বুধবার, ১৬ জুলাই, ২০১৪

সহস্র ও দুই রাত্রি


আকর্ষণীয় রজনীর নিদারুণ বিকৃতি

রাত্রি নেমেছে রমজানের আকাশে, যে আকাশে ভেসে বেড়াচ্ছে বর্ষার মেঘ। রাত্রি নেমেছে সে বর্ষার মেঘেও।
এভাবেই সহস্র কাল ধরে রাত্রি নামছে গ্রীষ্ম ও বর্ষায়। আরব এবং বাংলায়।
তবে বিশেষ কারণেই বিশেষায়িত হয় একে থেকে অন্য।
তাইতো গ্রীষ্মের আকাশ থেকে সুন্দর বর্ষার আকাশ, বাংলার রজনীর থেকে আকর্ষণীয় আরব্য রজনী।
যে আকর্ষণেই ছোটবেলায় প্রতীক্ষায় থাকতাম সে রাতের জন্য যে রাতে টিভিতে আলিফ লায়লা প্রচারিত হতো। ছোটবেলায় শোনা সে সুর এখনো আমার কানে বাজে-
“আলেফ লায়লা, আলেফ লায়লা, ওয়া লায়লা, শোনো সব নতুন কাহিনী, মন ভরে যায় যার বাণী, কতযুগ পেড়িয়ে গেছে, সময় তবু রয়ে গেছে........”

যদিও সময় রয়ে যায়নি। বরং যুগ পেরেনোর সাথে সাথে সময়ও পেড়িয়ে গেছে, অনেক কিছুই বিকৃত হয়ে গেছে। বিকৃত হয়েছে এটি নামেও!
আশ্চর্য মনে হলেও, উপন্যাসটি আলেফ লায়লা ওয়া লায়লা নয় বরং আলেফ লায়লা ওয়া লায়লানে। সহস্র ও এক রাত্রি নয় বরং সহস্র ও দুই রাত্রি।
আমি ভাবছিলাম আমরা না হয় অসভ্য, আমরা নিজস্ব প্রয়োজনে ইতিহাসের বিকৃতি ঘটাই। আমরা বিকৃতি করি মুক্তিযুদ্ধের ঘটনা! বিকৃত করি স্বাধীনতার ঘোষকের নাম! এটা আমাদের অসভ্যতা!
কিন্তু পশ্চিমা বিশ্ব, তারা তো সভ্য। তারা কেন বিকৃত করলো বিশ্ব সাহিত্যের এ অমূল্য সম্পদ?

লোমহর্ষক বঙ্গীয় রজনী

আরবের হেরেমখানায় মদ পানরত বাদশা, আর মৃত্যু ভয়ে গল্পরত বেগম, সকালেই যার গর্দান যাবে- এমন রাত অনেক আগেই ফুরিয়েছে....। এখনকার রাত, আলো আধারী কোন এক নাইট ক্লাবের রাত! যেখানে সারাব আছে, সাবাবও আছে, শুধু গল্প নেই ...... গল্পের প্রয়োজনও নেই। এখনতো আইটেম সংয়ের যুগ!
তবে কল্পনাপ্রবণ মনের দুর্নিবার আকর্ষণে আমি ঢুকে পড়েছি বঙ্গীয় রজনীর এক হেরেমখানায়, যেখানে বাদশাকে গল্প শোনাচ্ছে তার বেগম- যে গল্প আলি বাবা আর চল্লিশ চোরের, চিচিং ফাক বলে গুপ্তধন সন্ধানের গল্প নয়। বরং এ গল্প হলমার্কের সোনালী ব্যাংক ফাক করে চার হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের গল্প। যে গল্প দস্যু জিংগালু জংলার জঙ্গিপনার নয় বরং এ গল্প শিক্ষাঙ্গনে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসপনার গল্প। আলাদীনের আশ্চর্য প্রদীপ ছাপিয়ে যে গল্প পরমাশ্চর্য প্রদীপের ছোয়ায় শেয়ার বাজার থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটে নেয়ার গল্প! যে গল্প গনতন্ত্রের নামে জোর যার মুল্লুক তার রাজ্যে, বাংলাদেশকেই দখল নেয়ার গল্প। এভাবেই চলবে সহস্র কাল ধরে! প্রতি রাতেই নতুন নতুন গল্প.............কুইক রেন্টালে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটে নেয়ার গল্প! যুদ্ধাপরাধী দস্যুদের বিচার বানচাল করার ষড়যন্ত্র! ধর্মের দোহাইয়ে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীর মন্দির, বাড়ি পোড়ানো অধর্মের গল্প! নির্বাচনের নামে অনির্বাচনের মহোৎসব।
আমি ভাবছিলাম, আরব্য রজনী আকর্ষণীয় তবে বঙ্গীয় রজনী অনেক বেশী লোমহর্ষক।


অবিক্রিত জনগনের হাসি!

বঙ্গীয় রজনীর প্রতিটি রাতে উঠে আসে জনগনের দুঃখ, বেদনার কাহিনী। যারা প্রবল উৎসাহে পরিবর্তনের জন্য ভোট দেয় এবং বারবার হতাশ হয়! অবশ্য ৫ জানুয়ারীতে জনগন ভোট দিতেই পারেনি! তাইতো বঙ্গীয় রজনীর কাহিনী হতাশার কাহিনী, যেখানে কষ্ট আছে-হাসি নেই! যেখানে আক্ষেপ নিয়ে বিবেক গেয়ে চলে- আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম.....
আর তাইতো হাসতে ভুলে যাওয়া জনগনের জন্য আজ রাতে বঙ্গীয় বেগম তার বাদশাকে শোনাচ্ছেন আলেফ লায়লা ওয়া লায়লানের সর্বশেষ গল্প জাহাকুল আবদ।
যদিও এ গল্প আমাদের প্রথম শুনিয়েছিলেন, ঔপন্যাসিক শওকত ওসমান। আলেফ লায়লা ওয়া লায়লানের আসল পান্ডুলিপি থেকে তিনি 'ক্রীতদাসের হাসি' নামে অনুবাদ করেন জাহাকুল আবদ।
এ গল্পে পরাক্রমশালী বাদশা হারুনুর রশীদ রাতের ব্যবধানে হাবশী গোলাম তাতারিকে আমিরে পরিণত করেছিলেন এবং বাদী মেহেরজানকে বেগম বানিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি ব্যর্থ হয়েছিলেন একজন ক্রীতদাসের হাসি কিনতে। গল্পের শেষে গোলাম তাতারী হারুনুর রশীদকে বলেছিল-
“শোন, হারুনুর রশীদ। দীরহাম দৌলত দিয়ে ক্রীতদাস গোলাম কেনা চলে। বান্দী কেনা সম্ভব। কিন্তু- কিন্তু-ক্রীতদাসের হাসি না.............”


গল্পে ছেদ পড়ল বঙ্গীয় বাদশার অট্টহাসিতে...........

বাদশাঃ বেগম ...... সরাব খাচ্ছি আমি, আর সরাবি হয়ে উঠছো তুমি?

বেগমঃ আপনি বড্ড দুর্বোধ্য! ভাবকে আরো প্রসারিত করুন জাহাপনা!

বাদশাঃ বঙ্গীয় রজনীতে তুমি শোনাচ্ছো, আরব্য কাহিনী! এ কেমন তামাশা?

বেগমঃ এ তামাশা জনগনের ভাগ্য এবং ভবিষ্যতের সাথে তামাশা .... কখনো কখনো আরব্য রজনী একাকার হয় বঙ্গীয় রজনীতে! আরব সাগরের পানি মেশে ভারত মহাসাগরে।

বাদশাঃ আমার বিরক্তিতে তলোয়ার আর তোমার গর্দানের মাঝে হেয়ালী করো না বেগম!

বেগমঃ গোস্তাকী মাফ জাহাপনা, শওকত ওসমান ক্রীতদাসের হাসি লিখেছিলেন ১৯৬৩ সালে আইয়ুব খানের সামরিক স্বৈরতন্ত্রের যুগে। স্বৈরাচারের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে ধরা বাজিতে তিনি জিতেছিলেন। সে বছরই ক্রীতদাসের হাসি পেয়েছিল শ্রেষ্ঠ উপন্যাসের পুরষ্কার! এ হাসি শুধু হাবশি গোলাম তাতারির হাসি নয়, এ হাসি ছিলো এ দেশের প্রতিটি নিপীড়িত মানুষের মুক্তি আকাঙ্খার। যারা বলছিলো- আইয়ুব খান, অস্ত্রের জোরে শাসন ক্ষমতা দখল করা যায়, কিন্তু জনগনের মুখে হাসি ফোটানো যায় না।

বাদশাঃ হুম, কিন্তু এখনতো দেশটা স্বাধীন হয়েছে, স্বৈরশাসনও বিদায় নিয়েছে। যদিও বিশ্ববেহায়া এক স্বৈরাচার ক্ষমতাসীনদের ঘাড়ে সওয়ার হয়েছে, তবুও দেশে গণতন্ত্রই চলছে। এখন এ গল্পের প্রাসঙ্গিকতা কি?

বেগমঃ প্রাসঙ্গিকতা জনগনের হাসিতে জাহাপনা! ক্ষমতার দম্ভে আওয়ামীলীগ ধরাকে সরাজ্ঞান করছে। তারা শুধু জনগনের ভাগ্য নিয়েই খেলছে না, জনগনের ভোটাধিকার নিয়েও খেলেছ। এ খেলার জন্যই এটা প্রাসঙ্গিক। তারা জেনে যাক- ক্ষমতার জোরে শাসন ক্ষমতা দখল করা যায়, কিন্তু জনগনের মুখে হাসি ফোটানো যায় না।
চারপাশে সুনসান নিরবতা নেমে এসেছে। বাদশা শান্ত ও সমহিত ভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করলেন- তাহলে জনগনের মুখে হাসি ফোটানো যায় কিভাবে?

মসজিদ থেকে ভেসে আসছে ফজরের আযান। গল্প আজকের মত শেষ। আবার আগামী রাতে শুরু হবে নতুন গল্প। ভোরের স্নিগ্ধতায় তবুও বেগম বলে চলছে- জনগনের হাসি সে তো হেকিমী দাওয়াই। বিভিন্ন অনুপাতে মেশাতে হয় হাসির উপকরণ। বাজারে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, সমাজে সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণ, শিক্ষাঙ্গনে সরকারী ছাত্র সংগঠন নিয়ন্ত্রণ, সেবাখাতে উন্নয়ন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি...ইত্যাদি...ইত্যাদি.....এ সবকিছুর অনুপাতে কার্যকর শাসনব্যবস্থাই জনগনের মুখে হাসি ফোটাতে পারে। আর এ কার্যকর শাসনব্যবস্থা নিশ্চিত হতে পারে একটি বহুদলীয় নির্বাচন ও দেশে গনতন্ত্রের পরিবেশ নিশ্চিত করার মাধ্যমে। তবে মনে রাখতে হবে জনগনের মুখে হাসি ফোটানো যায়, কিন্তু জনগনের হাসি কেনা যায় না।

সহস্র ও এক রাত্রি

আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আছে প্রায় সাড়ে ৫ বছর। চলে গেছে ২০২০ দিন বা ২০২০ রাত কিংবা চলে গেছে দুই সহস্র রাত!
এ দুই সহস্র রাতের ভীড়ে কিছু কিছু রাত ছিলো আরব্য রজনীর ভয়ঙ্কর রাত থেকেও ভয়ঙ্কর। ৫ জানুয়ারীর গনতন্ত্রকে কলংকিত করার রাতটি তেমনি এক রাত। যে রাতে একটি গনতান্ত্রিক সরকার পরিনত হয়েছে এক ভয়ংকর দানবে! যা এ দেশের মানুষকে গনতন্ত্রের ভবিষৎ নিয়ে আস্থাহীন করেছে।
এমন আস্থাহীনতার মাঝেই আসছে ঈদুল ফিতর।
অনেকেই জানেন ঈদুল ফিতরের আগের রাত্রিকে বলা হয় চাঁদ রাত। যে রাত নিয়ে আসে ঈদের আনন্দ।
আস্থাহীনতার সহস্র রাত পেরিয়ে এ জাতির ভাগ্যাকাশে নামুক এমন একটি চাঁদ রাত, যে রাত নিয়ে আসবে গনতন্ত্রের আনন্দ।

শনিবার, ১২ জুলাই, ২০১৪

আমি হৃদয়হীন এক পৃথিবীর কথা বলছি



আমি এক পরীর কথা বলতে এসেছি,
জন্মের সময় স্রষ্টা, যার ডানা দুটি খুলে রেখেছেন!
আমি এক ডানাকাটা পরীর কথা বলতে এসেছি।
আমি বলতে এসেছি এক উচ্ছল শিশুর কথা-
আর আট-দশটা শিশুর মতই যে মেতে থাকতো,
শিশুতোষ চাঞ্চল্যতায়.........
সকালে পড়তো গোলাপি ফ্রক আর বিকেলে লাল সোয়েটার

আমি এক নজরকাড়া শিশুর কথা বলতে এসেছি-
বাহিরে বেড়োনোর আগে যার মা, কপালে দিতো কালো তিলক,
যেন নজর না লাগে......
যে শিশুটি বন্ধুদের সাথে খেলত পুতুল খেলা.......সমস্বরে গাইতো-
আমাদের দেশটা স্বপ্নপুরী, সাথী মোদের ফুলপরী
লালপরী...নীলপরী...নীলপরী...লালপরী
সবার সাথে ভাব করি, সবার সাথে ভাব করি....

আমি এক শিক্ষানবিশ শিশুর কথা বলতে এসেছি-
নিজস্ব ভাষায় যে শিখতো বর্ণমালা,
অ'তে অজগর। অজগর ঐ আসছে তেড়ে।
আ'তে আম। আমটি আমি খাব পেড়ে।
পড়ার শেষে মা, শিশুটিকে দিত এক গ্লাস দুধ।
শিশুটির মনের মতোই শুভ্র সে দুধ
আমি সেই শুভ্র শিশুর কথা বলতে এসেছি।

আমি সেই ভীতু শিশুর কথা বলতে এসেছি-
যাকে খেলনা পিস্তল কিনে দিয়েছিলো বাবা
বিপুল বিক্রমে ঢিয়া ঢিয়া বলে যে গুলি ছুড়তো শুন্যে
বাবার দিকে তাক করতো না কখনোই,
যদি গুলি লেগে যায়........

আমি এক দুষ্টু শিশুর কথা বলতে এসেছি-
মায়ের সাথে দুষ্টুমিতে, ঘুমের অভিনয়ে যে শুয়ে থাকতো
চোখটি বন্ধ করে....
বোকা মা, মেয়ে তার ঘুমিয়েছে ভেবে উঠতে গেলেই
যে শিশুটি খিলখিল করে হেসে উঠতো
আমি সেই ঘুমহীন শিশুর কথা বলতে এসেছি-
মায়ের মিষ্টি বকুনিতেও যে শিশুর ঘুম আসতো না
অবশেষে মা তাকে শোনাতেন ঘুমপাড়ানি গান-
খোকা ঘুমালো পাড়া জুড়ালো বর্গী এলো দেশে....
মা তাকে শোনাতেন রুপকথার গল্প-
রাক্ষস-খোক্ষস আর দেও-দানবের গল্প
সোনারকাঠি-রুপোর কাঠির প্রভাবে রাজকন্যার
ঘুমিয়ে থাকার গল্প......
অবশেষে শিশুটি ঘুমিয়ে পড়ে
আমি সেই ঘুমপাড়া রাজকন্যার কথা বলতে এসেছি

যে শিশুটি ঘুমিয়েছে, যাকে ঘুম পাড়িয়ে দেয়া হয়েছে!
ঘুম পাড়ানো হয়েছে বুলেট আর বোমার আঘাতে-
যাকে হত্যা করা হয়েছে.......
আমি সেই খুন হওয়া শিশুটির কথা বলতে এসেছি-

যে শিশুটি জীবনের বিনিময়ে বুঝে গেছে-
এ পৃথিবী কোনো স্বপ্নপুরী নয়,
ক্ষুদ্র জীবনকাল যেন নরকীয় দুঃস্বপ্ন!
এখানে লালপরী আর নীলপরীতে ভাব হয়না
ভাব হয় লাল রক্তের সাথে নীল বেদনার...
এ পৃথিবী কোনো শিশুর পুতুল খেলার জায়গা না,
বরং পৃথিবীই সাম্রাজ্যবাদী হায়েনাদের খেলার পুতুল
শিশু হাতের খেলনা পিস্তলে যারা ভরে দেয় বারুদ
অস্ত্রের খেলায় চলে তাদের সমৃদ্ধির মানবতা

যে শিশুটি অ'তে ছুটে আসা অজগরে আর ভয় পাবে না!
যখন ছুটে আসে বুলেট......
আ'তে হওয়া আমটি যার আর পাড়া হবে না!
আমের জন্য ঢিল ছুড়লে সে হয় মৌলবাদী
আর বিনিময়ে ছুটে আসে মিসাইল.....
তেমনি এক বোমার আঘাতে নিহত হয়েছে সে...

আমি সেই নিষ্পাপ শিশু হত্যার কথা বলছি-
আমি হৃদয়হীন এক পৃথিবীর কথা বলছি

শুক্রবার, ৪ জুলাই, ২০১৪

আওয়ামীলীগ যেভাবে ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনকে বৈধ করতে পারে!

৫ জানুয়ারীতে যে একতরফা ও অগ্রহনযোগ্য নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে, যেখানে নির্বাচনের আগেই ১৫৩ জন বিনা প্রতিদন্দিতায় নির্বাচিত হয়েছে এবং অবশিষ্ট আসনগুলোতেও সংখ্যামাত্র ভোটে আওয়ামীলীগ ক্ষমতা ধরে রেখেছে!
জোর যার মুল্লুক তার, মুলুকে জোরের বিজয় হয়েছে সত্যি কিন্তু চোরের মন পুলিশ পুলিশ বলে জোরওয়ালা লুটেরারা মনের জোর হারিয়ে ফেলেছে। এখন তারা মরিয়া হয়ে বৈধতা চাচ্ছে।

এখন প্রশ্ন হলো- এ বৈধতা কি করে সম্ভব?
উত্তরঃ ফুটবল বিশ্বকাপ চলছে এবং আমরা ইতিমধ্যেই জেনেছি- আওয়ামীলীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ফুটবলে ব্রাজিল সাপোর্ট করেন। ৫ জানুয়ারীর অগ্রহনযোগ্য নির্বাচন বৈধ করতে হলে শেখ হাসিনাকে ব্রাজিল বাদ দিয়ে সাপোর্ট করতে হবে আর্জেনটিনাকে এবং প্রিয় খেলোয়ার লিস্টে রাখতে হবে ম্যারাডোনাকে!

বিষ্মিত অনেকেই প্রশ্ন করতে পারেন- সেটা কিভাবে?

উত্তরঃ ১৯৮৬ সালে বিশ্বকাপ ফুটবলের কোয়ার্টার ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিলো আর্জেন্টিনা ও ইংল্যান্ড। উত্তেজনাপূর্ন সে খেলার প্রথম গোলটি ছিলো আলোচিত ও সমালোচিত, বিতর্কিত ও অবৈধ। ইংলিশ গোলরক্ষক পিটার শিলটনের সাথে লাফিয়ে গোল করার সময় শারিরিকভাবে খাটো ম্যারাডোনা বুঝতে পারলেন শিলটনকে ডিঙ্গিয়ে মাথা দিয়ে বল স্পর্শ করতে পারব না, তাই তিনি হাত চালিয়ে দিলেন এবং হাত দিয়েই গোলটি করলেন!! ইংলিশ গোলরক্ষক পিটার শিলটন বিষয়টি বুঝতে না পারলেও ধরে ফেলেন ইংল্যান্ডের রক্ষণভাগের খেলোয়াড় টেরি বুচার। টেরি চিৎকার করতে থাকে, ‘হাত, সে হাত ব্যবহার করেছে।’ পুরো দল টেরির সঙ্গে শামিল হয় প্রতিবাদে। গোলটা বাতিল হয় হয় অবস্থা।
কিন্তু কৌশলী ম্যারাডোনা দ্রুত ছুটে যায় কর্নার ফ্ল্যাগের দিকে এবং তার সতির্থদের বলেন- আমার দিকে ছুটে এসো। আমাকে জড়িয়ে ধরো। গোলটা উদযাপন করতে হবে। নয়তো রেফারি তা বাতিল করে দেবে।’ আর এভাবেই রেফারি ও লাইন্সম্যানের চোখে ধুলো দেওয়া হয় এবং একটি হলুদ কার্ড পাওয়া অপরাধ, গোল পুরুষ্কারে পরিনত হয়!
তবুও সংশয় ছিলোই! খেলার মাঠে গোল হজম করতে বাধ্য হওয়া মিডিয়া মোড়ল ইংল্যান্ড এবং বোধ সম্পন্ন ক্রীড়া সমর্থক দ্বারা ম্যারাডোনার আজীবন নিন্দিত হওয়ার।
কিন্তু ম্যারাডোনা মাঠের মতোই কৌশলী ছিলো মাঠের বাহিরেও...ম্যারাডোনা গোলটিকে গর্বের সাথে প্রচার করেন এবং হ্যান্ডবলের হাতটিকে নিজের নয় বরং ঈশ্বরের হাত বলে চালিয়ে দেন! এনিয়ে যুক্তিদেন- "ঈশ্বরই তো আমাদের হাত দিয়েছেন। আর আমি ঈশ্বর-প্রদত্ত ওই হাত ব্যবহার করেই গোলটা করেছিলাম। ওটা ঈশ্বরের হাতের গোল নয় তো কী!"

লক্ষ্যনীয়, ৫ জানুয়ারীতে নির্বাচনী গোলপোস্টে জনসমর্থনে খাটো আওয়ামীলীগ গোল দিতে পারবেনা বলে হাত চালিয়ে দিয়েছে এবং অগ্রহনযোগ্য গোল করেছে!

এখন যখন বৈধতার প্রশ্ন আসছে, তখন ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনের ম্যারাডোনার উচিত খেলোয়ার ম্যারাডোনাকে আদর্শমানা এবং ম্যারাডোনার মত কৌশলী হয়ে ওঠা!
যে কৌশলে আওয়ামী ম্যারাডোনা, ৫ জানুয়ারীর জনসমর্থন বিহীন নির্বাচনকে বলতে পারে ঈশ্বরের সমর্থন! ক্ষমতা দেবার মালিক যেহেতু ঈশ্বর তাই ৫ জানুয়ারীর ক্ষমতা ঈশ্বরের সমর্থন নয় তো কি? এছাড়াও ৫ জানুয়ারীর আগে শেখ হাসিনা যেহেতু মদিনা সনদ অনুযায়ী দেশ চালাতে চেয়েছিলেন, তাই ঈশ্বর যে তাকেই সমর্থন করবেন এটাই স্বাভাবিক!

বাংলাদেশ যেহেতু ধর্মপ্রান মানুষের দেশ, ঈশ্বর সমর্থিত ৫ জানুয়ারীর নির্বাচন জনগন গ্রহন করবে এবং এভাবেই ৫ জানুয়ারীর নির্বাচন বৈধ হয়ে উঠবে!!