বৃহস্পতিবার, ১১ এপ্রিল, ২০১৩

আওয়ামী অবমাননার ব্লাসফেমি!!!

'আমার দেশ' আমার নিয়মিত পঠন তালিকায় না থাকলেও দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সাম্প্রতিক সময়ে নিয়মিত পাঠ্য হয়ে উঠেছিলো..
এ কথা ঠিক যে, আমার দেশ পত্রিকা এবং সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের অনেক ভুমিকাই ছিলো দলীয় পক্ষপাতে দুষ্ট, এক কথায় অখাদ্য...
আবার এ কথাও ঠিক যে, সরকারের সৈরাচারি আচরনে যখন অন্যান্য পত্রিকাগুলো সুশিল পক্ষপাতের ব্যালান্স চেষ্টায় সেলফ সেন্সরশীপে যাচ্ছিলো, তখন মাহমুদুর রহমান জাউরামির বিপরিতে অধিক জাউরা হয়ে খেলছিলো....
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি উক্তি প্রাসংগিক ভাবেই এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে-
"ভদ্রলোকের সাথে ভদ্রলোকের মত করেই খেলো ; কিন্তু জাঊরার সাথে খেলার সময় মাথায় রেখো - তুমি যাতে বড় জাউরার মত করে খেলতে পারো ; নইলে তুমি হেরে যাবে"। "প্লে লাইক অ্যা বিগার বাস্টার্ড উইথ এ বাস্টার্ড!"
তাই বুনো ওলের বিপরীতে কখনো কখনো কিংবা সবসময়ই বাঘা তেঁতুলের দরকার হয়। মাহমুদুর রহমানও জাউরা বুনো ওলের বিপরীতে অধিকতর জাউরা বাঘা তেঁতুল! আর তাই সরকার, সরকারপন্থী, বাঘা তেঁতুলের টকে মুখের রুচি নষ্ট হওয়া মানুষ, দলীয় সংকির্নতায় বিরক্ত হওয়া এবং আমার দেশের দলীয় সংকির্নতায় বিরক্ত হওয়া মানুষগুলোর বিরাগ ভাজন হয়েছে মাহমুদুর রহমান ও দৈনিক আমার দেশ। এবং অনেক দেরিতে হলেও ভিন্নমতের প্রতি অসহিষ্নু সরকার মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করেছে, এবং আমার দেশের প্রেস সিলগালা করে দিয়েছে ফলে অবধারিতভাবে বন্ধ হয়ে গেছে আমার দেশ।

কিন্তু আমি অবাক হয়েছি, মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করতে ভিন্নমত দমনে আগ্রাসি সরকার এতো সময় নিলো কেন? সরকারের আচরন পর্যালোচনা করলে এ গ্রেফতার আরো আগেই হওয়ার কথা ছিলো.....

এ কথা সত্যি যে, মাহমুদুর রহমান গ্রেফতারের উর্ধে কেউ নন। সে যদি অপরাধ করে থাকে তো গ্রেফতার অস্বাভাবিক কিছু নয়। এখন দেখার বিষয় মাহমুদুর রহমানের অপরাধ গুলো কি কি....
অপরাধ এক-ব্লগারদের লেখা ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোড করে দৈনিক আমার দেশ পত্রিকায় প্রকাশ করে সাধারণ মানুষের ধর্মীয় অনভূতিতে আঘাত।
অপরাধ দুই-বিচারপতির স্কাইপি কথোপকথন প্রকাশ।
অপরাধ তিন-আদালত, সরকার, টাইব্যুনালসহ নানা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে লেখালেখি।
অপরাধ চার- কাবা শরীফের গিলাফ পরিবর্তন নিয়ে যে মিথ্যাচার।
ইত্যাদি ইত্যাদি....................

এ গ্রেফতারে প্রসংগে সরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যও উল্লেখযোগ্য- “আমরা বাধ্য না হলে কাউকে গ্রেফতার করি না। আর মাহমুদুর রহমানকে আগের মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে। আমরা তাকে গ্রেফতার করতে চাইনি, কিন্তু তিনি আমাদের বাধ্য করেছেন।”

লক্ষ্যণীয়, মাহমুদুর রহমান তার নিজেকেই গ্রেফতার করতে সরকারকে বাধ্য করেছেন। অথচ যে অভিযোগ গুলোয় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে সবই পুরোনো!!! তা হলে তিনি কি করে বাধ্য করলেন???
এ প্রশ্নটাই সম্ভবত এ গ্রেফতারের বড় টুইস্ট! গ্রেফতারের দিন (১১ই এপ্রিল'১৩) "আমাদের দেশ" এর শিরোনাম- "উইকিলিকসে শেখ মুজিবের শাসনকাল"।


যে সময় নিয়ে হীনমন্যতায় ভোগা আওয়ামীলীগ সরকার যে পুরানো ধর্ম অবমাননায় ব্লাসফেমি তে না গিয়ে, উইকিলিকসে ফাঁস হওয়া তথ্য নিয়ে আজকের আমার দেশে প্রকাশ হওয়া আওয়ামী অবমাননায় ব্লাসফেমিতে বাধ্য হবেন এটাই স্বাভাবিক।

আমি আশা করছি, মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার মাধ্যমে হীনমন্যতায় ভোগা এ আহত আওয়ামী অনুভূতি আবার চাঙ্গা হবে, এবং আমার দেশ বন্ধ করার মাধ্যমে তা পূর্নতা পাবে।

অভিনন্দন সরকারকে- তাদের জাউরা খেলার অতি জাউরা এক প্রতিপক্ষ কমাতে পারার জন্য। কিন্তু আশংকার কথা হলো- মূল আশংকার কথা গুলো রয়েছে বন্ধ করার দিনে আমার দেশে ধারাবাহিক ছাপানোর ঘোষনা দেয়া উইকিলিকসে! কি রয়েছে সে ই উইকিলিকসে?
১৬ আগস্ট'৭৫ বঙ্গবন্ধু হত্যার পরের দিন মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টে পাঠানো এক তারবার্তায় ডেভিস বোস্টার উল্লেখ করেন, "নতুন সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরিত হলো, যা সর্বোপরি মুজিব এবং বাঙালি জাতির মধ্যকার বিচ্ছিন্নতাকে নির্দেশ করে। বাঙালি জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষাগুলো পরিপূর্ণ করতে ব্যর্থ, নিজেকে রাজনৈতিকভাবে আরও শক্তিশালী করে তোলার উদ্দেশ্য, রাজনীতি এবং ক্ষমতাকে আঁকড়ে ধরে রাখার স্বচ্ছ উচ্চাভিলাষই তার ও বাঙালি জাতির মধ্যকার বিচ্ছিন্নতার মূল কারণ। এভাবেই মুজিব তার পরামর্শকারীদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন।"

জন বিচ্ছিন্নতার পরিনাম ভয়াবহ হয়, দুই এক জন ভিন্ন মতাদর্শী গ্রেফতার করে চক্ষু মোদা যায় কিন্তু প্রলয় বন্ধ করা যায় না।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন