বৃহস্পতিবার, ৩১ মে, ২০১২

নগর নিভলেই নিশ্চিত হবে দেবালয়ের নিরাপত্তা!!!

দেশের আইনশৃংখলা সাম্প্রতিক সময়ে ভয়াবহ আকার ধারন করেছে। সন্ত্রাসীদের ছিনতাই, অপহরণ, গুম, হত্যার পাশাপাশি মরার ওপর খাঁড়ার ঘা হিসাবে দেখা দিয়েছে পুলিশি নির্যাতন!
যদিও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বেশ আত্মবিশ্বাসের সাথেই বলছেন-
দেশের আইনশৃংখলা অতীতের যে কোন সময়ের তুলনায় ভালো এবং পুলিশ আগের চেয়ে অনেক ভালো হয়েছে!
কিন্তু সাধারন মানুষ মাত্রই টের পাচ্ছে- অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে সমাজ এখন অনেক বেশী শৃঙ্খলাহীন, নিরাপত্তাহীন।এ বিষয়ে আমরা চোখ বুলাতে পারি গত ক’দিনের পত্রিকার প্রথম পাতার শিরোনামে-
৩১শে মে- পুলিশের বাড়াবাড়িতে বিপর্যস্থ আইনশৃংখলা পরিস্থিতি।-যুগান্তর
ব্যবসায়ীকে খুনির হাতে তুলে দিলো পুলিশ-প্রথম আলো
৩০শে মে- আদালত চত্বরে পুলিশি নিষ্ঠুরতা, মেয়ের শ্লীলতাহানি মা বাবা লাঠিপেটা।-প্রথম আলো
আকস্মিক সাংবাদিক পেটাও অভিযান ॥ কেন? -দৈনিক জনকন্ঠ
২৯শে মে- বিডি নিউজের সাংবাদিকদের ওপর সন্ত্রাসী হামলা।-প্রথম আলো
২৭শে মে- তিন সাংবাদিককে রাস্তায় ফেলে পেটালো পুলিশ-দৈনিক ইত্তেফাক
লক্ষ্যনীয়, অতীতের যে কোন সময়ের তুলনায় আশঙ্কাজনকভাবেই পুলিশ পেশাগত নিয়ন্ত্রন হারিয়েছে এবং সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনাও বেড়েছে। সাগর-রুনি খুন হলো বেডরুমে! প্রথম আলোর সাংবাদিক নির্যাতন হলো রাজপথে! বিডি নিউজের সাংবাদিকেরা আক্রান্ত হলো তাদের অফিসে! সাংবাদিকেরা মার খেল আদালত পাড়ায়! অর্থ্যাৎ, বেডরুম-রাজপথ-অফিস-আদালত পাড়া সব জায়গায় সাংবাদিকেরা নির্যাতিত হচ্ছে! এখন প্রশ্ন আসতে পারে- হঠাৎ সাংবাদিক নির্যাতনের এ মহোৎসব কেন?
উত্তর- নগর পুড়িলে দেবালয় কি এড়ায়! সাংবাদিকেরাই কি শুধু নিরাপত্তাহীন? নির্যাতিত কি শুধুই সাংবাদিকেরাই?
না….সমান্তরালে নির্যাতিত হচ্ছে, আদালত পাড়ায় বিচার প্রার্থী তরুনী! নির্যাতিত হচ্ছে বেতন-ভাতার দাবীতে হাড্ডিসার প্রাইমারি শিক্ষক! নির্যাতিত হচ্ছে কলেজগামী ছাত্র, বুড়ো রিক্সাওয়ালা, তরুণী গার্মেন্টসকর্মী, অফিস ফেরত কর্মচারী, আদালত চত্তরে আইনজীবি, বিরোধী রাজনৈতিক সমর্থক!
নির্যাতিত হচ্ছে নোবেল জয়ী ব্যাক্তি ও প্রতিষ্ঠান!
নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে পরিবার থেকে সমাজ, সমাজ থেকে রাষ্ট্র! সাংবাদিকেরা তো এ সমাজেরই অংশ। তাই সাংবাদিক নির্যাতন শুধু সাংবাদিক নির্যাতন নয় বরং সামাজিক নিরাপত্তাহীনতার একটি রুপ। এ দেবালয়ের আগুন শুধু পাপিষ্ঠের কাজ নয় বরং জ্বলতে থাকা পুরো নগরের একটি স্ফুলিঙ্গ। এখন আগুন নেভানো এবং দেবালয়কে সুরক্ষিত করাই সংগত। কিন্তু এ সুরক্ষা নিশ্চিত হবে নগরের আগুন নিভলেই।
আমি জানি, অসি আর মসির লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত মসিই জিতবে। বন্ধ হবে সাংবাদিক নির্যাতন। তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালনও হবে নিরাপদ। আর এ নিরাপত্তা সুরক্ষিত করতে প্রয়োজন, সামাজিক নিরাপত্তা।
তাই সাংবাদিকদের লড়তে হবে নিজেদের নিরাপত্তার জন্য, সমাজের নিরাপত্তার জন্য। সাংবাদিকদের নিরাপত্তা তাদের(সাংবাদিকদের) প্রয়োজন। আর সমাজের নিরাপত্তা তাদের দায়, তাদের নিরাপত্তার রক্ষাকবজ।

রবিবার, ২৭ মে, ২০১২

পুলিশের দোষ আর ক্ষমতাশীনের দায়!!!

যখন রাজপথে বিরোধী দলের ওপর পুলিশকে লাঠি হাতে হিংস্র হতে দেখি- তখন পুলিশকে আমি দোষ দিতে পারি না! তারাতো হুকুমের গোলাম। আমি ভাবি সেই বিখ্যাত গান-
তুমি যেমনে নাচাও তেমনে নাচি, পুতুলের কি দোষ!
পুলিশতো রাজপথে লাঠি ব্যবহার করে না! বরং নিজেই ক্ষমতাশীনের হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার হয়!!!
কিন্তু পুলিশকে যখন দেখি- রাজপথে কোন শ্রদ্ধেয় শিক্ষককে, পেশাগত দায়িক্ত পালনকালে কোন সাংবাদিককে পেটাতে, তখন মনে হয়-সামাজিক নিরাপত্তায় নিয়োজিত বাহিনীটি, রাজনৈতিক ব্যবহারের বাহিরেও কতটা অসামাজিক!

ইতিমধ্যেই অবশ্য সাংবাদিক নির্যাতনকারী পুলিশ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। এতে হয়তো উত্তেজনার পারদে সাময়িক মলম দেয়া হচ্ছে কিন্তু পুলিশের গুনগত পরিবর্তন আসবে কি?
আমি ভাবছিলাম- পুলিশের এ দানবির রুপের দোষটা পুলিশের কিন্তু দায়টা কি ক্ষমতাশীনদের ওপর বর্তায় না!!!

পুলিশে নিয়োগ কারা পাচ্ছে?
পুলিশের কর্মকান্ড কি প্রমান করেনা যে তাদের ট্রেনিং ত্রুটিপূর্ণ?
পুলিশের রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রমোশন কি তাদের পেশাদারিত্ব নষ্ট করছে না?
রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহারে বাঘব-বোয়াল নেতাদের পিটিয়ে পুলিশ কি এক দানবিয় আত্ববিশ্বাস অর্জন করছে না?
এ সকল দায় কি বিভিন্ন সময়ের ক্ষমতাশীন প্রভুরা এড়াতে পারেন??? শুনেছি, চারদলের সময় এসআই নিয়োগ বানিজ্যে পাঁচ লক্ষ রেট ছিলো ওপেন সিক্রেট! মহাজোট সরকারের সময় নাকি তা আট লক্ষে পৌছেছে! এছাড়াও আছে রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ! এমন নিয়োগে পুলিশের কাছ থেকে আমরা আর কিইবা আশা করতে পারি?
যখন সাংবাদিক পিটিয়ে পুলিশ কর্মকর্তা বলে- “হট টক হইছে, বোঝেনইতো মেজাজ কন্ট্রোলে ছিলো না….”। যখন পিতৃসম শিক্ষককে কলার ধরে পেটায় পুলিশ। তখন প্রশ্ন জাগে- পুলিশের ট্রেনিয়ে কি শেখানো হয়? যে কোন পরিস্থিতিতে নিজেকে কন্ট্রোল করার কিম্বা রাষ্ট্রের সন্মানিত নাগরিকদের সন্মান দেখানোর শিক্ষা কি তাদের দেয়া হয় না?
কিছুদিন আগেও দেখলাম- বিরোধী দলের চিপ হুইপকে পেটানোর জন্য নির্যাতনকারী পুলিশ কর্মকর্তার প্রমোশন হয়েছে! এছাড়াও রাজনৈতিক বিবেচনায় বিভিন্ন সময় জুনিয়রদের প্রমোশন দেয়া হচ্ছে, তা কি পুলিশের পেশাদারিত্বকে ক্ষতিগ্রস্থ করছে না?
সবচেয়ে বড় কথা, যে পুলিশ সাবেক সরাষ্ট্রমন্ত্রী নাসিমকে রাজপথে পেটায়! সংসদভবনের সামনে বিরোধী দলের চিপ হুইপকে পেটায়! এমনকি ক্ষমতাশীন দলের পদত্যাগকারী প্রতিমন্ত্রীর ভাগ্নেকে পেটায়!
সে পুলিশের কাছে শিক্ষক, সাংবাদিক পেটানো তো ডাল ভাত! ক্ষমতাশীনদের রাজনৈতিক সার্থে পুলিশকে ব্যবহার করাইতো পুলিশকে দিচ্ছে এ দানবিয় আত্ববিশ্বাস।
আর এ দানবিয় আত্ববিশ্বাস যখন অপরাধের জন্ম দিচ্ছে, তখন শুধু দোষীর কর্মকর্তার বরখাস্তই যথেষ্ঠ নয়। পাশাপাশি প্রয়োজন ক্ষমতাশীনদের বোধদ্বয়, সদিচ্ছা এবং আন্তরিক প্রচেষ্টা।