স্বর্গের চিরবসন্তের এক সন্ধ্যা। যখন আদি নারী ইভ চোখ মেলেছিলেন, দেখেছিলেন আদি পুরুষ অ্যাডামকে। প্রথম নারী দর্শনে পুরুষ কিম্বা পুরুষ দর্শনে নারী, অ্যাডাম এবং ইভ উভয়ই যখন রোমাঞ্চিত। তখন হয়তো প্রথম দর্শনে প্রেমে মন্ত্রমুগ্ধ অ্যাডাম ইভকে বলেছিলেন-“ম্যাডাম, আই অ্যাম ইওর অ্যাডাম”। জবাবে ইভ হয়তো গেয়েছিলেন-“এতো দিন কোথায় ছিলে???
লক্ষ্যণীয়, ইভকে উদ্দেশ্য করে অ্যাডামের এই উক্তিটি ছিলো প্রেমময় আর তখন অ্যাডামই ছিলেন একমাত্র পুরুষ তাই আমরা ধরে নিতে পারি, আদি নারী ইভ কারো দ্বারা উত্যক্ততার শিকার হতে হননি! অনেকে হয়তো বলতে পারেন, স্বর্গে ইভ উত্যক্ত হয়েছিলেন শয়তানের দ্বারা, যার ফলে তার সুখের সময় নষ্ট হয়েছিলো এবং স্বর্গ থেকে বিতারিত হতে হয়েছিলো। কিন্তু আমি মনে করি, ইভ শয়তান দ্বারা উত্যক্ত নয় বরং প্রভাবিত হয়েছিলেন,যার ফলশ্রতিতে গন্দম খেয়েছিলেন এবং পদস্ফলনে মর্তে নেমেছিলেন।
এ বিষয়ের গুরুত্বপূর্ন দিক হলো- ইভ যুগপৎ অ্যাডাম ও শয়তান দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন! কিন্তু অ্যাডামের প্রভাবটা ছিলো প্রেমময় আর শয়তানের প্রভাব ছিলো প্রতারনায়। অর্থ্যাৎ মানুষ এবং শয়তানের উৎপত্তিতে প্রেম ও প্রতারনা থাকলেও উত্যক্ততা ছিলো না। যা পরবর্তিতে এসেছে ক্রমবিকাশে। মর্ত্যে অ্যাডাম এবং ইভ যখন প্রজননের মাধ্যমে বংশ বৃদ্ধি করে চললেন..... কোন এক সময় সেই অ্যাডামের প্রতিনিধি রাস্তায় দাড়িয়ে কোন এক ইভের দিকে লোল্যুপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে, মানবের প্রেম আর শয়তানের প্রতারনা ভুলে হয়ে উঠলো উত্যক্তকারী। অর্থ্যাৎ যারা কাউকে উত্যক্ত করে তারা মানুষও নয় আবার শয়তানও নয়, তারা শুধুই উত্যক্তকারী।
লক্ষ্যণীয়, এ তিন শ্রেনীর কার্যকলাপ- প্রেম, প্রতারনা এবং উত্যক্ততার শিকার হচ্ছে শুধুই মানুষ। কিন্তু আমার দূ:খ হয় বর্তমান সামাজিক বাস্তবতায় আমরা সেটাও শিকার করি না!
যেহেতু টিজের শিকার মেয়েরা বেশী হয় তাই এর সমাজ স্বীকৃত নাম দেয়া হয়েছে ‘ইভটিজিং’। কিন্তু কেন? একজন টিজের শিকার হলে সেটা টিজিং আর কোন মেয়ে টিজের শিকার হলে সেটা ইভটিজিং! কেন? এখানে কেন মেয়েদেরকে নারী আইকন ‘ইভ’ হিসাবে দেখানো হচ্ছে, কেন তাদের মানুষ হিসাবে দেখানো হচ্ছে না!?! ইভটিজিং শব্দটা কি মেয়েদের রক্ষার নামে মেয়েদের অবমাননা নয়?
অবশ্য মেয়েদের মানুষ হিসাবে না দেখে, মেয়ে হিসাবে দেখার প্রবনতা সর্বত্রই। এমনকি নারী ক্ষমতায়নের জন্য উপজেলা পরিষদে যে নারী আসন রাখা হয়েছে, সেখানেও ভাষার ব্যবহারে নারী অবমাননা করা হয়! ভাইস-চেয়ারম্যানদ্বয় অর্থ্যাৎ পুরুষ ও মহিলা। তাদের নাম ব্যবহার করা হয়, ভাইস-চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান! কিন্তু কেন?
পুরুষ যদি ভাইস-চেয়ারম্যান হয় তাহলে নারী কেন মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান? মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান ব্যবহার করা হলে কেন পুরুষের ক্ষেত্রে পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান ব্যবহার করা হবে না? এটা কি নারী ক্ষমতায়নে নারীদের প্রতি বৈষম্য নয়? আমি মনে করি মেয়েদের মানুষ হিসাবে না দেখে শুধু মেয়ে হিসাবে দেখাটা নারী উন্নয়ন ও তাদের উত্যক্ততা প্রতিরোধের সবচেয়ে বড় বাধা। এ জন্য জনগনের পাশাপাশি সচেতন হতে হবে সরকারকেও।
যদিও আমি এ বিষয়ে যথেষ্ঠ সচেতন। তবে রাস্তায় কোন মেয়েকে ভালো লাগলে, তার সামনে গিয়ে বলবো-“ম্যাডাম, আই অ্যাম ইওর অ্যাডাম”।
রোমাঞ্চিত মেয়েটি বলবে- এতোদিন কোথায় ছিলে?
আমি বলবে-“ তোমার জন্য পৃথিবী তন্নতন্ন করে খুজে ১০৮টি নীলপদ্ম আনতেইতো দেরী হয়ে গেলো!
আমাদের এই কথপোকথন যদি ইভটিজিং হয়, তাহলে দূর্ভাগ্য আমার, দূর্ভাগ্য আদি পুরুষ অ্যাডামের!!!! কারন পৃথিবীর আদি ইভটিজারতো তাহলে তিনিই! -১ডিসেম্বর’১০।
Very good, Adam teasing er jonno o kisu likho,
উত্তরমুছুন