মঙ্গলবার, ১২ জুন, ২০১২

অশালীন বাক, এখনই থামিয়া যাক!!!

রুপকথার সেই কথা বলা ব্যাঙ এর কথা আমরা জানি, যাকে কিস করলে সে রাজকন্যা হয়ে যাবে।  মানুষ কিম্বা রুপক মানবিকতার স্পর্শে যে ব্যাঙ রাজকন্যায় পরিনত হয়!
আমি ভাবছিলাম, আমাদের রাজনৈতিক রুপকথাতেও রয়েছে কিছু কথা বলা ব্যাঙ! কিন্তু কিসের স্পর্শে তারা গনতন্ত্র কন্যায় পরিনত হবেন তা আমরা জানি না!
আমরা ভেবেছিলাম- সাংসদদের মর্যাদার স্পর্শে তারা গনতন্ত্র কন্যায় পরিনত হবে! কিন্তু হায়, এ কথা বলা ব্যাঙেরা গনতন্ত্রের জন্য নয় বরং ব্যাঙের ঘ্যাঙর-ঘ্যাঙ ডাকার জন্যই সাংসদের মর্যাদা পান!
ব্যাঙ দেখতে কুৎসিত। ব্যাঙের মুখ অনেক বড়। আর ডাকার সময় তা আরো প্রসারিত হয়। ব্যাঙকে তখন আরো কুৎসিত লাগে।
তেমনি আমাদের গনতান্ত্রিক ব্যাঙেদের মুখও অনেক বড়!!! তারা যখন কথা বলে, প্রসারিত হয় তাদের প্রতিহিংসা, হীনমন্যতা। তখন তাদের অনেক বেশী কুৎসিত লাগে, কদাকার মনে হয়!

১১ জুন বিরোধী জোটের গণসমাবেশে আমরা এমনই এক কুৎসিত, কদাকার ব্যাঙের ঘ্যাঙর-ঘ্যাঙ শুনলাম- বিএনপির সংরক্ষিত আসনের সাংসদ অ্যাডভোকেট আশিফা আশরাফি পাপিয়া গণসমাবেশে দেওয়া বক্তব্যে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে আপত্তিকরভাবে ব্যাক্তি আক্রমণ করেছেন-

সাহারা খাতুনকে নিয়ে তিনি বলেছেন,“কুৎসিত, কিম্ভূতকিমাকার সাহারা খাতুন ও গোপালগঞ্জবাহিনী আজ দেশের আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীকে বিপর্যস্ত করছে।”

বিএনপিতে বাটি চালান নিয়ে আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল যে মন্তব্য করেছেন তার জবাবে পাপিয়া বলেছেন, “বাটি ও লাঠি উল্টা চালান দিয়ে আপনার (কামরুলের) মাথার টাক কিভাবে ফাটাতে হয় বিএনপি তা জানে।”

একজন  অ্যাডভোকেট, একজন সাংসদের এ কি ভাষা!!??
সরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইনপ্রতিমন্ত্রী কথায় বেপরোয়া, কাজে ব্যর্থ ঠিক আছে.....তাদের কাজের সমালোচনা হবে, পদত্যাগও চাওয়া যেতে পারে। কিন্তু স্রষ্টা প্রদত্ত চেহারা নিয়ে এমন নির্লজ্জ ব্যাক্তি আক্রোমন কেন?

আমি ভাবছিলাম, বাজারে মুখের দুর্গন্ধ দুর করতে মাউথ ফ্রেসনার পাওয়া যায়! রং ফর্শা করতে পাওয়া যায় ফেয়ারনেস ক্রীম! টাকও টাকার গুনে ঢেকে ফেলা যায়!
হয়তো সাহারা খাতুন ফেয়ারনেস ক্রীম মেখে ফর্সা হতে পারেন, কামরুল ইসলামও টাকায় টাক ঢেকে ফেলতে পারেন কিন্তু আশিফা আশরাফি পাপিয়া সহ আমাদের অধিকাংশ নেতা নেত্রীরা যে ভাষায় কথা বলেন, এতে তাদের মুখ থেকে যে অশালিন দুর্গন্ধ বেরোয় তা কোনো মাউথ ফ্রেশার দিয়েই দুর করা যাবে না!

কিছু দিন আগেই সংসদে অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যারের মতো সজ্জন সাদামনের মানুষকে নির্লজ্জভাবে অপমানসূচক ভাষায় আক্রোমন করা হলো! লজ্জাজনক এ ঘটনার পর সে বক্তব্য এক্সপাঞ্চ করা ছিলো একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। সংসদে দেয়া অশালিন বক্তব্য হয়তো স্পিকার এক্সপাঞ্চ করতে পারেন!! কিন্তু আশিফা আশরাফি পাপিয়া গনসমাবেশে যে ভাষায় প্রতিপক্ষকে আক্রমন করলেন, এ বক্তব্য কে এক্সপাঞ্চ করবে?
 প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন বেহায়াপূর্ণ ভাবে বিরোধীদলীয় নেত্রীকে বলেন-  তত্তাবধায়ক সরকার কি তাকে পাজকোলে তুলে ক্ষমতায় বসাবে!!! এ বক্তব্য কে এক্সপাঞ্চ করবে?
বিরোধীদলীয় সাংসদ শাম্মি আখতার যখন নির্লজ্জভাবে বলেন- শেখ হাসিনা এরশাদের কোলে বসে লং ডাইভে গিয়েছিলো! এ বক্তব্য কে এক্সপাঞ্চ করবে?

এসব বক্তব্য কখনো এক্সপাঞ্চ হবে না। এ সকল বক্তব্যই আমাদের শুনতে হবে...একপক্ষ বক্তব্য গুলো উপভোগ করবে, অন্যপক্ষ ছি..ছি করবে! আমরাও এ ভাষাতেই চায়ের কাপে ঝড় তুলবো, এ ভাবেই প্রতিপক্ষকে আক্রমন করবো! আমাদের বাচ্চারা শিখবে পাজকোলে তোলা, কোলে বসিয়ে লং ড্রাইভে যাওয়া! তারাই হয়তো বন্ধুর বাবাকে টেকো আর বান্ধবির মাকে কুৎসিত বলতে শিখবে...!!!

এমন যাতনা আমাদের রাজনীতিবিদদের স্পর্শ করে কিনা জানিনা, তবে বোধসম্পন্ন সকল মানুষকেই তা কষ্ট দেয়। সে মানুষগুলো এসব বক্তব্যের এক্সপাঞ্চ চায় না! তারা চায়- এমন অশালীন বাক, এখনই থামিয়া যাক!!! তারা চায়- এ কথা বলা ব্যাঙেরা সাংসদের মর্যাদার স্পর্শে গনতন্ত্রমনা হয় উঠুক!
এমন রাজনৈতিক রুপকথাই হয়ে উঠুক আমাদের রাজনৈতিক বাস্তবতা!!!

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন