বৃহস্পতিবার, ২৮ জুলাই, ২০১৬

জাতীয় বৃক্ষে যেখানে জাতীয় ফল হয় না

অবশেষে কথা বলার মত একজনকে পেলো মাঠের কোনায় একাকীনি দাড়িয়ে থাকা জাতীয় বৃক্ষটি!

অথচ ক'বছর আগেও তার সঙ্গী ছিলো গোটা চারেক মেহগনি, একটি নিম আর খানিক দুরে থাকা দুটি কাঠাল গাছ।
শৈশব থেকে তাদের সাথেই যত মিতালী, ঝগড়া আর দুষ্টু-মিষ্টি খুনসুটি ছিলো জাতীয় বৃক্ষের।
কাঠের মান নিয়ে খুব অহংকার ছিলো মেহগনির।
আম গাছ কটাক্ষের হাসিতে তাকে শোনাতে- "বৃক্ষ তোমার নাম কি, ফলে পরিচয়"।
বলতো- এত অহংকার করিসনে, তোর ফলতো কারো মুখেই রোচে না?
শুনে কাঁঠালের ভাব বেড়ে যেতো, হাজার হোক তার ফলটা জাতীয় ফল।
শুনে আম গাছের পিত্তি জ্বলে যেতো- আমের মত জনপ্রিয় ফল বাদ দিয়ে ঐ মাগির আঠালো ফলটাকে কেন জাতীয় ফল করা হলো? যে ফল খেতে গেলে হাতে, মুখে তেল মাখতে হয়? মানুষ্যকুল কি তেল মাখাতে রাগমোচনের সুখ পায় বলেই কাঁঠালকে জাতীয় ফলের স্বীকৃতি?

তবে এমন পিত্তি জ্বলানো সম্পর্কের মাঝে তাদের পিরিতও কম ছিলো না!
গ্রীষ্মের দাবদাহের সময়ে যখন মাটি শুকিয়ে যেতো, সে সময়ে ফলবতি গাছের বেশী পানি শোষনের প্রয়োজন পরতো।
তৃষ্নার্ত কন্ঠে আম গাছ বলতো- ভাই মেহগনি, আমার দিকে যে শেকড় আছে, তা দিয়ে আজ পানি শুষো না।
মেহগনি, বোনের মাতৃত্বে এ সহানুভুতিটুকু দেখাতো!

আবার বড় বড় কাঁঠাল ধারন করে, ভার বহনে ক্লান্ত গাছটি যখন পেরেশান হয়ে যেতো, তখন আম গাছই পাতা নেড়ে নেড়ে তাকে বাতাস করতো।

গাছেদের ডাক্তার ছিলো নিম গাছ। কোন গাছে ব্যামো হলে, নিম তার সমস্ত তিতা পাতায় জড়ো করে বাতাসের অব্যর্থ ঝাপটা দিয়ে দিতো, এতে গাছেদের ব্যামো সেড়ে যেতো।

এভাবে ভালোই চলছিলো কিন্তু হঠাৎ একদিন মানুষের কাঠ লালসায় কাটা পরলো কাঁঠাল, নিম, মেহগনি।
আম গাছটাও হয়তো কাটা পড়তো, শুধুমাত্র ফলবতি গাছটার আমের জন্যই গাছটি রয়ে গেলো।

আম গাছটি রয়ে গেলো, তবে বড্ড একা হয়ে! তার কথা বলার মতো কেউ রইলো না!
মাঠপান্তে একা দাড়িয়ে থাকতে থাকতে গাছটি যখন কথা বলার জন্য ছটফট করছিলো, তখনই তার বন্ধু হয় দোয়েল।

সাধারনত গাছের সাথে বন্ধুত্ব হয় গাছের, পাখির সাথে পাখির।
এখানে গাছের সাথে পাখির যে বন্ধুত্ব, তা অপূর্ব এক স্বার্থের বিনিময়!
পাখির চাই নিরাপদ আশ্রয় আর গাছের কথা বলায় মত একজন।

অল্প দিনের মধ্যেই এ সম্পর্কটা জমে ওঠে। ফলের ভার বহনে গাছের মাতৃত্বসুখ, ফল পারা আর ডাল কাটার কষ্ট, মধ্যরাতে গাছের নিচে কোন পথিকের ভুত ভয়, এর বাহিরেও যে কোন গল্প থাকতে পারে তা এই জাতীয় বৃক্ষের জানাই ছিলো না!
সে ঠিক করে রেখেছিলো,  এর বাহিরে যে দুই একটি বিশেষ ঘটনার সে সাক্ষি, তা পরে বলবে।
সেবার এক অমবশ্যা রাতে এ গাছের নিচেই তো ডাকাতেরা করেছিলো গ্রাম লুটের পরিকল্পনা!
মুষল বৃষ্টিতে আধার ঘনানো এক বিকালে এখানেই এক কিশোরীকে ধর্ষন করেছিলো দুই যুবক! বৃষ্টির শব্দে যেখানে নিজ পাতার ডাক শোনা যায় না, সেখানে সে কিশোরীর চিৎকার তাকে শিউরে তুলেছিলো।
এইতো ক'মাস আগেই তার ডালে ঝুলে আত্মঘাতি হলো যুবতি এক মেয়ে...

কিন্তু দোয়েলকে এ কথাগুলো বলা হয় না জাতীয় বৃক্ষের!
জাতীয় পাখি বলে সে তার গল্পে বলে জাতীয় বিষয়ের কত যে আজব, তাজ্জব করা কাহিনী! যার কাছে গল্প হারিয়ে যায়।
দোয়েলের কাছে ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে হাজার হাজার কোটি লুটের কাছে খেই হারায় আম গাছের গ্রাম লুটের গল্প।
গনতন্ত্র আর সুশাষনের ধর্ষনে হারায় সেই অভাগী কিশোরী।
জঙ্গিদের আত্মঘাতি হবার গল্পে হারায় গলায় দড়ি দেয়া সেই মেয়েটি।

আমগাছের আর কিছু শুনতে ইচ্ছা করে না, শুনতে ভালোও লাগে না!
তখনই দোয়েল তাকে শোনায় এক বনের কথা। কত বড় যে সে বন! নদী ঘেরা এক বন, নদীর পানি জোয়ারের ছলে প্রতিদিন ভেজায় গাছের গোড়া। কত বাহারি যে তার গাছ! উদ্ভিদ আর প্রানীর কি যে অপূর্ব সহবস্থান। জীববৈচিত্রের কি যে অভূত সুতিকাগার...

একাকি থাকার ক্লান্তিতেই কিনা আম গাছ সুন্দরবনের প্রেমে পরে যায়। দোয়েলকে বলে- ও ভাই, এ বন কতদূর?
দোয়েলও হেয়ালী করে বলে- মাটির নিচ দিয়ে তোমার শেকড় অতদূরে পৌছাবে না।

এই প্রথম পাখির ডানা আর মানুষের পা কে হিংসা করা শুরু করে সে।
সুন্দরবন দেখার সুতীব্র বাসনায় তার যে কল্পনা জগৎ তৈরী হয়, সে কল্পনায় তৈরী করে অন্তিমইচ্ছা- মরনের পর সে নৌকা হতে চায়। নৌকা হয়ে সে যাবে, ঘুরে ঘুরে দেখবে সে বন।

একথা শুনে তো দোয়েল হেসেই অস্থির। তারপর হঠাৎ হাসি থামিয়ে বলে- মানুষ্যকূল বড় খারাপ। তোমার এ সরল ইচ্ছাকেই তারা কাজে লাগাবে। তোমায় নৌকা বানিয়ে সুন্দরবন নেবে সত্যি, তবে তা সুন্দরবনকে ধংস করতে। তোমাতে করেই নেবে বন ধংসকারী বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের সরন্জাম!
ওহো, তোমাকে তো বলায় হইনি বিদ্যুৎকেন্দ্রের নামে এ বনটাই ধংসের পথে নিয়ে যাচ্ছে একদল মানুষ!

অবাক হয়ে আম গাছ বলে- আর মানুষ গুলো বাধা দেয় না?

দোয়েল বলে- শেকের বেটি যে সে মানুষ নয়, ভাঙ্গে তবে মচকায় না। বলছে তো করবেই।
বাধা দিলেই ৫৭ ধারা, গুম, খুন...

জাতীয় বৃক্ষ অবাক বিষ্ময়ে বলে- এ কোন শেকের বেটি? এ বাংলায় এক মহান শেক'কে আমি চিনি, জাতীর পিতা তিনি। এ কি তারই বেটি?

দোয়েল সম্মতিতে মাথা নাড়ে। আম গাছটা আক্ষেপে বলতে থাকে- যিনি এ দেশ দিলেন, তার কন্যার হাতেই শেষ হচ্ছে দেশের এতবড় সম্পদ!
জাতির পিতার বেটি কেন জাতির বেটি হলো না?

দোয়েল বলে- এ দেশটাই এমন! তুমি তো জাতীয় বৃক্ষ, তোমার ফল কি জাতীয় ফল?
এখানে জাতীয় বৃক্ষে জাতীয় ফল হয় না, হয় না জাতির পিতার সন্তানও জাতীয় বেটি!

এমন কথপকথনে কখন তারা ঘুমিয়ে যায় টের পায় না।
সকালে ঘুম ভাগে কিছু মানুষের কুড়ালের শব্দে! তারা গাছটা কাটতে এসেছে...

এটা কি মানুষের কাঠ লালসার কারনে নাকি গতরাতের সরকার বিরোধীতার কারনে, তা ঠিক করে বোঝা যায় না!
বুঝতে পারেনা জাতীয় পাখি এবং জাতীয় বৃক্ষটি...

শুক্রবার, ২২ জুলাই, ২০১৬

সোনা বুনলে সোনা ফলে

সারাদিনের মেঘলা আকাশ পেরিয়ে শ্রাবনের সন্ধ্যাটা জমে উঠেছে গ্রামের বাহির বাড়ির খানকা ঘরে।

সব মিলিয়ে গোটা বিশেক মানুষ, অন্য সময় হলে এসময় তারা কাটাতো কোন চা'য়ের দোকানে টিভি দেখে অথবা ক্যারাম খেলে।
কিন্তু গ্রামের সনপাতার ছাউনি চা'দোকানে বৃষ্টি হলেই পানি চুয়ায়, তাই ক্যারাম বন্ধ। বৃষ্টির সাথে বাতাসের সাপটা জোরে হলেই কারেন্ট চলে যায়, তাই টিভিও বন্ধ।

টিভি, ক্যারাম ছাড়া চা দোকানে বসার কোন অর্থ হয় না।
তাইতো এ মানুষগুলো ঠাই নিয়েছে এ খানকাঘরে। এখানে অন্তত বসে গল্প করার বিনিময়ে একটু পর পর মিষ্টি গরমপানি গিলে পকেটের টাকা খসবে না...

কয়েক দশক আগে হলেও এখানে জমতো আষাঢ়ে গল্প। কিন্তু অবাধ তথ্য প্রবাহের যুগেও যেখানে গ্রামের দুই বাঁশের খোলা পায়খানার ওপর দিয়েও বয়ে গেছে ক্যাবল নেটওয়ার্কের তার। সেখানে কল্পিত আষাঢ়ে গল্পের জায়গা নিয়েছে বাস্তবতার এমন সব ঘটনা যা আষাঢ়ে গল্পকে আষাঢ়ে থৈ থৈ করা খাল-বিলে ডুবিয়ে দিয়েছে।

গত ক'দিন আগের ফ্রান্সের সন্ত্রাসী ঘটনা, তুরস্কের ব্যর্থ অভ্যুত্থান, তনু-মিতু-এসপি বাবুল থেকে, সহিহ আর ভ্রান্ত ইসলাম, সবই আলোচ্যসূচিতে থাকে।
যদিও গুলশান এবং শোলাকিয়ায় হামলার পর সকল আগ্রহ ও আলোচনা সে বিষয়েই।

গ্রামের এই দরিদ্র মানুষগুলো যাদের অধিকাংশের ছেলে মাদ্রাসায় পরে, ইসলামকে অপরাধকরন করার সময়ে এ নিয়ে তাদের মধ্যে যে লুকায়িত সংকির্ণতা, তা অনেকটা প্রকাশিত উচ্ছাস হিসাবে ধরা পরে হামলাকারীদের বিশ্ববিদ্যালয় পড়া পরিচয় দেখে!
শহরের এসি রুমে বসে সুশিল ভেকধারীদের ভাষায় এ উচ্ছাসকে পৌশাচিক উচ্ছাস বলা সহজ, কিন্তু বছরের পর বছর ধরে ধর্মীয় পরিচয়ের যে বন্চনা মনোসমিক্ষন, এসি রুমে শীতল বাতাস ঢুকলেও এটা কখনোই ঢোকেনি! ঢোকেনি, না রুমে, না তাদের চিন্তাজগৎ-এ

চিন্তা জগৎ-এর এ বদ্ধতায় শুধু শহুরে সুশীল নয় আক্রান্ত গ্রামের মানুষগুলোও।
যাদের মাথায় ধরে না- সিঙ্গারার মধ্যে কি করে গরম আলু এলো?
চিন্তায় খেলে না- বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ধনীর দুলালেরা কেন জঙ্গিবাদে আত্মঘাতি হলো?

এ কি শুধুই হুরপরীর লোভ, আর বেহেস্তের দরজা খোলার আকাংখা?
যাদের দুনিয়ার পরিদের অভাব ছিলো না! সোনারগাঁ, রেডিসনের দরজা খোলাতে সমস্যা ছিলো না!
তারাই কিনা পরকালীন মোহে জীবন দেবে?

আলোচনা এই জায়গাতে এসে রাজনৈতিক মোড় নেয়।
বিশেষত শেকের বেটির জাতীয় ঐক্য হয়ে যাওয়ার ঘোষনা, হুরপরি আর বেহেস্তের দরজা খোলার কথাটাই উঠে আসে।
ঐকের ঘোষনাকে বাস্তবিক বাতিল করে গোটা বিশেক মানুষই বিভক্ত হয়ে পরে!
কেউ বলে- মৌলবাদীদের সাথে কিসের ঐক্য? ওরা বাদে সবাই ঐক্যবদ্ধ..
অন্যরা বলে- এটাই তো তোদের চরিত্র, সরকারে আসতে ভোটের দরকার হয় না, অটো নির্বাচনের মতো অটো জাতীয় ঐক্য হয়ে যায়...

হঠাৎ এক দৃঢ় কন্ঠে সবাই থেমে যায়- "সোনা বুনলে সোনা ফলে"

অন্ধকারে তার মুখ দেখা যায় না, কিন্তু বিবেক সুলভ কন্ঠে সবাই সম্মোহিত হয়ে পরে। তিনিও বলে চলেন-

সে অনেকদিন আগের কথা।
রাজ্যে বেপরোয়াভাবে চুরি বেড়ে গেছে। চুরি রোধে শাস্তি শূলে চড়ানোর ঘোষনা দেয়া হয়েছে। তবুও চুরি কমছে না!
হঠাৎ করে একদিনে ধরা পড়লো তিন চোর।
রাজ্যে উৎসবের আমেজ পরে গেলো, তিন চোরকে শূলে চড়ানো হবে।
নির্দিষ্ট দিনে লোকে লোকারন্য, চুরির প্রতি ঘৃনায় সবাই সুবিচার দেখতে এসেছে। তিন চোরকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে শূলের দিকে, রাজাকে অতিক্রম করার সময় হঠাৎ এক চোর বলে উঠলো- 'সোনা বুনলে সোনা ফলে'!
রাজা চমকে উঠলেন। চোরকে ডেকে জানতে চাইলেন- আসলেই কি তাই?
বিশ্বাসের সাথে চোর বললেন- জী, মহারাজ।

রাজা যে লোভী ছিলেন, তা নয়। তবে তিনি কৌতুহলী ছিলেন। সে কৌতুহলেই তিনি শূল রদ করলেন।
উৎসুক জনতা হতাশা নিয়ে ফিরে গেলো বাসায়।
তবে তারা আবার জমায়েত হলো সেদিন, যেদিন জমিতে সোনা বোনা হবে!
ইতিমধ্যেই জমির মাটি চাষে চাষে হয়েছে মিহি।
চোর রাজার কাছে গিয়ে বললেন- মহারাজ, আমি তো চোর। আমি বুনলে সোনা ফলবে না। এমন কাউকে বুনতে হবে যে জীবনে চুরি করেনি। তাই আপনি বুনুন।
রাজা হচকিত হয়ে গেলেন- রাজপুত্র থাকা অবস্থায় তিনি কত চুরি করেছেন।
রাজা তাকালেন মন্ত্রীর দিকে, যিনি করেন রাজকোষ সাফাই।
তারপর উজির, নাজির পাইক, পেয়াদা হয়ে রাজ্যে এমন একজন মানুষ পাওয়া গেলো না, যে জীবনে কখনো চুরি করেনি!

চোর এবার রাজাকে প্রশ্ন করলো- মহারাজ আমরা না হয় পেটের দায়ে চুরি করি কিন্তু আপনারা কিসের দায়ে চুরি করেন?

গল্পটা এখানেই শেষ। সবাই এমন ভাবে চুপ হয়ে গেছে যেনো সবার মধ্যে হয়ে গেছে জাতীয় ঐক্য।
হঠাৎ বজ্রপাতের ঝলকানিতে স্পস্ট বোঝা গেলো সবাই সবার চোখে চোখাচোখি করছে! হয়তো সে চোখে উত্তর খুঁজছে- জঙ্গিরা তো হুরের লোভে মানুষ হত্যা করে, সে হত্যা কি অনেকে করেনি পুলিশ লেলিয়ে গুলি করে, গুম করে?
তারাও কি ধর্মীয় বিপথগামী জঙ্গিদের  মতোই গঠনতন্ত্রের বিপথগামী নয়?

গল্প শেষ করে কিছুসময় নিরব থাকা বিবেক আবারো কথা বলে উঠলেন- সোনা বুনলে সোনা ফলবে, তবে সে জন্য সোনার মানুষ হতে হবে।
সোনার বাংলা গড়তেও রাজনৈতিক ক্ষোভ, বিদ্দ্যেশ ভুলে জাতীয় ঐক্যের পথে হাটতে হবে।

কথাটি সবার কানে গেলো কিনা বোঝা গেলো না! বৃষ্টি ছেড়েছে, তাই সবাই হাঁটা দিয়েছে যে যার বাড়ির পথে...

বুধবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

কোরবানীর যে শিক্ষাটা বাংলাদেশ নিতে পারে!

এ দেশের অভিভাবক, স্বজন ও শুভাকাঙ্খিদের নতুন এক দুশ্চিন্তার কারন হয়ে দাড়িয়েছে তরুনদের সমাজ সচেতনতা! যুগের নবধারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলোতে তরুনদের মতামত প্রকাশে যে স্পষ্ট উচ্চারন, তা ভবিষৎ বাংলাদেশ নিয়ে আশাবাদের কারন....
তবে এ স্পষ্ট উচ্চারন করতে গিয়ে তরুনদের নিতে হচ্ছে ৫৭ ধারার চোখ রাঙ্গানি এবং বিভিন্নভাবে ও বিভিন্ন পর্যায়ে রাজনৈতিক হয়রানির ঝুঁকি! প্রিয়জনকে ঝুঁকির মুখে দেখে অভিভাবকদের উদ্বিগ্ন হওয়াটা সংগতই বটে।
এ জন্যই অভিভাবকেরা এখন সন্তানদের ফেসবুক, ব্লগে লিখতে নিষেধ করেন! বিশেষত রাজনীতি এড়িয়ে যেতে বলেন, সময়ের হাওয়া বুঝে নিজের ভবিষৎ গড়ার পরামর্শ দেন!(আমার অসংখ্য বন্ধুর ফেবু স্ট্যাটাস এবং কথা বলে জানা)
এখন প্রশ্ন হলো- তবে কি আর তরুনেরা লিখবে না? লিখলে কি নিয়ে লিখবে? ফুল-ফল-লতা-পাতা? তরুনেরা কি তাদের যৈবনিক ঝুঁকি এড়িয়ে যৌবনের তাড়নায় লিখবে, বনতলার বিদিশায় দিশা হারিয়ে দুদন্ড শান্তি পাবার গল্প!
তবে আমি আশাবাদি, বনলতা নিয়ে লিখতে গেলে তরুনেরা আগ্রহী হবে জীবনানন্দ দাশ সম্পর্কে, তারা জানবে জীবনানন্দ দাশের মা ছিলেন কুসুমকুমারী দাশ। যে মহীয়সি 'আদর্শ ছেলে' কবিতায় করেছেন অমর কতিপয় পংক্তি। বাংলার এমন কোন মা নেই যে তার সন্তানদের সে পংক্তি শোনায়নি এবং এমন কোন মা থাকবে না যে এ পংক্তি সন্তানদের শোনাবে না!
♫♪আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে
কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে♫♪
মায়ের মুখে এ পংক্তি শুনে শুনে বড় হওয়া তরুন প্রজন্ম শুধু জীবনানন্দ দাশের মায়ের বিষয়েই নয় বরং আগ্রহী হবে শহীদ জননী জাহানারা ইমাম সম্পর্কেও। মুক্তিযুদ্ধের কঠিনতম সময়ে, সময়ের দাবীতে যে মা তার সন্তানকে বলেছিলেন- "দিলাম তোকে দেশের জন্য কোরবানি করে। যা, তুই যুদ্ধে যা"
তরুনেরা হয়তো আক্ষেপ নিয়ে ভাববে- 'আমাদের দেশে হবে সেই প্রিয়জনেরা কবে?
তবে এটা আক্ষেপ করার সময় নয়! এটা দৃঢ় সংকল্প গ্রহনের সময়। যে সময়কে শানিত করবে কোরবানীর শিক্ষা।
এদেশের ৯০% মানুষ মুসলিম। ধর্মের প্রতি রয়েছে যাদের অগাধ টান। স্রষ্টার ইচ্ছা পুরনে পিতা ইব্রাহীম(আঃ) প্রিয়তম সন্তানকে কোরবানী করার সংকল্প এবং স্রষ্টার ইচ্ছা বাস্তবায়নে ইসমাইল(আঃ) আত্মউৎসর্গের সাহস যে কোরবানীর শিক্ষা, তার প্রতি রয়েছে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের অনুভব।
স্বাধীনতা এ দেশের সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন। যে স্বাধীনতা অর্জনের জন্য অসংখ্য পিতা-মাতা তার সন্তানকে কোরবানী করার যে উদাহরন, তার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের অনুভূতি।
তাই কোরবানী ঈদের এ সময়ে এ দেশের তরুনেরা, ঈমানের অঙ্গ দেশপ্রেমে, গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় আত্মউৎসর্গের সাহস পেতে পারে কোরবানীর শিক্ষায়।
এ দেশের পিতারা দেশপ্রেমের জন্য নিতে পারে প্রিয়তম সন্তানকে কোরবানী করার সংকল্প।
এ দেশের মায়েরা সন্তানের সংকল্পকে মেনে নিয়ে বলতে পারে- যা তোকে দেশের জন্য কোরবানী করে দিলাম।
কোরবানীর এ শিক্ষাটা বাংলাদেশ নিতে পারে, এ শিক্ষা বাংলাদেশকে নিতেই হবে।