সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৪

১৬ই ডিসেম্বরের যে শিক্ষাটা বাংলাদেশ নিতে পারে...

প্রায় ৯ মাস এক রক্তক্ষয়ি যুদ্ধে ১৬ই ডিসেম্বরর ১৯৭১, স্বাধীন হয় বাংলাদেশ।
বিজয় হয়, হানাদারেরর বিপক্ষে মুক্তিকামী মানুষের।
পরাজয় হয়, স্বাধীনতার ইচ্ছার বিরুদ্ধে দখলদার আর তার দোসরদের।
সুসংগঠিত একটি বাহিনীর বিপক্ষে প্রায় নিরস্ত্র একটি জাতির যে অসম লড়াই, সে লড়াইয়ে কি শামিল হয়েছিলো এ দেশের প্রতিটি মানুষ?
না, তা হয়নি! অনেকেই ছিলো, যারা পরাধীনতার ইচ্ছায় পাকিস্তান কাঠামোর অভ্যান্তরেই থাকতে চেয়েছিলো!
যাদের অনেকেই ছিলো পূর্ব পাকিস্তানের ওপর পশ্চিম পাকিস্তানের শোষনের উচ্ছিষ্ঠভোগী! অনেকেই ছিলো বিজয়ের বিষয়ে দ্বিধান্নিত, ফলে তারা গোলামী করেছে তাদের ধারনার সম্ভাব্য বিজয়ীর! তবে অধিকাংশই ছিলো ১৯৪৭এর দেশ বিভাগকেই স্বাধীনতা জ্ঞান করা ইসলামী রাষ্ট্র পাকিস্তানের অখন্ডতাকেই ইসলামের রক্ষা কবজ ভাবা তৎকালিন পরিস্থিতির অবিবেচকরা।
উচ্ছিষ্ঠভোগী ও দ্বিধান্বিত মানুষদের নিয়ে আমার কিছু বলার নেই, এরা সব সময়ের এবং সমাজেরই সমস্যা। আমি নজর দিতে চাই শান্তির ধর্ম ইসলামের আবেগী অযুহাতে যারা হায়েনা পাকিস্তানের অখন্ডতা রক্ষায় স্বাধীনতাকামী দেশবাসীর বিপক্ষে দাড়িয়ে নরকের বিভিষিকায় জ্বালানী দিয়েছিলো।
হ্যাঁ, ইসলাম এবং ইসলামী রাস্ট্রের প্রতি তাদের এ অবস্থান ছিলো আবেগীয় ভাবে সঠিক, তবে বিবেকীয় ভাবে সম্পূর্ন ভুল। ইসলামের কথিত আবেগের অন্ধত্বে তাদের বিবেক এতটাই চাপা পড়েছিলো, তাদের নজরে পরেনি শোষন বৈষম্য, তারা এড়িয়ে গেছে ইসলামের শান্তির বিপরীতে গনহত্যা, লুটতরাজ, ধর্ষন। তারা আবেগী দাসত্ব করেছে ইসলামী রাষ্ট্র নামের এক শয়তানের।
আজ সময়ের নিরিখে আমরা দেখি, তাদের অবস্থান ছিলো ভুল। তারা ইসলামের কথা বলে দাড়িয়েছিলো ইসলামেরই বিপক্ষে। তারা দাড়িয়েছিলো ঈমানী অঙ্গ দেশপ্রেমের বিপক্ষে। এবং তারা ক্ষতি করেছিলো ইসলামেরই!! আজ টিভি, সিনেমা থেকে শুরু করে সর্বত্রই ভিলেন মানেই দাড়িওয়ালা, টুপিওয়ালা ইসলামি ব্যক্তিত্ব! এটা কি তাদেরই পাপের ফসল নয়?
১৯৭১ এর ১৬ই ডিসেম্বর, সেই কথিত ইসলামপ্রেমীদের ভুল প্রমান করেছিলো। শিক্ষা দিয়েছিলো- সময়ের দাবী আবেগীয় অন্ধত্বে নয় বরং বিবেকীয় বীরত্বের। তাই সকল অবস্থাতেই আবেগকে নয় বিবেককেই গুরত্ব দিতে হবে। সময়ের প্রয়োজনে নির্মোহ হয়ে বুক উচিয়ে দাঁড়াতে হবে।
অনেকেই এখন প্রশ্ন করতে পারেন, ২০১৪এ এ থেকে বাংলাদেশ কি শিক্ষা নিতে পারে?
উত্তরঃ ২০১৪তেও কি আমরা উচ্ছিষ্ঠভোগী, দ্বিধান্বিত এবং আবেগীয় শ্রেনী দেখতে পাচ্ছি না?
৫ জানুয়ারীর যে অগ্রহনযোগ্য নির্বাচন হয়েছে! ভোটাধিকার বঞ্চিত অনেক মানুষেরাই নির্বাচন মেনে নিয়েছে! এরাই এ সময়ের উচ্ছিষ্ঠভোগী, দ্বিধান্বিত এবং আবেগীয় শ্রেনী।
আগের মতোই, আমি উচ্ছিষ্ঠভোগী ও দ্বিধান্বিতদের নিয়ে কিছু বলবো না, এরা সব সময়ের এবং সমাজেরই সমস্যা। আমি নজর দিতে চাই সেই আবেগীয় শ্রেনীর প্রতি, যারা ৫ জানুয়ারীতে ভোট দিয়েছে, এ নির্বাচনকে মেনে নিয়েছে কারন তারা আওয়ামীলীগকে ভালোবাসে, তারা বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসে। এ ভালোবাসার আবেগীয় অন্ধত্বে তারা গনতন্ত্রের বিপক্ষে দাঁড়িয়েছে, জনমানুষের বিপক্ষে দাঁড়িয়েছে।
হ্যাঁ, আওয়ামীলীগের প্রতি তাদের এ অবস্থান আবেগীয় ভাবে সঠিক, তবে বিবেকীয় ভাবে সম্পূর্ন ভুল। আওয়ামী আবেগের অন্ধত্বে তাদের বিবেক এতটাই চাপা পড়েছে, তাদের নজরে পরেনি একদলীয় অগ্রহনযোগ্য নির্বাচন যেখানে ভোটের আগেই সরকার গঠনের সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া হয়ে গিয়েছিলো, যেখানে মানুষ ভোটাধিকার বঞ্চিত ছিলো, গনতন্ত্রের কফিনে ঠোকা হয়েছিলো পেরেক। আওয়ামী আবেগে তারা দাড়িয়েছিলো গনতন্ত্রের জন্য দীর্ঘ সংগ্রাম করা দলটির মূল আদর্শের বিপরীতে। তারা বিবেকীয় বীরত্বের বিপরীতে গ্রহন করেছিলো আবেগী অন্ধত্ব।
সময়ের নিরিখে একদিন প্রমান হবে, তাদের অবস্থান ছিলো ভুল। প্রমান হবে- আওয়ামী আবেগে তারা ক্ষতি করেছে গনতান্ত্রিক দল হিসাবে আওয়ামীলীগেরই। ঠিক যেমন ইসলামের ক্ষতি করেছিলো ১৯৭১এ ইসলাম আবেগীরা।
তাই, এ ১৬ই ডিসেম্বরে বাংলাদেশ শিক্ষা নিতে পারে- সময়ের দাবীতে আবেগীয় অন্ধত্ব নয় বরং বিবেকীয় বীরত্বের। যেখানে সকল বাংলাদেশী আবেগকে নয় বিবেককেই গুরত্ব দিয়ে, সময়ের প্রয়োজনে একটি গ্রহনযোগ্য নির্বাচনের দাবীতে, নিজেদের ভোটাধিকার ও গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নির্মোহ হয়ে বুক উচিয়ে দাঁড়াবে।

শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৪

সুন্দরবনের দুর্ভাগ্যের হেতু...

সাঁইজিকে কইলাম- 'সুন্দরবনের এ দূর্ভাগ্যের হেতু কি?
সাঁইজি কইলো- দূর্ঘটনাই দূর্ভাগ্যের হেতু...
হতাশ কন্ঠে কইলাম- ভালই বলিয়াছেন সাঁইজি, দূর্ঘটনা..হাহ..!
বনের মধ্য দিয়া তেলবাহী জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেওয়া স্বাভাবিক ঘটনা! আর একদিন না একদিনের অনিবার্যতা দূর্ঘটনা??
সাঁইজি বিরক্তি নিয়া কইলো- ভুল ব্যাখ্যা করিও না বৎস! আমি বোঝাইছি- গরিবের সুন্দরী বৌ কিংবা সুন্দরবোন থাকাটাই দূর্ঘটনা।
নতস্বরে কইলাম- গোস্তাখি মাপ সাঁইজি। আমি জানতে চাইছি- জাহাজ ডুবি না হয় জাহাজ চলতে দেবার অনিবার্য ঘটনা কিংবা দূর্ঘটনা। কিন্তু ২ দিন পেরিয়ে গেলেও ক্যান তেল অপসারনের সরকারী উদ্যোগ নাই?
সাঁইজি কইলো- পরশ্রীকাতরতা....
অবাক হইয়া কইলাম- 'কন কি সাঁইজি? সুন্দরবন তো প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চার্য হয় নাই। হইলে না হয় কইতাম- ড. ইউনুসের মতো পুরষ্কার পাওয়াই সুন্দরবনের কাল হইছে...
পরশ্রীকাতরতা কি শুধু পুরষ্কারেই হয়??? বলিয়াই সাঁইজি একতারা হাতে নিলো-
♫♪হরিনের মাংসে, জাগে বাঘের সাধ
সুন্দর হওয়াটাই বড় অপরাধ।
কুটিলের প্রনাম্য নয়, দেবী স্বরসতী
কি করে মানিবে, তার চেয়ে সুন্দর সে অতি♫♪

সুরের মায়া কাটাইয়া আমি কইলাম- বাঘের নজরে, হরিনের মাংস হরিনের শত্রু হইতে পারে কিন্তু সৌন্দর্য্য সুন্দরবনের শত্রু হয় ক্যামনে?
সাঁইজি কইলো- 'আওয়ামীলীগের নজরে বৎস, আওয়ামীলীগের নজরে!!!
যে ফ্যাসিবাদী নজরে এখন আওয়ামীলীগই রাইট, অন্য সবাই রং, নুন্যতম ভিন্নমতও নাকি যুদ্ধাপরাধ বিচার বানচালের ঢং!!
আওয়ামীলীগের এমন লুকিং সেটাপে, সুন্দর মানেই আওয়ামীলীগ আর সুন্দরী মানেই নৌকা! সে মাইন্ড সেটাপে, সুন্দরী নামক গাছ আর সুন্দর নামক বন থাকিবে ভাবিলা কি করিয়া? তাই তারা এ বন ধংস করিতে বিদ্যুৎ কেন্দ্র বানাইতে চাই! তাই তারা এ বন ধংস হইতে দেখিয়াও নিরব থাকে! বলিয়াই সাঁইজি গান ধরিল-
♫♪ সুন্দর নামেতেই, অগ্নিসম জ্বালা
নিরবতায় পড়াইতেছে কালো তেলমালা♫♪

শুক্রবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০১৪

মরন ভাবনা

এক.
অসুস্থ্ হলে আমার মৃত্যুভাবনা চলে আসে!
মনে হয়- আমার সময় শেষ হয়ে এসেছে, আমি আর বাঁচবো না...

গত ক'দিন হলো শরীরটা খুব খারাপ। মাথা ব্যথা, সর্দি, গলা ব্যথা, বুক ব্যথা করা শুকনো কাশি। কাশতে কাশতে মনে হয় অচিরেই আমি মারা যাবো! কেন জানি না, মৃত্যু নিয়ে আমার পরম আগ্রহ। হয়তো মৃত্যু অনিবার্য এক পবিত্র নিয়তি বলে কিংবা আমি বেঁচে আছিই মরার জন্য...

তবে আমার ভয় হয়। এ ভয় মৃত্যু নিয়ে নয়! বরং মৃত্যু পরবর্তি অন্ধকার, একাকিত্বময় কবরের। এভয় পাপ-পূন্যের হিস্যায় বিচারের মুখোমুখি হওয়ার। এ ভয় অনন্ত শাস্তি ভোগের...

আমি ভাবছিলাম- জীবনের প্রতি মানুষের যে সুতীব্র আকুতি, তা কি জীবনের মাধ্যমে যতটা পারা যায় অনিশ্চিত পরকালীন জগৎকে এড়ানোর চেষ্টা?

দুই.
মরনে আমার ভয় নেই, মরন নিয়ে আমার পরম আগ্রহ!! আমি ভয় পাই এর পরবর্তি জগৎ নিয়ে...
অনেকেই হয়তো প্রশ্ন করতে পারেন- তফাৎ কি? যখন মরন সে জগৎএরই দরজা?

আসলে আমি মরনকে দেখি জীবনের অর্থ দিয়ে। স্রষ্টা আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন, আমাকে নিয়ে তার উদ্দেশ্য আছে বলে। সে উদ্দেশ্য সফল হলে কিংবা আমার দ্বারা আর তা সফল হওয়া সম্ভব না হলে, আমার মৃত্যু ঘটবে।

আমার দ্বারা স্রষ্টার উদ্দেশ্য সফল হলে- আমার মরতে আপত্তি নেই।
আর আমার দ্বারা সে উদ্দেশ্য সফল হবার সম্ভবনা যদি না থাকে তবে আমার বাঁচার প্রয়োজন নেই।

তিন.
মানব জীবনের বড় ভ্রান্তি হলো- বাঁচার তীব্র আকুতিতে, মরনের মতো অনিবার্য নিয়তিকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা।

শীতকে এড়াতে চাওয়া, পিঁপড়ের গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্তেরই অপচয়।

চার.
চোখ বন্ধ করে, ধিরে ধিরে চলা শ্বাস-প্রশ্বাসে আমি যখন মনকে কেন্দ্রিভূত করি...
আমি অনুভব করি, আমার ভেতর 'আমি'র অস্তিত্ব...
এটা কি সেই, খাঁঁচার ভেতর অচিন পাখি? জীবনের মাধ্যমে যে দেহখাঁচায় বন্দি?

মরন, অভূতপূর্ব এক পবিত্র বিষয়। যেখানে দেহখাঁচায় আত্মার বন্দিত্ব শেষ হয়।

মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর, ২০১৪

দুষ্টু গরুর বিচারে, গরুটি দরদী কাজীর গোয়ালে নেই, কিতাবেও নেই।

(সংশোধনীঃ গত দুই সংখ্যায় ভুলক্রমে আমার নাম আসাদুজজেমানের স্থলে জেমান আসাদ ছাপা হয়েছে। জেমান আসাদ আমার ফেসবুক আইডি, একারনেই এ বিভ্রান্তিকর ভুলটি হয়েছে। কিন্তু লেখা কিংবা ব্যবহারের জন্য আসাদুজজেমানেই আমি সাচ্ছন্দ্য বোধ করি।)

এক.
খ্রিষ্টপূর্ব ৩৫০ সালে(আনুমানিক) অ্যারিস্টটল বলেছিলেন- "যে সমাজে বাস করেনা সে হয় পশু নয়তো দেবতা"
কিন্তু এখন ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দ!
মহান অ্যারিস্টটল, "এখন যে সমাজে বাস করে সে হয় পশু নয়তো দেবতা"!
কোন সুস্থ্য মানুষের পক্ষে এ সমাজে বাস করা সম্ভব না।

দুই.
কোথাকার কোন স্কটল্যান্ডের রাজা রবার্ট দ্য ব্রুস, ৬ বার ব্যর্থ হওয়া মাকড়শার জাল বোনা দেখে যুদ্ধে গেল আর সফল হলো, এটা আমাদের কাছে অধ্যবসায় এর নজির।
অথচ আমাদের ছোটগল্পের আদুভাই, কোন পোকা-মাকড় নয় বরং আত্ম-অধ্যবসায়ে যে অসংখ্যবার ব্যর্থ হয়েও অবিরত প্রচেষ্টার সফলতায় ক্লাস সেভেন থেকে এইটে উঠলো, এটা আমাদের কাছে কটাক্ষের নজির!
আসলে, রবার্ট দ্য ব্রুস রাজা ছিলেন আর আদুভাই অতি সাধারন এক মানুষ!
আদুভাইয়ের অধ্যাবসায়কে কটাক্ষ করে, রবার্ট দ্য ব্রুসয় অধ্যাবসায়ে নজির খোঁজাটা, ক্ষমতাস্তুতির এক অনন্য নজির!

তিন.
রাগে ক্ষোভে ওরা যে, ড. পিয়াস করিমের বুক চিড়ে হিন্দার মতো পৈশাচিক উল্লাসে তার কলিজা চিবিয়ে খায়নি!! এটা ড. করিমের পরম সৌভাগ্য....!
কিন্তু জাতির জন্য পরম দুর্ভাগ্য এটাই যে- প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য এ যুগের হিন্দারা বাংলাদেশের বুক চিড়ে, গনতন্ত্র কলিজাটাই চিবিয়ে খাচ্ছে.....

চার.
সকাল, সকাল ঘুম থেকে উঠে জিমের উদ্দেশ্যে বেড়িয়েছি..
পেশী গঠনের পাশাপাশি, ভারউত্তোলনের অতিব সক্ষমতা অর্জন করা দরকার!
বিশেষত, আওয়ামী বলয়ে যখন সবকিছুই ভার বহনে অক্ষম!
দুদিন আগেই চেতনানুগ আওয়ামীলীগারদের(Awami in law) কথায়- রাজাকারপুত্র ড. পিয়াস করিমের ভার বইতে পারলো না শহীদ মিনার...
অথচ গতকাল আইনে আওয়ামীলীগ(Awami of law) অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছেন- "পিয়াস করিমের বাবা কুমিল্লা জেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা কোষাধ্যক্ষ ছিলেন। পিয়াস করিম মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধিনতার সপক্ষে লিফলেট বিতরন করতেন"
আমি ভাবছিলাম- এ সত্যের ভার এবং একজন মানুষের প্রতি হয়ে যাওয়া অবিচারের পাহাড় শহীদ মিনার কি করে বইবে?
অবশ্য খুব একটা সমস্যা হবে বলেও মনে হয় না! শহীদ মিনারের গায়ে এখন আওয়ামীলীগের উৎকট গন্ধ, ভার বওয়া আর কঠিন কি? যখন এ দূর্গন্ধটাই সহ্য করতে পেরেছে.....
ভাবতে ভাবতেই আমি হাঁটছি। কোথা থেকে যেন ভেসে আসছে সুবির নন্দীর গান-
♫♪আমি বৃষ্টির কাছ থেকে কাঁদতে শিখেছি
আমায় আর কান্নার ভয় দেখিয়ে কোন লাভ নেই♫♪
হঠাৎ করে জিমমুখি রাস্তা পরিবর্তন করে আমি ফিরছি বাসার দিকে!! মনে বাঁজছে-
♫♪আমি ৫ জানুয়ারীর কলংকভার বইতে শিখেছি
আমার আর ভার বইতে জিমে যাওয়ার কোন দরকার নেই.....

পাঁচ.
দুষ্টু গরুর বিচারে, গরুটি দরদী কাজীর গোয়ালে নেই, কিতাবেও(বিচার) নেই।
এটি আমার একটি শব্দ-কৌতুক!
যে শব্দ-কৌতুকের ধারনাটি আমি পেয়েছিলাম, বিখ্যাত একটি চায়নিজ প্রবাদ থেকে-
"A monk holding an umbrella- having neither hair(law) nor sky(providence)"
"ছাতাধারী সন্ন্যাসীর মাথায় চুলও(আইন) নেই, আকাশও (ঐশ্বরিক সাহায্য) নেই।"
এ প্রবাদে শব্দ-কৌতুক না পেয়ে, অনেকেরই শব্দ-কৌতুহল হতে পারে। মনে হতে পারে এখানে কৌতুক কোথায়?
আসলে, চাইনিজ ভাষায় আইন এবং চুল না থাকা শব্দদুটির উচ্চারন প্রায় একই রকম। তাই যখন চুল না থাকার কথা বলা হয়, তখন তা আইন না থাকার কথাও বুঝিয়ে থাকে। আবার সাধু যখন মাথায় ছাতা ধরে তখন তার এবং আকাশের মাঝে প্রতিবন্ধক হিসাবে ছাতাটি অবস্থান করে। এখানে আকাশ দিয়ে সর্গ এবং ঐশরিক সাহায্য বোঝানো হয়েছে। মানবীয় এবং স্বর্গীয় আইন ভংগকারীর কথা এ প্রবাদে বলা হয়েছে।
চায়নিজ বানীতে শব্দ-কৌতুক খুঁজে পাওয়ার পর এখন অনেকেই কৌতুহলী হতে পারেন- আমার বানী অর্থ্যাৎ "দুষ্টু গরুর বিচারে, গরুটি দরদী কাজীর গোয়ালে নেই, কিতাবেও(বিচার) নেই"। এখানে শব্দ কৌতুক কোথায়?
আসলে, আইন কিতাবে লিপিবদ্ধ থাকে। কিন্তু সে আইন যদি প্রয়োগ না হয় বা পক্ষপাতদুষ্ট প্রয়োগ হয় তখন তা বিচার বলা যায় না।।
রাজনৈতিক তরজমাঃ হজ্জ ও মহানবীকে নিয়ে কটাক্ষ করা দুষ্টু গরুর বিচারে, দরদী কাজি গরুকে গোয়ালে রাখেনি! কিন্তু আইনানুগ ব্যবস্থাও নেয় নি!
লতিফ সিদ্দিকী মন্ত্রীসভায় কিম্বা দলীয় পদে নেই, কিতাবেও(বিচার) নেই.....

ছয়
বিএনপির অবস্থা দেখলে মনে হয়, তারা যাতার ওপর ঘুমাচ্ছে!!
গম ভেঙ্গে আটা তৈরী করা হয় যাতা ভেঙ্গে। সে জন্য যাতা ঘুরাতে হয়।
কেউ যদি যাতার ওপর শুয়ে থাকে, তাহলে গম থেকে আটা তৈরী হবে না।
ভাগ্যের চাকা পরিবর্তন করতে হলে কঠোর সংগ্রায় করতে হবে। ঘুমিয়ে দিন কাটালে ভাগ্যের চাকা ঘুরবে না।
ক্ষমতা লুটকারীর বিরুদ্ধে, জনগনের অকুন্ঠ সমর্থন সত্বেও বিএনপি ৫ জানুয়ারীর নির্বাচন রুখতে পারেনি! কারন একতরফা নির্বাচনের গোয়ারতুমি থেকে নির্দলীয় নির্বাচনে বাধ্য করার জন্য জনসমর্থনের যাতাটা ঘুরাতে পারেনি!!!
কারন, তারা ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় যাতার ওপর ঘুমিয়েছে, ঘুরায় নি! অবশ্য তারা ঘুরানোর চেষ্টা করেছে, কিন্তু বালির ট্রাকেই আটকে গেছে গনতন্ত্রের যাতা....কিন্তু এ প্রতিবন্ধকতা যদি জয় করাই না যায়? কিংবা ব্যর্থ হলে, প্ল্যান 'বি' যদি না থাকে? তবে রাজনীতি করার দরকার কি???
এখনও বিএনপি যাতার ওপর ঘুমাচ্ছে, ঈদের পর, ঈদের পর করে ক্ষমতার স্বপ্ন দেখছে! যে স্বপ্নে জনগন কিংবা বিদেশীরা তাদের ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে!
এখন, বিএনপি আগামী তিন মাসে দলগোছানোর কথা বলছে। একথা সত্যি যে- ওয়ান-ইলেভেন থেকে শুরু করে গত ৮ বছরে বিএনপির ওপর বিভিন্ন ভাবে যে রাজনৈতিক নিপিড়ন চলেছে, তা স্বত্বেও দলটিতে ভাঙ্গন তৈরী না হওয়াটি বিষ্ময়কর। আবার অবিশ্বাস্য টুইস্ট এটাই যে, কেন্দ্রীয় ঐক্য ধরে রাখতে সফল হলেও দলটি মাঠপর্যায়ে সংগঠিত হতে পারেনি!
এখন প্রশ্নহলো- যে দলটি নানারুপ নির্যাতনের খড়গে দাড়িয়ে, ৮ বছরে দল গোছাতে পারেনি! সে দলটি কোন যাদুবলে আগামী ৩ মাসে দল গোছাবে? এটা কতটুকু বিশ্বাস যোগ্য...
আসলে, প্রকৃত বাস্তবতা এটাই- বিএনপির ছোট ছোট ডেটলাইন, সেটা ঈদের পরেই হোক কিংবা ৩ মাস পড়ে অথবা ২০১৪'র শেষে, এমন কথাগুলো জনগনের ক্ষোভকে স্বল্প সময়ের জন্য ব্লক করে দিচ্ছে!
বিএনপির প্রতি জনগনের গনতন্ত্র আস্থার সাথে দলটি বেইমানি করছে...
৫ জানুয়ারীর নির্বাচন শুধু গোয়র্তুমিতে উন্মাদ হয়ে যাওয়া এক নব্য স্বৈরাচারের তান্ডবই নয়! জনগনের আকাক্ষাকে ধারন করে বিএনপির মূশক প্রসব এক ধরনের প্রতারনাও বটে।।
যেখানে, একতরফা নির্বাচন করা আওয়ামীলীগ আমার চোখে নিকৃষ্ট পাপী। আর বিএনপি, জনআস্থাকে পূজি করে, জনক্ষোভকে ব্লক করে দেবার জন্য অপরাধী.....

সাত.
অটিস্টিক নিয়ে একটা আর্টিকল পড়ছিলাম- "মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের অধিকহারে অটিজমে আক্রান্ত হতে দেখা যায়। অটিজমের ক্ষেত্রে মেয়ে ও ছেলের অনুপাত প্রায় ১:৪।
এতটুকু পড়ে আমি খুব আগ্রহ নিয়ে গেলাম জাতীয় সংসদের ওয়েব সাইট http://www.parliament.gov.bd/ তে।
সেখানে ৫ জানুয়ারীর ১০ম জাতীয় সংসদ সদস্য তালিকা থেকে এক এক করে গুনে যে তথ্যটি বের করলাম- সংসদে ৩৫০ জন সাংসদের মধ্যে ৭০ জন নারী এবং ২৮০ জন পুরুষ।
অর্থ্যাৎ, এ সংসদে নারী ও পুরুষের অনুপাত ৭০:২৪০!(উভয়পক্ষে ৭০ ভাগ করি)
তাহলে, ৫ জানুয়ারীর সংসদে নারী ও পুরুষের অনুপাত দাঁড়ায় ১:৪! যা কিনা অটিজমে আক্রান্ত মেয়ে ও ছেলের অনুপাত....
সত্যি, অভূতপূর্ব বাস্তবতাময় এ অনুপাত সাদৃশ্য

শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর, ২০১৪

নিরপেক্ষতা নিয়ে মন্তব্যমালা

এক.
দলবাজিকে আকর্ষনীয় মোড়কে বাজারজাত করার অসাধারন ক্ষমতার নাম 'নিরপেক্ষতা'
দুই.
ফেসবুকে নিরপেক্ষ থাকার আদর্শ উপায় হলো- কীবোর্ড ভেঙ্গে ফেলা।
তিন.
নিরপেক্ষতা, এমন এক অভিনয়। যেখানে দ্বৈত চরিত্রে অভিনয় করতে হয়।
চার.
নেংটা রাজার পোশাকের প্রসংশা করাটা পক্ষপাত,
রাজাকে নেংটা বলাটা পক্ষপাত,
আর রাজা নেংটা তবে তার গুপ্তঅঙ্গের কেশগুলো সুন্দর...এমন ব্যালান্সই নিরপেক্ষতা।
পাঁচ.
মুক্তিযোদ্ধারা একটা পক্ষ,
রাজাকারেরা আরেক পক্ষ,
আর সোনাগাছির ফুর্তিবাজেরা নিরপেক্ষ।
ছয়,
স্রষ্টার অশেষ রহমত,
মুক্তিযুদ্ধের বীর সন্তানেরা নিরপেক্ষ থাকতে চায়নি, তারা স্বাধিনতার পক্ষ নিয়েছিলো।
নিরপেক্ষ থাকার ভন্ডামি তাদের স্পর্শ করেনি বলেই, এ দেশটা এখন বাংলাদেশ।
সাত.
নিরপেক্ষতা হলো- একই সাথে নায়ক ও ভিলেনের সাথে নায়িকার গ্রুপ সেক্স।
আট.
শ্বেতাঙ্গ-কৃষ্নাঙ্গ' মধ্যে, আমি কারোরই নয় কিংবা আমি দুজনার।
এর নাম দেয়া হয় নিরপেক্ষতা
অথচ এটার নাম মানবতা। এটাও একটা পক্ষ। এটা মানবতার পক্ষ।

মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর, ২০১৪

মুহূর্তের মন্তব্য

সাম্প্রতিক সময়েই জাতি হারিয়েছে, বিরুপ সময়ের বিপোরিতে দাড়ানো দুই সাহসী সন্তান। ভাষা সৈনিক আব্দুল মতিন এবং বরেণ্য বুদ্ধিজীবী ড. পিয়াস করিম। অথচ একটি দেশ ও জাতি কতটা অকৃজ্ঞ হলে, কতটা বর্বর হলে, মৃত্যুর পর তাদের প্রাপ্য মর্যাদাপূর্ন সন্মান না দিয়ে, মৃত মানুষের প্রতি কুৎসা এবং প্রতিহিংসায় লিপ্ত হতে পারে! সত্যি, বিচিত্র এ দেশ! এ বিষয়ে ফেসবুকে দেয়া কয়েকটি নির্বাচিত মন্তব্য এখানে দেয়া হলো।

এক.
মৃত্যুর পর ভাষা সৈনিক মতিন, রাষ্ট্রীয় মর্যাদা না পেলে, তার মর্যাদা কমে না।
এতে মর্যাদা কমে ভাষার, প্রকাশ করে রাষ্ট্রের দৈন্যতা, ফেলনা হয়ে পড়ে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা...
অবশ্য, রাষ্ট্রেরই যেখানে মর্যাদা নেই। বাংলা মায়ের সন্তানের ভোটাধিকারের যেখানে গুরুত্ব নেই। লুটেরার হাতে যখন ঘটছে বাংলা মায়ের সম্ভ্রমহানী!
তখন, মায়ের ভাষা রক্ষা করা এক সৈনিক সন্তানের মরোনত্তোর মর্যাদা প্রত্যাশাও এক বিরম্বনা....
আমরা মানি বা না মানি- ভাষা সৈনিক মতিনের মৃত্যু হয়েছে ক'দিন আগে কিন্তু এদেশের তরুনদের মাঝে সেই যৌবনিক শক্তির অপমৃত্যু হয়েছে অনেক আগে! যে শক্তির অ্যামবাসেডর ছিলেন ভাষা মতিনের মত তরুন দেশপ্রেমিকেরা।
এদেশের তরুনদের রাজনৈতিক নপূংসতা, ভাষা মতিনের শেষ সময়গুলোকে অসহ্য করেছিলো নিশ্চই! তারুন্যের এতটা অথর্ব যৌবনিক শক্তি দেখার চেয়ে মৃত্যুটাও বড় প্রশান্তির, স্রষ্টা প্রদত্ত এক মর্যাদা...

দুই.
নগ্ন রাজাকে দেখে চুপথাকা কিংবা অদৃশ্য পোশাকের প্রসংশায়মাতা মানুষের ভিড়ে,
রাজা নেংটা, বলার মত মানুষগুলো দিনদিন কমে যাচ্ছে....
ড. পিয়াস করিম,
চলে যাবার জন্য এটা নিতান্তই অসময়....
বিশেষত, নগ্ন রাজার উলঙ্গপনার অতিষ্ট সময়ে, আপনার সাহস ও স্পষ্ট ভাষন, মোহাচ্ছন্ন জনগনকে দেখিয়ে দিতে পারতো- 'ওমা, রাজাজে সত্যি নেংটা.....

তিন.
হে পরোয়ারদিগার, তোমার হাজার শোকর।
কদিন আগেই তুমি ভাষা মতিন সাহেবকে উঠিয়ে নিয়ে, একজন ভাষা সৈনিককে শহিদ মিনার বিভক্ত দেখার যন্ত্রনা থেকে মুক্তি দিয়েছ....

চার.
জীবিত পিয়াস করিমের কথার জবাব যারা দিতে পারে নি,
তারাই আজ মৃত ব্যক্তিটির বিরুদ্ধে দাড়িয়েছে...এরা এতোটাই কাপুরুষ।।
ড. পিয়াস করিম স্বার্থক,
জীবিত অবস্থায় যুক্তির মাধ্যমে যাদের নির্বাক করেছেন, মরনের পরও তাদের কাপুরুষ প্রমান করে দিয়েছেন....

মঙ্গলবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

নির্বাচিত মুহূর্তের মন্তব্য

ঈদ ও পূজা একসাথে এসেছে। এ নিয়ে করা কয়েকটি নির্বাচিত মন্তব্য এখানে দেয়া হলো-


এক.
"ত্যাগের মহিমা ত্যাগী কোরবানি, যেন শুধুই আমিষের অসামান্য চাহিদা পূরন"
দুই.
"হে পরোয়ারদিগার, তোমায় হাজার শোকর...
পুরা মাংস বিলিয়ে দেয়ার ঈমানী পরিক্ষায় তুমি আমাদের ফেলনি..."
তিন
আজকাল কি যে হইছে? কোরবানির গরুর সাথে তোলা সেলফি গুলো দেখলে- কোনটি গরু? কিংবা কয়টি গরু? বুঝতে ব্যপক সমস্যার সম্মুখিন হই!
চার.
ফ্রিজের দোকানে অসম্ভব ভিড় দেখলে বোঝা যায়, কোরবানি আসছে....
এ নব্য কেনা ফ্রিজগুলো ত্যাগের মহিমাকে আগেই কোরবানি করে ফ্রিজিং করার ব্যবস্থা মাত্র!

পাঁচ.
অসূর শুধু অনাচারিই নয়, নির্বোধও বটে!
অমন দৃষ্টিতে বিদ্ধ হবার সুযোগ না নিয়ে, ত্রিশুল বিদ্ধ হওয়া শুধু গাধাদের পক্ষেই সম্ভব!

ছয়.
পূজার জন্য কুমারী পাওয়া হয়তো সম্ভব! কিন্তু যদি 'কুমার পূজার' বিধান থাকতো, তবে অসূর দমনের মতোই কঠিন হয়ে পড়তো একটা সত্যিকারের কুমার খুঁজে পাওয়া।
সাত.
পূজোয় লাল পেড়ে শাড়িতে ঘোমটা তে ঢাকা কলা বৌয়ের সাথে এদেশের নব্য বৌদের আমি মিল খুঁজে পাই! বিয়ের স্বীদ্ধান্তে মেয়েরা, বৌ সাজা কলাগাছ ছাড়া আর কিছুই নয়।
আট.
প্রতি বছর অসূর দমনের এক টিকিটে, দেবী বাপের বাড়ি আসে..
কিন্তু অসূরেরা 'অসূর2, অসূর3, অসূর4.... নামে সিক্যুয়ালী কালে কালে ফিরে আসে....
নয়.
৫ জানুয়ারীর ভোটাধিকার হরন, অসূরিয় অনাচারের গনতন্ত্র ভার্শন

মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

সারপ্রাইজ ডেমক্রেসির বিরম্বনা

(বাংলাদেশ নিয়ে ফেসবুকে দেয়া আমার 'মুহূর্তের মন্তব্যর' কয়েকটি নির্বাচিত মন্তব্য এখানে দেয়া হলো)

এক.
বাংলাদেশ রাষ্ট্রে এখন শুধুই স্তম্ভ!
নির্বাহী বিভাগ, আইন সভা, বিচার বিভাগ, ও মিডিয়া।
এ স্তম্ভগুলো দূর্বল করা হয়েছে কি হয়নি? এ প্রশ্নর চেয়েও বড় কথা- স্তম্ভের ওপরে যদি না থাকে জননিরাপত্তার ছাওনি! স্তম্ভের ওপর রাষ্ট্র দাড়িয়ে থাকলেও সেটা জনগনের উপযোগী নয়...
হায়, বাংলাদেশ নামক ঘরের স্তম্ভগুলোই শুধু দাড়িয়ে আছে! যেগুলোকে দেখলে আমার সুশাসনের 'স্মৃতিসৌধ' মনে হয়! যে চারটি স্তম্ভ সৌধের প্রতি বর্গমিলিমিটারে লেখা আছে 'জনঅধিকার হত্যার এপিটাফ'।

দুই.
সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী, সুইট সিক্সটিন নয়!
এটা বাকশালের বর্গ....
খেয়াল করুন, ৪ এর বর্গ ১৬।
সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীকে আমার চতুর্থ সংশোধনীর বর্গ বলে মনে হয়।
চতুর্থ সংশোধনীতে বহুদলীয় রাজনীতির পরিবর্তে একদলীয় রাজনীতি প্রবর্তন করা হয়েছিলো। ষোড়শ সংশোধনীতে সে একদলীয় শাসনকেই প্রাতিষ্ঠানিক তবে কৌশলী রুপ দেয়া হচ্ছে...

তিন.
বাংলাদেশের গনতন্ত্রে আব্রাহাম লিঙ্কনের চেয়ে সানি লিয়নের প্রভাবটাই বেশী-
ধর্ষন সম্পর্কে সানি বলেছিলো- 'ধর্ষন হলো সারপ্রাইজ সেক্স'!
৫ জানুয়ারীতে যেভাবে ভোটাধিকারকে ধর্ষন করা হয়েছে! আওয়ামীলীগ আর 'জনগনের জন্য, জনগনের দ্বারা, জনগনের সরকার' নয়।
তাদের হাতে গনতন্ত্র সালি লিয়নের 'সারপ্রাইজ ডেমক্রেসি' ছাড়া আর কিছুই নয়...

চার.
গনতন্ত্র বেওয়ারীশ নয়! গনতন্ত্রের বহুওয়ারীশ!!
তবুও হায়!!
গায়েব হয়ে যাওয়া গনতন্ত্র,
বাংলাদেশে এখন তোমার জন্য, গায়েবানা জানাজাই পড়তে হবে....

পাঁচ.
বাংলাদেশ যেনো এক, মধ্যবিত্ত পতিতা!
যে কামনা করে পতির পূন্য, একি সাথে পতিতার সুখও...
মেনে নেয় ভোটাধিকার হরন, একি সাথে কামনা করে গনতন্ত্রও!

ছয়.
১৮ বছর বয়স, সত্যি দুঃসহ!!!

সাধারনত ১৮ বছর বয়সে, তরুনেরা ভোটার হয়। কিন্তু '৭২-এর মেট্রিকের মতো ২০১৪'র যে ইলেকশন!
১৮ বছর বয়স, এখন ভোটাধিকারের নয়! বরং ভোটাধিকার হরনের।

২০১৪ সালের গনতন্ত্র, ১৮ বছর বয়স সত্যি দুঃসহ.......

সাত.
বাংলাদেশে এখন অসুস্থ্যরাই ভালো আছে........
নির্বাচনের আগে অসুস্থ্য হওয়া এরশাদ, এখন ভালো আছে!
ফাঁসির রায়ের আগে অসুস্থ্য হওয়া নিজামী, এখন ভালো আছে!
আসলে, ৫ জানুয়ারীর অসুস্থ্য সরকার যেখানে ভালো আছে! তখন অসুস্থ্যরা ভালো থাকবেই...
শুধু দুঃখ হয়, অসুস্থ্য বাংলাদেশই কেবল ভালো নেই!!!

আট.
"অধিকার ছাড়িয়া দিয়া, অধিকার রাখিতে যাইবার মত বিরম্বনা আর নাই"
৫ জানুয়ারীর অগ্রহনযোগ্য নির্বাচনে বাংলাদেশের অধিকার লুটেরাদের হাতে ছাড়িয়া দিয়া, বিচারপতি অভিসংশনের ষোড়শ সংশোধনীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের স্তম্ভ বিচারবিভাগের স্বাধীনতা রক্ষা করিতে চাওয়াও এক বিরম্বনা!
বাংলাদেশ, তুমি এখন এক বিরম্বনার নাম।

নয়.
বসন্ত পেতে হলে, মাঘের শীতের হাঁড় কাপুনি পেরিয়ে আসতে হবে..

প্রিয় বাংলাদেশ,শাসকের বিরুদ্ধে জনগনের প্রতিরোধকে যে নামেই ডাকি!
কিবা আসে যায়! হোক সেটা আরব বসন্ত কিংবা বাংলার বসন্ত!
এ বসন্ত পেতে হলে শোষকের মরন কামড়ে তোমাকে কাঁপতেই হবে....

দশ.
প্রত্যেক সরকারের কিছু চাহিদা থাকে।
জনগনের অকুন্ঠ সমর্থন, রাষ্ট্রের পূর্ন নিয়ন্ত্রন ইত্যাদি।
৫ জানুয়ারীর অগ্রহনযোগ্য নির্বাচনের আওয়ামী সরকারের যেহেতু জনসমর্থন নেই, তাই তাদের অপরাপর চাহিদাগুলো বেশী সক্রিয় হয়ে উঠেছে! এবং জনগনের বিপরীতে দাড়িয়ে ক্ষমতা টেকাতে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন হয়েছে।
গনমাধ্যম নীতিমালাই বলি কিংবা বিচারপতি অভিশংসনের জন্য সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনি! এটা আওয়ামীলীগের বিশেষ চাহিদাকেই নির্দেশ করে। তাই আমরা বলতে পারি, বর্তমান আওয়ামী সরকার বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন সরকার।
'বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন' কথাটিতে অবশ্য উপমাগত পার্থক্য দেখা দিতে পারে! বিশেষ চাহিদা একদিকে যেমন থাকে অটিস্টিকের! অন্যদিকে থাকে প্রতিভাবানের। তাই গনমাধ্যম নীতিমালা কিংবা বিচারপতি অভিশংসনের বিশেষ চাহিদার জন্য একপক্ষ আওয়ামীলীগকে অটিস্টিক বলতে পারে! অন্যপক্ষ এ বিশেষ চাহিদার জন্য আওয়ামীলীগকে রাজনৈতিক প্রতিভাবানও বলতে পারে!
এখন প্রশ্ন হলো- এ উপমাগত পার্থক্যের একক মূল্যায়ন কি?
উত্তরঃ ৫ জানুয়ারীর সরকার অবশ্যই অটিস্টিক সরকার। আবার জনমতকে উপেক্ষা করে একতরফা নির্বাচন করে টিকে থাকাটাও প্রতিভারই নিদর্শন। তবে মনে রাখতে হবে, এ প্রতিভা ভোটাধিকার হরন করার! এ প্রতিভা একটি সুষ্ঠ নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করার, এ প্রতিভা ভিন্নমত দমন করে টিকে থাকার....
তাই, এ উপমাগত পার্থক্যের একক মূল্যায়ন- আওয়ামীলীগ সৈরাচারী আচরনে আর্টিস্টিক কিন্তু গনতান্ত্রীক সরকার হিসাবে অটিস্টিক।
গনতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করা একটি দেশের সরকার হিসাবে আওয়ামীলীগের এ প্রতিভা এবং প্রতিবন্ধীতা তাদের বাকশাল শেকড়ের 'নিউরো বায়োলজিক্যাল ডিজর্ডার'।

সহিংস অক্টোবর কোনদিকে যাবে?

সময়কাল-অক্টোবর ২০০৬

সেবার ঈদ উৎসবটা অনেক আগেই শুরু হয়েছিলো। যে উৎসবে বাড়ি ফেরার তাড়া ছিলো না, টিকিট কাটার লাইন ছিলো না ! বাসে ট্রেনে অস্বাভাবিক ভিড়ও ছিলো না!
তবে ঈদের মতোই খুশি ছিলো, আনন্দ ছিলো, ছিলো বিশ্বকে কিছু দিতে পারার গর্ব। একজন বাংলাদেশীর (ডঃ ইউনুস) নোবেল জয় ঈদের ঠিক ১৩ দিন আগেই পুরো জাতিকে এনে দিয়েছিল সার্বজনীন এক আনন্দের উপলক্ষ।
কিন্তু শান্তিতে নোবেল জয় এদেশের মানুষকে আনন্দিত করলেও শান্তি এনে দিতে ব্যর্থ হয়েছিলো। তাইতো সেসময় রাজনৈতিকভাবে উত্তপ্ত হয়েছিলো, রক্তাক্ত হয়েছিলো, রাজপথ। লগি বৈঠার আঘাতে সাপের মতো মরেছিলো মানুষ। মৃত মানুষের লাশের উপর হয়েছিলো উদ্দাম নৃত্য। যে দৃশ্য হার মানিয়েছিল কোন অ্যাকশন-থ্রিলার ছবিকেও। আমি জানিনা কোন ড্রামাক্রিটিক এই দৃশ্যকে কিভাবে নিতেন।
বিংশ শতাব্দীর ইংল্যান্ডের বিখ্যাত ড্রামাক্রিটিক ছিলেন কেনেথ টাইনান। উপন্যাসিক হিসেবে সমাদৃত এবং নাট্য সমালোচক হিসাবে বিখ্যাত টাইনান কখনো নাটক লেখেননি! কেন নাটক লেখেননি এমন এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন-
একজন মানুষ তার জীবনে কলম দিয়ে যা কিছু লিখতে পারে তার মধ্যে সবচেয়ে কঠিন হলো নাটক লেখা”।
কঠিন বলেই হয়তো টাইনান নাটককে এড়িয়ে গেছেন। কিন্তু তিনি বলে যাননি, আমাদের জীবনটাই একেকটা নাটক, আর সে নাটক এড়ানো সম্ভব নয়! সেটা ব্যক্তি জীবনেই হোক কিংবা জাতীয় জীবনে!
তাইতো ২৮ অক্টোবর’০৬ বাংলাদেশ এড়াতে পারেনি রাজপথের লগি বৈঠার নাটক। কোন মঞ্চ কিংবা টিভি নাটকের সাথে এ লগি বৈঠার নাটকের বৈসাদৃশ্য হলো-
টিভি নাটকে ঝুঁকিপূর্ণ দৃশ্যে স্ট্যানম্যান ব্যবহার করা হয়। যেখানে রক্ত ঝরে না, ঝরে আলতা। কিন্তু ২৮ অক্টোবরের সেই লগি বৈঠার নাটকের মানুষগুলো কোন স্ট্যানম্যান ছিলো না। লগি বৈঠার আঘাতে তাদের শরীর থেকে আলতা ঝরেনি বরং রক্তই ঝরেছিলো।

সময়কাল- অক্টোবর ২০১৪

আশ্বিন মাসের শেষ সপ্তাহ চলছে। বাংলা প্রবাদে একটা কথা আছে- আশ্বিন, গা শিন শিন। কিন্তু বৈষয়িক উষ্ণতায়, আশ্বিনে পড়ে না গা শিন শিনে শীত, সব কিছুই যে এখন সুসময়ের বিপরীত। পৃথিবীটাই তো এখন উষ্ণ হয়ে উঠছে!
সে উষ্নতাতেই ৫ জানায়ারী একটি একতরফা ও অগ্রহনযোগ্য নির্বাচনে দেশের দখল নিয়েছে আওয়ামীলীগ!
এর অভাবিত দিকটি হলো- সেই ১৯৫৮ থেকে সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করা জাতি, ৫ জানুয়ারীর নির্বাচন এবং নির্বাচন নামক তামাশাকারী গনতন্ত্র মোড়কের সৈরাচারকে মেনে নিয়েছে একরকম বিনা বাঁধায়! বালির ট্রাকেই আটকে গেছে দীর্ঘ সংগ্রামের গনতন্ত্র যাত্রা, বন্ধ করা গেছে আওয়ামীলীগের দেখানো লগি বৈঠার তান্ডব!
আমি ভাবছিলাম- তবে কি সহিংসতাই গনতন্ত্রের নিয়তি?
এ ভাবনার মাঝে আমি দেখছিলাম, আজকের দিনপঞ্চি-
আজ ২রা অক্টোবর, আন্তর্জাতিক সহিংসতা প্রতিরোধ দিবস বা আন্তর্জাতিক অহিংস দিবস।
১৮৬৯ সালের এই দিনে জন্মগ্রহণ করেছিলেন অখন্ড- ভারতের অন্যতম প্রধান রাজনীতিবিদ এবং অখন্ড- ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অগ্রগামী ব্যক্তি মোহন দাস করমচাঁদ গান্ধী বা মহাত্মা গান্ধী।
যিনি ছিলেন সত্যাগ্রহ আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা। যে আন্দোলন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো অহিংস মতবাদ বা দর্শনের ওপর এবং এটি ছিলো ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম চালিকাশক্তি। সারা বিশ্বের মানুষের স্বাধীনতা এবং অধিকার পাওনায় আন্দোলনের অন্যতম অনুপ্রেরণা।
মহান এ নেতার স্মরণে ভারত সরকার দিবসটিকে গান্ধী জয়ন্তী হিসাবে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করলেও ২০০৭ সালে জাতিসংঘ দিবসটিকে আন্তর্জাতিক অহিংস দিবস হিসাবে পালনের ঘোষণা দেয়।
এ অক্টোবরেই জন্ম নিয়ে মোহন দাস করমচাঁদ গান্ধী অহিংসার যে আলো ছড়িয়েছেন, সে আলো তাকে করেছিলো মহাত্মা আর বিশ্বব্যাপি ছড়িয়ে দিয়েছিলো ঘৃনার বিপরিতে ভালোবাসার মন্ত্র!!!
আমি ভাবছিলাম- ২০০৬ এর সহিংস অক্টোবরের বিপরিতে ২০১৪'র অহিংস ভালোবাসার মন্ত্র কি গনতন্ত্র ফেরাতে পারবে?
লেখাটি যখন লিখছি, চারিদিক থেকে ভেসে আসছে ঢাকের শব্দ। শুরু হয়েছে শারদীয়া দুর্গাউৎসব।
ছোটবেলা থেকেই যে উৎসবটা আমার অসম্ভব প্রিয়। দশমীর দিনে যে মেলা হতো, তাতে প্লাস্টিকের লাটিম পাওয়া যেতো, হাতে পেঁচিয়ে শূন্যে ছেড়ে দিলে যে লাটিম বাতাসে ঘুরে উঠতো। লোহার আলযুক্ত কাঠের লাটিম ঘোরানোর সাহস আমার তখনো হয়নি!
ছোটবেলায় ভিতু ছিলাম কিনা জানিনা, তবে কখনো হাতি দেখলে ভয়ে দৌড়ে পালাতাম। অথচ আশ্চর্য, ষষ্টীর সকালে আমি মন্দিরের সামনে ছুটে যেতাম গনেশ ঠাকুরকে দেখার প্রত্যাশায়!
আমি এখনো ছুটে যাই, তবে গনেশকে নয় দেবী দুর্গাকে দেখতে, দুর্গাদের দেখতে!!! মন্দিরের ভেতরে এক দুর্গা, বাহিরে অসংখ্য দুর্গা!!! মন্দিরে অসুর বিদ্ধ হয় ত্রিশুলে আর বাহিরে আমি বিদ্ধ হই দৃষ্টির দংশনে!!!
আমি ভাবছিলাম- অসুরও বিদ্ধ হতে পারতো দৃষ্টির দংশনে? বধ হতে পারতো ভালোবাসার মন্ত্রে? 
কিন্তু হায়! অবিচারের পাহাড়ে তৈরী হওয়া অসুরের, দৃষ্টি বিদ্ধ ভালোবাসার মন্ত্র নয় বরং দূর্গতিনাশক ত্রিশুলই প্রাপ্য।
এখন বাংলাদেশকেই বেছে নিতে হবে- ২০০৬ এস সহিংস অক্টোবর, ২০১৪য় কি রুপ নেবে সহিংসতায়? অহিংসতায়? নাকি অসুর দমনে?

শুক্রবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

পলিটিক্যাল গেমারের আঁতাত গেমস!

(সাঈদীর রায় নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে ফেসবুকে দেয়া আমার 'মুহূর্তের মন্তব্যর' কয়েকটি নির্বাচিত মন্তব্য এখানে দেয়া হলো)

এক.
আওয়ামী ফ্র্যাঞ্চাইজির "যুদ্ধাপরাধ প্রিমিয়ার লীগ" জমে উঠেছে....
শাহবাগি বল সিমানার বাহিরে, জামায়াতি চিয়ারলীডারদের বৃহস্পতি ও রোববার হরতালি উল্লাস...আম্পায়ার দুহাত তুলে জানিয়ে দিলেন- আর অক্কা নয়, এটা ছক্কা....

দুই.
বুঝলাম- 'তলে তলে জামায়াতের মহিলা আমির' নামক নতুন পদ সৃষ্টি হইয়াছে.....!!

তিন.
"আমার মনও শাহবাগের আন্দোলনে ছুটে যেতে চায়।" -১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৩, সংসদে শেখ হাসিনা।
হায়!! শাহবাগে ব্যাবহৃত আজকের জলকামান আর টিয়ারসেল, বাঙ্গালির দূর্বল স্মৃতিকে শুধুই উপহাস করে..

চার.
সাঈদীর ফাঁসির পরিবর্তে আমৃত্যু কারাদন্ড দেয়া পাঁচ বিচারপতির যে অভিশংসনের দাবী এখনো ওঠেনি!! দেখে আমি বিষ্মিত........!!
অথচ 'চেতনা গেইম' বাঁচাতে, এটাই হতে পারে আওয়ামীলীগের শেষ এবং একমাত্র অস্ত্র!!

পাঁচ.
অগ্রহনযোগ্য নির্বাচনে আসা ক্ষমতার স্বস্তি নিশ্চিত করতে, আওয়ামীলীগ বড় অস্বস্তিতে ফেলেছে নুন্যতম বোধ সম্পন্ন আওয়ামী সমর্থকদের...
অবশ্য, এ নিয়ে গোপন অস্বস্তি কাজ করছে, গোঁড়া আওয়ামীলীগারদেরও! যারা এখনো লোক দেখানো আনুগত্যে বলে যাচ্ছেন- "জামায়াতের সাথে আওয়ামীলীগের কখনোই সমঝোতা হতে পারে না"!
ভাইলোগ,
ধৈর্য্য ধরুন। আর কদিনের মধ্যেই অপেক্ষাকৃত দূর্বল গিনিপিগ কামরুজ্জামানের ফাঁসির মাধ্যমে, শিশু ভোলানো বিচার দেখানো হবে....
যা আপনাদের আঁতাত অস্বস্তি দুর করে, উচ্চস্বরে "জামায়াতের সাথে আওয়ামীলীগের কখনোই সমঝোতা হতে পারে না"! বলার গলার জোড় বাড়িয়ে দেবে..

ছয়.
বান্ধবির বাবা-মা বাসায় না থাকার সুযোগে বাসার দখল নিয়েছেন আপনি!
সমস্যা বলতে, বান্ধবির অতি পাকনা ছোট ভাই! এখন আপনি কি করবেন?
এক বক্স চকলেট আর কয়েকটি গেমস ডিস্ক নিয়ে যান। আপনার কথিত শ্যালকটি চকলেট খেতে খেতে, ভিডিও গেমস নিয়ে ব্যস্ত থাকবে। আর আপনি নিশ্চিন্ত নির্ভবনায় চালাবেন আপনার রেসিং গেম!!
রাজনৈতিক তরজমাঃ
৫ জানুয়ারী ভোটার বিহীন নির্বাচনে দেশটার দখল নিয়েছে আওয়ামীলীগ!
সমস্যা বলতে, অতি পাকনা জনগন! এখন আওয়ামীলীগ কি করছে?
এক বক্স চেতনা ধরা খাওয়া চকলেট আর আঁতাত গেমস সরবরাহ করেছে। জনগন, আওয়ামীলীগের চেতনা ধরা খাওয়ার চকলেট খেতে খেতে, আঁতাত গেমস নিয়ে মেতে আছে! আর আওয়ামীলীগ নিশ্চিন্ত নির্ভবনায় সংবিধানের ষোড়শ সংশোধন করে ফেলছে!
ওয়েল প্লেইড, দ্যা পলিটিকাল গেমার 'আওয়ামীলীগ'।

শুক্রবার, ২৯ আগস্ট, ২০১৪

পথনাটকের সঞ্জিবনী রত্ন

বছর পাচেক আগের কথা।
বিলচলন ইউনিয়নের বোঁথড় গ্রামের এক উঠানে, জমায়েত হয়েছিলো অসংখ্য লোক!
উঠোনের একপাশে বর্গাকৃতির শেফে করা হয়েছিলো অস্থায়ী প্রদর্শনী মঞ্চ। কিছুক্ষনের মধ্যেই যেখানে হবে নাট্য প্রদর্শনী।
সুতলি দিয়ে তৈরী করা মঞ্চের বিভাজনের সামনে বসে ছিলো শিশুরা, যাদের পেছনে দাড়িয়ে ছিলো মাঝ বয়সী এবং বয়স্করা। একপাশে ছিলো মেয়ে এবং মহিলারা।
বোঁথড় গ্রামে এটা একটি নিয়মিত ঘটনা। তবে সে সন্ধ্যার বিশেষ দিকটি ছিলো- সেদিন দর্শকসারিতে ছিলেন এক বিশেষ অতিথি। সৈয়দ জামিল আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের অধ্যাপক। বাংলাদেশের নাট্য গবেষনায় যিনি ছুটে বেড়াচ্ছিলেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে, মনি মুক্তার খোঁজে।
যে মুক্তা প্রাপ্তির প্রচেষ্টাতেই তিনি হয়েছিলেন উঠোন দর্শক, এবং দেখছিলেন- আসাদুজজামান দুলাল রচিত এবং নির্দেশিত নাটক।
একসময় নাটক শেষ হলো। করতালিতে ফেটে পড়লো দর্শক। দর্শকের মতো জামিল আহমেদও করতালি দিলেন এবং করদুটি প্রসারিত করে জড়িয়ে ধরলেন আসাদুজ্জামান দুলালকে।
আপত দৃষ্টিতে যেটি ছিলো আবেগঘন তবে সাধারন একটি ঘটনা।
তবে এর অসাধারন দিকটি বুঝতে আমার সময় লেগেছিলো প্রায় ১৮ ঘন্টা! সম্ভবত অসাধারনত্ব সব সময়ই সময়ের দাবী রাখে...(আমি জানি না, সে সময়ের দাবীতেই কিনা, এটা জানাতে আমারও সময় লাগলো প্রায় ৫ বছর!!!)
পরেরদিন দুপুরে ভাঙ্গুড়ায় স্বদেশ কাকুর বাসায় সৈয়দ জামিল আহমেদের সঙ্গে কিছুসময় আমার কথা বলার সুযোগ হয়েছিলো। আমি তাকে দুটি প্রশ্ন করেছিলাম-
প্রশ্ন এক.- একজন নাট্য গবেষক হিসাবে চাটমোহরের নাটক সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কি?
এবং প্রশ্ন দুই.- বাংলাদেশের মুক্ত নাটকের ভবিষৎ কি?
আলাদা ভাবে করা এ দুটি প্রশ্নের আলাদা ভাবে দেয়া উত্তরে উনার অভিব্যাক্তি ছিলো একই। যে অভিব্যাক্তি এবং উত্তর আমাকে গর্বিত করেছিলো।
উত্তর এক.- চাটমোহরের নাটক এককথায় অসাধারন। শুধু নাট্য মানেই নয় এর উঠান শো এবং সাইকেল শো হতে পারে মুক্ত নাটকের অনুকরনীয় ধারা।
উত্তর দুই.- শুধু বাংলাদেশেই নয় সারা পৃথিবীতেই বানিজ্যের কাছে মুক্ত নাটক, মঞ্চ নাটক মার খেয়ে যাচ্ছে। এর ভবিষৎ নিয়ে সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলা সম্ভব নয়, তবে যতদিন আসাদুজ্জামান দুলালের মত মানুষেরা আছেন, যতদিন আসাদুজ্জামান দুলালেরা নিজেকে নিঃস্ব করে বনের মোষ তাড়াবেন ততদিন মুক্ত নাটক স্বমহিমায় টিকে থাকবে।

সেদিন সৈয়দ জামিল আহমেদের সাথে আরো কিছু বিষয়ে কথা হলেও, উনার কাছ থেকে জানা হয়নি- তিনি চাটমোহরের রসমালাই খেয়েছেন কিনা? প্রত্ন নিদর্শন শাহী মসজিদ দেখেছেন কিনা? বৃন্দাবন দাসের নাটক তার কেমন লাগে?
জানাটা প্রয়োজনীয়ও ছিলো না! দুধ আর সততার যোগানের সাথে ঘোষালী দক্ষতায় এমন রসমালাই অন্যকোথাও হতে পারে! ৪০০ বছরের প্রত্ন নিদর্শন আরো ৪০০ বছর পরে এই চাটমোহরেই নুন্যতম ২০টা থাকতে পারে! মিডিয়ার জনপ্রিয় ধারায় চাটমোহরকে রিপ্রেজেন্ট করার জন্য আগামী ৫০ বছরে জনা দশেক বৃন্দাবন দাস তৈরী হতে পারে! কিন্তু আসাদুজ্জামান দুলাল একজনই। আরেকটি পেতে হলে, এ চলনবিলে আরো কতটা জল গড়াতে হবে? কতবার চলনবিল মন্থন করে, কত বছরে পাওয়া যাবে এমন একটি রত্ন, তা জানেনা কেউ! জানে না নাট্যরত্ন খুঁজে ফেরা জামিল আহমেদের মতো নাট্য স্কলারও.....

লেখাটি এখানেই শেষ হতে পারতো! তবে প্রাসংগিক ভাবেই আমি আরেকটু যোগ করতে চাই। আমার বাড়ি বোঁথড় স্কুলের পেছনে হওয়ায়, অসংখ্য রাতে বাড়ি ফেরার সময় খেয়াল করেছি, স্কুল মাঠের একপাশে একাগ্রচিত্তে অনুশীলন করছে নাটকের মানুষগুলো। যারা সবাই বিভিন্ন পেশাজীবি। সারাদিনের পেশাগত ক্লান্তি নিয়েই সন্ধ্যার পর যারা চলে আসে নাট্য ঝালাইয়ে। অথচ, তার ঠিক পাশেই গোটা বিশেক চা-দোকানে তখন টিভিতে চলছে ছবি, গান, নাটক। কোনটাতে চলছে কেরামের টুং টাং...
আমি মুগ্ধ হয়ে ভাবি- এ বিভিন্ন পেশাজীবি মানুষগুলো, সারাদিনের পরিশ্রম শেষে সন্ধ্যার পর কোন চা-দোকানে ছবি আর গানে বিনোদন খুঁতে পারতো! আনন্দ পেতে পারতো একের পর এক গুটি কেরাম বোর্ডের পকেটে ফেলে!
কিন্তু তারা সেটা না করে, বেছে নিয়েছে শিল্পের সেই কঠিনতম পথ- যেখানে কোন প্রাপ্তি নেই(অর্থযোগ অর্থে)! সামাজিক মর্যাদা নেই!(পত্রিকায় তাদের ছবি ছাপা হবে না, কোন সামাজিক সংগঠন তাদের পুরুষ্কারও দেবে না, কেউ তাদের নিয়ে গর্বও করবে না!!)
আবার ভাবি, জাগতিক এসব প্রাপ্তিতে এ সব অসাধারন মানুষ গুলোর কিছুই যায় আসে না। এবং যায় আসে না বলেই, ক্লান্তি পেরিয়ে তাদের নিরলস শ্রম এবং নিজেদের নিংড়ে দিয়ে বনের মোষ তাড়ানোতেই এখনো চাটমোহরে পথনাটক টিকে আছে।

বুধবার, ১৬ জুলাই, ২০১৪

সহস্র ও দুই রাত্রি


আকর্ষণীয় রজনীর নিদারুণ বিকৃতি

রাত্রি নেমেছে রমজানের আকাশে, যে আকাশে ভেসে বেড়াচ্ছে বর্ষার মেঘ। রাত্রি নেমেছে সে বর্ষার মেঘেও।
এভাবেই সহস্র কাল ধরে রাত্রি নামছে গ্রীষ্ম ও বর্ষায়। আরব এবং বাংলায়।
তবে বিশেষ কারণেই বিশেষায়িত হয় একে থেকে অন্য।
তাইতো গ্রীষ্মের আকাশ থেকে সুন্দর বর্ষার আকাশ, বাংলার রজনীর থেকে আকর্ষণীয় আরব্য রজনী।
যে আকর্ষণেই ছোটবেলায় প্রতীক্ষায় থাকতাম সে রাতের জন্য যে রাতে টিভিতে আলিফ লায়লা প্রচারিত হতো। ছোটবেলায় শোনা সে সুর এখনো আমার কানে বাজে-
“আলেফ লায়লা, আলেফ লায়লা, ওয়া লায়লা, শোনো সব নতুন কাহিনী, মন ভরে যায় যার বাণী, কতযুগ পেড়িয়ে গেছে, সময় তবু রয়ে গেছে........”

যদিও সময় রয়ে যায়নি। বরং যুগ পেরেনোর সাথে সাথে সময়ও পেড়িয়ে গেছে, অনেক কিছুই বিকৃত হয়ে গেছে। বিকৃত হয়েছে এটি নামেও!
আশ্চর্য মনে হলেও, উপন্যাসটি আলেফ লায়লা ওয়া লায়লা নয় বরং আলেফ লায়লা ওয়া লায়লানে। সহস্র ও এক রাত্রি নয় বরং সহস্র ও দুই রাত্রি।
আমি ভাবছিলাম আমরা না হয় অসভ্য, আমরা নিজস্ব প্রয়োজনে ইতিহাসের বিকৃতি ঘটাই। আমরা বিকৃতি করি মুক্তিযুদ্ধের ঘটনা! বিকৃত করি স্বাধীনতার ঘোষকের নাম! এটা আমাদের অসভ্যতা!
কিন্তু পশ্চিমা বিশ্ব, তারা তো সভ্য। তারা কেন বিকৃত করলো বিশ্ব সাহিত্যের এ অমূল্য সম্পদ?

লোমহর্ষক বঙ্গীয় রজনী

আরবের হেরেমখানায় মদ পানরত বাদশা, আর মৃত্যু ভয়ে গল্পরত বেগম, সকালেই যার গর্দান যাবে- এমন রাত অনেক আগেই ফুরিয়েছে....। এখনকার রাত, আলো আধারী কোন এক নাইট ক্লাবের রাত! যেখানে সারাব আছে, সাবাবও আছে, শুধু গল্প নেই ...... গল্পের প্রয়োজনও নেই। এখনতো আইটেম সংয়ের যুগ!
তবে কল্পনাপ্রবণ মনের দুর্নিবার আকর্ষণে আমি ঢুকে পড়েছি বঙ্গীয় রজনীর এক হেরেমখানায়, যেখানে বাদশাকে গল্প শোনাচ্ছে তার বেগম- যে গল্প আলি বাবা আর চল্লিশ চোরের, চিচিং ফাক বলে গুপ্তধন সন্ধানের গল্প নয়। বরং এ গল্প হলমার্কের সোনালী ব্যাংক ফাক করে চার হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের গল্প। যে গল্প দস্যু জিংগালু জংলার জঙ্গিপনার নয় বরং এ গল্প শিক্ষাঙ্গনে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসপনার গল্প। আলাদীনের আশ্চর্য প্রদীপ ছাপিয়ে যে গল্প পরমাশ্চর্য প্রদীপের ছোয়ায় শেয়ার বাজার থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটে নেয়ার গল্প! যে গল্প গনতন্ত্রের নামে জোর যার মুল্লুক তার রাজ্যে, বাংলাদেশকেই দখল নেয়ার গল্প। এভাবেই চলবে সহস্র কাল ধরে! প্রতি রাতেই নতুন নতুন গল্প.............কুইক রেন্টালে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটে নেয়ার গল্প! যুদ্ধাপরাধী দস্যুদের বিচার বানচাল করার ষড়যন্ত্র! ধর্মের দোহাইয়ে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীর মন্দির, বাড়ি পোড়ানো অধর্মের গল্প! নির্বাচনের নামে অনির্বাচনের মহোৎসব।
আমি ভাবছিলাম, আরব্য রজনী আকর্ষণীয় তবে বঙ্গীয় রজনী অনেক বেশী লোমহর্ষক।


অবিক্রিত জনগনের হাসি!

বঙ্গীয় রজনীর প্রতিটি রাতে উঠে আসে জনগনের দুঃখ, বেদনার কাহিনী। যারা প্রবল উৎসাহে পরিবর্তনের জন্য ভোট দেয় এবং বারবার হতাশ হয়! অবশ্য ৫ জানুয়ারীতে জনগন ভোট দিতেই পারেনি! তাইতো বঙ্গীয় রজনীর কাহিনী হতাশার কাহিনী, যেখানে কষ্ট আছে-হাসি নেই! যেখানে আক্ষেপ নিয়ে বিবেক গেয়ে চলে- আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম.....
আর তাইতো হাসতে ভুলে যাওয়া জনগনের জন্য আজ রাতে বঙ্গীয় বেগম তার বাদশাকে শোনাচ্ছেন আলেফ লায়লা ওয়া লায়লানের সর্বশেষ গল্প জাহাকুল আবদ।
যদিও এ গল্প আমাদের প্রথম শুনিয়েছিলেন, ঔপন্যাসিক শওকত ওসমান। আলেফ লায়লা ওয়া লায়লানের আসল পান্ডুলিপি থেকে তিনি 'ক্রীতদাসের হাসি' নামে অনুবাদ করেন জাহাকুল আবদ।
এ গল্পে পরাক্রমশালী বাদশা হারুনুর রশীদ রাতের ব্যবধানে হাবশী গোলাম তাতারিকে আমিরে পরিণত করেছিলেন এবং বাদী মেহেরজানকে বেগম বানিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি ব্যর্থ হয়েছিলেন একজন ক্রীতদাসের হাসি কিনতে। গল্পের শেষে গোলাম তাতারী হারুনুর রশীদকে বলেছিল-
“শোন, হারুনুর রশীদ। দীরহাম দৌলত দিয়ে ক্রীতদাস গোলাম কেনা চলে। বান্দী কেনা সম্ভব। কিন্তু- কিন্তু-ক্রীতদাসের হাসি না.............”


গল্পে ছেদ পড়ল বঙ্গীয় বাদশার অট্টহাসিতে...........

বাদশাঃ বেগম ...... সরাব খাচ্ছি আমি, আর সরাবি হয়ে উঠছো তুমি?

বেগমঃ আপনি বড্ড দুর্বোধ্য! ভাবকে আরো প্রসারিত করুন জাহাপনা!

বাদশাঃ বঙ্গীয় রজনীতে তুমি শোনাচ্ছো, আরব্য কাহিনী! এ কেমন তামাশা?

বেগমঃ এ তামাশা জনগনের ভাগ্য এবং ভবিষ্যতের সাথে তামাশা .... কখনো কখনো আরব্য রজনী একাকার হয় বঙ্গীয় রজনীতে! আরব সাগরের পানি মেশে ভারত মহাসাগরে।

বাদশাঃ আমার বিরক্তিতে তলোয়ার আর তোমার গর্দানের মাঝে হেয়ালী করো না বেগম!

বেগমঃ গোস্তাকী মাফ জাহাপনা, শওকত ওসমান ক্রীতদাসের হাসি লিখেছিলেন ১৯৬৩ সালে আইয়ুব খানের সামরিক স্বৈরতন্ত্রের যুগে। স্বৈরাচারের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে ধরা বাজিতে তিনি জিতেছিলেন। সে বছরই ক্রীতদাসের হাসি পেয়েছিল শ্রেষ্ঠ উপন্যাসের পুরষ্কার! এ হাসি শুধু হাবশি গোলাম তাতারির হাসি নয়, এ হাসি ছিলো এ দেশের প্রতিটি নিপীড়িত মানুষের মুক্তি আকাঙ্খার। যারা বলছিলো- আইয়ুব খান, অস্ত্রের জোরে শাসন ক্ষমতা দখল করা যায়, কিন্তু জনগনের মুখে হাসি ফোটানো যায় না।

বাদশাঃ হুম, কিন্তু এখনতো দেশটা স্বাধীন হয়েছে, স্বৈরশাসনও বিদায় নিয়েছে। যদিও বিশ্ববেহায়া এক স্বৈরাচার ক্ষমতাসীনদের ঘাড়ে সওয়ার হয়েছে, তবুও দেশে গণতন্ত্রই চলছে। এখন এ গল্পের প্রাসঙ্গিকতা কি?

বেগমঃ প্রাসঙ্গিকতা জনগনের হাসিতে জাহাপনা! ক্ষমতার দম্ভে আওয়ামীলীগ ধরাকে সরাজ্ঞান করছে। তারা শুধু জনগনের ভাগ্য নিয়েই খেলছে না, জনগনের ভোটাধিকার নিয়েও খেলেছ। এ খেলার জন্যই এটা প্রাসঙ্গিক। তারা জেনে যাক- ক্ষমতার জোরে শাসন ক্ষমতা দখল করা যায়, কিন্তু জনগনের মুখে হাসি ফোটানো যায় না।
চারপাশে সুনসান নিরবতা নেমে এসেছে। বাদশা শান্ত ও সমহিত ভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করলেন- তাহলে জনগনের মুখে হাসি ফোটানো যায় কিভাবে?

মসজিদ থেকে ভেসে আসছে ফজরের আযান। গল্প আজকের মত শেষ। আবার আগামী রাতে শুরু হবে নতুন গল্প। ভোরের স্নিগ্ধতায় তবুও বেগম বলে চলছে- জনগনের হাসি সে তো হেকিমী দাওয়াই। বিভিন্ন অনুপাতে মেশাতে হয় হাসির উপকরণ। বাজারে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, সমাজে সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণ, শিক্ষাঙ্গনে সরকারী ছাত্র সংগঠন নিয়ন্ত্রণ, সেবাখাতে উন্নয়ন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি...ইত্যাদি...ইত্যাদি.....এ সবকিছুর অনুপাতে কার্যকর শাসনব্যবস্থাই জনগনের মুখে হাসি ফোটাতে পারে। আর এ কার্যকর শাসনব্যবস্থা নিশ্চিত হতে পারে একটি বহুদলীয় নির্বাচন ও দেশে গনতন্ত্রের পরিবেশ নিশ্চিত করার মাধ্যমে। তবে মনে রাখতে হবে জনগনের মুখে হাসি ফোটানো যায়, কিন্তু জনগনের হাসি কেনা যায় না।

সহস্র ও এক রাত্রি

আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আছে প্রায় সাড়ে ৫ বছর। চলে গেছে ২০২০ দিন বা ২০২০ রাত কিংবা চলে গেছে দুই সহস্র রাত!
এ দুই সহস্র রাতের ভীড়ে কিছু কিছু রাত ছিলো আরব্য রজনীর ভয়ঙ্কর রাত থেকেও ভয়ঙ্কর। ৫ জানুয়ারীর গনতন্ত্রকে কলংকিত করার রাতটি তেমনি এক রাত। যে রাতে একটি গনতান্ত্রিক সরকার পরিনত হয়েছে এক ভয়ংকর দানবে! যা এ দেশের মানুষকে গনতন্ত্রের ভবিষৎ নিয়ে আস্থাহীন করেছে।
এমন আস্থাহীনতার মাঝেই আসছে ঈদুল ফিতর।
অনেকেই জানেন ঈদুল ফিতরের আগের রাত্রিকে বলা হয় চাঁদ রাত। যে রাত নিয়ে আসে ঈদের আনন্দ।
আস্থাহীনতার সহস্র রাত পেরিয়ে এ জাতির ভাগ্যাকাশে নামুক এমন একটি চাঁদ রাত, যে রাত নিয়ে আসবে গনতন্ত্রের আনন্দ।

শনিবার, ১২ জুলাই, ২০১৪

আমি হৃদয়হীন এক পৃথিবীর কথা বলছি



আমি এক পরীর কথা বলতে এসেছি,
জন্মের সময় স্রষ্টা, যার ডানা দুটি খুলে রেখেছেন!
আমি এক ডানাকাটা পরীর কথা বলতে এসেছি।
আমি বলতে এসেছি এক উচ্ছল শিশুর কথা-
আর আট-দশটা শিশুর মতই যে মেতে থাকতো,
শিশুতোষ চাঞ্চল্যতায়.........
সকালে পড়তো গোলাপি ফ্রক আর বিকেলে লাল সোয়েটার

আমি এক নজরকাড়া শিশুর কথা বলতে এসেছি-
বাহিরে বেড়োনোর আগে যার মা, কপালে দিতো কালো তিলক,
যেন নজর না লাগে......
যে শিশুটি বন্ধুদের সাথে খেলত পুতুল খেলা.......সমস্বরে গাইতো-
আমাদের দেশটা স্বপ্নপুরী, সাথী মোদের ফুলপরী
লালপরী...নীলপরী...নীলপরী...লালপরী
সবার সাথে ভাব করি, সবার সাথে ভাব করি....

আমি এক শিক্ষানবিশ শিশুর কথা বলতে এসেছি-
নিজস্ব ভাষায় যে শিখতো বর্ণমালা,
অ'তে অজগর। অজগর ঐ আসছে তেড়ে।
আ'তে আম। আমটি আমি খাব পেড়ে।
পড়ার শেষে মা, শিশুটিকে দিত এক গ্লাস দুধ।
শিশুটির মনের মতোই শুভ্র সে দুধ
আমি সেই শুভ্র শিশুর কথা বলতে এসেছি।

আমি সেই ভীতু শিশুর কথা বলতে এসেছি-
যাকে খেলনা পিস্তল কিনে দিয়েছিলো বাবা
বিপুল বিক্রমে ঢিয়া ঢিয়া বলে যে গুলি ছুড়তো শুন্যে
বাবার দিকে তাক করতো না কখনোই,
যদি গুলি লেগে যায়........

আমি এক দুষ্টু শিশুর কথা বলতে এসেছি-
মায়ের সাথে দুষ্টুমিতে, ঘুমের অভিনয়ে যে শুয়ে থাকতো
চোখটি বন্ধ করে....
বোকা মা, মেয়ে তার ঘুমিয়েছে ভেবে উঠতে গেলেই
যে শিশুটি খিলখিল করে হেসে উঠতো
আমি সেই ঘুমহীন শিশুর কথা বলতে এসেছি-
মায়ের মিষ্টি বকুনিতেও যে শিশুর ঘুম আসতো না
অবশেষে মা তাকে শোনাতেন ঘুমপাড়ানি গান-
খোকা ঘুমালো পাড়া জুড়ালো বর্গী এলো দেশে....
মা তাকে শোনাতেন রুপকথার গল্প-
রাক্ষস-খোক্ষস আর দেও-দানবের গল্প
সোনারকাঠি-রুপোর কাঠির প্রভাবে রাজকন্যার
ঘুমিয়ে থাকার গল্প......
অবশেষে শিশুটি ঘুমিয়ে পড়ে
আমি সেই ঘুমপাড়া রাজকন্যার কথা বলতে এসেছি

যে শিশুটি ঘুমিয়েছে, যাকে ঘুম পাড়িয়ে দেয়া হয়েছে!
ঘুম পাড়ানো হয়েছে বুলেট আর বোমার আঘাতে-
যাকে হত্যা করা হয়েছে.......
আমি সেই খুন হওয়া শিশুটির কথা বলতে এসেছি-

যে শিশুটি জীবনের বিনিময়ে বুঝে গেছে-
এ পৃথিবী কোনো স্বপ্নপুরী নয়,
ক্ষুদ্র জীবনকাল যেন নরকীয় দুঃস্বপ্ন!
এখানে লালপরী আর নীলপরীতে ভাব হয়না
ভাব হয় লাল রক্তের সাথে নীল বেদনার...
এ পৃথিবী কোনো শিশুর পুতুল খেলার জায়গা না,
বরং পৃথিবীই সাম্রাজ্যবাদী হায়েনাদের খেলার পুতুল
শিশু হাতের খেলনা পিস্তলে যারা ভরে দেয় বারুদ
অস্ত্রের খেলায় চলে তাদের সমৃদ্ধির মানবতা

যে শিশুটি অ'তে ছুটে আসা অজগরে আর ভয় পাবে না!
যখন ছুটে আসে বুলেট......
আ'তে হওয়া আমটি যার আর পাড়া হবে না!
আমের জন্য ঢিল ছুড়লে সে হয় মৌলবাদী
আর বিনিময়ে ছুটে আসে মিসাইল.....
তেমনি এক বোমার আঘাতে নিহত হয়েছে সে...

আমি সেই নিষ্পাপ শিশু হত্যার কথা বলছি-
আমি হৃদয়হীন এক পৃথিবীর কথা বলছি

শুক্রবার, ৪ জুলাই, ২০১৪

আওয়ামীলীগ যেভাবে ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনকে বৈধ করতে পারে!

৫ জানুয়ারীতে যে একতরফা ও অগ্রহনযোগ্য নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে, যেখানে নির্বাচনের আগেই ১৫৩ জন বিনা প্রতিদন্দিতায় নির্বাচিত হয়েছে এবং অবশিষ্ট আসনগুলোতেও সংখ্যামাত্র ভোটে আওয়ামীলীগ ক্ষমতা ধরে রেখেছে!
জোর যার মুল্লুক তার, মুলুকে জোরের বিজয় হয়েছে সত্যি কিন্তু চোরের মন পুলিশ পুলিশ বলে জোরওয়ালা লুটেরারা মনের জোর হারিয়ে ফেলেছে। এখন তারা মরিয়া হয়ে বৈধতা চাচ্ছে।

এখন প্রশ্ন হলো- এ বৈধতা কি করে সম্ভব?
উত্তরঃ ফুটবল বিশ্বকাপ চলছে এবং আমরা ইতিমধ্যেই জেনেছি- আওয়ামীলীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ফুটবলে ব্রাজিল সাপোর্ট করেন। ৫ জানুয়ারীর অগ্রহনযোগ্য নির্বাচন বৈধ করতে হলে শেখ হাসিনাকে ব্রাজিল বাদ দিয়ে সাপোর্ট করতে হবে আর্জেনটিনাকে এবং প্রিয় খেলোয়ার লিস্টে রাখতে হবে ম্যারাডোনাকে!

বিষ্মিত অনেকেই প্রশ্ন করতে পারেন- সেটা কিভাবে?

উত্তরঃ ১৯৮৬ সালে বিশ্বকাপ ফুটবলের কোয়ার্টার ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিলো আর্জেন্টিনা ও ইংল্যান্ড। উত্তেজনাপূর্ন সে খেলার প্রথম গোলটি ছিলো আলোচিত ও সমালোচিত, বিতর্কিত ও অবৈধ। ইংলিশ গোলরক্ষক পিটার শিলটনের সাথে লাফিয়ে গোল করার সময় শারিরিকভাবে খাটো ম্যারাডোনা বুঝতে পারলেন শিলটনকে ডিঙ্গিয়ে মাথা দিয়ে বল স্পর্শ করতে পারব না, তাই তিনি হাত চালিয়ে দিলেন এবং হাত দিয়েই গোলটি করলেন!! ইংলিশ গোলরক্ষক পিটার শিলটন বিষয়টি বুঝতে না পারলেও ধরে ফেলেন ইংল্যান্ডের রক্ষণভাগের খেলোয়াড় টেরি বুচার। টেরি চিৎকার করতে থাকে, ‘হাত, সে হাত ব্যবহার করেছে।’ পুরো দল টেরির সঙ্গে শামিল হয় প্রতিবাদে। গোলটা বাতিল হয় হয় অবস্থা।
কিন্তু কৌশলী ম্যারাডোনা দ্রুত ছুটে যায় কর্নার ফ্ল্যাগের দিকে এবং তার সতির্থদের বলেন- আমার দিকে ছুটে এসো। আমাকে জড়িয়ে ধরো। গোলটা উদযাপন করতে হবে। নয়তো রেফারি তা বাতিল করে দেবে।’ আর এভাবেই রেফারি ও লাইন্সম্যানের চোখে ধুলো দেওয়া হয় এবং একটি হলুদ কার্ড পাওয়া অপরাধ, গোল পুরুষ্কারে পরিনত হয়!
তবুও সংশয় ছিলোই! খেলার মাঠে গোল হজম করতে বাধ্য হওয়া মিডিয়া মোড়ল ইংল্যান্ড এবং বোধ সম্পন্ন ক্রীড়া সমর্থক দ্বারা ম্যারাডোনার আজীবন নিন্দিত হওয়ার।
কিন্তু ম্যারাডোনা মাঠের মতোই কৌশলী ছিলো মাঠের বাহিরেও...ম্যারাডোনা গোলটিকে গর্বের সাথে প্রচার করেন এবং হ্যান্ডবলের হাতটিকে নিজের নয় বরং ঈশ্বরের হাত বলে চালিয়ে দেন! এনিয়ে যুক্তিদেন- "ঈশ্বরই তো আমাদের হাত দিয়েছেন। আর আমি ঈশ্বর-প্রদত্ত ওই হাত ব্যবহার করেই গোলটা করেছিলাম। ওটা ঈশ্বরের হাতের গোল নয় তো কী!"

লক্ষ্যনীয়, ৫ জানুয়ারীতে নির্বাচনী গোলপোস্টে জনসমর্থনে খাটো আওয়ামীলীগ গোল দিতে পারবেনা বলে হাত চালিয়ে দিয়েছে এবং অগ্রহনযোগ্য গোল করেছে!

এখন যখন বৈধতার প্রশ্ন আসছে, তখন ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনের ম্যারাডোনার উচিত খেলোয়ার ম্যারাডোনাকে আদর্শমানা এবং ম্যারাডোনার মত কৌশলী হয়ে ওঠা!
যে কৌশলে আওয়ামী ম্যারাডোনা, ৫ জানুয়ারীর জনসমর্থন বিহীন নির্বাচনকে বলতে পারে ঈশ্বরের সমর্থন! ক্ষমতা দেবার মালিক যেহেতু ঈশ্বর তাই ৫ জানুয়ারীর ক্ষমতা ঈশ্বরের সমর্থন নয় তো কি? এছাড়াও ৫ জানুয়ারীর আগে শেখ হাসিনা যেহেতু মদিনা সনদ অনুযায়ী দেশ চালাতে চেয়েছিলেন, তাই ঈশ্বর যে তাকেই সমর্থন করবেন এটাই স্বাভাবিক!

বাংলাদেশ যেহেতু ধর্মপ্রান মানুষের দেশ, ঈশ্বর সমর্থিত ৫ জানুয়ারীর নির্বাচন জনগন গ্রহন করবে এবং এভাবেই ৫ জানুয়ারীর নির্বাচন বৈধ হয়ে উঠবে!!

সোমবার, ৩০ জুন, ২০১৪

অন্যায়কারীর ছয়দিন আর অনাবিলের একদিন!!

এ দেশে একটা প্রবাদ আছে- "চোরের দশ দিন আর গেহস্থ্যর এক দিন"।
শেষ পর্যন্ত সত্য ও সততার বিজয়কে ইংগিত করেই এটা বলা হয়ে থাকে।
কিন্তু সমস্যা হলো- বিজয়ই যেখানে শেষ কথা, গেহস্থ্য সেখানে চোরের কাছে ১০-১ এ পরাজিত! ব্যবধান ৯!
আর করুন পরিহাস হলো- বিজয়ীর শিন্ন চোষা আমাদের চেতনা, গেহস্থ্যর বিজয় কামনা করে বিজয়ী চোরের শিন্ন চুষতে চুষতে!
৫ জানুয়ারী এ দেশে যে নির্বাচনটি হয়েছে- সেটা দেশের জন্য এক সমস্যা, গনতন্ত্রের জন্য পরিহাস।
এ দেশের আপামর ভোটার বা গেহস্থ্যর দ্বারা প্রত্যাক্ষাত এ নির্বাচনে বিজয় হয়েছে কাদের?
গনতন্ত্রকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো চোরদের! জোর যার মুল্লুক তার, মুলুকের ডাকুদের!

অনেকেই এখন বলতে পারেন- ৫ জানুয়ারীর বিজয়ীরা একটি নির্বাচিত সরকার! যারা কিনা প্রতিকূল পরিস্থিতিতে সাংবিধানিক ধারা রক্ষা করেছে!
এ কথার জবাব দেওয়ার আগে আমি তাদেরকেই প্রশ্ন করতে চাই- ৫ জানুয়ারী কি আপনি ভোট দিয়েছিলেন? এ দেশের আপামর জনগন কি ভোট দিয়েছিলো? অর্ধেকেরও বেশী ১৫৩ আসনের ১ জন ভোটারেরও ভোটাধিকার ছিলো?
না। আপনি ভোট দেন নি! এ দেশের আপামর জনগন ভোট দেয়নি! ১৫৩ আসনের ভোটারেরা ভোট দিতেই পারেনি! তাহলে এ সরকারকে নির্বাচিত সরকার বলেন কিভাবে?

অনেকে বলতে পারেন- ৫ জানুয়ারী আমি ভোট দিয়েছি, আমার এফ.এন.এফ.(ফ্রেন্ডস এন্ড ফ্যামিলি) ভোট দিয়েছে। সর্বোপরি নির্বাচন হওয়া এলাকার প্রায় ৩৮ শতাংশ মানুষ ভোট দিয়েছে। তাই এ সরকার জননির্বাচিত সরকার।
উত্তরঃ কথাটি শুনতে হয়তো খারাপ লাগবে, কিন্তু বাস্তবতা এটাই যে- ৫ জানুয়ারী নির্বাচনে যদি আপনি ভোট দিয়ে থাকেন, তবে তা এ দেশের জনগন হিসাবে দেননি, একজন আওয়ামীলীগার হিসাবে দিয়েছেন! বা আওয়ামী আর্মি হিসাবে একটি একতরফা ও অগ্রহনযোগ্য নির্বাচনকে বৈধ করার বা নুন্যতম পাতে তোলার প্রচেষ্টায় শামিল হয়েছেন!
আপনি ৩৮ শতাংশ ভোটের কথা বলছেন?
সারাদিন কেন্দ্র দখল, জাল ভোটের মহোৎসব বাদই দিলাম, বিভিন্ন টিভি ক্যামেরায় ভোট কেন্দ্র ভোটার শূন্য থাকলেও ফলাফলে, যাদুকরের রুমালে ঢাকা শূন্য টুপির ভেতর থেকে 'এ্যবরা কা ড্যাবরা' ছুমন্তরে খরগোস বেরিয়েছে!
এখন চক্ষুসাফাইয়ে যাদুকর শূন্য থেকে খরগোস বের করায় সর্বোচ্চ হাত তালি পেতে পারে, সৃষ্টিকারী স্রষ্টার স্বীকৃতি পেতে পারে না।

আর সাংবিধানীক ধারা অক্ষুন্ন রাখা?
হ্যান্স ক্রিশ্চিয়ান আন্ডারসনের রুপকথা ""The Emperor's New Clothes"-এ রাজা যে নতুন পোষাক পড়েছিলো, তা শুধু সৎ মানুষেরাই দেখতে পারবে! তাই অসৎ উজির-নাজিরেরা মেকি সততার চশমা পড়ে উলঙ্গ রাজার পোশাকের প্রশংসায় মেতে ছিলো! জনগনও রাজার ভয়ে ও অসততা প্রকাশের ভয়ে চুপ ছিলো! তারা সবাই দেখেছিলো- 'রাজা নেংটা'। কিন্তু তাদের দৃষ্টিকে আচ্ছন্ন করে ফেলেছিলো তাদের অসততা।
রুপকথা পেরিয়ে বাংলাদেশের বাস্তবকথায়, এ দেশের মরাল ব্রিগেড আমাদের পরিয়ে দিয়েছে চেতনার চশমা। আর তাই আমারা সবাই দেখছি- ৫ জানুয়ারী আওয়ামীলীগ উলঙ্গ হয়ে গেছে! কিন্তু আমাদের চোখকে আচ্ছন্ন করে ফেলেছে সাংবিধানিক ধারা, দলগত পক্ষপাত এবং ব্যক্তিগত অসততা।

অনেকেই এখন বলতে পারেন- বৃহৎ দল বিএনপি এ নির্বাচনকে মেনে নিয়েছে বলেই মনে হচ্ছে! মুখোমুখি অবস্থানকারী ও সংঘাত সৃষ্টিকারী রাজনীতিও বেশ স্থীতিশীল। দেশেও শান্তি বিরাজ করছে। বিশাল অংকের বাজেট পাস হচ্ছে, পদ্মা সেতুতে বরাদ্ধ হচ্ছে, পরিক্ষায় পাশের নহর বইছে! দেশ ভালোই চলছে! তাহলে সমস্যা কোথায়?
উত্তরঃ আসলে সমস্যা যে কোথায়? এটা জানতে হলে প্রশ্নটি করতে হবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'দুই বিঘা জমির' উপেনকে!
শাক পাতা আচঁলে ধরা দরিদ্রমাতা যখন লুটেরার আদরে, পাঁচ রঙ্গাপাতা অঙ্গে আর পুষ্প কেশে ধারন করে! এটা গৌরব নয় বরং লজ্জার। এ লজ্জা দেবীর দাসী পরিনতির। সমস্যাটা এখানেই।
আর বিএনপির নির্বাচন মেনে নেওয়া?
এদেশের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ট মানুষ ৫ জানুয়ারী নির্বাচনকে প্রত্যাক্ষান করে ভোট দেয়নি। এর মানে এই নয় যে, বিএনপির সমর্থন ব্যাঙ্কে এটি ফিকস্ট ডিপোজিট হয়ে গেছে!
আমাদের বুঝতে হবে- রাজনৈতিক দলের কন্ঠ কখনো গনমানুষের কন্ঠ হতে পারে না। বরং গনমানুষের কন্ঠ রাজনৈতিক দল ধারন করে। তাই বিএনপি যদি নির্বাচনকে মেনেও নেয়, এটা জনগনের কন্ঠ হতে পারে না। এটা, জনগনের ভোটাধিকারের কন্ঠ ধারন করতে রাজনৈতিক দল হিসাবে বিএনপির ব্যর্থতা।
রাজনৈতিক দলের এ ব্যর্থতার সময়ে নিজেদের অধিকারের প্রশ্নে জনগনের কন্ঠকে জনগনের মধ্য থেকেই বেশী করে উচ্চারিত হতে হবে। যেখানে গেহস্থ্যর বিজয় প্রত্যাশা থাকবে তবে চোরের বিজয়কে মেনে নিয়ে নয়! চোরকে চোরই বলতে হবে। উলঙ্গ রাজাকে নেংটাই বলতে হবে। তাহলে চোরের দশ দিনের বিপরীতে গেহস্থ্যের একদিন নয় বরং চোরের একদিনের বিপরীতে গেহস্থ্যর দশদিন হয়ে উঠবে।

তবে, চোরের দশদিন আর গেহস্থ্যর একদিনই হোক কিংবা চোরের একদিনের বিপরীতে গেহস্থ্যর দশদিন(মোট এগারদিন)। আমি ভাবছিলাম- দিনের সংখ্যা বিচারে তুলনাটি যথার্থ হয়নি! এগারো সংখ্যাটি মৌলিক, তবে দিনের সংখ্যা প্যাটার্ন নয়। প্যাটার্ন অনুযায়ী দিনের সংখ্যা ৭, ১৫ কিংবা ৩০। যেমন ৭ দিনে এক সপ্তাহ, ১৫ দিনে একপক্ষ, ৩০ দিনে একমাস। লক্ষ্যনীয়, সংখ্যা হিসাবে ১১ দিনের প্যাটার্ন নয়। তাই এ প্রবাদটি হওয়া উচিত ছিলো, মৌলিক ও সংখ্যা প্যাটার্ন ৭ কে ধরে- "চোরের ছয়দিন আর গেহস্থ্যর একদিন"।

এখন পাঠক হিসাবে আপনাকে প্রশ্ন- 'চোরের ছয়দিন আর গেহস্থ্যর একদিন' হয়তো তুলনা হিসাবে যথার্থ কিন্তু এ নব্য প্রবাদের যথার্থ উদাহরন কোনটি?
আপনি যদি এ প্রশ্নের উত্তর দিতে স্বামর্থ্য হন, তবে আপনাকে অভিনন্দন। আর যদি অস্বামর্থ্য হন, তবে খেয়াল করুন- নব্য প্রকাশিত যে পত্রিকায় আপনারা লেখাটি পড়ছেন, সপ্তাহের খবর নিয়ে আজ হতেই পত্রিকাটি যাত্রা শুধু করলো। যে পত্রিকাটা সপ্তাহের ছয় দিনের অন্যায়-অবিচারকে এক দিনে তুলে ধরবে।
আমি আশা করছি- শেষ পর্যন্ত সত্য ও সততার বিজয়ের এটাই হোক অসাধারন রুপক! "অন্যায়কারীর ছয়দিনের বিপরীতে হোক 'অনাবিলের' একদিন"।

বুধবার, ১৮ জুন, ২০১৪

দ্রুত পরাজয়ই ব্রাজিলকে চাম্পিয়ন করে তুলবে

আমি ফুটবলে ব্রাজিল সাপোর্ট করি...
আর আট-দশটা সাপোর্টারের মতোই উন্মাদের মতো সাপোর্ট করি! যে সাপোর্টে চায়ের কাপে ঝড় তুলে ঘন্টার পর ঘন্টা তর্ক করা যায়, যে তর্কে পেলে-ম্যারাডোনা, মেসি-নেইমার বড় ছোট হিস্যায় আর কাপ জয়ের ৫-২ পরিসংখ্যানে আর্জেন্টিনাকে বাতিল করে ব্রাজিলকে চাম্পিয়ন করে দেয়া যায়।(তর্কটা নির্ভর করে প্রতিপক্ষ কোন দলের সাপোর্টার তার ওপর)।

এবার যখন বিশ্বকাপ ডামাডোল শুরু হলো। আমি ঝালিয়ে নিচ্ছিলাম, আমার সমর্থন। হিসাব কষে মিলাচ্ছিলাম- রাত জেগে খেলা দেখার টাইম শিডিউল। বন্ধুদের সাথে কয়েক দফা জড়িয়েছি তর্কেও, যে তর্কের কোন সমাধান নেই!
তবে তর্কের এ তালগাছটার একটা গতি হতে পারে ১৩ই জুলাই রিও ডি জেনিরোর ফাইনালে।
আর সব সমর্থকের মতো, আমিও চাচ্ছিলাম এবারের ফাইনালটা ব্রাজিল জিতে নিক বা ব্রাজিল চাম্পিয়ন হোক।
তাই ১২ জুন সাও পাওলোতে যখন বিশ্বকাপের পর্দা উন্মোচন হয়েছিলো, সেদিনেই উদ্বোধনী ম্যাচে আমি নজর রাখছিলাম ব্রাজিল-ক্রোয়েশিয়া ম্যাচে নেইমার সহ স্বপ্ন সারথী ১১ জনের ওপর। ঠিক সে সময়ই আমার নজর চলে গেল স্টেডিয়ামের বাহিরে জড়ো হওয়া প্রায় দশ লক্ষ তরুনের ওপর! যে তরুনেরা টিকিটের অভাবে বিশ্বকাপ বঞ্চিত নয় বরং তারা ছিলো বিশ্বকাপ বিরোধী! যারা বিক্ষোভ করছিলো এবং বলছিল- ফুটবলে এত টাকা খরচ না করে অনাহারি শিশুদের খাবার যোগানো ব্রাজিলিয়ান সরকারের অগ্রাধিকার হওয়া উচিত। বিশ্বকাপে ব্রাজিল ব্যয় করছে ১,৪০০ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি!(এক লক্ষ কোটি টাকা প্রায়)! অথচ মাত্র দুই ডলার বা সমমানের এক প্যাকেট সিগারেটের বিনিময়েও ব্রাজিলের যুবতীরা পতিতাবৃত্তি করছে। রাষ্ট্র আর জনগনের এ হচ্ছে দুরত্ব! যেখানে রাষ্ট্র জনগনের ট্যাক্সে ফুর্তি করছে, আর জনগন ট্যাক্সের যোগান দিতে পতিতা হচ্ছে!
আর তাই লাখো ব্রাজিলিয়ান রাস্তায় নেমে এসেছে, তারা শ্লোগান দিচ্ছে- ফাক ফিফা! ফাক ওয়ার্ল্ড কাপ! তারা বলছে- ফুটবলের নামে জনগণের অর্থ নিতে এটা ছিনিমিনি খেলা। ব্রাজিলিয়ান সরকারের এমন চাকচিক্যের ছিনিমিনি বাদ দিয়ে জনকল্যান মনোযোগ দেয়া উচিত।
উত্তরে ব্রাজিলিয়ান সরকার বিদ্রোহ দমনের অংশ হিসেবে ‘রাবার বুলেট’ ছুঁড়েছে। নির্বিচারে!!
ফলে, মাঠে ব্রাজিলিয়ান খেলোয়ারদের ঘাম ঝড়লেও, মাঠের বাহিরে ব্রাজিলিয়ান জনগনের রক্ত ঝড়ছে!

আমি ভাবছিলাম, মাঠে ১১ ব্রাজিলিয়ান খেলছে একটা কাপের জন্য! আর মাঠের বাহিরে লক্ষ ব্রাজিলিয়ান লড়ছে তাদের অধিকারের জন্য।
এটা ঠিক, খেলা যত এগোবে গোল, গোল চিৎকারের নিচে চাঁপা পড়বে অধিকারের দাবীতে আন্দোলনকারীর চাওয়াগুলো। ব্রাজিল যদি চাম্পিয়ন হয় তাহলে এর আলোকছটার চাকচিক্যে আধারে ঢাকবে মৌলিক দাবীগুলো। কিন্তু মাঠে যদি ব্রাজিল হেরে যায়, তখন জন স্বার্থের বিপরীতে চাকচিক্যের ছিনিমিনি খেলা সরকারের কিছুই বলার থাকবে না, তখন ব্রাজিলের প্রতিবাদী মানুষ আরো বেশি গর্জে উঠবে। মাঠে ১১ জন হারবে তবে রাজপথের লক্ষজনতার বিজয়ের ভিত তৈরী করবে।

আমি চাই ব্রাজিল চাম্পিয়ন হোক, তবে সেটা দ্রুত পরাজয়ের মাধ্যমে!
যে পরাজয়ে ব্রাজিল শুধু মাঠে হারবে কিন্তু রাজপথে লক্ষ জনতা চাম্পিয়ন হয়ে উঠবে।

রবিবার, ২৫ মে, ২০১৪

দুগ্ধ দানের বিরতিই নতুন গর্ভ ধারন করবে

৫ জানুয়ারী নির্বাচন ডেলিভারীতে যে সরকার শিশুর জন্ম হয়েছে, আজ তার বয়স হতে যাচ্ছে প্রায় ৫ মাস বা ১৪১ দিন। কিন্তু সে দুগ্ধপোষ্যর দুর্ভাগ্য, ইতিমধ্যেই সে হারিয়েছে তার দুগ্ধদাত্রীকে!

