শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর, ২০১৩

বাসে আগুন কারা দিচ্ছে? কেন দিচ্ছে? এবং আমাদের করনীয়

রাজনীতির আগুনে পুড়ছে যারা পথে, ঘাটে, বাসে....
সে কারো ভাই, কারো স্বজন, কারো পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম।
তাই বাসে দেয়া আগুনে শুধু একটি বাস আর কয়েকজন মানুষই পোড়ে না! অগ্নিদগ্ধ মাথাপিছু এক একটি পরিবার পোড়ে...

সাধারনত একটি মিনিবাসে সিট থাকে ৪৫ টি। বসে এবং দাঁড়িয়ে যাত্রী থাকে ৬০ জনের মতো, এরমধ্যে একই পরিবারের একাধিক সদস্য মিলিয়ে প্রায় ৫০ টি ভিন্ন ভিন্ন পরিবারের সদস্য থাকে। যারা সরবে এবং সজ্ঞানে একটি বাসে আগুন দিচ্ছে, এ আগুন শুধু বাসে নয় বরং অনেকটাই নিরবে ৫০ টি পরিবার জ্বালাচ্ছে। অর্থ্যাৎ একটি বাসে আগুন দেয়া মানেই ৫০ টি পরিবারে আগুন দেয়া।

এছাড়াও বাসে আগুন দেয়ার আরেকটি বড় ক্ষতি হলো জনগনের মধ্যে পরিবহন ব্যবস্থার অনিরাপত্তা বোধ তৈরী করা! পারিবারিক, সাংসারিক, ব্যবসায়ীক, প্রাতিষ্ঠানিক প্রয়োজনে সকলকে বাড়ীর বাহিরে যেতেই হয়। বাসে আগুন দেয়া, প্রত্যেক পরিবারের মধ্যেই সবসময় অজানা আশংকার এক দুষ্চিন্তা ঢুকিয়ে দিয়েছে- আমি ঠিকমত বাসায় ফিরতে পারবো তো? আমার স্বজন নিরাপদে বাসায় ফিরবে তো? অর্থ্যাৎ একটি বাসে আগুন দেয়ার মানে অনিশ্চয়তা আর অনিরাপত্তার ভয় ঢুকিয়ে পুরা দেশের মনোজগতে আগুন ধরিয়ে দেয়া।

এখন প্রশ্ন আসতে পারে- এ আগুন কারা দিচ্ছে? কেন দিচ্ছে?

যেহেতু এমন নাশকতা হচ্ছে বিরোধীদলের কর্মসূচির সময়ে তাই এর প্রথম সন্দেহভাজন তারাই। আবার সরকারের দায়িক্ত জনগনের জানমালের নিরাপত্তা বিধান করা, এক্ষেত্রে তারা ব্যর্থ হলেও আমাদের মনে রাখতে হবে আমাদের দেশটা দরিদ্র তাই বিপুল সংখ্যক জনগনের বিপরীতে সামান্য সংখ্যক পুলিশ দিয়ে নিশ্চই মোড়ে মোড়ে পাহাড়া দেয়াও সম্ভব নয়। তাই সরকারকে ব্যর্থতার পুরা দায় না দিয়েও সন্দেহভাজন হিসাবে দ্বিতীয়তে রাখা যেতে পারে কূট রাজনীতিতে বিরোধীদলের জনসমর্থনের নৈতিকতায় হানা দেবার প্রচেষ্টার কথা মাথায় রেখে।

লক্ষ্যনীয়, বিরোধীদলের কর্মসূচি সারাদেশে ব্যপকভাবে পালন হলেও বিরোধীদলের কেন্দ্রীয় নেতাদের নিষ্ক্রীয়তা এবং সরকারের কড়াকড়িতে ঢাকা ছিলো তুলনামুলক স্বাভাবিক! ঢাকাতে বিরোধীদল মাঠেও ছিলো না আবার এমন চোরাগোপ্তা হামলাও চালায় নি! তাহলে তো এ কর্মসূচির পালনে তারা পুরাই নিষ্ক্রিয়? এটা কি হতে পারে?
সম্ভবত, মাঠে নামতে না পারা এবং মাঠে না নেমেও কর্মসূচি সফল করার জন্য জনমনে ভীতি সৃষ্টি করার জন্য এ নৃশংস হামলাই ছিলো তাদের একমাত্র অস্ত্র!

এ সরকারের শুরু থেকেই বিরোধী দলের ওপর নজিরবিহীন হামলা, মামলা, ঝামেলায় জড়িয়েছে। সাম্প্রতিক সময়েও হাস্যকর কারনে কেন্দ্রীয় নেতাদের গ্রেফতার, জামিন না দেয়া, কেন্দ্রীয় কার্যলয় অবরুদ্ধ করে রাখা, মিছিলে গুলি চালানো সহ রাজপথ নিয়ন্ত্রনে রাখার মরিয়া চেষ্টাই বিরোধীদলকে রাজপথে না থেকে চোরাগোপ্তার দিকে ঠেলে দিয়েছে। স্বাভাবিক আন্দোলন বন্ধ করলে অস্বাভাবিক আন্দোলনের রাস্তা খুলে যাবে এটাই স্বাভাবিক।

এখন প্রশ্ন আসতে পারে- সরকার বিরোধীদলকে রাস্তায় নামতে না দিয়ে চোরাগোপ্তার দিকে ঠেলে দিচ্ছে বলেই কি, বাসে অগ্নিসংযোগ সমর্থনযোগ্য?

উত্তরঃ না। কখনোই, কোন পরিস্থিতিতেই এটা সমর্থনযোগ্য নয়।

আপনি এখন বলতে পারেন- তাহলে আমাদের করনীয় কি? গত ৫ বছরের ব্যাপক অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি আর অপশাসনের মহাজোট সরকারকে পূনরায় নির্বাচিত করার জন্য ভোট দেয়া সম্ভব নয়। আবার যে পরিস্থিতিতেই হোক বিরোধীদলের নৃশংসতাও সমর্থন করা সম্ভব নয়। তাহলে আমরা কি করবো? কোনদিকে যাবো? এ অনিশ্চিত সময়ে আমরা কি কেবল শুধুই দগ্ধ হবো?

উত্তরঃ এ মুমুর্ষ সময়ে আমাদের অবশ্যই ন্যায়ের পথে থাকতে হবে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাড়াতে হবে। সময়ের ডাকে, সময়ের প্রয়োজনে জোড়ালো ভূমিকা রাখতে হবে। যে ভূমিকা আমাদের পূর্বপুরুষেরা রেখেছিলো ভাষার যুদ্ধে, মুক্তিযুদ্ধে রেখেছিলো, রেখেছিলো গনতন্ত্রের যুদ্ধে। এখন সময় এসেছে আমাদের ভূমিকা রাখার এবং আমাদের পরবর্তি প্রজন্মের জন্য গর্বের জায়গা ও ভবিষৎ নিশ্চিত করার।

রাজপথে আগুন জ্বলছে, ককটেল ফুটছে, বাসে আছড়ে পড়ছে পেট্রোলবোমা, পুরছে মানুষ!! কিসের জন্য?

সুষ্ঠ নির্বাচন ব্যবস্থা এবং একটি গ্রহনযোগ্য নির্বাচনের জন্য।

এই জাগয়াটাকে নড়বড়ে করলো কারা? কারা নিজেদের স্বার্থে তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার বাতিল করে আসন্ন নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করলো? যে দেশে নির্বাচন একটা উৎসবের মতো সে দেশে কারা নির্বাচনের সময়কে উৎসবের নয় বরং আতংকের দিকে ঠেলে দিলো?

আমাদের এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হবে। জোড়ালো ভাবে মতামত প্রকাশ করতে হবে। বিএনপিকে জানিয়ে দিতে হবে- বাসে আগুন দিয়ে তারা অপরাধ করছে, বিএনপির নেত্রীবৃন্দ আসামী- হুকুমের আসামী।
আওয়ামীলীগকে জানিয়ে দিতে হবে- তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে তারা অপরাধ করেছে। বাসে আগুন দেয়ার তারা আরো বড় আসামী, তারা এ পরিস্থিতিতে ঠেলে দেয়া আসামী।

সর্বপরি, আমাদের রাস্তায় নেমে আসতে হবে। নির্দলীয় সরকারের জন্য আন্দোলন করতে হবে। মনে রাখতে হবে, ভোট দেয়া মানেই ভোটের অধিকার রক্ষা নয় বরং আমার ভোট যেন কারো সাজানো পদ্ধতির অনুমোদন না হয়ে প্রকৃতই মতামত নিশ্চিত করে এটাই ভোটের অধিকার। আর এ ভোটাধিকারের জন্যই আমাদের লড়তে হবে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন