলাম? হিংসার আগুনে কিভাবে পোড়ালাম- ভাতৃত্বের বন্ধন, মানবিকতা, উদারতা, বিশ্বাস, পোড়ালাম বাড়ি, দোকান, মন্দির…………
বুদ্ধের শরির, আর গান্ধির বিবেক পুড়িয়ে সব ভস্স করে দিয়েছি, জানিনা এ পোড়া ছাই থেকে জেগে উঠবে কিনা বিবেকের ফিনিক্স পাখি!!! শুধু জানি, ‘বাংলার হিন্দু, বাংলার বৌদ্ধ, বাংলার খ্রিস্টান, বাংলার মুসলমান আমরা সবাই বাঙালি’,। আমরাই ছড়িয়ে দেব- হিংসার বিপরিতে ভালোবাসার মন্ত্র।

শনিবার, ২৮ জুলাই, ২০১২

পদত্যাগী দেশপ্রেম, আস্থাত্যাগী দেশপ্রেমিক হতে বাধ্য করে!!!



ভালোবাসা এমন এক অনুভুতি, যার কোন সংজ্ঞা হয় না। তাইতো প্রেমিকার চোখের ভেতর নিরন্তর খুঁজে ফেরা ভালোবাসার কুলহী্নতায় প্রেমিক বলে- “সখি, ভালবাসা কারে কয়?

আমি ভাবছিলাম, মানব-মানবীর অনুভুতি কেন্দ্রিক এ মিলিয়ন ডলার প্রশ্নটি যখন হৃদয় সংযোগ ছাপিয়ে ভূখণ্ডে গিয়ে পৌঁছে তখন প্রশ্নটি পদ্মা সেতুর প্রস্তাবিত বাজেট ২২ হাজার কোটি টাকার প্রশ্নে পরিণত হয়!
“সখি, দেশপ্রেম কারে কয়?

তবে বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুর ঋণ চুক্তি বাতিলের পর নিজেদের অর্থায়নে এমন দুই-চারটি পদ্মা সাঁকো বানানোর মতোই ২২ হাজর কোটি টাকার এ প্রশ্নের সহজবোধ্য উত্তর দিয়েছেন আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা! কোন পণ্য ও প্রতিষ্ঠানকে দেয়া ISO 9000 সনদের মতোই তিনি আবুল হোসেন কে দিয়েছেন দেশপ্রেমের ডিজিটাল 2021 সনদ! বলেছেন- আবুল দেশপ্রেমিক। কারন তিনি পদত্যাগ করেছেন!

দেশপ্রেম নিয়ে ২২ হাজার কোটি টাকার প্রশ্নের এমন সরল উত্তম উত্তরের পর যে সম্পূরক প্রশ্নটি আসে- তবে কি পদত্যাগের জন্য এক প্রকার মহাযুদ্ধ করা সোহেল তাজও শেখ হাসিনার চোখে উত্তম দেশপ্রেমিক? নাকি নন?
এ প্রশ্নের উত্তরটি সম্ভবত আবুলের হাসির মতো প্রাণোচ্ছল নয় বরং সাহারা খাতুনের হাসির মতোই জটিলতর! তাই এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজা যেতে পারে ধর্মে… ধর্ম বলেছে- দেশপ্রেম ঈমানের অঙ্গ। ঈমান অর্থ বিশ্বাস। অর্থ্যাৎ দেশপ্রেমের সাথে বিশ্বাসেরও সম্পর্ক রয়েছে।
তাই বিশ্বাস আর বিশ্বাসীর পরিক্ষায় একজন আবুল হোসেন কিম্বা একজন সুরঞ্জিতসেন গুপ্ত গোল্ডেন এ+ পেলেও সোহেল তাজ যে ঈমানই পরীক্ষায় ফেল করেছেন তা বলাই বাহুল্য।

ছোটবেলায় পড়া ‘দেশপ্রেম রচনার একটি লাইন এখানে প্রাসংগিক ভাবেই উল্লেখ করা যেতে পারে- “আমাদের নিজ নিজ অবস্থানে থেকে যথাযথ দায়িত্ব পালনই দেশপ্রেম”
 যেহেতু আমাদের সমাজের এমপি-মন্ত্রীরা সমাজের চোখে পুরুষ মানুষের মতোই চরিত্রহীন! পুরুষ মানুষের ক্যারেকটার একটু ঢিলা হবে, তারা আমোদ ফুর্তি করবে, একটু আটটু গলা ভেজাবে, এদিক ওদিক যাবে, এতে দোষের কিছু নাই! তেমনি আমাদের এমপি-মন্ত্রীরাও দেশের টাকা নিজের মনে করে একটু নয়-ছয় করবে, ঘুষ নয় বরং উপঢৌকন দাবি করবে, বিড়াল ধরতে গিয়ে নিজেই কাল বিড়াল হবে, এটাই স্বাভাবিক, এটা দোষের কিছু না! এমন নয়-ছয় কাজ যথাযথ ভাবে পালন করাও তো দেশপ্রেম!

তবে তাদের দেশপ্রেম প্রশ্নবিদ্ধ! তারা যদি এমন নয়-ছয় যথাযথভাবেই করতো তবে কালো বিড়াল পিলখানায় ধরা পরত না! বিশ্বব্যাংক ও অভিযোগ না করে দুদকের মতোই বলতো- এখানে কোনো দূর্নীতি খুজেঁ পাওয়া যায়নি! তারপরও প্রশ্নবিদ্ধ দেশপ্রেম প্রশ্নাতীত হয়ে যায়- কারন তারা পদত্যাগ করেছেন। আর প্রধানমন্ত্রীর ভাষায়- পদত্যাগই দেশপ্রেম!

আমার অবশ্য কোনো পদ নাই, তাই পদত্যাগের উপায় নাই, দেশপ্রেমিক হবার সুযোগও নাই! এ দেশের সাধারন মানুষেরও নাই! তবে পদ আর পদত্যাগ না থাকলেও এ দেশের সাধারন মানুষেরা দেশপ্রেমিক। কারন দেশপ্রেমের জন্য প্রয়োজন ত্যাগ -পদত্যাগ, স্বার্থত্যাগ, আত্মত্যাগ, আস্থা ত্যাগ……………………………।

এক সময় ভাবতাম, এ দেশের মানুষেরা বড় অস্থির, আস্থাহীন। এ দেশের গণতন্ত্র মানেই পাঁচ বছরের পালা বদল! আঙ্গুলের অমোচনীয় কালী মেখে, ন্যাড়া হয়ে আলাদা আলাদা বেল গাছ তলায় বারবার যাওয়া!
কিন্তু এখন ভাবি, ন্যাড়াদের বারবার বেল গাছ তলায় বারবার না গিয়েই বা উপায় কি? নির্বাচনী ইশতেহারের সাথে যে ক্ষমতার কার্যক্রম মেলে না! তাইতো বাধ্য হয়ে, স্বতঃস্ফূর্তভাবেই পালা বদলের প্রয়োজন হয়। প্রয়োজন হয় আস্থাত্যাগের!
পদত্যাগ করা আবুল হোসেন দেশপ্রেমিক কিনা জানিনা তবে বারবার আস্থাত্যাগ করা জনগণই বাস্তবিক দেশপ্রেমিক। আবুল হোসেন অন্তত একটা কারনে ধন্যবাদ পাবে!- আবুলদের দেশপ্রেম, জনগনকে আস্থাত্যাগী দেশপ্রেমিক হতে বাধ্য করে!!!

মঙ্গলবার, ২৬ জুন, ২০১২

৪৮ ঘন্টার ব্যর্থতা, অন্তত ৪৮ সমস্যার জন্ম দেবে!!!

সাগর-রুনি হত্যাকান্ডের পর সরাষ্ট্রমন্ত্রীর ৪৮ ঘন্টার আশাবাদ, আজো শেষ হয় নি! ঘড়ির কাঁটা সেকেন্ড, মিনিট মেপে মেপে ছোট্ট মেঘের চোখের পানি শুকায়, কিন্তু সে কাঁটা ঘন্টায় পৌছে না! অপেক্ষার প্রহর গুনতে গুনতে ঘুমিয়ে পড়ে মেঘ, ঘুমিয়ে পড়ে ঘড়িটিও! কালের গহব্বরে বিলিন হয় ৪৮ ঘন্টা!
মেঘ এতোটাই ছোট, ও নিশ্চই ৪৮ ঘন্টা বোঝে না! ও বোঝেনা, আমাদের বেডরুম পাহারা দেওয়া কোন সরকারের কাজ নয়! ও বোঝে না পরকীয়া কি? বাসায় মদের আড্ডা কি? ওর এটা বোঝার কথাও নয়।
তবে মেঘের এক জগৎ আছে, শিশু মনের স্বপ্নজগৎ- যেখানে তার বেডরুম নিরাপদ। পরকীয়া, মদের আসরের মতো বিশ্রী আর ৪৮ ঘন্টার নিস্ফল আশাবাদ, যে জগৎকে এখনো স্পর্শ করেনি.........
মেঘের রুপকথাময় স্বপ্ন জগতে আছে- হাতিশালায় হাতি, ঘোড়াশালায় ঘোড়া।  ব্যঙ্গমা-ব্যঙ্গমী আছে। আছে রাক্ষস-খোক্ষসও........যারা যাদুর প্রভাবে রাজকন্যাকে ঘুম পাড়িয়ে রেখেছে, সোনার কাঠি আর রুপোর কাঠির ছোয়ায় যে অশুভ প্রভাব কেটে যাবে। রাজকন্যার ঘুম ভাঙ্গবে, রাজ্য আনন্দে ঝলমল করবে......
মেঘ নিশ্চই, নির্মম বাস্তবতার মাঝে তার স্বপ্নরাজ্য খুঁজে ফেরে! মিডিয়া রাক্ষস আর স্বার্থানেষী খোক্ষস যে তার মা-বাবাকে ঘুম পাড়িয়ে রেখেছে....সোনার কাঠি-রুপোর কাঠির ছোঁয়ায় যে তাদের ঘুম ভাঙ্গবে!
কিন্তু সে ঘুম আর কখনোই ভাঙ্গবে না। বাস্তব জগতের রাক্ষস খোক্ষসেরা যে অনেক শক্তিশালী! শিশু মনের স্বপ্নরাজ্য তারা নিয়ন্ত্রন করে! নিরাপদ বেডরুমকে নিরাপত্তাহীন করে! নিয়ন্ত্রন করে ঘড়ির কাঁটা.....৪৮ ঘন্টা!!! এমনকি তারা প্রধানমন্ত্রীকেও তাচ্ছিলের সুরে বাচাল বলতে পারে!
তারা এতোটাই শক্তিশালী! তাদের প্রান ভোমরা এতোটাই সুরক্ষিত! যার খবর জানেনা কোন ব্যঙ্গমা-ব্যঙ্গমীও!
তবে মেঘের স্বপ্নরাজ্যের এক ব্যঙ্গমা বাসা বেঁধেছে আমার মনের ডালে! অনিরাপদ নীড়ে যে হারিয়েছে তার ব্যঙ্গমীকে! এ নিয়ে কোন ক্ষোভ নেই- নীড় পাহাড়া দেয়াতো কোন সরকারের কাজ না! সে ৪৮ ঘন্টার প্রতিক্ষায় থাকে না, রাক্ষস-খোক্ষসের প্রানভোমরার খবরও তার অজানা! সে সাগর-রুনি হত্যার বিচারের দাবিতে সাংবাদিক ঐকে খুশি হয়, মাহফুজুর রহমানের পরকীয়া তত্বে, ব্যঙ্গমীর শোকে ক্ষিপ্ত হয়......বিচারের ভবিষৎ নিয়ে হতাশ হয়........

আজ প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে মাহফুজের বাচাল তত্বের ভিডিও দেখে ব্যঙ্গমাকে কহিলাম- এটিএনের চেয়ারম্যান তো এবার মাইনক্যা চিপায় পড়ছে!
ব্যঙ্গমা কহিলো- আরে ধুর...আম পাবলিকের মতো কথা কইয়ো না! চিপায় পড়ছে তো সরকার!
আমি কহিলাম- কিরুপ?
ব্যঙ্গমা কহিলো- না ধরিলে, বিরোধী পক্ষ সাগর-রুনি ইমোশন লইয়া রাজনীতি করিবে! আর ধরিলে, তারাই গনমাধ্যমের স্বাধিনতা গেল বলিয়া মায়া কান্না কাঁদিবে!
আমি কহিলাম- খাইছে....তাহা হইলে এখন কি হইবে?
 ব্যঙ্গমা কহিলো- কাদম্বিনি মরিয়া প্রমান করিয়াছিলো তিনি মরেন নাই! হাসিনা আপাও এখন চুপ থাকিয়া প্রমান করিবে তিনি বাচাল নহে!!!
আমি কহিলাম- তাহা হয়তো হইবে না.....সুরন্জিত কহিয়াছিলেন- বাঘে ধরিলে ছাড়ে, হাসিনা ধরিলে ছাড়ে না!!! মাহফুজ এইবার ছাড়া পাইবে না!!!
ব্যঙ্গমা কহিলো- তাহাতেও বিপদ! সবাই কহিবে- খুনের জন্য নহে বাচাল বলিবার জন্যই কট খাইলো মাহফুজ!
আমি কহিলাম- ভারী আপদ....এখন উপায়???
ব্যঙ্গমা কহিলো- উপায় নাই গোলাম হোসেন! সরাষ্ট্রমন্ত্রীর ৪৮ ঘন্টা এখনো শেষ হয় নাই! ৪৮ ঘন্টার ব্যর্থতা এমন আরো ৪৮ সমস্যার জন্ম দিবে, সাথে বাচাল উপাধি ফাও......

রবিবার, ১৭ জুন, ২০১২

আমার আব্বু, আমার হিরো।

আব্বুকে আমি কখনো লিখিনি, জানিনা আব্বুকে কি করে লিখতে হয়! কি বলে সম্মোধন করতে হয়! আর বিশেষনই বা কি?
প্রিয় আব্বু.....কিম্বা সুপ্রিয় আব্বু.....
বিশেষনেই কেটে দিতে হলো অসংখ্যবার! কারন আব্বুর বিশেষনের প্রয়োজন নেই! আব্বু তো আব্বুই। এ উদ্দাম গতিময়তার যুগে তিনি শুধু লালন কর্তা, পালনকর্তা এবং প্রয়োজনের যোগানদাতাই নয় বরং আরো বড় কিছু......
আমার আব্বু, আমার হিরো। আমার অনুপ্রেরনার আশ্রয়স্থল। আমার আব্বু, আমার পৃথিবী।
মনে পড়ে ছোটবেলায় একবার আব্বুর ঘড়ি হারিয়ে ফেলেছিলাম। আব্বু আমাকে কিছুই বলেননি।
তারপর অনেকদিন তার হাতটা ঘড়িবিহীন ছিলো, হয়তো আর্থিক সীমাবদ্ধতায় কিনতে পারেননি! আব্বুর ঘড়ি বিহীন হাতটি দেখে আমার এতো কষ্ট হতো, তারপর ১৬-১৭ বছর কেটে গেছে, আমি সে কষ্ট বুকে চেপে আজো কোন ঘড়ি হাতে দেইনি।

ও...আর্থিক সীমাবদ্ধতার কথা যখন আসলোই, তখন বলেই ফেলি- আমাদের পরিবারটা মধ্যবিত্ত। নুন আনতে হয়তো আমাদের পান্তা ফুরায় না! কিন্তু আব্বু এতো বিলাসী, নুন পান্তার জন্য তিনি ব্যবস্থা করেন ইলিশ! তখন হয়তো মধ্যবিত্ত সংসারে নুন পান্তা ইলিশে, থাকেনা পেঁয়াজ মরিচ! আব্বু সেটাও ব্যবস্থা করেন, কিন্তু কিভাবে তা আমি জানি না, আব্বু কখনো জানতেও দেননি।

এমন একটি মধ্যবিত্ত ঘরের সন্তানের জন্য উচ্চ মাধ্যমিকে স্থানীয়(পাবনা) একটি কলেজে পড়াই ছিলো সংগত। কিন্তু আব্বু ছেলের আরো সুন্দর ভবিষৎ নিশ্চিত করতে আমাকে পাঠালেন ঢাকায়, ভর্তি করলেন বাংলাদেশের সবচেয়ে সেরা কলেজটিতে(নটর ডেম)।

মাসের শুরুতে আমি চাইবার আগেই তিনি ফোন করে জানতে চাইতেন- কত টাকা লাগবে?
টাকা হাতে পাবার পর সব সময় দেখতাম- যা দেবার কথা দিয়েছেন অনেক বেশী। এ নিয়ে ফোনে আব্বুর সে কি মনোমুগ্ধকর অযুহাত-
বই মেলা চলছে, মেলায় যেয়ো ১০০০ টাকা বেশী দিলাম.....
পেপারে দেখলাম, বানিজ্য মেলায় ভালো ব্লেজার পাওয়া যাচ্ছে, ১৫০০ টাকা আলাদা পাঠালাম...কিনে নিয়ো.....
এ মাসে না তোমার জন্মদিন বন্ধুদের সাথে বাহিরে খেয়ো....ইত্যাদি.....ইত্যাদি

আব্বু কাউকে বুঝতে দেননি- আমার বিশাল খরচ, ছোটভাইয়ের লেখাপড়া, সংসার খরচ, নিজের হাত খরচ, সব মিলিয়ে তার আর্থিক অবস্থা দিনকে দিন খারাপ হতে থাকলো। আব্বু ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন মানুষ। কারো কাছে হাত পাতা কিম্বা ধার দেনা করার মানুষ তিনি নন। তাই প্রয়োজনের তাগিদে আমাদের বসত বাড়ির বাহিরে একমাত্র জমিটি তিনি বিক্রি করে দিলেন। আমাদের আত্বীয় স্বজনেরা তাকে বুঝিয়েছিলো- এক ছেলের পেছনেই সব খরচ করছো? তোমার তো আরেক ছেলে আছে, তার ভবিষৎ এর কথাও ভাবো....
আব্বু সেদিন বলেছিলো- ও যদি মানুষ হয়। আমার আরেক ছেলে আর আমি দুজনেই ওর ছেলেতে পরিনত হবো। তখন এই দুই ছেলেকে ওই দেখবে........
এ কথা যখন আমি শুনেছিলাম, আমার চোখে পানি চলে এসেছিলো। একজন বাবা তার ছেলেকে কতটুকু ভালোবাসতে পারে, বিশ্বাস করতে পারে.......

অথচ আমার যখন এইচএসসিতে রেজাল্ট খারাপ হলো! আব্বু কষ্ট পেলেও কি আশ্চর্যজনক ভাবেই না নিজের কষ্ট গোপন করলেন! আমাকে বললেন- এমন হতেই পারে, ভালো কোথাও ভর্তির চেষ্টা করো, এ রেজাল্টকে জীবনে প্রভাব পড়তে দিয়ো না.....

ছোটবেলায় যখন বড়শি দিয়ে মাছ ধরতাম। ঘন্টার পর ঘন্টা ফাতনাতে মাছের টোকা ছাড়াই অপেক্ষা করতাম, পরেরদিন আবার বড়শি ফেলতাম। ফিডব্যাক না পেলেও প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতাম। ভাবতাম- মাছ ধরাই সম্ভবত পৃথিবীর একমাত্র কাজ যেখানে ফিডব্যাক না পেলেও প্রচেষ্টা চালানো যায়.......
কিন্তু আব্বুকে দেখে বুঝেছি, পিতা হলেন এমন একজন যিনি সন্তানের কাছে আশানুরুপ ফিডব্যাক না পেলেও সন্তানের সুখের জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যান।

আজ বাবা দিবসে, সকালে আব্বুকে ফোন করেছিলাম- কিন্তু বলতে পারিনি আব্বু, আমি তোমায় অনেক ভালোবাসি। তুমিই আমার হিরো, তুমিই আমার পৃথিবী।
তাই লিখতে বসলাম- আব্বুকে আমি কখনো লিখিনি, জানিনা আব্বুকে কি করে লিখতে হয়.......আমি লিখতে পারছিলাম না। অবশেষে কাগজটি ছিঁড়ে শত টুকরা করে ফেললাম!!!
পরক্ষনে ভাবছিলাম, হায়...আব্বু যদি জানতো, তাহলে হয়তো শত টুকরা একে মিলাতো। একটি শব্দই শুধু বোঝা যেত- ভালো থেকো আব্বু।।।
আব্বু সে সময় নিশ্চই হেসে বলতেন- আব্বুকে কি লেখার কিম্বা বলার প্রয়োজন আছে? আব্বু তো জানেই তার ছেলে তাকে কত ভালোবাসে......

মঙ্গলবার, ১২ জুন, ২০১২

অশালীন বাক, এখনই থামিয়া যাক!!!

রুপকথার সেই কথা বলা ব্যাঙ এর কথা আমরা জানি, যাকে কিস করলে সে রাজকন্যা হয়ে যাবে।  মানুষ কিম্বা রুপক মানবিকতার স্পর্শে যে ব্যাঙ রাজকন্যায় পরিনত হয়!
আমি ভাবছিলাম, আমাদের রাজনৈতিক রুপকথাতেও রয়েছে কিছু কথা বলা ব্যাঙ! কিন্তু কিসের স্পর্শে তারা গনতন্ত্র কন্যায় পরিনত হবেন তা আমরা জানি না!
আমরা ভেবেছিলাম- সাংসদদের মর্যাদার স্পর্শে তারা গনতন্ত্র কন্যায় পরিনত হবে! কিন্তু হায়, এ কথা বলা ব্যাঙেরা গনতন্ত্রের জন্য নয় বরং ব্যাঙের ঘ্যাঙর-ঘ্যাঙ ডাকার জন্যই সাংসদের মর্যাদা পান!
ব্যাঙ দেখতে কুৎসিত। ব্যাঙের মুখ অনেক বড়। আর ডাকার সময় তা আরো প্রসারিত হয়। ব্যাঙকে তখন আরো কুৎসিত লাগে।
তেমনি আমাদের গনতান্ত্রিক ব্যাঙেদের মুখও অনেক বড়!!! তারা যখন কথা বলে, প্রসারিত হয় তাদের প্রতিহিংসা, হীনমন্যতা। তখন তাদের অনেক বেশী কুৎসিত লাগে, কদাকার মনে হয়!

১১ জুন বিরোধী জোটের গণসমাবেশে আমরা এমনই এক কুৎসিত, কদাকার ব্যাঙের ঘ্যাঙর-ঘ্যাঙ শুনলাম- বিএনপির সংরক্ষিত আসনের সাংসদ অ্যাডভোকেট আশিফা আশরাফি পাপিয়া গণসমাবেশে দেওয়া বক্তব্যে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে আপত্তিকরভাবে ব্যাক্তি আক্রমণ করেছেন-

সাহারা খাতুনকে নিয়ে তিনি বলেছেন,“কুৎসিত, কিম্ভূতকিমাকার সাহারা খাতুন ও গোপালগঞ্জবাহিনী আজ দেশের আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীকে বিপর্যস্ত করছে।”

বিএনপিতে বাটি চালান নিয়ে আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল যে মন্তব্য করেছেন তার জবাবে পাপিয়া বলেছেন, “বাটি ও লাঠি উল্টা চালান দিয়ে আপনার (কামরুলের) মাথার টাক কিভাবে ফাটাতে হয় বিএনপি তা জানে।”

একজন  অ্যাডভোকেট, একজন সাংসদের এ কি ভাষা!!??
সরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইনপ্রতিমন্ত্রী কথায় বেপরোয়া, কাজে ব্যর্থ ঠিক আছে.....তাদের কাজের সমালোচনা হবে, পদত্যাগও চাওয়া যেতে পারে। কিন্তু স্রষ্টা প্রদত্ত চেহারা নিয়ে এমন নির্লজ্জ ব্যাক্তি আক্রোমন কেন?

আমি ভাবছিলাম, বাজারে মুখের দুর্গন্ধ দুর করতে মাউথ ফ্রেসনার পাওয়া যায়! রং ফর্শা করতে পাওয়া যায় ফেয়ারনেস ক্রীম! টাকও টাকার গুনে ঢেকে ফেলা যায়!
হয়তো সাহারা খাতুন ফেয়ারনেস ক্রীম মেখে ফর্সা হতে পারেন, কামরুল ইসলামও টাকায় টাক ঢেকে ফেলতে পারেন কিন্তু আশিফা আশরাফি পাপিয়া সহ আমাদের অধিকাংশ নেতা নেত্রীরা যে ভাষায় কথা বলেন, এতে তাদের মুখ থেকে যে অশালিন দুর্গন্ধ বেরোয় তা কোনো মাউথ ফ্রেশার দিয়েই দুর করা যাবে না!

কিছু দিন আগেই সংসদে অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যারের মতো সজ্জন সাদামনের মানুষকে নির্লজ্জভাবে অপমানসূচক ভাষায় আক্রোমন করা হলো! লজ্জাজনক এ ঘটনার পর সে বক্তব্য এক্সপাঞ্চ করা ছিলো একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। সংসদে দেয়া অশালিন বক্তব্য হয়তো স্পিকার এক্সপাঞ্চ করতে পারেন!! কিন্তু আশিফা আশরাফি পাপিয়া গনসমাবেশে যে ভাষায় প্রতিপক্ষকে আক্রমন করলেন, এ বক্তব্য কে এক্সপাঞ্চ করবে?
 প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন বেহায়াপূর্ণ ভাবে বিরোধীদলীয় নেত্রীকে বলেন-  তত্তাবধায়ক সরকার কি তাকে পাজকোলে তুলে ক্ষমতায় বসাবে!!! এ বক্তব্য কে এক্সপাঞ্চ করবে?
বিরোধীদলীয় সাংসদ শাম্মি আখতার যখন নির্লজ্জভাবে বলেন- শেখ হাসিনা এরশাদের কোলে বসে লং ডাইভে গিয়েছিলো! এ বক্তব্য কে এক্সপাঞ্চ করবে?

এসব বক্তব্য কখনো এক্সপাঞ্চ হবে না। এ সকল বক্তব্যই আমাদের শুনতে হবে...একপক্ষ বক্তব্য গুলো উপভোগ করবে, অন্যপক্ষ ছি..ছি করবে! আমরাও এ ভাষাতেই চায়ের কাপে ঝড় তুলবো, এ ভাবেই প্রতিপক্ষকে আক্রমন করবো! আমাদের বাচ্চারা শিখবে পাজকোলে তোলা, কোলে বসিয়ে লং ড্রাইভে যাওয়া! তারাই হয়তো বন্ধুর বাবাকে টেকো আর বান্ধবির মাকে কুৎসিত বলতে শিখবে...!!!

এমন যাতনা আমাদের রাজনীতিবিদদের স্পর্শ করে কিনা জানিনা, তবে বোধসম্পন্ন সকল মানুষকেই তা কষ্ট দেয়। সে মানুষগুলো এসব বক্তব্যের এক্সপাঞ্চ চায় না! তারা চায়- এমন অশালীন বাক, এখনই থামিয়া যাক!!! তারা চায়- এ কথা বলা ব্যাঙেরা সাংসদের মর্যাদার স্পর্শে গনতন্ত্রমনা হয় উঠুক!
এমন রাজনৈতিক রুপকথাই হয়ে উঠুক আমাদের রাজনৈতিক বাস্তবতা!!!

বাস্তব বিষয়ে কল্পিত কথোপকথোন!!!

আমি অর্থনীতি খুব কম বুঝি, বাজেট আরো কম। অর্থনীতি নিয়ে কোন গভীর আলোচনা করিতে আমি সক্ষম নই তাই বাজেট আলোচনার জন্য অর্থমন্ত্রীকে ফোন করিলাম-
কহিলাম- মাননীয় মন্ত্রী, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা খাতে প্রতি বছরে বরাদ্ধ কমিতেছে! ২০০৮-০৯ সালে বরাদ্দ ছিলো ১০.৫%, ২০০৯-১০ এর ১০.৬%, ২০১০-১১ তে ৯.৫, ২০১১-১২ তে ৭.৬% এবং ২০১২-১৩ তে ৮%! কেন?

মন্ত্রী কহিলেন- তোরা হইলি চাষাভুষার জাত, শিক্ষা থাকিবে ধনীদের পকেটে! তোদের শিক্ষার দরকার কি?

আমি কহিলাম- কিন্তু মাননীয় মন্ত্রী, কৃষিখাতেও তো এবার ভর্তুকী কমানো হইয়াছে! কৃষিখাতে এবার বরাদ্দ দেওয়া হইয়াছে ৮ হাজার ৯১৭ কোটি টাকা যাহা মোট বাজেটের ৪ দশমিক ৬৫ শতাংশ। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে এই হার ছিল ৭ দশমিক ৮১ শতাংশ, ২০০৯-১০ সালে ছিল ৭ দশমিক ২৪ শতাংশ, ২০১০-১১ সালে ৬ দশমিক ৫৮ শতাংশ, ২০১১-১২ এর সংশোধিত বাজেটে ৫দশমিক ৭৪ শতাংশ। তাহা হইলে এ চাষারা কি চাষবাসও করিবে না?

মন্ত্রী কহিলেন- ওরে অবুঝ, সারা জীবন কি চাষবাসই করিবি, এবার অন্যকিছু কর!

আমি কহিলাম- কি করিব
মাননীয় মন্ত্রী?

মন্ত্রী কহিলেন- অসৎ পন্থায় কালো বিড়াল হইয়া, ইদুর ধর!!

হতাশ কন্ঠে কহিলাম- কিন্তু কালো বিড়ালেরাই যে ধরা পড়িয়া মন্ত্রীত্বের দফতর হারাইতেছে......

মন্ত্রী হাসিয়া কহিলেন- এটা হইলো সুরন্জিতের ভাগ্যের মিস টাইমিং!!!

আমি বিষ্ময় লইয়া কহিলাম- কিরুপ???

মন্ত্রী কহিলেন- সে ঘটনা যদি আর কিছুদিন পর (বাজেটের পর) হইতো, তাহা হইলে সুরন্জিত বাবু ৭০ লক্ষ কালো টাকা ১০% হারে কর দিয়া সাদা করিয়া ফেলিতে পারিত! কালো বিড়াল বাবু ৬৩ লক্ষ টাকাও পাইতো, মন্ত্রীতের দফতরও যাইতো না!!!
তোরতো এমন কোনো মিস টাইমিং ঘটে নাই, তাই সময় থাকিতেই কালো টাকা সাদা করিয়া ফেল!

আমি মাথা নিচু করিয়া কহিলাম- কালো টাকা কোথায় পাইবো? আমার তো কালো, সাদা, লাল, নীল, বৈধ, অবৈধ, কাঁচা, পাকা কোন টাকাই নাই। আমি তো কদর্পশুন্য!!

মন্ত্রী চমকাইয়া কহিলেন- কি?? তুই কদর্পশুন্য....তাহার পরেও আমাকে ফোন করিয়াছিস! তুই কি জানিস না, বাজেটে ফোনে কথা বলার ওপরও ভ্যাট বসাইয়াছি?..............রাবিস, টোটালি রাবিস!!! বলিয়া মন্ত্রী ফোনটা রাখিয়া দিলেন.......

সোমবার, ৪ জুন, ২০১২

জাতহীনের জাত আর ছোটলোকের টানিয়া লওয়া স্বভাব!!!

লালন শাহ কে নিয়ে করা মনের মানুষ ছবি দেখে বুঝেছিলাম- নানা চড়াই উৎরাইয়ের সাধক জীবনে লালন তার মনের মানুষের সন্ধান পাননি। তাই তো তিনি গেয়েছেন-
মিলন হবে কত দিনে, আমার মনের মানুষেরও সনে..
আমি ভাবছিলাম- কোন ব্যাক্তির মতো, দেশেরও কি মন আছে? দেশকে আমরা বলি দেশমাতৃকা। অর্থ্যাৎ দেশ তো মা। তাই দেশমাতারও মন আছে নিশ্চয়ই! আছে মনের মানুষ! আচ্ছা, স্বাধীনতার ৪১ বছরে বাংলাদেশ কি সন্ধান পেয়েছে তার মনের মানুষের? অবশ্য এ প্রশ্নের উত্তরে রাজনৈতিক ও ব্যাক্তি কেন্দ্রিক ঝগড়ার সূত্রপাত হতে পারে! তাই বাংলাদেশ মনের মানুষের সন্ধান পেয়েছে কিনা তা প্রশ্নবিদ্ধ! তবে আলোকিত মানুষের সন্ধান যে পেয়েছে তা প্রশ্নাতীত।
সন্ধান পাওয়া সেই আলোকিত মানুষ, যিনি আলোকিত মানুষ গড়ারও কারিগর। তিনি অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। যিনি আগুনের পরশমনি নিজে ছুঁয়েছেন এবং বই পড়া আন্দোলনের মাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছেন সারা দেশে।
অথচ কি আশ্চর্যজনক ভাবে, তার একটি মন্তব্যকে কেন্দ্র করে জাতীয় সংসদে অপমানসূচক ভাষায় তার মতো সজ্জন সাদামনের মানুষের গায়ে অশালীন আক্রমনে কালিমা লেপন করা হলো!!! লোডশেডিং এর দেশে এ আলোকিত মানুষকে আঁধারে ঢেকে ফেলা হলো!!!
শনিবার (৩রা জুন) টিআইবির আলোচনা সভায় বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ ‘সাংসদ ও মন্ত্রীরা চোর-ডাকাতের মতো আচরণ করেন এবং শপথ ভঙ্গ করেন’- এই বক্তব্য দেন বলে দৈনিক ইনকিলাবে প্রকাশিত হয়। ওই বক্তব্য ধরে পয়েন্ট অফ অর্ডারে দাঁড়িয়ে সংসদে অনির্ধারিত আলোচনার সূত্রপাত করেন স্বতন্ত্র সাংসদ ফজলুল আজিম। এরপর মুজিবুল হক চুন্নু ও শেখ সেলিম এ বিষয়ে বক্তব্য রাখেন।
তাদের বক্তব্যের সারকথা ছিলো- আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের বক্তব্য অযাচিত, দুঃখজনক, দায়িত্বহীন। এটা গণতন্ত্র ও সংসদের ওপর আঘাত। সংসদের মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। বুদ্ধিজীবীরা অনেক উপদেশ দিতে পারেন। বিপদে তাদের টিকিটিও খুঁজে পাওয়া যায় না। উনারা কী করেন, এত টাকা কোথা থেকে খরচ করেন? এদের টাকার উৎস কোথায়? প্রতি সপ্তাহে একটা-দুইটা সেমিনার করেন, এত দামি গাড়িতে কী করে চড়ে!!!
স্পিকারের দায়িত্ব পালনকারী আলী আশরাফ সাংসদদের বক্তব্যকে যথার্থ বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন- সংসদকে অবমাননার মাধ্যমে দেশের জনগণ ও সংবিধানকে অবমাননা করা হয়েছে। এতে সাংসদদের বিশেষ অধিকার ক্ষুণ্ণ হয়েছে। সে জন্য তাঁকে (আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ) বিশেষ অধিকার কমিটির মাধ্যমে নোটিশ করে আমরা এ সংসদে তলব করতে পারি। কমিটি সিদ্ধান্ত নেবে। একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে। তাঁকে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে।
তথ্যসুত্র১ এবং তথ্যসুত্র২
আমি ভাবছিলাম- চোর ডাকাতদের মত বলায় সংসদকে অবমাননা করা হল, সংবিধানকে অবমাননা করা হল আবার সাংসদদের বিশেষ অধিকারও ক্ষুণ্ণ হল সর্বোপরি সাংসদদের জাত চলে গেল! লালন কি এমন পরিস্থিতিতেই গেয়েছিলেন-
জাত গেলো, জাত গেলো বলে
এ কি আজব কারখানা…
গোপনে যে বেশ্যার ভাত খায়
তাতে ধর্মের কি ক্ষতি হয়!
লালন বলে, জাত কারে কয়?
সতিৎ, জাত কারে কয়? চোর ডাকাতের মতো বলায় জাত যায়! কিন্তু যারা দিনে দুপুরে পুকুর চুরি আর রাতে নদী-সমুদ্র ডাকাতি করে, তাতে জাত যায় না? কিছু দিন আগেই সংসদে শাম্মি আখতার-আশফিয়া পাপড়ি, নারী সাংসদদের কোলে বসিয়ে- পাজকোলে তুলে দিলেন তাতে জাত যায় না? সংসদেই যখন সাংসদেরা মারতে তেড়ে যান, বাপ তুলে কথা বলেন তখন জাত যায় না? কিন্তু গনমানুষের মনের কথা শুনলে তাদের জাত যায়!!!
তবে এ ন্যক্কারজনক ঘটনার আরো বড় বিষ্ময় লুকিয়ে ছিলো! যা কিনা সাংসদদের মর্যাদা কিম্বা জাত রক্ষা করার জন্য যথেষ্ট। কারন আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যার সেদিন সাংসদদের অধিকার ক্ষুণ্ন তো দূরের কথা, সেদিনের বক্তব্যে তিনি সাংসদ শব্দটি উচ্চারণই করেননি। তাঁর ওই বক্তব্যের রেকর্ড থেকে জানা যায় তিনি বলেছিলেন-
‘চোর যে চুরি করে, ডাকাত যে ডাকাতি করে, সেটি কি দুর্নীতি? আমার ধারণা, এটা দুর্নীতি নয়। কারণ, দুর্নীতি শব্দের মধ্যে আরেকটি শব্দ লুকিয়ে আছে। শব্দটি হলো ‘নীতি’। চোর বা ডাকাতের কাজ ঠিক দুর্নীতি নয়। কারণ, তাদের কোনো নীতিই নেই। সুতরাং, দুর্নীতি সেই মানুষটি করে, যার নীতি আছে। একটা উদাহরণ দিই। যেমন—যদি একজন মন্ত্রী এই বলে শপথ নেন যে তিনি শত্রু-মিত্র ভেদাভেদ না করে সবার প্রতি সমান বিচার করবেন, কিন্তু পরে তিনি সেটি না করেন, সেটা হবে দুর্নীতি।’
তথ্যসুত্র
আমি ভাবছিলাম, এখন কি বলবেন, ইনকিলাব পত্রিকাওয়ালারা? কি বলবেন, আমাদের বিশেষ অধিকারওয়ালা সাংসদেরা? যারা কোনরূপ যাচাই বাছাই না করেই, একজন আলোকিত মানুষকে অপদস্থ করে ক্ষমা চাইতে বলেছিলেন। এখন তারা কি স্যারের কাছে ক্ষমা চাইবেন? আমার মনে হয়না তারা ক্ষমা চাইবেন!!! কারন সায়ীদ স্যারের ব্যর্থতা সম্ভবত এটাই যে, যে আলো তিনি সারা দেশে ছড়িয়ে দিয়েছেন, সে আলো আমাদের রাজনীতিবিদদের কাছে পৌঁছেনি, সম্ভবত কখনো পৌঁছাবে না!
সায়ীদ স্যারের ঘটনায় এক বুক কষ্ট নিয়ে শুনছিলাম- লালন শাহ্’র গান! ভাবছিলাম আধ্যাত্মবাদ সম্পর্কে! বাড়ীর পাশে আরশি নগর সম্পর্কে! স্রষ্টা তো মানবের মাঝে বিরাজ করেন।
আমার মাঝে আমি অনুভব করছিলাম এক স্রষ্টার উপস্থিতি!
আমি তাকে বললাম- প্রভু, মানির মান তো তুমিই রাখো। তাহলে সায়ীদ স্যারের মতো মানুষকে অপদস্থ করলে কেন?
প্রভু বললেন- সে তো সাংসদ ও মন্ত্রীদের চোর-ডাকাত বলেছে। সে কি জানে না, কানাকে কানা বলিতে নাই, ন্যাংড়াকে ন্যাংড়া বলিতে নাই তেমনি চোর-ডাকাতদেরও চোর-ডাকাত বলিতে নাই।
- কিন্তু তিনি তো তা বলেন নাই। আমি বিষ্ময় নিয়ে প্রতিবাদ করলাম
প্রভু বললেন- ছোট লোকের স্বভাব কি জানো?
-কি? আমি প্রশ্ন করলাম
-তারা যে কোন কথাকেই নিজের দিকে টানিয়া লয়। প্রভু জবাব দিলেন।

শনিবার, ২ জুন, ২০১২

একটি ব্লগীয় জিডি!!!

আমি আসাদুজজেমান। একজন সামান্য ব্লগার।
দেশের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে ব্লগে লিখে থাকি।
গতকাল ০২.০৬.১২ ইং রোজ-শনিবার , বিভিন্ন নিউজ সাইটে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি মন্তব্য আমার বেদনার্ত মনযোগ আকর্ষন করেছে! শনিবার গণভবনে আওয়ামী লীগের কুড়িগ্রামের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন–
“মিডিয়া এখন স্বাধীন। প্রতিদিন সরকারের বিরুদ্ধে না লিখলে অনেকের পেটের ভাত হজম হয় না।” সরকার ভালোভাবেই দেশ পরিচালনা করছে। কিন্তু তা অনেকের ‘সহ্য’ হচ্ছে না।
তথ্যসুত্র১ এবং তথ্যসুত্র২
প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্য আমার লেখকসত্তাকে আহত করেছে। এ বক্তব্য, সাগর-রুনি হত্যাকান্ড, রাজপথের বেহাল দশা, শেয়ার বাজারে বিনিয়োগকারীদের পথে বসা, পুলিশি তান্ডব সহ বিভিন্ন অপকর্ম সম্পর্কে যৌক্তিক সমালোচনাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। বিবেকের তাড়নায় লেখা বিভিন্ন লেখার লেখককে হা হুতাশকারী বলে লেখকসত্তাকে ছোট করেছে।
আমি মনে করি, সরকারের বিভিন্ন কর্মকান্ডের ব্যর্থতার বিপরীতে কিছু লিখলে তা হয়তো সরকারের বিরুদ্ধে যেতে পারে কিন্তু তা কখনোই হা হুতাস হতে পারে না।
ব্যর্থতার সমালোচনা হজম না হওয়া পেট থেকে আসে না বরং বিবেক থেকে আসে। যে বিবেক প্রতিনিয়ত বলে-
সাগর-রুনির হত্যাকান্ডের নিন্দা, হা হুতাস নয় বরং হৃদয়ের রক্তক্ষরন।
শেয়ার বাজারে পুজি হারানো ক্ষোভ, সরকারের বিরুদ্ধাচারন নয় বরং বিনিয়োগকারীদের অস্তিত্বের লড়াই।
আদালতপাড়ায় তরুনির শ্লীলতাহানির নিন্দা, পেটের ভাত হজম নয় বরং নির্লজ্জতার বদহজম।
সাংবাদিক ও সাধারন নাগরিকদের ওপর পুলিশের দানবিয় আচরন, দেশ ভালো ভাবে চলার লক্ষন নয়! এমন ঘটনার প্রেক্ষিতে বিরুদ্ধে না লিখে সরকারের প্রশংসা করা শুধু গৃহপালিতদের পক্ষেই সম্ভব।
একজন লেখক হিসাবে গৃহপালিত না হওয়ায় এবং বিবেকের তাড়নায় বিভিন্ন অপকর্মের সমালোচনা করায়, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর আমি শংকিত! এবং আমার লেখক সত্তা প্রশ্নবিদ্ধ!
আমি রাষ্ট্রের কাছে আমার এবং আমার অতিত ও বর্তমানের সকল লেখার নিরাপত্তা দাবী করছি। যে লেখাগুলো আমার হা হুতাস ছিলো না। ভাত হজম করার হজমীও ছিলো না। যে লেখাগুলো ছিলো আমার বিবেকের দংশন ও তাড়নার।
-আসাদুজজেমান
ব্লগার
তাং-০৩/০৬/২০১২ইং

বৃহস্পতিবার, ৩১ মে, ২০১২

নগর নিভলেই নিশ্চিত হবে দেবালয়ের নিরাপত্তা!!!

দেশের আইনশৃংখলা সাম্প্রতিক সময়ে ভয়াবহ আকার ধারন করেছে। সন্ত্রাসীদের ছিনতাই, অপহরণ, গুম, হত্যার পাশাপাশি মরার ওপর খাঁড়ার ঘা হিসাবে দেখা দিয়েছে পুলিশি নির্যাতন!
যদিও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বেশ আত্মবিশ্বাসের সাথেই বলছেন-
দেশের আইনশৃংখলা অতীতের যে কোন সময়ের তুলনায় ভালো এবং পুলিশ আগের চেয়ে অনেক ভালো হয়েছে!
কিন্তু সাধারন মানুষ মাত্রই টের পাচ্ছে- অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে সমাজ এখন অনেক বেশী শৃঙ্খলাহীন, নিরাপত্তাহীন।এ বিষয়ে আমরা চোখ বুলাতে পারি গত ক’দিনের পত্রিকার প্রথম পাতার শিরোনামে-
৩১শে মে- পুলিশের বাড়াবাড়িতে বিপর্যস্থ আইনশৃংখলা পরিস্থিতি।-যুগান্তর
ব্যবসায়ীকে খুনির হাতে তুলে দিলো পুলিশ-প্রথম আলো
৩০শে মে- আদালত চত্বরে পুলিশি নিষ্ঠুরতা, মেয়ের শ্লীলতাহানি মা বাবা লাঠিপেটা।-প্রথম আলো
আকস্মিক সাংবাদিক পেটাও অভিযান ॥ কেন? -দৈনিক জনকন্ঠ
২৯শে মে- বিডি নিউজের সাংবাদিকদের ওপর সন্ত্রাসী হামলা।-প্রথম আলো
২৭শে মে- তিন সাংবাদিককে রাস্তায় ফেলে পেটালো পুলিশ-দৈনিক ইত্তেফাক
লক্ষ্যনীয়, অতীতের যে কোন সময়ের তুলনায় আশঙ্কাজনকভাবেই পুলিশ পেশাগত নিয়ন্ত্রন হারিয়েছে এবং সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনাও বেড়েছে। সাগর-রুনি খুন হলো বেডরুমে! প্রথম আলোর সাংবাদিক নির্যাতন হলো রাজপথে! বিডি নিউজের সাংবাদিকেরা আক্রান্ত হলো তাদের অফিসে! সাংবাদিকেরা মার খেল আদালত পাড়ায়! অর্থ্যাৎ, বেডরুম-রাজপথ-অফিস-আদালত পাড়া সব জায়গায় সাংবাদিকেরা নির্যাতিত হচ্ছে! এখন প্রশ্ন আসতে পারে- হঠাৎ সাংবাদিক নির্যাতনের এ মহোৎসব কেন?
উত্তর- নগর পুড়িলে দেবালয় কি এড়ায়! সাংবাদিকেরাই কি শুধু নিরাপত্তাহীন? নির্যাতিত কি শুধুই সাংবাদিকেরাই?
না….সমান্তরালে নির্যাতিত হচ্ছে, আদালত পাড়ায় বিচার প্রার্থী তরুনী! নির্যাতিত হচ্ছে বেতন-ভাতার দাবীতে হাড্ডিসার প্রাইমারি শিক্ষক! নির্যাতিত হচ্ছে কলেজগামী ছাত্র, বুড়ো রিক্সাওয়ালা, তরুণী গার্মেন্টসকর্মী, অফিস ফেরত কর্মচারী, আদালত চত্তরে আইনজীবি, বিরোধী রাজনৈতিক সমর্থক!
নির্যাতিত হচ্ছে নোবেল জয়ী ব্যাক্তি ও প্রতিষ্ঠান!
নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে পরিবার থেকে সমাজ, সমাজ থেকে রাষ্ট্র! সাংবাদিকেরা তো এ সমাজেরই অংশ। তাই সাংবাদিক নির্যাতন শুধু সাংবাদিক নির্যাতন নয় বরং সামাজিক নিরাপত্তাহীনতার একটি রুপ। এ দেবালয়ের আগুন শুধু পাপিষ্ঠের কাজ নয় বরং জ্বলতে থাকা পুরো নগরের একটি স্ফুলিঙ্গ। এখন আগুন নেভানো এবং দেবালয়কে সুরক্ষিত করাই সংগত। কিন্তু এ সুরক্ষা নিশ্চিত হবে নগরের আগুন নিভলেই।
আমি জানি, অসি আর মসির লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত মসিই জিতবে। বন্ধ হবে সাংবাদিক নির্যাতন। তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালনও হবে নিরাপদ। আর এ নিরাপত্তা সুরক্ষিত করতে প্রয়োজন, সামাজিক নিরাপত্তা।
তাই সাংবাদিকদের লড়তে হবে নিজেদের নিরাপত্তার জন্য, সমাজের নিরাপত্তার জন্য। সাংবাদিকদের নিরাপত্তা তাদের(সাংবাদিকদের) প্রয়োজন। আর সমাজের নিরাপত্তা তাদের দায়, তাদের নিরাপত্তার রক্ষাকবজ।