এ কথা অনস্বীকার্য যে, ৫ জানুয়ারীর একটি একতরফা ও অগ্রহনযোগ্য নির্বাচনে আওয়ামীলীগকে নজিরবিহীন নগ্নতায় বেহায়া সমর্থন দিয়েছিলো কংগ্রেস সরকার। বিভিন্ন ইস্যুতে সারা পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া আওয়ামীলীগকে একটি অগ্রহনযোগ্য সন্তান দেবার জন্য কংগ্রেস শুধু মমতাময় গর্ভেই ধরেনি, জন্মের পর থেকেই মাতৃসেবায় শাল-দুধের পাশাপাশি নিয়োমিত দুগ্ধদান করেছিলো!
কিন্তু এ দুগ্বপোষ্য শিশুর দুর্ভাগ্য, ১৬ মে মৃত্যু ঘটে তার দুগ্ধদাত্রীর! ক্ষমতা থেকে নির্মম পরাজয়ে সড়ে যেতে হয় কংগ্রেসকে! যখন ৫ জানুয়ারীর নির্বাচন শিশুর বয়স ১৩১ দিন। এখন মায়ের দুধ ব্যতিত শিশুটির বৃদ্ধি হবে দূর্বল, আর মায়ের আদর ব্যতিত তার বিকাশ হবে বাধাগ্রস্থ, এটাই স্বাভাবিক....

বিষয়টি আরো ভালো ভাবে বোঝার জন্য, আমি তুলে দিচ্ছি মায়ের দুধের ওপর একটি আর্টিকলের অংশ- "শিশুর জন্য মায়ের দুধের বিকল্প নেই। মায়ের দুধ শিশুর জীবনধারণ এবং পুষ্টি ও বৃদ্ধির জন্য একটি উৎকৃষ্ট সুষম খাদ্য। জন্মের পর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব (আধা ঘন্টার মধ্যেই শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়াতে হবে। পূর্ণ ৬ মাস (১৮০ দিন) পর্যন্ত শিশুকে শুধু মাত্র (১ ফোঁটা পানিও না) মায়ের দুধ খাওয়াতে হবে। এরপর পরিপূরক খাবারের পাশাপাশি ২ বছর পর্যন্ত শিশুকে মায়ের দুধ খাইয়ে যেতে হবে।"

লক্ষ্যনীয়, ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনের পর থেকেই সবার মনে প্রশ্ন ছিলো- জনগনকে ভোটাধিকার বঞ্চিত করা এ সরকারের মেয়াদ কতদিন হবে? যদিও একতরফা সরকারের অগ্রহনযোগ্য মন্ত্রীরা ৫ বছর থাকার ভাঙ্গা রেকর্ড বারবার বাজাচ্ছে! কিন্তু জনমনে এমন সন্দেহ ও সংশয় রয়েই গেছে। এবং ৬ মাস পূর্ন হওয়ার আগেই দুগ্ধদাত্রী কংগ্রেসের বিদায়ে এ ধারনা আরো দৃঢ় হয়েছে!
৫ জানুয়ারীর সরকার শিশুটি যদি পূর্ন ৬ মাস কংগ্রেসের দুগ্ধ সাদৃশ সমর্থন! এবং এরপর অনান্য দেশের পরিপূরক সমর্থনের পাশাপাশি ২ বছর পর্যন্ত কংগ্রেসের সমর্থন পেতে পারতো! তবে হয়তো পূর্ন মেয়াদ বা ৫ বছর তারা ক্ষমতায় থাকতে পারতো! কিন্তু ১৬ মে কংগ্রেসের কফিনে পেরেক ঠোকা হয়ে গেছে! এবং আজ(২৬মে) বিজেপির মোদী প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ নিচ্ছে।

এখন কি হবে?

এটা অপ্রিয় বাস্তব যে, দুগ্ধদাত্রী কংগ্রেসের পতনের পর দুগ্ধপোষ্য সরকারটি এখন বিজেপিকে দুধমাতা করে তার জীবনধারণ এবং পুষ্টি ও বৃদ্ধির যোগান নিশ্চিত করতে চাইবে! এবং ব্রড মেজরিটির বিজেপি যদি সেলফ মেজরিটির আওয়ামীলীগের দুধমাতা হয়ে যায় তবে ৫ জানুয়ারীর শিশুটি আরো কয়েক বছর টিকে থাকবে, হয়তো মেয়াদও পূর্ন করবে!

কিন্তু বিজেপি যদি কংগ্রেসের দুগ্ধপোষ্য এবং একতরফা নির্বাচিতদের দুগ্ধদান না করে, তাহলে?

উত্তরঃ ৬ মাস বয়স পর্যন্ত বুকের দুধ খাওয়ালে স্বাভাবিকভাবে জন্মনিয়ন্ত্রনে সাহায্য করে এবং ২ বৎসর বয়স পর্যন্ত বুকের দুধ খাওয়ালে ঘন ঘন গর্ভবতী হবার সম্ভাবনা কমে যায়। তাই বিজেপি দুধ না খাওয়ালে ৫ জানুয়ারী শিশুর পর নতুন শিশু গর্ভে চলে আসবে! এবং নতুন শিশুকে স্থান করে দিতে অপুষ্টিতে ভোগা ৫ জানুয়ারীর শিশুকে তার দুগ্ধদাত্রী কংগ্রেসের পথই ধরতে হবে......

বৃহস্পতিবার, ২২ মে, ২০১৪

গুমমাচালেএএএ

রিমোর্ট নিয়ে অবিরত চ্যানেল চেন্জ করছি---
এক চ্যানেলে গান বাজছে- 'ধুম এগেইন'
চ্যানেল চেন্জ করতেই, নিউজ দেখাচ্ছে- নারায়নগন্জে গুম এগেইন!!!

তারপর থেকে মাথায় শুধু এক আইটেমই ঘুরছে-

♫♪গুম গুম
আবার হয়েছে
গুম গুম
লাশ ভেসেছে

গুম গুম
তুমিও হয়ে যাও...


আআআ...গনতন্ত্রই যেখানে গুম হয়ে যায়
অবৈধ তন্ত্র গায়ে সয়ে যায়
গন'কে তখন ছুয়ে যাবে, অদৃশ্য চুুউউম...

গুমমাচালেএএএ
ওয়ান -টু-থ্রি-ফোর
গুমমাচালে, গুমমাচালে, গুউউউমমমম'♫♪


আইটেমটা কাউকে শোনানো দরকার, তাই টিভি সাউন্ড মিউট করে ফোন করেছি আমার প্রিয়তমাকে। গতরাতে যাকে বলেছিলাম- "আমায় গুম করে দাও হে তোমার, নগ্ন বাহু ডোরে"
সে হেসেছিলো, অনেক হেসেছিলো। অথচ আজকের আইটেম শুনে সে স্তব্দ হয়ে গেছে! ক্ষনিক নিরবতা ভেঙ্গে প্রশ্ন করলো- এটা কি ফান নাকি বিকৃত ফ্যান্টাসি? গুম নিয়ে তুমি গুমমাচালে গাইছো? কেমন হবে যদি তুমি নিজেই গুম হয়ে যাও? যখন তোমার মধ্য বয়সী মা, রেল লাইনের ধারে মেঠো পথটার পাড়ে দুহাত বাড়িয়ে দাড়িয়ে থাকবে! দৃষ্টি থেকে যার বৃষ্টি যাবে শুকিয়ে, সে অশ্রু মুছবেনা গোপনে আঁচলে মুখ লুকিয়ে, শুধু শূণ্যে চেয়ে থাকবে আকাশের সীমা ছাড়িয়ে...খোকা ফিরবে, ঘরে ফিরবে, কবে ফিরবে? নাকি ফিরবেনা?

আমি কোন জবাব দিতে পারিনি! ফোনটা রেখে বিক্ষিপ্ত ভাবে রিমোর্ট নিয়ে চ্যানেল চেন্জ করছি-
এক চ্যানেলে বাজছে সুবির নন্দীর গান- ♫♪আমি বৃষ্টির কাছ থেকে কাঁদতে শিখেছি, আমায় আর কান্নার ভয় দেখিয়ে কোন লাভ নেই♫♪
আসলে, আমিও শেয়ার বাজারে সঞ্চয় গুম হতে দেখেছি, পদ্মা সেতুতে সম্ভবনা গুম করতে শিখেছি। দ্রব্যমূল্যে গুম করেছি দীর্ঘশ্বাস, মগের গুমরাজ্যেই আমাদের বাস। গুম হতে দেখেছি গনতন্ত্রও!!

প্রিয়তমা আমার,
প্রতি পদে পদে, গুম হতে হতে, আমি মানুষিক গুম হতে শিখেছি! আমায় আর শারিরিক গুমের ভয় দেখিয়ে কোন লাভ নেই...

বুধবার, ২১ মে, ২০১৪

ইতিহাস চক্র যেভাবে ভাঙ্গতে হবে

ইতিহাস ফিরে ফিরে আসে! যেমন বৃষ্টি হয়ে পানি ফেরে সাগরে...
পানি চক্রের মতো ইতিহাসও কি চক্রে ঘোরে??

দিল্লির মোঘল সম্রাট আকবরের সেনাপতি মানসিংহ বাংলাকে দিল্লির সুবা বা প্রদেশে পরিনত করেন।
আকবরের পরে তার পুত্র জাহাঙ্গীর দিল্লির মসনদে বসলে, বাংলার সাথে দিল্লির সম্পর্কে বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটে। যে পরিবর্তনের বড় প্রভাব ছিলো বাংলার কোষাগার থেকে টাকা ও সম্পদ দিল্লিতে পাচার।
১৬৭৮ সালে সুবেদার শায়েস্তা খান এক বারেই নগদ ৩০ লক্ষ টাকা ও ৪ লক্ষ টাকা মূল্যের সোনা দিল্লিতে পাঠান। এই ধারা পরবর্তিতে কেবলই বেড়েছে। যার উল্ল্যেখযোগ্য উদাহরন হলো- সুবেদার সুজাউদ্দিন তার ১১ বছরের সুবেদারিরর সময়ে দিল্লিতে প্রায় ১৪ কোটি ৬৩ লক্ষ টাকা পাঠায়।(তৎকালিন সময়ের মুদ্রামান, বর্তমান সময়ের নয়!!!)

এখানে কয়েকটি বিষয় লক্ষ্যনীয়-
এক.- দিল্লির মসনদ পরিবর্তনে, বাংলার সাথে সম্পর্কও পরিবর্তন হয়েছিলো।
দুই.- পরিবর্তিত সম্পর্কে সুবার সুবেদারি টেকাতে সুবেদাররা মরিয়া হয়েছিলো।
তিন.- সুবেদারদের সুবেদারী স্বার্থে দিল্লির গুরুত্ব ছিলো অগ্রগন্য আর জন্মভূমি বাংলা হয়েছিলো বঞ্চিত, শোষিত।

এখন, বর্তমানের ঘটনাচক্রে এ ইতিহাসই কি ফিরে আসছে না?
এক.- দিল্লির মসনদ পরিবর্তন হয়েছে, বাংলাদেশের সাথেও সম্পর্ক পরিবর্তন হতে যাচ্ছে।
দুই.- পরিবর্তিত সম্পর্কে সুবার সুবেদারী টেকাতে কিংবা সুবেদারী লাভ করতে নেতৃত্ব মরিয়া হয়েছে।
তিন.- সুবেদারীর স্বার্থে দিল্লি হয়েছে গুরুত্বপূর্ন আর বাংলাদেশের গুরুত্ব কমেছে।

অনেকেই এখন দ্বিমত প্রসন করে বলতে পারেন- 'ঘটনা প্রবাহের সাথে ইতিহাসের সাদৃশ্য আছে বটে, তবে তা ঘটনাচক্র নয়। কারন, বাংলাদেশ একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট, দিল্লির সুবা বা প্রদেশ নয়!
উত্তরঃ দাসত্ব শুধু শারিরিক নয় বরং মানষিক দাসত্বও দাসত্ব। বাংলাদেশ স্বাধীন তবে নেতৃত্বের আচরন পর্যালোচনা করলে দেখা যায় বাংলাদেশ এখন মানুষিক সুবা! এটা সার্বভৌমত্বের মানুষিক দাসত্ব!

ইতিহাস এভাবেই ফিরে আসছে! যেভাবে পানি ফিরে আসে সাগরে...

এখন প্রশ্ন হলো- ইতিহাসের এ চক্রে, এরপর কি হবে?

উত্তরঃ দিল্লির দাসত্বে হয়তো কারা সুবেদারী রক্ষা পাবে, অথবা কারো সুবেদারী লাভ হবে! তারপর কৃতজ্ঞতায় পূজি পাচারের মতো পাচার হবে এদেশের পূজি-তেল-গ্যাস! কেন্দ্রের করিডোর হিসাবে ব্যবহার হবে সুবা! ফারাক্কা-টিপাইমুখ-অন্তঃনদীয় মহাসংযোগ প্রকল্পের বাস্তবান হবে প্রশ্নাতিত! বানিজ্যিক ব্যবধানের আকাশ-পাতালে বাংলাদেশ পরিনত হবে শুধুই বাজারে।

তবে ইতিহাস চক্রের লক্ষ্যনীয় যে দিকটি ঘটবে- দিল্লির সম্রাট জাহাঙ্গীর বরাবর বাংলার সুবেদাররা যে অর্থ পাচার করেছিলো, তাতে ফুঁলে উঠেছিলো দিল্লির রাজকোষ। পরবর্তিতে জাহাঙ্গীর পুত্র শাহজাহান মসনদে বসলে এ সমৃদ্ধ রাজকোষে হাত দিয়েই গড়েছিলেন ইন্ডিয়ার গর্ব 'মমতাজ মহল' বা তাজমহল।
ইতিহাস চক্রে, দিল্লির দাসত্বে মরিয়া সুবেদাররা ক্ষমতা স্বার্থে দেশকে এমনভাবে বিকোবে, দিল্লির রাজকোষ আবারও ফুঁলে উঠবে, ইন্ডিয়া শাইনিং হয়ে উঠবে। তবে বাংলাদেশকে মলিন করে।

এটাই বাংলাদেশের দূর্ভাগ্যের ইতিহাসের চক্র! যে চক্রে বন্দি হয়ে গেছে দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, সমৃদ্ধি। বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে হলে ইতিহাসের এ দুষ্টচক্র ভাঙ্গতে হবে।

এখন প্রশ্ন আসতে পারে- ইতিহাস তো ফিরে ফিরে আসে! তাহলে ইতিহাসের এ চক্র ভাঙ্গা কিভাবে সম্ভব?
উত্তরঃ ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে।