বুধবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

কোরবানীর যে শিক্ষাটা বাংলাদেশ নিতে পারে!

এ দেশের অভিভাবক, স্বজন ও শুভাকাঙ্খিদের নতুন এক দুশ্চিন্তার কারন হয়ে দাড়িয়েছে তরুনদের সমাজ সচেতনতা! যুগের নবধারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলোতে তরুনদের মতামত প্রকাশে যে স্পষ্ট উচ্চারন, তা ভবিষৎ বাংলাদেশ নিয়ে আশাবাদের কারন....
তবে এ স্পষ্ট উচ্চারন করতে গিয়ে তরুনদের নিতে হচ্ছে ৫৭ ধারার চোখ রাঙ্গানি এবং বিভিন্নভাবে ও বিভিন্ন পর্যায়ে রাজনৈতিক হয়রানির ঝুঁকি! প্রিয়জনকে ঝুঁকির মুখে দেখে অভিভাবকদের উদ্বিগ্ন হওয়াটা সংগতই বটে।
এ জন্যই অভিভাবকেরা এখন সন্তানদের ফেসবুক, ব্লগে লিখতে নিষেধ করেন! বিশেষত রাজনীতি এড়িয়ে যেতে বলেন, সময়ের হাওয়া বুঝে নিজের ভবিষৎ গড়ার পরামর্শ দেন!(আমার অসংখ্য বন্ধুর ফেবু স্ট্যাটাস এবং কথা বলে জানা)
এখন প্রশ্ন হলো- তবে কি আর তরুনেরা লিখবে না? লিখলে কি নিয়ে লিখবে? ফুল-ফল-লতা-পাতা? তরুনেরা কি তাদের যৈবনিক ঝুঁকি এড়িয়ে যৌবনের তাড়নায় লিখবে, বনতলার বিদিশায় দিশা হারিয়ে দুদন্ড শান্তি পাবার গল্প!
তবে আমি আশাবাদি, বনলতা নিয়ে লিখতে গেলে তরুনেরা আগ্রহী হবে জীবনানন্দ দাশ সম্পর্কে, তারা জানবে জীবনানন্দ দাশের মা ছিলেন কুসুমকুমারী দাশ। যে মহীয়সি 'আদর্শ ছেলে' কবিতায় করেছেন অমর কতিপয় পংক্তি। বাংলার এমন কোন মা নেই যে তার সন্তানদের সে পংক্তি শোনায়নি এবং এমন কোন মা থাকবে না যে এ পংক্তি সন্তানদের শোনাবে না!
♫♪আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে
কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে♫♪
মায়ের মুখে এ পংক্তি শুনে শুনে বড় হওয়া তরুন প্রজন্ম শুধু জীবনানন্দ দাশের মায়ের বিষয়েই নয় বরং আগ্রহী হবে শহীদ জননী জাহানারা ইমাম সম্পর্কেও। মুক্তিযুদ্ধের কঠিনতম সময়ে, সময়ের দাবীতে যে মা তার সন্তানকে বলেছিলেন- "দিলাম তোকে দেশের জন্য কোরবানি করে। যা, তুই যুদ্ধে যা"
তরুনেরা হয়তো আক্ষেপ নিয়ে ভাববে- 'আমাদের দেশে হবে সেই প্রিয়জনেরা কবে?
তবে এটা আক্ষেপ করার সময় নয়! এটা দৃঢ় সংকল্প গ্রহনের সময়। যে সময়কে শানিত করবে কোরবানীর শিক্ষা।
এদেশের ৯০% মানুষ মুসলিম। ধর্মের প্রতি রয়েছে যাদের অগাধ টান। স্রষ্টার ইচ্ছা পুরনে পিতা ইব্রাহীম(আঃ) প্রিয়তম সন্তানকে কোরবানী করার সংকল্প এবং স্রষ্টার ইচ্ছা বাস্তবায়নে ইসমাইল(আঃ) আত্মউৎসর্গের সাহস যে কোরবানীর শিক্ষা, তার প্রতি রয়েছে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের অনুভব।
স্বাধীনতা এ দেশের সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন। যে স্বাধীনতা অর্জনের জন্য অসংখ্য পিতা-মাতা তার সন্তানকে কোরবানী করার যে উদাহরন, তার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের অনুভূতি।
তাই কোরবানী ঈদের এ সময়ে এ দেশের তরুনেরা, ঈমানের অঙ্গ দেশপ্রেমে, গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় আত্মউৎসর্গের সাহস পেতে পারে কোরবানীর শিক্ষায়।
এ দেশের পিতারা দেশপ্রেমের জন্য নিতে পারে প্রিয়তম সন্তানকে কোরবানী করার সংকল্প।
এ দেশের মায়েরা সন্তানের সংকল্পকে মেনে নিয়ে বলতে পারে- যা তোকে দেশের জন্য কোরবানী করে দিলাম।
কোরবানীর এ শিক্ষাটা বাংলাদেশ নিতে পারে, এ শিক্ষা বাংলাদেশকে নিতেই হবে।

সোমবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

নিরপেক্ষতা কথন এবং মুহূর্তের মন্তব্য

এক.
দলবাজিকে আকর্ষনীয় মোড়কে বাজারজাত করার অসাধারন ক্ষমতার নাম 'নিরপেক্ষতা'!
দুই.
ফেসবুকে নিরপেক্ষ থাকার আদর্শ উপায় হলো- কীবোর্ড ভেঙ্গে ফেলা!
তিন.
নিরপেক্ষতা, এমন এক অভিনয়, যেখানে দ্বৈত চরিত্রে অভিনয় করতে হয়!
চার.
নেংটা রাজার পোশাকের প্রসংশা করাটা পক্ষপাত, রাজাকে নেংটা বলাটা পক্ষপাত,
আর রাজা নেংটা তবে তার গুপ্তঅঙ্গের কেশগুলো সুন্দর...এমন ব্যালান্সই নিরপেক্ষতা।
পাঁচ.
মুক্তিযোদ্ধারা একটা পক্ষ, রাজাকারেরা আরেক পক্ষ, আর সোনাগাছির ফুর্তিবাজেরা নিরপেক্ষ।
ছয়.
স্রষ্টার অশেষ রহমত, মুক্তিযুদ্ধের বীর সন্তানেরা নিরপেক্ষ থাকতে চায়নি, তারা স্বাধীনতার পক্ষ নিয়েছিলো। নিরপেক্ষ থাকার ভন্ডামি তাদের স্পর্শ করেনি বলেই, এ দেশটা এখন বাংলাদেশ।
সাত.
নিরপেক্ষতা হলো- একই সাথে নায়ক ও ভিলেনের সাথে নায়িকার গ্রুপ সেক্স।
আট.
শ্বেতাঙ্গ-কৃষ্নাঙ্গ' মধ্যে, আমি কারোরই নয় কিংবা আমি দুজনার।
এর নাম দেয়া হয় নিরপেক্ষতা! অথচ এটার নাম মানবতা। এটাও একটা পক্ষ। এটা মানবতার পক্ষ।
*মন্তব্য- নিরপেক্ষতা এক জনপ্রিয় ভ্রান্তি! বিবেকবোধ নিয়ে নিরপেক্ষ থাকার সুযোগ নেই।
ভাষা আন্দোলনে কি সম্ভব ছিলো নিরপেক্ষ থাকা? মুক্তিযুদ্ধ কিংবা স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে কি সম্ভব ছিলো নিরপেক্ষতা?
না, নিরপেক্ষ থাকার সুযোগ ছিলো না। সে সময়গুলোতে জোরালো পক্ষালম্বনই ছিলো নৈতিক অবস্থান। ভাষা আন্দোলনে বাংলার পক্ষ, মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীনতার পক্ষ, স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে গনতন্ত্রের পক্ষই ছিলো সময়ের দাবী।
বর্তমানেও সময়ের দাবী মেটাতে নিরপেক্ষ থাকার ভন্ডামী আমাদের ছুড়ে ফেলতে হবে পক্ষাবলম্বনের নৈতিক অবস্থানে। আমাদের অবশ্যই পক্ষ নিতে হবে, যে পক্ষ গনতন্ত্রের পক্ষ, যে পক্ষ ভোটাধিকারের পক্ষ...

শনিবার, ২২ আগস্ট, ২০১৫

দুটি কবিতা



এ বাক্য ব্যর্থ হবে না।


অস্ত্র দেখিয়ে শাসন ক্ষমতা টেকে না!
ক্ষমতা টেকে জনগনের সমর্থনে অথবা সহনশীলতায়।
তবে নিদারুন পরিহাস হলো-
অস্ত্র দেখিয়ে যে ভীতিসঞ্চার করা যায়,
সে ভীতি জনগনের সাময়িক সহনশীলতা তৈরী করে!
অনেকে এখন বলবেন- কথা, ঐ একই হলো! শাষন ক্ষমতা তো ঠিকই টিকলো।
আমি বলি- টিকলো আর টিকে থাকবে, এর মাঝে ঢের তফাৎ।
টিকে আছে তবে সমর্থনবিহীন সহনশীলতায় টিকে থাকবে না।
যদি বঙ্গোপসাগরে বিলীন হয় দেড় লক্ষ বর্গ কিলো ভূমি,
উত্তল বানে প্লাবিত হয় কেওকারাডাংয়ের চূড়া
তবুও এ বাক্য ব্যর্থ হবে না।
সাময়িক সহনশীল জনগনের ক্রুদ্ধ চিৎকারেই
মাটিতে লুটাবে অস্ত্র, ক্ষমতা ঝড়বে-
শুষ্ক পাতার মত....
আবারও বলছি- এ বাক্য ব্যর্থ হবে না।
যদি বঙ্গোপসাগরে বিলীন হয় দেড় লক্ষ বর্গ কিলো ভূমি,
উত্তল বানে প্লাবিত হয় কেওকারাডাংয়ের চূড়া, তবুও না..
এ বাক্য ব্যর্থ হবে না।

ভালবাসার জন্য


প্রিয়তমা আমার,
দুদিন আগেও তুমি ছিলে আমার লেখার নিয়মিত পাঠক,
তুমি গর্বিত হতে, তুমি উৎসাহ দিতে...
যে উৎসাহের পুলকে জেগে উঠতো আমার চিন্তার পৌরুষ

দুদিন আগেও তুমি আমার পাশাপাশি দেশকে ভালোবাসতে,
রাজনৈতিক দৈনতার ছায়া সে ভালোবাসায় গ্রহন লাগালে
তুমি আক্ষেপে ফেটে পড়তে
চাইতে, এ আক্ষেপ ছড়িয়ে যাক সবার মাঝে

অথচ আজ, তুমি শুধু আমাকে ভালবাস!
দেশ তোমার কাছে গৌন, গনতন্ত্র প্রশ্নে মৌন
আমার নিরাপত্তা প্রশ্নে, আইসিটি আর ৫৭তে আছন্ন!

জেনে রাখো- প্রিয় আমার,
ভালবাসার জন্য- খুঁজে ফেরা যায় ১০৮ নীলপদ্ম
ভালবাসার জন্য- বাজি রাখা যায় হায়াতের বাকি ফর্দ
ভালবাসার জন্য- উপেক্ষা করা যায় আইনের রাঙ্গা চোখ
ভালবাসার জন্য- ভুলে থাকা যায় স্বজন হারানো শোক

তুমি কি এ শোক সইতে পারবে?
যদি পারো? তবে এসো, দেখাও ভালবাসার ক্ষমতা
তবে এসো, মুখস্থ করি ৫৭ ঘরের নামতা
৫৭ এককে ৫৭, ৫৭ দুগুনে ১১৪

বৃহস্পতিবার, ২৩ এপ্রিল, ২০১৫

হয়তো ওদেরই ভুল!


হয়তো ওদেরই ভুল!
নয়তো কেনই বা, অঁজপাড়া গাঁয়ের রহিম কিংবা রহিমা
নুন্যতম সন্মান আর সমৃদ্ধির জন্য আসে লাশ হতে!
তাগড়া যুবক রহিম কিংবা করিম,
গৃহস্থের কামলা হয়ে কিংবা রিক্সার প্যাডাল ঘুরিয়ে
বেশ ভালোই খেয়ে পড়ে, বেঁচে থাকতে পাড়তো...
হতাশ কেউ কেউ,
অভাবে স্বভাব নষ্টে...
করতে পারতো সিঁধেল চুরি কিংবা অন্যের পকেট সাফাই...
সদ্য কিশোরী রহিমা কিংবা সকিনা,
অভাবের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে যার
বুক আর শরিরের বাঁক...
বিকাশমান গতরের খাটুনিতে
বুয়া বেশে,
গৃহকর্তৃর আড়ালে গৃহকর্তার টিপ্পুনি হজম করে
কেটে যেতে পারতো, নিরবতাময় এক নিরব জীবন।
কেউ কেউ অভাবি যৌবনে,
বাঁকা শরিরের সাথে চরিত্রকে বাঁকিয়ে-
বস্ত্রহীন বুকটা আরেকটু উন্মুক্ত করে-
ক্ষুধার্ত পেট ভরানোর পাশাপাশি
আরেকটু লোভে নিজেকেই ভরাতে পারতো
লোলুপ ষাঁড় কিংবা পাঁঠার ঐরশে...
তবুও তারা বেঁচে থাকতো
বেঁচে থাকতো, কামলা কিংবা বুয়া হয়ে
চোর কিংবা বেশ্যা হয়ে-
যে মেয়েটির বুকে ভেঙ্গেছে, কংক্রিটের দেয়াল
রং-চং মেখে সন্ধ্যায়, সংসদের কোণায় দাঁড়ালেই
সে বুক আজ শিহরিত হতো লম্পটের নরম ঠোঁটে।
আঘাতে বিচ্ছিন্ন হয়েছে যে ছেলেটির হাত
লোকাল বাসের ভিরে, পকেট সাফাইয়ে
সে হাত আজ খুঁজে নিতো সারাব আর সাবাব।
হয়তো ওদেরই ভুল!
ওরা কামলা হয়নি, ওরা বুয়া হয়নি
চোর কিংবা বেশ্যাও হয়নি...
সন্মানজনক জীবিকায় যারা বাঁচতে চেয়েছে,
সুই-সুতোর বুননে, স্বপ্ন বুনতে চেয়েছে...
অথচ স্বপ্নের প্রাসাদই তাদের ওপর ভেঙ্গে পড়েছে,
তাদের নির্মম মৃত্যু হয়েছে...
হয়তো ওদেরই ভুল!
চোর হলে যে সমাজে বেঁচে থাকা যায়,
বেশ্যা হলে যে সমাজে টিকে থাকা যায়,
সে সমাজে সন্মান নিয়ে বাঁচতে চাওয়াটা ভুল
নয়তো এ সমাজে জন্ম নেয়াটাই,
ওদের ভুল!
*(২৪ এপ্রিল ২০১৩, ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির ২দিন পর এটি লেখা)