বৃহস্পতিবার, ২০ অক্টোবর, ২০১১

বাস্তব দৌড়কথায় পরাজিত অবাস্তব রুপকথা!!!

ছোটবেলায় ঠাকুমার মুখে শোনা ঠাকুমার ঝুলি ছিলো আমার অসম্ভব প্রিয়। মুগ্ধ হয়ে শুনতাম, রাজা-রাজপুত্র, ব্যাঙ্গমা-ব্যাঙ্গমি, রাক্ষস-খোক্ষস আর অচিনপুরের সেই ঘুমন্ত রাজকন্যার সোনার কাঠি-রূপার কাঠিতে ঘুম ভাঙ্গার গল্প!
অসম্ভব ভালো লাগায় আমার মধ্যে এক স্বপ্ন জগত তৈরি হতো। যে জগতের আমিই রাজপুত্র, যার প্রতিক্ষায় ঘুমিয়ে আছে কোন রাজকন্যা! রাক্ষস-খোক্ষসকে আমি থোড়াই কেয়ার করি! রাজকন্যার জন্য পুকুরের তলদেশ থেকে তুলে আনবো কৌটায় রাখা জীবন ভ্রমর......ভাবনা এগোয়.....রুপকথা পরিনত হয় আমার জীবন বাস্তবকথা'য়!!!
সে সময় রুপকথার অনেক গল্পই আমার কাছে বিশ্বাসযোগ্য মনে হতো! কিন্তু আজকালের অনেক বাস্তব কথাও রুপকথার চেয়েও অবিশ্বাস্য বলে হয়! তবে সব সম্ভবের দেশতো বাংলাদেশ....!!
পটুয়াখালীর সরকার দলীয় সাংসদ গোলাম মওলা রনি সেদিন টিভি টকশোতে রুপকথার মতোই যে দৌড়ের কথা শোনালেন, আমি বিষ্মিত, আমি হতবাক!!! (সুত্র)
সরকার দলীয় সাংসদ গোলাম মওলা রনি ১৮ অক্টোবর(সোমবার) রাতে বেসরকারি টেলিভিশন ‘চ্যানেল আই’তে প্রচারিত আলোচনা অনুষ্ঠান তৃতীয় মাত্রায় বলেন- “তখন ২০০৪ বা ২০০৫ সাল। তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা চীন সফরে গিয়েছিলেন। চীনের হেনদু নামের প্রদেশে সফরসঙ্গী হিসেবে ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা ওবায়দুল কাদের, সাবের হোসেন চৌধুরী ও ব্যবসায়ী সৈয়দ আবুল হোসেন।”
 সফরের এক পর্যায়ে এক রৌদ্রোজ্জ্বল বিকালে ওয়েস্ট লেকের পাড়ে হঠাৎ আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, “দেখো তো একটা বাঁশি জোগাড় করা যায় কি না। পরে বাঁশি জোগাড় হলে একটি নির্দিষ্ট দুরত্ব দেখিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, তোমরা তিনজন এই স্থানে দৌড় দাও। যে প্রথম হবে তাকে আমি মন্ত্রী বানাবো।”
হাস্যোজ্জল বিকালে নেতারাও বিষয়টিকে হালকাভাবে নিয়েই দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন। কিন্তু সৈয়দ আবুল হোসেন বিষয়টিকে এতটাই সিরিয়াসলি নেন যে তিনি ‘জানপ্রাণ’ দিয়ে দৌড়ান এবং প্রথম হন। এরপর মহাজোট ক্ষমতায় আসলে আবুল হোসেন, প্রধানমন্ত্রীকে তার কমিটমেন্টের কথা স্বরন করিয়ে দেন। এই হলো তার মন্ত্রী হবার সত্যিকারের ইতিহাস। আমরা সরকারের কাছাকাছি আছি আমরা জানি।
টিভিতে আমি যখন টকশো শুনছিলাম, অবাক বিষ্ময়ে ভাবছিলাম আমি কি ঠিক শুনছি!!! তারপর ইউটিউব থেকে ফুটেজটি ডাউনলোড করে, আমি অসংখ্যবার দেখেছি আর ভেবেছি, প্রধানমন্ত্রীর এ দৌড়কথার কাছে রুপকথার অবাস্তব কাহিনীও নস্যি!!!
কচ্ছোপ খরগোসের দৌড়ে আমরা কচ্ছোপকে জিততে শুনেছি । দৌড়ে জিতে গিটগিটির ঝুটি পাওয়ার গল্পও রুপকথায় পড়েছি! তাই বলে দৌড়ে জিতে মন্ত্রী হওয়া!!! সব সম্ভবের দেশে এটা সম্ভব হলে, এদেশের মানুষের ভাগ্য উন্নয়ন কিভাবে সম্ভব হবে???
আমি ভাবছিলাম, চারদলীয় এমপি(সাবেক) সালাউদ্দিনের সেই বিখ্যাত দৌড়ের কথা! দৌড় সালাউদ্দিনের নিশ্চই আজ মন খারাপ...! দৌড় জিতে আবুল হয় মন্ত্রী আর সে বাঁচিয়ে ছিলো জান, হারিয়েছিলো ক্ষমতা!!!
ক্ষমতার রুপকথার সাথে বাস্তবের দৌড়কথা কিম্বা ভোটকথা'র পার্থক্য সম্ভবত এটাই.......
তবে আমি আশাবাদি, টকশো'তে রনির দৌড়কথা থেকে আমি জেনেছি, আমাদের প্রধানমন্ত্রী ভঙ্গ করে না অঙ্গিকার, তিনিতো বঙ্গবন্ধুর কন্যা।
তিনি নিশ্চই জনগনকে দেয়া প্রতিশ্রুতি গুলোও রক্ষা করবেন, ১০ টাকা কেজি চাল, বিনা মূল্যে সার, ঘরে ঘরে চাকরি, যুদ্ধাপরাধীর বিচার.........রক্ষা করবেন!!!
দৌড়কথার হতাশা এবং প্রধানমন্ত্রীর আচরনের আস্থা, এ দ্বিমূখি সংকটে তাকে লিখছি,

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
আজকে যে শিশুটি জন্ম নেবে, আপনি তার ঠাকুমার বয়সি। তাই আপনার ঝুলি(ঠাকুমার ঝুলি) থেকে তাদের জন্য রেখে যান স্বপ্ন জগত তৈরি করার মতো ভবিষৎ।
দরবেশ বাবার প্রভাবে ঘুমিয়ে থাকা শেয়ার বাজার জাগিয়ে তুলুন।
মজুতদারের মায়ার প্রভাবে, দ্রব্যমূল্যের উত্তাপে পুঁড়তে থাকা বাজার রাহু মুক্ত করুন।
যুদ্ধাপরাধী, মৌলবাদী, জঙ্গি রাক্ষস-খোক্ষসদের মারতে অতল থেকে তুলে আনুন কোন সুরক্ষিত কৌটায় রাখা তাদের জীবন ভ্রমর, ছিঁড়ে দিন তাদের ডানা ভেঙ্গে দিন মেরুদন্ড।
ঘরের শত্রু বিভিষন ছাত্রলীগ যুবলীগের ভর্তি, দখল, টেন্ডার বানিজ্য বন্ধ করুন।
বুদ্ধিজীবি নামক ব্যাঙ্গমা-ব্যাঙ্গমীর কথা শুনুন।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, শেয়ার বাজার, আইন-শৃংখলা নিয়ে সাধারন মানুষ এমনিতেই দৌড়ের ওপর আছে,
কোনটি বেশী মূল্যবান???
মন্ত্রী হবার জন্য আবুলের সৌখিন দৌড় নাকি জীবন যুদ্ধে টেকার জন্য সাধারন মানুষের নাভিঃশ্বাস দৌড়???

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন