মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

সারপ্রাইজ ডেমক্রেসির বিরম্বনা

(বাংলাদেশ নিয়ে ফেসবুকে দেয়া আমার 'মুহূর্তের মন্তব্যর' কয়েকটি নির্বাচিত মন্তব্য এখানে দেয়া হলো)

এক.
বাংলাদেশ রাষ্ট্রে এখন শুধুই স্তম্ভ!
নির্বাহী বিভাগ, আইন সভা, বিচার বিভাগ, ও মিডিয়া।
এ স্তম্ভগুলো দূর্বল করা হয়েছে কি হয়নি? এ প্রশ্নর চেয়েও বড় কথা- স্তম্ভের ওপরে যদি না থাকে জননিরাপত্তার ছাওনি! স্তম্ভের ওপর রাষ্ট্র দাড়িয়ে থাকলেও সেটা জনগনের উপযোগী নয়...
হায়, বাংলাদেশ নামক ঘরের স্তম্ভগুলোই শুধু দাড়িয়ে আছে! যেগুলোকে দেখলে আমার সুশাসনের 'স্মৃতিসৌধ' মনে হয়! যে চারটি স্তম্ভ সৌধের প্রতি বর্গমিলিমিটারে লেখা আছে 'জনঅধিকার হত্যার এপিটাফ'।

দুই.
সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী, সুইট সিক্সটিন নয়!
এটা বাকশালের বর্গ....
খেয়াল করুন, ৪ এর বর্গ ১৬।
সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীকে আমার চতুর্থ সংশোধনীর বর্গ বলে মনে হয়।
চতুর্থ সংশোধনীতে বহুদলীয় রাজনীতির পরিবর্তে একদলীয় রাজনীতি প্রবর্তন করা হয়েছিলো। ষোড়শ সংশোধনীতে সে একদলীয় শাসনকেই প্রাতিষ্ঠানিক তবে কৌশলী রুপ দেয়া হচ্ছে...

তিন.
বাংলাদেশের গনতন্ত্রে আব্রাহাম লিঙ্কনের চেয়ে সানি লিয়নের প্রভাবটাই বেশী-
ধর্ষন সম্পর্কে সানি বলেছিলো- 'ধর্ষন হলো সারপ্রাইজ সেক্স'!
৫ জানুয়ারীতে যেভাবে ভোটাধিকারকে ধর্ষন করা হয়েছে! আওয়ামীলীগ আর 'জনগনের জন্য, জনগনের দ্বারা, জনগনের সরকার' নয়।
তাদের হাতে গনতন্ত্র সালি লিয়নের 'সারপ্রাইজ ডেমক্রেসি' ছাড়া আর কিছুই নয়...

চার.
গনতন্ত্র বেওয়ারীশ নয়! গনতন্ত্রের বহুওয়ারীশ!!
তবুও হায়!!
গায়েব হয়ে যাওয়া গনতন্ত্র,
বাংলাদেশে এখন তোমার জন্য, গায়েবানা জানাজাই পড়তে হবে....

পাঁচ.
বাংলাদেশ যেনো এক, মধ্যবিত্ত পতিতা!
যে কামনা করে পতির পূন্য, একি সাথে পতিতার সুখও...
মেনে নেয় ভোটাধিকার হরন, একি সাথে কামনা করে গনতন্ত্রও!

ছয়.
১৮ বছর বয়স, সত্যি দুঃসহ!!!

সাধারনত ১৮ বছর বয়সে, তরুনেরা ভোটার হয়। কিন্তু '৭২-এর মেট্রিকের মতো ২০১৪'র যে ইলেকশন!
১৮ বছর বয়স, এখন ভোটাধিকারের নয়! বরং ভোটাধিকার হরনের।

২০১৪ সালের গনতন্ত্র, ১৮ বছর বয়স সত্যি দুঃসহ.......

সাত.
বাংলাদেশে এখন অসুস্থ্যরাই ভালো আছে........
নির্বাচনের আগে অসুস্থ্য হওয়া এরশাদ, এখন ভালো আছে!
ফাঁসির রায়ের আগে অসুস্থ্য হওয়া নিজামী, এখন ভালো আছে!
আসলে, ৫ জানুয়ারীর অসুস্থ্য সরকার যেখানে ভালো আছে! তখন অসুস্থ্যরা ভালো থাকবেই...
শুধু দুঃখ হয়, অসুস্থ্য বাংলাদেশই কেবল ভালো নেই!!!

আট.
"অধিকার ছাড়িয়া দিয়া, অধিকার রাখিতে যাইবার মত বিরম্বনা আর নাই"
৫ জানুয়ারীর অগ্রহনযোগ্য নির্বাচনে বাংলাদেশের অধিকার লুটেরাদের হাতে ছাড়িয়া দিয়া, বিচারপতি অভিসংশনের ষোড়শ সংশোধনীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের স্তম্ভ বিচারবিভাগের স্বাধীনতা রক্ষা করিতে চাওয়াও এক বিরম্বনা!
বাংলাদেশ, তুমি এখন এক বিরম্বনার নাম।

নয়.
বসন্ত পেতে হলে, মাঘের শীতের হাঁড় কাপুনি পেরিয়ে আসতে হবে..

প্রিয় বাংলাদেশ,শাসকের বিরুদ্ধে জনগনের প্রতিরোধকে যে নামেই ডাকি!
কিবা আসে যায়! হোক সেটা আরব বসন্ত কিংবা বাংলার বসন্ত!
এ বসন্ত পেতে হলে শোষকের মরন কামড়ে তোমাকে কাঁপতেই হবে....

দশ.
প্রত্যেক সরকারের কিছু চাহিদা থাকে।
জনগনের অকুন্ঠ সমর্থন, রাষ্ট্রের পূর্ন নিয়ন্ত্রন ইত্যাদি।
৫ জানুয়ারীর অগ্রহনযোগ্য নির্বাচনের আওয়ামী সরকারের যেহেতু জনসমর্থন নেই, তাই তাদের অপরাপর চাহিদাগুলো বেশী সক্রিয় হয়ে উঠেছে! এবং জনগনের বিপরীতে দাড়িয়ে ক্ষমতা টেকাতে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন হয়েছে।
গনমাধ্যম নীতিমালাই বলি কিংবা বিচারপতি অভিশংসনের জন্য সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনি! এটা আওয়ামীলীগের বিশেষ চাহিদাকেই নির্দেশ করে। তাই আমরা বলতে পারি, বর্তমান আওয়ামী সরকার বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন সরকার।
'বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন' কথাটিতে অবশ্য উপমাগত পার্থক্য দেখা দিতে পারে! বিশেষ চাহিদা একদিকে যেমন থাকে অটিস্টিকের! অন্যদিকে থাকে প্রতিভাবানের। তাই গনমাধ্যম নীতিমালা কিংবা বিচারপতি অভিশংসনের বিশেষ চাহিদার জন্য একপক্ষ আওয়ামীলীগকে অটিস্টিক বলতে পারে! অন্যপক্ষ এ বিশেষ চাহিদার জন্য আওয়ামীলীগকে রাজনৈতিক প্রতিভাবানও বলতে পারে!
এখন প্রশ্ন হলো- এ উপমাগত পার্থক্যের একক মূল্যায়ন কি?
উত্তরঃ ৫ জানুয়ারীর সরকার অবশ্যই অটিস্টিক সরকার। আবার জনমতকে উপেক্ষা করে একতরফা নির্বাচন করে টিকে থাকাটাও প্রতিভারই নিদর্শন। তবে মনে রাখতে হবে, এ প্রতিভা ভোটাধিকার হরন করার! এ প্রতিভা একটি সুষ্ঠ নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করার, এ প্রতিভা ভিন্নমত দমন করে টিকে থাকার....
তাই, এ উপমাগত পার্থক্যের একক মূল্যায়ন- আওয়ামীলীগ সৈরাচারী আচরনে আর্টিস্টিক কিন্তু গনতান্ত্রীক সরকার হিসাবে অটিস্টিক।
গনতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করা একটি দেশের সরকার হিসাবে আওয়ামীলীগের এ প্রতিভা এবং প্রতিবন্ধীতা তাদের বাকশাল শেকড়ের 'নিউরো বায়োলজিক্যাল ডিজর্ডার'।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন