বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০১৩

গেমার যেভাবে লুজারে পরিনত হবে!

রাজনীতি যদি একটা গেম হয়, তবে আওয়ামীলীগ নিঃসন্দেহে রাজনীতির বড় মাপের গেমার।

ভিডিও গেমস খেলে খেলে যারা অভ্যস্থ, তারা নিশ্চই জানেন- অভিজ্ঞতা এখানে বড় ফ্যাক্টর। খেলতে খেলতে আপনার মুখস্থ হয়ে যাবে যে, গেমের কোন জায়গায় দ্রুত ছুটতে হয়, কোথায় বিপদের আশংকায় গতি কমিয়ে কিছুটা থামতে হয়, প্রতিপক্ষ বসের শক্তি সম্পর্কেও একটা ধারনা তৈরী হয়। ফলে কিছুদিনের অভিজ্ঞতাতে ভিডিও গেম আর গেম থাকে না, সময় অতিক্রম করার পাশাপাশি নিজেকে ভালো খেলোয়ার দেখানোর হাতিয়ার হয়ে যায়!!!

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, অভিজ্ঞ রাজনৈতিক দল। সময়ের হিসাবেই ধরি আর সংগ্রামের ইতিহাস কিংবা মাঠের রাজনীতিই ধরি অথবা সময়ের বাঁকে উৎরে যাওয়া। ১৯৪৯ সালে 'পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ' নামে জন্ম নেয়া দলটি এ দীর্ঘ সময়ে রাজনীতি সম্পর্কে অভ্যস্থ এবং মুখস্থ হয়ে পড়েছে। অন্যভাবে বললে, নিজেকে ভালো খেলোয়ার দেখানো গেমারে পরিনত হয়েছে...
আর তাইতো, তত্বাবধায় সরকারের দাবীতে নিজেদের করা ১৯৯৬ এর আন্দোলনের তাজা স্মৃতি এবং তৎকালীন সরকারের একতরফা নির্বাচন ও স্বল্পকালীন সরকারের ইতিহাসের চেনা বাঁক জানা স্বত্বেও নিজেদের সেইসময়ের পরাজিতদের পদাংকে পা রেখে নিজেদের বড় গেমার ভাবছে। এ আত্বতৃপ্তিতেই নিশ্চিত পরাজয়ের মুখেও একতরফা নির্বাচনে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ সরকার, কৈ'এর তেলে কৈ ভাজার মতো একতরফা মহাজোটের তেলে মহাজোট ভাজার জন্য এরশাদের পদত্যাগ নাটকের মাধ্যমে প্রথমে কৈ থেকে তেল আলাদা করেছে এরপর এরশাদকে ৭টি মন্ত্রনালয় দিয়ে নির্বাচনে টানার মাধ্যমে মহাজোটের তেলে সর্বদলীয় নির্বাচনের ব্যবস্থা করেছে.....হোয়াট আ গেম....

এখন প্রশ্ন হলো- এ গেমের লাস্ট স্টেজ কি আওয়ামীলীগ উৎড়াতে পারবে?

উত্তরঃ না। আওয়ামীলীগ যত বড় গেমারই হোক, এ গেমে তাদের পরাজয় নিশ্চিত। এবং সে পরাজয়টা হবে শোচনীয়।

অনেকেই প্রশ্ন করতে পারেন- সেটা কিভাবে? যখন ক্ষমতা আওয়ামীলীগের হাতে, সামরিক-বেসামরিক বাহিনী তাদের নিয়ন্ত্রনে, বিএনপির দূর্বল সাংগঠনিক অবস্থা তাদের পক্ষে, সর্বপরি কূট-রাজনৈতিক গেমে তারা অগ্রবর্তি?

উত্তরঃ সময়ও একটা গেম। তবে ভিডিও গেমের সাথে সময়ের গেমের বিস্তর ফারাক। ভিডিও গেমে জানা সম্ভব কোন বাঁকে কি অপেক্ষা করছে কিন্তু সময়ের কোন বাঁকে কি অপেক্ষা করছে এটা জানা সম্ভব নয়। ভিডিও গেম খেলতে খেলতে থামিয়ে দিয়ে বিশ্রাম করে আবার খেলা যায় কিন্তু সময়ের গেম অনবরত খেলে যেতে হয়। সবচেয়ে বড় কথা, ভিডিও গেমে লাইফ খোয়া গেলে আবার নতুন করে শুরু করা যায় কিন্তু সময়ের গেমে তা সম্ভব নয়।

আওয়ামীলীগ সময়ের গেমের সেই রিস্কি খেলাই খেলছে, যেখানে ভিডিও গেমের বস পরিচয় কোন কাজে আসবে না। রেসের ময়দানে গাড়ি চালাবেন, তেলতো অবশ্যই লাগবে। নাকি মাইকেল শুমাখার নামেই গাড়ী চলবে?
বাস্তবতা এটাই যে, আওয়ামীলীগের জনপ্রিয়তার তেল ট্রাংকির তলানীতে পৌছেছে। এ গাড়ি আর কতদুর যাবে?

অনেকে হয়তো বলতে পারেন- আওয়ামীলীগ তো জনপ্রিয়তা দিয়ে নয় বরং ক্ষমতা দিয়ে ক্ষমতায় যাবে! অর্থ্যাৎ তেল দিয়ে নয় বরং সিএনজি দিয়ে গাড়ী চালাবে!

উত্তর-হ্যাঁ, সেটা সম্ভব। সিএনজি দিয়েও গাড়ী চালানো যায়, তেলের দরকার পরে না! তবে মনে রাখতে হবে, ইন্জিনটা কিন্তু পেট্রোল ইন্জিন! এখানে সিএনজি কাজ করবে না। দেশটাও গনতন্ত্রের, এখানে জনপ্রিয়তা বাদ দিয়ে ক্ষমতাতন্ত্র চলবে না। ১৯৭৫ও কিন্তু গনতন্ত্রের পেট্রোল ইন্জিলে, বাকশাল সিএনজি কাজ করে নি।

এবার আসি, আওয়ামীলীগের আসন্ন পরাজয়ের সবচেয়ে বড় টুইস্টে...
রেসের ময়দানে গাড়ি যদি একটাই হয় তাহলে তেলও হয়তো কোন সমস্যা না! ঠেলে ঠুলে গাড়িকে বর্ডার লাইন পার করালেই তো চাম্পিয়ন! কিন্তু বর্ডার লাইন পাওয়ার আগেই যদি গাড়ীর চাকা খুলে যায়, তবে? ঠেলে ঠুলেও কি গাড়ি আগানো যাবে?
জনসমর্থনের তেল ছাড়া দিশেহারা সরকার একতরফা নির্বাচন বৈধ করার জন্য মরিয়া হয়ে এরশাদকে সাত সাতটি মন্ত্রনালন দিয়ে তার রেসের সঙ্গী করেছে। কিন্তু এরশাদের যে দ্রুত রং পরিবর্তন করা গিটগিটি চরিত্র! আগামী কয়েকটি হরতাল-অবোরোধে পরিস্থিতি যখন আরো নাজুক হয়ে যাবে, আওয়ামীলীগের একতরফা ক্ষমতা যাবার ট্র্যাক ক্ষতিগ্রস্থ হবে, তখন সন্মান আর পিঠ বাঁচানোর খাতিরে এরশাদ তার ৭ মন্ত্রী নিয়ে পদত্যাগ করবে! এবং এর মাধ্যমেই একতরফা নির্বাচনে যাবার আগেই আওয়ামীলীগের ক্ষমতাগাড়ীর চাকা খুলে যাবে! এবং গেমের লাস্ট স্টেজে আওয়ামীলীগের শোচনীয় পরাজয় হবে।
আর এভাবে রাজনীতির বড় গেমার আওয়ামীলীগ, স্বরণকালের সবচেয়ে বড় লুজারে পরিনত হবে......

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন