দুই নেত্রীর ফোনালাপ ফাঁস হওয়াটা প্রয়োজনীয় ছিলো!
এ কথা ঠিক যে, এ
ফোনালাপ নিয়ে দেশবাসীর আগ্রহ আকাশ ছুয়েছিলো। তবে তাদের কথপকথন জানার জন্য
নয় বরং এ ফোনালাপটা ফাঁস হওয়া প্রয়োজনীয় ছিলো-
খালেদা জিয়ার আপোষহীনতা এবং রাজনৈতিক প্রজ্ঞা জানতে, এবং শেখ হাসিনার রাজনৈতিক হীনমন্যতা বুঝতে...
প্রধানমন্ত্রী
সংলাপের জন্য ফোন দিলেও, খালেদা জিয়া কেন হরতালের জন্যে সে প্রস্তাব গ্রহন
করলেন না? হরতাল প্রত্যাহারের আহবান করার পরও কেন হরতাল প্রত্যাহার করলেন
না?
সাদা চোখে, তাৎক্ষনিকভাবে দুদিন আগেও এ প্রশ্নগুলোই আলোচিত হচ্ছিল এবং খালেদা জিয়া বিভিন্ন মহল থেকে সমালোচিত হচ্ছিল।
কিন্তু
রাজনৈতিক হীন উদ্দেশ্যে দুই নেত্রীর ফোনালাপ মিডিয়া ফাঁস হওয়া প্রমান
করেছে- ফোলকল, সংলাপ এসব আন্তরিক সদিচ্ছা নয় বরং রাজনৈতিক ফাঁদ। সাদা চোখে
খালেদা জিয়ার যত সমালোচনাই হোক, অন্তত সময় প্রমান করেছে তার রাজনৈতিক
প্রজ্ঞা। তিনি দুষ্ট লোকের মিষ্টি কথায় ভোলেন নি, ফোনকল নাটকে আন্দোলন বন্ধ
করে আবেগী ফাঁদে পা দেন নি।
অপরদিকে শেখ হাসিনা, যিনি
মুখোমুখি রাজনৈতিক অবস্থানের সময়ে বিরোধী নেত্রীকে ফোন করে এবং সংলাপের
প্রস্তাব দিয়ে সবার সপ্রসংশ মনঃযোগ আকর্ষন করলেও কোন নোটিস বিহীনভাবে তা
রেকর্ড করা এবং রাজনৈতিক হীন উদ্দেশ্যে শিষ্টাচার বহিঃভূত ভাবে তা মিডিয়া
প্রচার হওয়া তার রাজনৈতিক হীনমন্যতাই প্রকাশ করেছে!
এখন প্রশ্ন আসতে পারে- সরকারই যে এ ফোনালাপ ফাঁস করেছে, এর সত্যতা কি?
এ
কথা ঠিক যে এমন ঘটনার দায় কেউ স্বীকার না করলে নিশ্চিতভাবে দোষ দেয়াটা
কঠিন। তবে প্রেমিক-প্রেমিকার অন্তরঙ্গ ভিডিও ফাঁসের পর সে ভিডিওতে যদি
একজনেই চেহারাই দেখা যায় আর অপর সঙ্গীর চেহারা না বোঝা যায়! তখন কি আর
বুঝতে বাকি থাকে?
ফাঁস হওয়া ফোনালাপে শেখ হাসিনার স্বভাব বিরুদ্ধ শান্ত থাকা কি প্রমান করে?
বিষয়টির সাথে সেই জোকসের সাদৃশ্য খোঁজা যেতে পারে, যেখানে চালককে সাবধানে গাড়ি চালাতে দেখে-
সার্জেন্ট : আপনার ড্রাইভিং লাইসেন্সটা দেখি ।
গাড়ি চালক : আমি তো খুব সাবধানে গাড়ি চালাচ্ছি । বেআইনি কোনও কিছু তো করিনি । গাড়ির স্পিড ও তো ঠিক আছে ।
সার্জেন্ট : সেই জন্যই তো আমার সন্দেহ হল ।
তবে
গাড়ি অতি সাবধানে চালানোর সন্দেহ আর সন্দেহ থাকে নি! লাইসেন্স দেখেই
প্রমান হয়ে গেছে! যেমন প্রমান হয়েছে ফোনালাপ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কথায়-
'জনগণ অল্প জানবে কেন, তাই পুরোটাই জানার ব্যবস্থা করা হয়েছে'।
এখন অনেক গনতন্ত্রমনা, আমাকে প্রশ্ন করতে পারেন- 'জনগনকে এ পুরো তথ্য জানানোয় আমি শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ দেবো কিনা?
উত্তর : না।
জনগনকে পুরো তথ্য জানানোয় যদি ধন্যবাদ দিতে হয়, তবে তো আমাকে ধন্যবাদ দিতে হবে রাজিবকেও!
অপূর্বর সাথে প্রভার পলায়ন এবং বিয়ের পর যখন রাজিব-প্রভা-অপূর্ব নিয়ে চলছিল ত্রিমুখি মিডিয়া গসিপ।
তখন রাজিবই জনগনের উষ্নতার স্বার্থে শরিরালাপ প্রকাশ করেছিলেন! এবং মিডিয়া গসিপের আংশিক নয় বরং জনগনকে পুরো তথ্যই জানিয়েছিলো!
অনেকে
হয়তো বলতে পারেন, এ তুলনাটা সঠিক হয় নি। রাজিব-প্রভার ব্যক্তি জীবনের সাথে
দুই নেত্রীর কথোপকথন তুলনা যোগ্য নয়। দুই নেত্রী জাতীয় বিষয় নিয়ে সংকট
উত্তোরনের জন্য কথা বলছিলেন। তাই এটা জাতীয় সম্পত্তি। জনগন এটা জানার
অধিকার রাখে...
উত্তর : এক.- হেরোইন ছবিতে একটা ডায়ালগ আছে-
'তারকাদের জীবনও পাবলিক প্রোপার্টি'। তবে কি জনগনের সম্পত্তি নাম দিয়ে সব
অন্যায় বৈধ হয়ে যাবে?
দুই.- ক'দিন আগে হাসিনা-এরশাদ মান ভাঙ্গানিয়া বৈঠকও নিশ্চই পাবলিক প্রোপার্টি! সেটা কি প্রকাশ করা হবে?
তিন.-
যে যুদ্ধাপরাধির বিচার দেশবাসীর আগ্রহ আর আশাবাদের কেন্দ্রবিন্দু। সে
বিচার সম্পর্কে জানার জন্য বিচারপতির স্কাইপি সংলাপও নিশ্চই পাবলিক
প্রোপার্টি! তবে তা জানানোর জন্য মাহমুদুর রহমান জেলে কেন?
চার.- দুই
নেত্রীর যদি পাবলিক প্রোপার্টিই হয় তবে ফোনালাপের শুরুতেই টিভিতে প্রচার
করা হলো না কেন? কেন কোন নোটিস না করে গোপনে রেকর্ড করা হলো?
আসলে এটা ছিলো একটা ফাঁদ। যেটা ফোনালাপ ফাঁস হওয়াতেই প্রমান হয়েছে। প্রমান হয়েছে-
যার সাথে ফোনে কথা বলা নিরাপদ না, তার মিষ্টি কথায় আন্দোলন থেকে সরে আসাও সঠিক হতো না।
এটাই যদি হয় তার বিশ্বাসযোগ্যতা, তবে তার অধিনে সংলাপও নিরাপদ না, নির্বাচন তো নয়ই....