শনিবার, ২০ জুলাই, ২০১৩

কত ধানে, কত চাল!!!

গরিবের কথা বাসি হলে ফলে!
দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার অছিউদ্দিনের একটি ধানের ভেতর থেকে দুই থেকে তিনটি চাল আবিষ্কারের খবর দেখে দুই মাস আগে এক কলামে লিখেছিলাম- ""এবার এক ধানে পাওয়া যাবে দুই চাল"। শুধু কৃষি প্রধান দেশ বলেই নয়, নির্বাচনের বছরে এ অসাধারন ঘটনাটি, সাফল্যের এক অনন্যসাধারন রাজনৈতিক রুপক। কৃষি গবেষনার এ সফলতা ১৬ কোটি(!!) মানুষের যেমন খাদ্য ঘাটতি পূরন করবে। তেমনি এ ঘটনায় অনুপ্রানিত রাজনৈতিক গবেষনায় সব দলের অংশ গ্রহনে নির্বাচনকে গ্রহনযোগ্য করে তুলবে! অদূর ভবিষৎ এ এদেশের মাঠে শুধু এক ধানে দুই চালই বেরোবেনা, নিকট ভবিষৎএ এ দেশের রাজনৈতিক ময়দানে এক 'ধানের শীষে' দুই বা ততোধিক দলও বেরোবে! ফলে খাদ্য ঘাটতি যেমন মিটবে, তেমন দলীয় সরকারের অধীনে অগ্রহনযোগ্য নির্বাচনের গ্রহযোগ্যতার ঘাটতিও মিটবে....! অভিনন্দন কৃষি গবেষকেরা। অগ্রিম অভিনন্দন রাজনৈতিক গবেষকেরা....!!!"
ইতিমধ্যেই মাহশাল্লাহ্ এ গরিবের কথার সফল ফলনে  রাজনৈতিক গবেষকদের গবেষনায় নতুন দল হিসাবে নিবন্ধিত হতে যাওয়া বিএনএফকে গমের শীষ প্রতিক বরাদ্ধ দিতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন!!!!
নুন্যতম স্থানীয় নির্বাচনের একই ব্যালটে কলস আর জগ প্রতিক থাকার বিরম্বনা সম্পর্কেও যদি ধারনা থাকে তবে জাতীয় পর্যায়ের নির্বাচনে এমন হটকারী স্বীদ্ধান্ত নেবার সুযোগ নেই। পারস্পারিক আস্থা, বিশ্বাসের ঠুনকো রাজনৈতিক অবস্থানে থাকা দু দলকে নির্বাচনে আনা এবং অবাধ ও সুষ্ঠ নির্বাচন সম্পন্ন করার কান্ডারি হিসাবে নির্বাচন কমিশনের এ স্বীদ্ধান্ত অবিবেচনা প্রসুত এবং একটি বিশেষ দলের প্রতি সুস্পষ্ট পক্ষপাত! যা কিনা ভবিষৎ এ শুধু খারাপ দৃষ্টান্ত হিসাবেই নয় বরং কার্যকরও হবে! সাক্ষরতা দিয়ে শিক্ষার হার বাড়ানো পশ্চাৎপদ একটি দেশে ধানের শীষকে বেকায়দায় ফেলতে গমের শীষ প্রতিক দিয়ে বরং ভবিষৎ এ নৌকাকে বেকয়দায় ফেলতে ছই বিহীন নৌকা প্রতিক বরাদ্ধ দেয়ার নোংরামির সূচনা করা হলো.....শেইম ইসি। শেইম ইসি'র কাঁধে বন্দুক রাখা সরকারি ভিসি!!!

 এখানে সরকারি ভিসি, বলতে চালবাজ সরকারকেই বোঝানো হচ্ছে। যারা বাজারে এনেছে এ নতুন চাল!
বাজারে এখন হরেক রকমের চাল!!! মিনিকেট, আটাশ, জিরা, নাজিরশাহ.....আরো আছে আতোপ চাল, পোলাও চাল, আছে রাজনৈতিক চাল! তবে এই মুহূর্তে বাজারের সেরা চাল সম্ভবত বিএনপিকে ঘায়েল করতে বিএনএফ দল এবং তাদের গমের শীষ প্রতিক দেওয়া আওয়ামী চাল!
নতুন এ উদ্ভাবনী চালের জন্য চালবাজ সরকার অভিনন্দন প্রাপ্য। যদিও কথায় আছে- 'পুরানো চাল ভাতে বাড়ে'। আর জনসমর্থনই যে রাজনৈতিক দলের পুরানো এবং চিরন্তন চাল। জনসমর্থন হারিয়ে, ধানের শীষ আর গমের শীষের ধোয়াসার নতুন কূট চালে, ভাত কতটুকু বাড়বে? আর ভোটেই বা কতটুকু প্রভাব পড়বে?
তবে এ কূটচালে ভাত আর ভোট বাড়ুক না বাড়ুক। অন্তত '"দশ ট্যাকা সের চাল খাবো, আওয়ামীলীগে ভোট দেবো" শ্লোগান দেয়া জনগনকে দশ ট্যাকা সের চাল খাওয়াতে না পারলেও, ফ্রি তে যে কূট চাল খাওয়ানো যাচ্ছে! এটাও চালবাজদের বড় সফলতা!!

অনেকেই প্রশ্ন করতে পারেন- নতুন দল পয়দা হইছে, ভালো কথা। তা প্রতিক গমের শীষ হলো কেন?
আসলে জনসংখ্যাধিক্যে খাদ্য ঘাটতি মোকাবেলায়, আপনাকে হয় খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে হবে নয়তো জনসংখ্যা কমাতে হবে। তেমনি জনসমর্থনহীনতায় ভোট ঘাটতি মোকাবেলায়, সরকারকে হয় নিজেদের ভোটার বাড়াতে হবে নয়তো প্রতিপক্ষের ভোট কমাতে হবে।
কিন্তু সরকারের জন্য পরিহাস হলো, শেয়ার বাজার, হলমার্ক, পদ্মাসেতু, ছাত্রলীগ, হেফাজত ইস্যু সহ দাম্ভিকতার ভাঙ্গাতরী ছেঁড়া পালে আর কতকাল??? পাঁচ সিটির ফলাফলই যার প্রমান এবং ভবিষৎ পরিনতির নমুনা। জনসমর্থনের আর অদক্ষতার তলানীতে থেকে সরকারের পক্ষে যেহেতু নিজেদের ভোট বাড়ানো সম্ভব নয় তাই অবধারিত ভাবেই বিএনপি তথা ধানের শীষের ভোট কমাতে হবে। আর এ প্রক্রিয়ার অংশ হিসাবেই নিবন্ধন পেয়েছে বিএনএফ এবং প্রতিক পেয়েছে গমের শীষ।

দলীয় সরকারের অধীনে ধান আর গমের একাকার ছাড়াও আরো দুইটি বিষয় এখানে আশংকা জাগানিয়া!
আশংকা এক.- ভোট গ্রহন শেষ হয় বিকালে। অর্থ্যাৎ ভোট গননা হয় বিকালের হালকা আলোয়। যেখানে প্রশাষনিক প্রভাবে ধানের শীষের ব্যালট, গমের শীষের মধ্যে ঢুকিয়ে দেয়া হতে পারে।
আশংকা দুই.- শেষ পর্যন্ত যদি বিএনপি দলীয় সরকারের অধিনে নির্বাচনে না আসে তবে বিএনপি'র স্থলে বিএনএফ'কে এবং ধানের শীষের স্থলে গমের শীষ দেখিয়ে নির্বাচন বৈধ করার চেষ্টা করা হবে।
আসল কথা হলো, ফাউল রাজনীতিতে এটা আওয়ামীলীগের বড় একটি ফাউল। আর এ ফাউল সম্পর্কে গরিবের ভবিষৎবানী হলো- এটা নোংরামির দৃষ্টান্ত স্থাপন করলো। যার ফলে একসময় আসবে যখন আওয়ারা লীগ নামে নতুন দল পয়দা হবে! আর যার প্রতিক হবে ছই বিহীন নৌকা!
দেখা যাক গরিবের এ কথাটাও বাসি হলে ফলে কিনা........

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন