বুধবার, ২১ মে, ২০১৪

ইতিহাস চক্র যেভাবে ভাঙ্গতে হবে

ইতিহাস ফিরে ফিরে আসে! যেমন বৃষ্টি হয়ে পানি ফেরে সাগরে...
পানি চক্রের মতো ইতিহাসও কি চক্রে ঘোরে??

দিল্লির মোঘল সম্রাট আকবরের সেনাপতি মানসিংহ বাংলাকে দিল্লির সুবা বা প্রদেশে পরিনত করেন।
আকবরের পরে তার পুত্র জাহাঙ্গীর দিল্লির মসনদে বসলে, বাংলার সাথে দিল্লির সম্পর্কে বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটে। যে পরিবর্তনের বড় প্রভাব ছিলো বাংলার কোষাগার থেকে টাকা ও সম্পদ দিল্লিতে পাচার।
১৬৭৮ সালে সুবেদার শায়েস্তা খান এক বারেই নগদ ৩০ লক্ষ টাকা ও ৪ লক্ষ টাকা মূল্যের সোনা দিল্লিতে পাঠান। এই ধারা পরবর্তিতে কেবলই বেড়েছে। যার উল্ল্যেখযোগ্য উদাহরন হলো- সুবেদার সুজাউদ্দিন তার ১১ বছরের সুবেদারিরর সময়ে দিল্লিতে প্রায় ১৪ কোটি ৬৩ লক্ষ টাকা পাঠায়।(তৎকালিন সময়ের মুদ্রামান, বর্তমান সময়ের নয়!!!)

এখানে কয়েকটি বিষয় লক্ষ্যনীয়-
এক.- দিল্লির মসনদ পরিবর্তনে, বাংলার সাথে সম্পর্কও পরিবর্তন হয়েছিলো।
দুই.- পরিবর্তিত সম্পর্কে সুবার সুবেদারি টেকাতে সুবেদাররা মরিয়া হয়েছিলো।
তিন.- সুবেদারদের সুবেদারী স্বার্থে দিল্লির গুরুত্ব ছিলো অগ্রগন্য আর জন্মভূমি বাংলা হয়েছিলো বঞ্চিত, শোষিত।

এখন, বর্তমানের ঘটনাচক্রে এ ইতিহাসই কি ফিরে আসছে না?
এক.- দিল্লির মসনদ পরিবর্তন হয়েছে, বাংলাদেশের সাথেও সম্পর্ক পরিবর্তন হতে যাচ্ছে।
দুই.- পরিবর্তিত সম্পর্কে সুবার সুবেদারী টেকাতে কিংবা সুবেদারী লাভ করতে নেতৃত্ব মরিয়া হয়েছে।
তিন.- সুবেদারীর স্বার্থে দিল্লি হয়েছে গুরুত্বপূর্ন আর বাংলাদেশের গুরুত্ব কমেছে।

অনেকেই এখন দ্বিমত প্রসন করে বলতে পারেন- 'ঘটনা প্রবাহের সাথে ইতিহাসের সাদৃশ্য আছে বটে, তবে তা ঘটনাচক্র নয়। কারন, বাংলাদেশ একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট, দিল্লির সুবা বা প্রদেশ নয়!
উত্তরঃ দাসত্ব শুধু শারিরিক নয় বরং মানষিক দাসত্বও দাসত্ব। বাংলাদেশ স্বাধীন তবে নেতৃত্বের আচরন পর্যালোচনা করলে দেখা যায় বাংলাদেশ এখন মানুষিক সুবা! এটা সার্বভৌমত্বের মানুষিক দাসত্ব!

ইতিহাস এভাবেই ফিরে আসছে! যেভাবে পানি ফিরে আসে সাগরে...

এখন প্রশ্ন হলো- ইতিহাসের এ চক্রে, এরপর কি হবে?

উত্তরঃ দিল্লির দাসত্বে হয়তো কারা সুবেদারী রক্ষা পাবে, অথবা কারো সুবেদারী লাভ হবে! তারপর কৃতজ্ঞতায় পূজি পাচারের মতো পাচার হবে এদেশের পূজি-তেল-গ্যাস! কেন্দ্রের করিডোর হিসাবে ব্যবহার হবে সুবা! ফারাক্কা-টিপাইমুখ-অন্তঃনদীয় মহাসংযোগ প্রকল্পের বাস্তবান হবে প্রশ্নাতিত! বানিজ্যিক ব্যবধানের আকাশ-পাতালে বাংলাদেশ পরিনত হবে শুধুই বাজারে।

তবে ইতিহাস চক্রের লক্ষ্যনীয় যে দিকটি ঘটবে- দিল্লির সম্রাট জাহাঙ্গীর বরাবর বাংলার সুবেদাররা যে অর্থ পাচার করেছিলো, তাতে ফুঁলে উঠেছিলো দিল্লির রাজকোষ। পরবর্তিতে জাহাঙ্গীর পুত্র শাহজাহান মসনদে বসলে এ সমৃদ্ধ রাজকোষে হাত দিয়েই গড়েছিলেন ইন্ডিয়ার গর্ব 'মমতাজ মহল' বা তাজমহল।
ইতিহাস চক্রে, দিল্লির দাসত্বে মরিয়া সুবেদাররা ক্ষমতা স্বার্থে দেশকে এমনভাবে বিকোবে, দিল্লির রাজকোষ আবারও ফুঁলে উঠবে, ইন্ডিয়া শাইনিং হয়ে উঠবে। তবে বাংলাদেশকে মলিন করে।

এটাই বাংলাদেশের দূর্ভাগ্যের ইতিহাসের চক্র! যে চক্রে বন্দি হয়ে গেছে দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, সমৃদ্ধি। বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে হলে ইতিহাসের এ দুষ্টচক্র ভাঙ্গতে হবে।

এখন প্রশ্ন আসতে পারে- ইতিহাস তো ফিরে ফিরে আসে! তাহলে ইতিহাসের এ চক্র ভাঙ্গা কিভাবে সম্ভব?
উত্তরঃ ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন